আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চতুর্থ ধাপে কাল ৯১ উপজেলায় ভোট

ভয়-ভীতি ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে কাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চতুর্থ ধাপে ৪৩ জেলার ৯১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ। এর আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা ঘটায় এবারে ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৯১ উপজেলায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। গতকাল থেকেই ৫ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহলে থাকছেন তারা। এ ছাড়া গতকাল মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। তবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও ব্যাপকভাবে কালো টাকা ছাড়ানোর অভিযোগ এসেছে ইসির কাছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ধাপেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বহাল থাকায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের চেয়ে বেশি সহিংসতা হতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ইসিকে জানিয়েছে। এদিকে আজ সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবে নির্বাচন সামগ্রী। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে কাল। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ১৮৬ জন প্রার্থী। এদিকে নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যও এসব এলাকায় টহল দেবে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও দলীয় প্রভাব রয়েছে সবখানেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সবসময় চাই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হোক। এ জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা-ই করছি। সহিংসতা রোধে সবের্্বাচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মধ্যরাতেই বন্ধ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা : গতকাল মধ্যরাতেই বন্ধ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা আগে সব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকবে। তা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এমনকি প্রার্থিতাও বাতিল হবে।

সেনা, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড : সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে গতকাল থেকে ৯১ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নেমেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচদিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছে। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা বেশিও রয়েছে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি টহলে থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩৬৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপের ৪৩ জেলার ৯৩ উপজেলার মধ্যে ২৩ মার্চ দেশের ৯১টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। আদালতের নির্দেশে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ৯১ উপজেলায় লড়াই করবে এক হাজার ১৮৬ জন প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৭ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১৯ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন।

বিভিন্ন স্থানে দুই দলের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ : আগামীকালের উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : খুলনার ৫টি উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যের বিরুদ্ধে ভোটের দিন সন্ত্রাসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। গতকাল দুই দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে অভিযোগ_ পাঁচটি উপজেলায় একাধিক মামলার আসামি নিষিদ্ধ চরমপন্থি দলের সদস্যরা ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বাধা। অপরদিকে বিএনপির পক্ষে অভিযোগ_ ২৩ মার্চের নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোট ছিনতাইয়ের মাধ্যমে ফলাফল পাল্টানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করছে। গতকাল দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট কাজী বাদশা মিয়া প্রমুখ। সম্মেলন করেছে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও পুলিশ আওয়ামী লীগের ব্লু-প্রিন্ট মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন। পুলিশের নির্যাতনে পাঁচ উপজেলার নেতা-কর্মীরা গ্রামছাড়া। তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনী কাজ করতে পারছেন না।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থক প্রার্থীর ক্যাডাররা। এ সময় তাদের ছোড়া গুলিতে এক বিএনপি কর্মী গুরুতর আহত হন। আর এ হামলায় নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরী ও ছেলে কলিন্স চৌধুরী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বৈরাগিরচর কারিতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ওই বিএনপি কর্মী আতুব্বর মণ্ডলকে রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলায় রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরী ও ছেলে কলিংস চৌধুরী সরাসরি অংশ নেন বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদ সরকার মঙ্গল। শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদ সরকার মঙ্গল বলেন, কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরী ও ছেলে কলিন্স চৌধুরী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্বয়ং এমপি রেজাউল ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিকালে দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গা বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজ আল মামুন। তাদের দাবি, বিএনপি প্রার্থীর ক্যাডাররা আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। সেই গুলিতেই তাদের দলের কর্মী আতুব্বর মণ্ডল আহত হন।

যশোর : গতকাল বিকালে স্থানীয় প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন চাকলাদারের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও যশোরের রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ পর্যন্ত ১০টি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে শাহীন চাকলাদারের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত। কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, কালীগঞ্জ, ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে ব্যাপক সংখ্যক সন্ত্রাসী ভাড়া করে আনা হয়েছে। এরা শহর-গ্রামের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও হোটেলে অবস্থান নিয়েছে। অথচ পুলিশ তাদের ধরছে না। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, অ্যাডভোকেট মুহম্মদ ইসহক, দেলোয়ার হোসেন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সংবাদ সম্মেলনের পরপরই একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি নেতার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জেলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহুর আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশকে ঘোলাটে করতেই বিএনপি নেতারা উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী গোলাম রেজা দুলু ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাশুক হাসান জয় নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসী ভাড়া করেছেন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.