আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন

একদিকে অমরত্বের হাতছানি। অন্যদিকে শিরোপার বন্ধ্যাত্ব ঘুচানো। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের সমীকরণ ছিল এমনই। অমরত্বের হাতছানি ছিল ভারতীয় অধিনায়ক মাহেন্দ  সিং ধোনির। ছিল দুই লঙ্কান তারকা ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়বর্ধনেরও।

ধোনি না পারলেও সফল হয়েছেন মাহেলা ও সাঙ্গাকারা। কাল দুই লঙ্কান তারকা খেলেছেন টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। আলো ছড়াতে পারেননি মাহেলা। তবে আপন আলোয় উজ্জ্বল ছিলেন সাঙ্গাকারা। লঙ্কানদের প্রিয় সাঙ্গাকারার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে দেড় যুগ পর বিশ্বসেরার মুকুট আবারও পরলো শ্রীলঙ্কা।

কাল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ফাইনালে ধ্রুপদী ব্যাটিং করে সাঙ্গাকারা ম্লান করেছেন বিরাট কোহলিকে। বিশ্বসেরার মুকুট এনে দিয়েছেন জন্মভূমিকে।   টি-২০ বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা।       আইসিসির ‘ব্লক বাস্টার’ ইভেন্টটির শিরোপা যদি জিততেন ধোনি, তাহলে ঠাঁই হতো অমরত্বের খাতায়। ধোনিই হতেন ক্রিকেট বিশ্বের একমাত্র অধিনায়ক যিনি ওয়ানডে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরপর টি-২০ ক্রিকেটের শিরোপাজয়ী।

যদিও সাত বছর আগে আইসিসির ব্লক বাস্টার ইভেন্টটির শিরোপা অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন ঝাড়খন্ডের এ ছেলে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ, এরপর গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। কাল শিরোপা জিতলে টানা তিনটি বিশ্বসেরার শিরোপা জয়ী অধিনায়ক হতেন। কিন্তু পারেননি। অমরত্বের খাতায় তাকে ঠাঁই দেননি সাঙ্গাকারা।

উল্টো নিজেই চিরজীবী হয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি পাতায়। ১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেটাই ছিল এতদিন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রথম ও একমাত্র শিরোপা। সেবার অধিনায়ক ছিলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। এবার তার সঙ্গী হলেন ল্যাসিথ মালিঙ্গা।

তবে কালকের নায়ক কিন্তু সাঙ্গাকারা। খেলেছেন ৩৫ বলে ৫২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। তার ইনিংসেই শ্রীলঙ্কা চাম্পিয়ন হয়েছে ৬ উইকেটে। বল বাকি ছিল তখনও ১৩টি। সুপার টেন ও সেমিফাইনালে অপরাজিত ধোনির দল ফাইনালে পাত্তাই পেল না লঙ্কানদের কাছে!   গত ১৮ বছরে বিশ্বসেরা হওয়ার সুযোগ যে শ্রীলঙ্কা পায়নি, তা কিন্তু নয়।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০৭ সালে ফাইনালে ডিএল মেথডে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। চার বছর পর ২০১১ সালে ভারতের কাছে হেরেছিল ৬ উইকেটে। টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম ফাইনাল খেলেছিল ২০০৯ সালে। সেবার লর্ডসে সাঙ্গাকারাদের হারিয়েছিল পাকিস্তান। গত আসরে ঘরের মাটিতে কাঁদিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

  চার চারটি বিশ্বসেরা মঞ্চে হারে মনে হচ্ছিল অধরাই থেকে যাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের শিরোপা। তবে কাল সব ব্যর্থতাকে মাটিচাপা দিয়েছে লঙ্কানরা। ২০০৯ সালে সাঙ্গাকার নেতৃত্বে ফাইনাল খেলেও শিরোপা জয় করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেটে বরাবরই সফল সাঙ্গাকারা। আগে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন ভারতীয়দের বিপক্ষে, তাতে ছিল দুটি হাফসেঞ্চুরি।

কাল তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে কান্নায় সিক্ত করেছেন ধোনিদের। হ্যাটট্রিক শিরোপার উৎসব তখনও শেষ হয়নি মেগলানিনদের। ট্রফি নিয়ে ব্যস্ত ফটোসেশনে। অমর হয়ে থাকার উপলক্ষ! মিরপুরের সবুজ গালিচায় উৎসবে উৎসবে যখন মাতোয়ারা অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা, তখনই শুরু ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে ডালাপালা মেলতে থাকে গুঞ্জন।

খেলা হবে তো? বৃষ্টিতে খেলা পিছিয়েছে ৪০ মিনিট। তবে ম্যাচ হয়েছে ২০ ওভারই। দিনের দ্বিতীয় ইনিংসটি ছিল সাঙ্গাকারার। ভারতীয় ইনিংসটি ছিল কোহলিময়। কোহলি এতটাই চোখধাঁধানো, মুগ্ধতা জাগানো ব্যাটিং করেছেন কাল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে সেটা উপভোগ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

তার ব্যাটিংয়েই ৪ উইকেটে ১৩০ রান করে ভারত। ফুটবলে এখন যেমন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তাদের শৈল্পিক ফুটবলে মুগ্ধ ফুটবল পিয়াসীরা। তেমনি ক্রিকেটে কোহলি নিজে খেলছেন, খেলাচ্ছেন দলকে এবং উপহার দিচ্ছেন জয়। যদিও কাল পারেননি।

  তার ব্যাটিং শিল্প এখন এমন এক উচ্চতায়, এতটাই দৃষ্টিনন্দন, যার তুলনায় আসতে পারেন শুধু তিনি নিজেই। ব্যক্তিগত ১১ রানে শর্ট মিড উইকেটে ল্যাসিথ মালিঙ্গার হাতে জীবন পেয়ে খেলেন ৭৭ রানের আলো ছড়ানো ইনিংস। ৫৮ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা। আসরে ছয় ম্যাচে এটা চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি। পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা তাকে করেছে টুর্নামেন্ট সেরা।

দেড়যুগ পর শ্রীলঙ্কাকে চ্যাম্পিয়ন করার পর ‘নায়ক’ সাঙ্গাকারাকে কাঁধে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন সতীর্থরা। তা চেয়ে চেয়ে দেখেন ধোনিরা।  

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।