আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুস্তফা কামালকে মুহিতের জবাব

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সমালোচনার জবাব দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সাংবাদিকদের কাছে আজ মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীর শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অর্থমন্ত্রী।

সচিবালয়ে সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ লি হররো এবং যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।

পরিকল্পনামন্ত্রীর গতকাল সোমবারের বক্তব্য বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রথমে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

তবে সঙ্গে সঙ্গেই আবার বলেন, ‘মন্ত্রীরা শুড মেনটেইন সাম লেভেল অব শিষ্টাচার, ইট ইজ অল মাই পয়েন্ট। ’

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেনশন নেন অর্থমন্ত্রী, তাই সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না তিনি—পরিকল্পনামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী ভুল তথ্যের ওপর বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশ সরকার ছাড়া পৃথিবীর কোথাও থেকে আমি পেনশন নিই না। ’   

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার নিয়ে গত দুই মাস অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী একমত হতে পারছিলেন না। পরিকল্পনামন্ত্রীর চাওয়া আরএডিপির আকার হোক ৬০ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

কিন্তু, অর্থমন্ত্রী এতে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি দিতে রাজি নন। সম্প্রতি কারণ ব্যাখ্যাসহ পরিকল্পনামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বাস্তবতা অনুধাবনের পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।

এই বিষয়ে মুস্তফা কামাল গতকাল নিজে থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনি (অর্থমন্ত্রী) আমাকে অনুধাবন করতে বলেছেন। আমি তো উনার সহকর্মী, অধীনে না। উনি প্রতিবছর বিশাল বাজেট দেন, হাজার হাজার কথা বলেন।

কিন্তু, অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেন না। এমনকি, বাজেট বক্তব্য দিতে দিতে শুয়ে পড়েন উনি। ’

বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি একদিন বলেছিলাম যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করব। পদ্মাতে (পদ্মা সেতু প্রকল্প) বিশ্বব্যাংক আমাদের যে অসম্মান করেছে, সেই কারণে মামলা করতে চাই। ’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমি এটাও বলেছি যে, মামলা করব তখন, যখন আমি মন্ত্রী থাকব না।

তা ছাড়া, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী। মন্ত্রী হিসেবে মামলা করাটা শিষ্টাচারবহির্ভূত। আমি যখন সাধারণ নাগরিক হব, তখন করব মামলা। ’

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) নিয়েও গতকাল অর্থমন্ত্রীকে জড়িয়ে কথা বলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। মুস্তফা কামালের উক্তি, ‘উনি কি যেন একটা বানিয়েছেন।

পিপিপি না কি? প্রতিবছর দুই-তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এটা গরু না ছাগল, তা-ও মানুষ বোঝে না। ’ এ বিষয়ে মুহিত বলেন, ‘পিপিপি না-বোঝাটা ওনার দুর্বলতা। উনারই সংশোধন হওয়া উচিত। পিপিপি আমি তৈরি করিনি।

অবকাঠামো উন্নয়নে এটি একটি আন্তর্জাতিক ধারণা (কনসেপ্ট)। ’

 

বিশ্বব্যাংকের সর্বোচ্চ ঋণ: বাংলাদেশকে গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ লি হররো সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ফিলিপ লি হররো বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ক্ষমতায়ন বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা সব সময়ই থাকবে।

 

আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬-৬.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে, তাতে তাদের সমর্থন রয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্পকে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা দরকার বলে মত দেন তিনি।

 

বাজেট সহায়তা ও পদ্মা সেতু: বৈঠকে বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে সহায়তা চাওয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সংস্কারের জন্য এ সহায়তা চাওয়া হয়।

তা ছাড়া সংস্কার তো চলছে।

কত টাকা চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা উল্লেখ করতে চাই না। ’

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিছু জানতে চাননি বলে সাংবাদিকদের জানান মুহিত। তিনি বলেন, ‘এই ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যেকোনো সমস্যা নিয়েই আলোচনা করা যায়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

পদ্মার যে টাকা, তা নানাভাবে আমাদের দিয়ে ফেলেছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন-ট্রশ্ন ছিল না। ’

এদিকে অ্যালান ডানকান সাংবাদিকদের বলেন, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বাংলাদেশের দারিদ্র্য নিরসনে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। এই স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

আরও জানতে পড়ুন

অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী

 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.