আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূলত আমি এখন অসামাজিক জীব / শাফিক আফতাব /



১) তখন আমি উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক বন্ধু আমাকে জানালেন যে, আমাদের প্রিয় বঙ্গভূমিতে নাকি ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। আমি তো হতবাক। ইংরেজি প্রতিযোগিতা আবার কী জিনিস! তাই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকলাম। তাদের এলাকায় কে কতটুকু সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়।

কারা এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়? মাধ্যমিক পর্যায়ের ইংরেজি শিক্ষকেরা। কীভাবে এবং কী বিষয় নিয়ে তারা ইংরেজিতে কথা বলে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেলো।

ঘটনাক্রমে কিছুদিন পর বন্ধুর এক আত্মীয় আসলেন ঢাকায় বেড়াতে। বন্ধুটি জানালেন যে, তিনি ইংরেজিতে খুবই পারদর্শী এবং এলাকায় খুবই পরিচিত। সঙ্গতকারণেই জিজ্ঞেস করলাম, “তবে তো তিনি ওই প্রতিযোগিতার একজন প্রতিযোগীও।

” বন্ধুর উত্তর ইতিবাচক। কৌতূহল নিবৃত্ত করার একটি সুযোগ পেয়ে গেলাম। ভগ্নীপতি হওয়াতে তার সাথে মিশতে বেশি আনুষ্ঠানিকতা করতে হয় নি। অনেক কথার ফাঁকে ‘ইংরেজি প্রতিযোগিতা’ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম। মনে হলো, জামাইবাবু অপ্রস্তুত।

তার প্রথম প্রশ্ন হলো কীভাবে আমি ‘বিষয়টি’ জানলাম। “আরে এটা কোন প্রতিযোগিতা না। ” তাহলে কী?

জানতে পারলাম, মুখস্ত করা ইংরেজি নিয়ে তারা প্রতিযোগিতা করতেন আর গ্রামের কিছু মানুষকে বোকা বানাতেন।
উদ্দেশ্য কী?
-উদ্দেশ্য কিছুই না – মজা করা।
তো কোথা থেকে আপনারা ইংরেজি ব্যবহার করতেন?
-ইংরেজির কি অভাব আছে নাকি? রচনা বই থেকে!

তাহলে তো প্রচলিত কৌতুকটি আবার বলতে হয়।

অজপাড়াগাঁয়ে আবিষ্কৃত হলো এক বিস্ময় বালকের, যে জলের মতো হরহর করে ইংরেজি বলতে পারে। তার নিরক্ষর মা-বাবা এবং ইংরেজি না-জানা প্রতিবেশিরা তো তাকে মাথায় তুলে রাখে। এত ইংরেজি সে কীভাবে শিখলো! কোন একদিন কিছু ইংরেজি ভাষাভাষী লোকের আবির্ভাব হলো গ্রামে। হয়তো কোন গবেষণা বা বেড়াবার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। গ্রামের লোকেরা ধরাধরি করে ওই বিস্ময় বালককে নিয়ে আসলো তাদের সামনে, ইংরেজি বলার জন্য।

উপায়ান্তর না দেখে বিদেশি অতিথিরা ওই বালকের সাথে সৌজন্যতামূলক কিছু কথা জিজ্ঞেস করলেন। যেমন: হাই, হাউ আর ইউ ডুয়িং? অথবা, হাউ ডিড ইউ লার্ন ইংলিশ ফ্রম দিস ভিলিজ? ইত্যাদি। ছেলেটির কোন উত্তর নেই। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। গ্রামের লোকদের তো আর ‘তর’ সইহো হচ্ছে না! ততক্ষণে প্রায় সকলেই জড়ো হয়েছিলো তামাশা দেখার জন্য।

তারা এই নিরবতায় হতাশ না হয়ে আরও উৎসাহ দিতে লাগলো। পরিস্থিতি যখন প্রেস্টিজের বিপরীতে চলে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আচমকা মুখ খুললো ছেলেটি। হর হর করে ‘দ্য কাউ’ রচনাটি বলে ফেললো! ইংলিশ অতিথিরা একটি কথাও মাঝখানে বলতে পারলেন না! পারার কথাও না। গ্রামের মানুষও আগে থেকে ধারণা করেছিলো যে, তারা কিছুই বলতে পারবে না।



২) স্ট্যান্ডার্ড এবং শুদ্ধ ইংরেজিকে ‘কুইনস ইংলিশ’ বা ‘অক্সফরড ইংলিশ’ বা ‘বিবিসি ইংলিশ’ বলা হয়।

তাছাড়া ‘কিংস ইংলিশ’ বলেও একটি বিখ্যাত গ্রামার আছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, শুদ্ধ ইংরেজির বিষয়টি পুরোপুরি রাজা-মন্ত্রীদের বিষয়। এখানে শিক্ষার বিষয়টি তত জড়িত নয়।

আমাদের দেশে এখন ‘মিনিস্টারস ইংলিশ’ নামে আরও একটি স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়ে গেছে, অনেকটা আমাদের অজান্তেই। আমরা খুব স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই দেখি যে, ক্ষমতায় থাকলে কথা-বার্তায় ইংরেজির ব্যবহার বেড়ে যায়।

সামনে আগেরই মতোই বাংলা-ভাষী মানুষ আছে, কিন্তু যেহেতু তারা মিনিস্টার, ইংরেজিতে কথা বলাকে একটি অত্যাবশ্যক ডেকোরাম হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আরও আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, ‘মিনিস্টারস ইংলিশ’ বলে একটি কিম্ভূতকিমাকার ও মজাদার ‘স্ট্যান্ডার্ড’ তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গ এই দেশে মিনিস্টারস ইংলিশ মানে হলো ‘ইংরেজির ভেতরে বাংলা’ অথবা বাংলার অন্তরে বেনিয়া! উদাহরণ: রাজনীতির ভেতরে পলিটিক্স। এটি বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সৃষ্টি। আমাদের ধারণা, মিনিস্টারস ইংলিশ বলতে পারার কারণেই আজ তিনি মিনিস্টার!

আরও কিছু উদাহরণ: (এখানে পাঠক আরও কিছু যুক্ত করতে পারেন)
১) We are looking for শত্রুজ।

সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর
২) I am একদম fed up। বর্তমান অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
৩) He should maintain some level of শিষ্টাচার। ঐ।

সর্বশেষ মিনিস্টারস ইংলিশটি অতি সম্প্রতি উৎপাতিত ‘হইয়াছে’।


একদম ফ্রেশ!


বলা বাহুল্য, উপরে কেবল প্রকাশিত দৃষ্টান্তগুলো ধারণ করতে পেরেছি। এরকম উচ্চমানের ইংলিশ তারা প্রতিদিন উৎপাদন করে যাচ্ছেন। অতএব, এখন থেকে যারা শুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলতে চান, তারা কুইনস ইংলিশ ‘ফালাইয়া দিয়া’ মিনিস্টারস ইংলিশে টকিং করুন! পিলিস!
 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.