আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষিদ্ধ পল্লী থেকে

চতুর্থ পর্ব

আমার হৃদয়
তোমার আপন হাতের দোলায়
দোলায় দোলায় দোলাও আমার হৃদয়
এই জীবনে তারে বলে
ভোলাও ভোলাও ভোলাও আমার হৃদয়

আহ সামাদের খুবই প্রিয় গান। তার প্রিয় বউটা শুনছে। একমনে মনযোগের সাথে সিনেমা দেখছে হামিদা। পিছন থেকে খুব মনোহর মনে হচ্ছে তো আজকে আমার বউটাকে। সামাদের ইচ্ছে হচ্ছে বউকে আবেগে জড়িয়ে ধরে।

আবেগে বউয়ের কোলে মুখ লুকায়। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরন করল এই কথা ভেবে তাহলে হামিদা বেশী সন্দেহ করবে। তাদের সম্পর্কটা গত দুইবছর ধরে কোল্ড হয়ে গেছে। দুইজন আলাদা রুমে ঘুমায়। তার স্ত্রী নিজে এই ব্যাবস্থা করেছে।

স্বামীর শারীরিক মানসিক সব আবেদনে আগের মত তার মন দেহ সাড়া দেয়না। সে খুব অসহায় বোধ করে স্বামীদের চাহিদায়। কিন্ত শারীরিকভাবে অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পড়েছে। কোন ধরনের শারীরিক চাহিদা তার একেবারে নাই। এটা যে উচিত হচ্ছেনা সে ভালভাবে উপলব্দি করে ।

স্বামীর বিপথে যাওয়ার আশংকা আছে। মনে মনে স্বামীকে শ্রদ্ধা করে ভালবাসে সেই বিয়ের রাতের মত এখন ও।

মনে মনে মহড়া দিতে থাকে সামাদ কিভাবে হামিদার প্রশ্নের জবাব দিবে। মনে মনে সে বলছে স্ত্রীকে সোল টু সোল “মাপ কর দাও”আমি অন্যায় করছি এখন স্বীকার করতে পারবনা। তুমি যদি বূঝে ফেল আমি মিথ্যা বলছি আমাকে মাপ করে দিও প্লিজ।

মিথ্যাবাদী বলে ঘৃনা করোনা।

আস্তে আস্তে স্ত্রীর পাশে সোফায় বসে পড়ল।

চুল কপাল থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলল ঘুমাওনি এখনও?

স্ত্রী চুপচাপ গভীর মনযোগের সাথে সিনেমা দেখছে। জবাব না পেয়ে নিজেই স্বগতোক্তির স্বরে বলতে থাকে আহ একটা দিন যে গেলনা আজকে অনেক টায়ার্ড। এটা আসলে মিথ্যে ঠিক না সে সত্যি শারীরিক মানসিক ভাবে টায়ার্ড।

ক্রমাগত স্ত্রীকে লুকিয়ে এই কাজ করায় সে নিজে ও অনুতপ্ত । অপরাধবোধ করছে স্ত্রীর কাছে।

মাঝে মাঝে সে নিজেকে শাসন করে কড়াভাবে

একটা মেয়ে বা প্রেমময়ীর স্ত্রীর দেহ কি সব?আমি কি মন থেকে শারীরিক জিনিসটা দুর করে দিতে পারিনা?সময় সময় নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। কখনও সফল হয় কখন ও পারেনা। আমি তো মানুষ মাঝে মাঝে সে চিন্তা করে।

খাওয়া পরার মত দৈহিক চাহিদা মৌলিক চাহিদার মত প্রবল হয়ে উঠে।

মাঝে মাঝে অনুতপ্তের মতই ভাবে আজ যদি আমি খোড়া পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতাম হামিদা কি বাহিরে কোন সঙ্গে আসক্ত হত?

শ্যামলীর সাথে তার পরিচয় এইভাবে। প্রথমে যা ছিল একেবারে শারীরিক তা সময়ে মানবিক কিছুটা আবেগের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এই অসহায় মেয়ের সাথে জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে এখন। এখন শ্যমলীর সাথে সম্পর্কটা হয়ে গিয়েছে অনেকটা মানবিক।

এই অসহায় মেয়েটিকে রাস্তায় ফেলে দিতে মন সায় দেয়না

মেয়েটা কে ছিল তোমার কোলে?স্ত্রীর প্রশ্নে চিন্তার সূত্র ছিন্ন হয়ে যায় সামাদের। স্ত্রী বিষন্ন চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে।

স্ত্রীর চোখের দিকে না তাকিয়ে জবাব দেয়। একটা অসহায় মেয়ে আমি ওকে একটু সাহায্য করছি। তোমাকে পরে সব বলছি।

এখন ভীষন ক্ষিধে পেয়েছে। খেতে দাও। বলে পাশ কাটিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল। সত্যি বললনা মিথ্যেতে ও গেলনা।

স্ত্রী নিশ্চিত হয়ে খাওয়ার বাড়তে চলে গেল।



সেই রাত্রে অনেকদিন পর স্ত্রী তার বিছানায় এল। অনেক মাখামাখি হল । সবকিছুই আগের মতই স্বাভাবিকভাবে হল জীবনের নিয়মে প্রবৃত্তির চাহিদায়।

২আমি তোমার প্রেমে
হব সবার কলঙ্কভাগী
আমি সকল দাগে দাগী
কলঙ্কভাগী

আমি সূচীর আসন তুলে নিয়ে
বেড়াবনা বিধান মেনে

শ্যামলীদের বস্তিতে আজ বিশাল উৎসব। বস্তির সবমেয়েরা ঠাসাঠাসি করে শ্যামলীর ঘরে বসেছে একসঙ্গে সিনেমা দেখছে ভিসিয়ারে।

ব্যাবধান সিনেমা। অপর্না সেন ভিক্টর ব্যানার্জীর কোলে মাথা রেখে গান গাইছে
বক্ষে মাগি কলঙ্কভাগী
আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী।
মেয়েরা মজা করে বলছে

শ্যামলী তুই আর সামাদ মিঞা। শ্যামলীর গাল রাঙা হয়ে উঠে।

এই টিভি ভিসিয়ার সামাদ কিনে দিয়ে গেছে আগের সপ্তাহে।

শ্যামলীর মনটা এখন বেশ খুশী। সুমা দিনে তিনচার ফোন করে মায়ের শরীরের খবর নেয়। একদিন দুইজন চিড়িয়াখানায় ঘুরে এসেছে। সুমা বারবার জড়িয়ে ধরেছে ছোটবেলার মত চুমু দিয়েছে মায়ের গালে। শ্যামলীর পক্ষে কল্পনা করা সম্ভবনা এর মধ্যে সামাদ সুমার সাথে দেখা করে শ্যামলীর পক্ষে মন নরম করে এসেছে।

ব্যাপারটা ঘটেছিল এইভাবে।

কে একজন বলল এসে বলল তার মামা দেখতে এসেছে। কৌতুহলে তাকাতে দেখতে পেল সামাদকে সুমা। সুমা ধারনা করছিল দুঃষ্থ চেহারার নোংরা কোন লোককে দেখতে পাবে। তার বদলে যাকে দেখল তাকে দেখার জন্য সে প্রস্তুত ছিলনা।

দেখতে অনেক ভদ্র সুন্দর চেহারার টাই সূট কোট পরা ভদ্রলোক।

লোকটি একটু জড়তা নিয়ে সুমার পাশে বসল।

সুমা তোমার সাথে পাঁচমিনিট কথা বলব তারপরে চলে যাব । কুন্ঠার সাথে বলল।

একটা সাত আট বছরের বাচ্চা ছেলের ছবি দেখিয়ে বলল “দেখতে কেমন”সুমা।



অনেক পোটকা কিউট বলল হেসে। কেন যেন সুমার প্রথম দৃষ্টিতে লোকটার সাথে আন্তরিক হয়ে গেল।

আরেকটা ছবি দেখাল বেশ সুন্দর একটা মহিলার কোলে শিশুপুত্র।

আমার মা। আমার যখন আটবছর বয়স তখন আমার বাবাকে ফেলে আন্কেল এর সাথে চলে যান।

আমার বাবা অপমানে আত্মহত্যা করেন। আমাকে মানুষ করে আমার এক ফুফু।

আজকে আমার মাকে দেখে আসলাম।

ছিঃ ছিঃ সুমা বলে উঠে এই মার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখতে পারতামনা।

আমি মার দিকে তাকালে আটবছর পর্যন্ত মায়ের ভালবাসার স্মৃতি টা মনেকরি।

তার অন্য অনৈতিক জিনিস নিয়ে ভাবতে লজ্জা পাই।

মাদেরকে মাপ করে দেওয়া যায় তাইনা?সামাদ হাসল।
৩আজ প্রায় দশদিন হতে চলল সামাদ এদিকে আসেনা। শ্যামলী অপেক্ষা করতে করতে আজকে ফোন দিয়ে বসল।

ওই পাশে থেকে একটা মেয়ের গলা পাওয়া গেল।

শ্যামলী ফোন কেটে দিল। তার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল।

(পরবর্তীতে)।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.