আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীলঙ্কা এখন উত্সবের দেশ

মাঠের নায়ক সাঙ্গাকারা-মালিঙ্গারা, মাঠের বাইরের নায়ক মাহিন্দা রাজাপক্ষে! প্রেসিডেন্ট এবার ফাইনাল দেখতে আসেননি বলেই নাকি জিতেছে শ্রীলঙ্কা!
শ্রীলঙ্কা বারবার ফাইনালে ওঠে। রাজাপক্ষে উড়ে যান ফাইনাল দেখতে। দলের সঙ্গে রাজাপক্ষেও বারবার ফেরেন ব্যর্থ মনোরথে। এবার নিজেকে সংবরণ করেছেন প্রেসিডেন্ট। দল যখন ফাইনাল খেলছে, রাজাপক্ষে তখন কলম্বোর উপকণ্ঠে একটি পাঁচতারকা হোটেলের উদ্বোধন করছেন।

শ্রীলঙ্কাজুড়ে এখন জনপ্রিয় কৌতুক, ধন্যবাদ জানানো উচিত প্রেসিডেন্টকে!
সময়টা এখন উত্সবের। প্রেসিডেন্ট নিজেও এই কৌতুকে বেশ মজা পাচ্ছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তটায় না থাকলেও উপলক্ষকে স্মরণীয় করে রাখার আয়োজন ঠিকই করছেন ক্রিকেটপ্রেমী প্রেসিডেন্ট। শ্রীলঙ্কান দল কাল রাতভর শিরোপাজয়ের উত্সব করেছে ঢাকার হোটেলে। আজ যখন দেশে পা রাখবেন ক্রিকেটাররা, দেখতে পাবেন রাজকীয় সংবর্ধনা কাকে বলে! মাস খানেক আগে এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফেরার পরই কলম্বো শহরে মোটর শোভাযাত্রায় সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল ক্রিকেটারদের।

আজকের মোটর শোভাযাত্রা ছাড়িয়ে যাবে আগের সবকিছুকেই। বন্দরনায়েকে বিমানবন্দর থেকে কলম্বো শহর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পথ খোলা বাসে পাড়ি দেবেন জয়াবর্ধনেরা। রাস্তার দুই পাশে জার্সি গায়ে, পতাকা হাতে থাকবে ভক্ত-সমর্থকেরা। সারা পথে পুষ্প বর্ষিত হবে  ক্রিকেটারদের ওপর। শহরেই বিভিন্ন পথ প্রদক্ষিণ করবে শোভাযাত্রা।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সংবর্ধনা তো থাকবেই। থাকতে পারে গণসংবর্ধনা ও আরও নানা আয়োজন।
শ্রীলঙ্কা উত্সবের দেশ হয়ে উঠেছে পরশু রাত থেকেই। রাজধানী শহর কলম্বোতেই উত্সবের ঢেউ সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন করা হয়েছিল।

শহরের প্রমোদকেন্দ্র সমুদ্রতীর গল ফেস গ্রিনে বড় পর্দায় একসঙ্গে খেলা দেখেছে কয়েক হাজার মানুষ। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর শ্রীলঙ্কা প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু ফিদেল ফার্নান্ডো পুরো সময়টাতেই ছিলেন ওখানে, শহর ঘুরে রাতজুড়ে দেখেছেন লঙ্কানদের উত্সব। এমনিতে উচ্ছ্বাস আর হতাশায় ভীষণই পরিমিত বলে পরিচিত লঙ্কানরা এবার মেতেছেন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে।
খেলা শেষ হওয়ার কিছু মুহূর্ত আগেও অবশ্য আবেগটাকে ভেতরে দমিয়ে রেখেছিলেন সবাই। খুব কাছে গিয়েও হতাশায় পোড়ার অভিজ্ঞতা তো আর কম হয়নি! গল ফেস গ্রিনের এমন অনেকে ছিলেন, যাঁরা ওই একই জায়গায় এর আগেও মিলেছিলেন ২০০৭, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১২ ফাইনাল দেখতে।

সবগুলো ফাইনাল শেষেই সেখানে নেমেছিল শ্মশানের নীরবতা। পরশু থিসারা পেরেরা যখন জয় এনে দেওয়া শটটি খেললেন, মুহূর্ত খানেকের জন্য আবার সেই পিনপতন নীরবতা। বল সীমানা পেরোতেই সাগরের গর্জনকে ছাপিয়ে গেল জনতার গর্জন। তালি, চিত্কার, পরস্পরকে আলিঙ্গন, ছুটোছুটি...। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সবাই যখন এক এক করে মেডেল নিচ্ছেন, সবাইকে হর্ষধ্বনিতে অভিনন্দন জানিয়েছে হাজার মাইল দূরে থাকা ভক্তরা।

সবচেয়ে বড় চিত্কার বরাদ্দ ছিল অবশ্যই কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনের জন্য, সঙ্গে যুবরাজ সিংয়ের জন্যও!

একই চিত্র ছিল আরেক প্রমোদকেন্দ্র মাউন্ট ল্যাভিনিয়া সৈকতে। সৈকত ছেড়ে পরে সবাই নেমে গেছে কলম্বোর রাস্তায়। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে টিভির সামনে থাকা হাজারো জনতা। গাড়ির হর্ন, বাঁশি, চিত্কারে টুটে গেছে কলম্বোর রাতের নির্জনতা। সবচেয়ে অসহায় ছিলেন এ সময় কলম্বোর ট্রাফিক পুলিশরা।

কিছুক্ষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে পরাজিতদের মতো মুখ করে সবাই দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছেন শুধু। মধ্যরাতেও কলম্বো তখন যানজট আর জনজটের নগর! রাত গড়িয়ে কাল সকাল-দুপুর রাতেও হয়েছে টুকরো টুকরো উত্সব।

১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ের পরও উত্সব হয়েছিল। তবে গৃহযুদ্ধপীড়িত দেশেও সেটা সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি। বলা হচ্ছে, গৃহযুদ্ধ-উত্তর শ্রীলঙ্কায় তো বটেই, দেশের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা উত্সবের উপলক্ষ এবারের শিরোপাজয়।

উত্সব তাই হতে পারে আরও লম্বা, আরও রঙিন! এএফপি, ওয়েবসাইট।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।