আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামমন্দির প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

ভারতের নির্বাচনের ৯ পর্বের প্রথম দফা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬তম লোকসভার নির্বাচনের প্রথম দফায় গতকাল উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ও ত্রিপুরার মোট ছয়টি আসনে ভোট হয়। এদিকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে অযোধ্যায় ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। গতকাল ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে দলটি। রাজধানী নয়াদিলি্লতে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন বিজেপির প্রবীণ নেতা মুরলি মনোহর যোশি।

এর আগে নানা জটিলতায় ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে থাকা বিজেপি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশে দেরি করছিল। অবশেষে লোকসভা নির্বাচনের শুরুর দিনই নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করল দলটি। ইশতেহার ঘোষণার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী নরেন্দ্র মোদি ও শীর্ষস্থানীয় নেতা রাজনাথ সিং, লালকৃঞ্চ আদভানি, বর্তমান লোকসভার বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ প্রমুখ। নিজেদের অসামপ্রদায়িক দল বলে প্রচার চালালেও নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ পেল বিজেপির সামপ্রদায়িক রূপ।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের 'ত্রিপুরা পশ্চিম' এবং আসামের তেজপুর, কালিয়াবর, ডিব্রুগড়, জোরহাট ও লখিমপুর এই পাঁচটি কেন্দ্রে সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত গড়ে ভোট গৃহীত হয়েছে ত্রিপুরার কেন্দ্রগুলোতে ৮৩ শতাংশ ও আসামে ৭০ শতাংশ। তবে কয়েকটি কেন্দে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিকল হয়ে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ কিছুটা বিঘি্নত হয়েছে। এবারই প্রথম ভারতের নির্বাচনে 'না' ভোট প্রবর্তন এবং ভোট চলাকালে কেন্দ্রগুলো ধূমপান মুক্ত ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের সাত আসনে। আর সব রাজ্যের ভোট গণনা শুরু হবে ১৬ মে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের মধ্যে ভোটদানে উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে ত্রিপুরায় ভোটারদের লাইনে বিপুলসংখ্যক নারীর উপস্থিতি ছিল। আসামের পাঁচ আসনে মোট ভোটার ছিল ৬৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৪ জন। এদের মধ্যে ৩১ লাখ ২০ হাজার ৬৭ জন মহিলা।

মোট কেন্দ্র ছিল আট হাজার ৫৮৮টি। মোট প্রার্থী ৫১ জন। নিরাপত্তার জন্য কেন্দ ও রাজ্য মিলিয়ে ২৩৫ কোম্পানিরও বেশি নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত ছিল। নির্বাচনী লড়াইয়ে কংগ্রেস, বিজেপি, আম আদমি পার্টি, সিপিআইএম, এআইইউডিএফ, আসাম গণপরিষদ, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সমাজবাদী পার্টি অংশ নেয়। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবন সিং ঘাটোয়ার ও রানি নরহ, সাবেক কেন্দ্রেীয় মন্ত্রী বিজয়কৃষ্ণ হান্ডিক, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গাগৈর ছেলে গৌরব গাগৈ, বিজেপি সভাপতি সর্বানন্দ সনোয়াল, আসাম গণপরিষদ (অগপ)-এর অরুণ কুমার শর্মা।

বর্তমানে সিপিআই(এম)-এর শাসনে থাকা ত্রিপুরায় দুটি আসন রয়েছে। ১৯৫২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সিপিআই(এম) এ আসনে মোট ১১ বার জয়ী হয়। শেষবার ২০০৯ সালে আসনটি থেকে প্রায় আড়াই লাখ ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী খগেন দাস। এবার ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ভোটযুদ্ধে শামিল আছেন সিপিআই(এম), কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির প্রার্থীরা। মোট ১৩ জন প্রার্থী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সিপিআই(এম)-এর শঙ্করপ্রসাদ দত্ত, কংগ্রেস প্রার্থী তথা ত্রিপুরা কেন্দ ীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অরুণোদয় সাহা, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুধীন্দ্র দাশগুপ্ত ও তৃণমূলের রাজ্য চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী। এ আসনে মোট ভোটার ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন। ভোটে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানায় বিএসএফ তাদের অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে। ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত এবারের ভোটের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো 'নোটা' ভোট ( বাংলাদেশের প্রচলিত অর্থে 'না' ভোট)। অবশ্য এ বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশে পাঁচ বছর আগের ভোটেই ছিল।

যদিও সর্বশেষ ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শে 'না' ভোট তুলে দিয়েছে।

এদিকে গতকাল দিনের শুরুতে ভোট দিয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গাগৈ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জোরালো কণ্ঠে দাবি করেছেন, 'রাজ্যে নরেন্দ্র মোদি হাওয়া বলে কিছুই নেই। ' মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছেন, 'ত্রিপুরায় শুধু নয়, সারা দেশেও কোনো জায়গায় মোদি হাওয়া নেই। করপোরেট মিডিয়াই এ ধরনের হাওয়া তৈরি করেছে। ' অন্যদিকে জোড়হাটে নিজের ভোট দিয়ে তরুণ গাগৈ বলেন, 'মোদি ম্যাজিক এ রাজ্যে কোনো কাজে আসবে না।

আসামে শুধু তরুণ গাগৈ ম্যাজিকই কাজ করবে। '

অন্যদিকে ভারতের চলতি ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে অযোধ্যায় ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে দলটি। রাজধানী নয়াদিলি্লতে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন বিজেপির প্রবীণ নেতা মুরলি মনোহর যোশি। নয়াদিলি্লতে রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা অরুণ জেটলির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

ইশতেহার ঘোষণার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী নরেন্দ্র মোদি ও শীর্ষস্থানীয় নেতা রাজনাথ সিং, লালকৃঞ্চ আদভানি, বর্তমান লোকসভার বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ প্রমুখ। নিজেদের অসামপ্রদায়িক দল বলে প্রচার চালালেও নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ পেল বিজেপির সামপ্রদায়িক রূপ। এ ছাড়া ইশতেহারে উগ্র হিন্দুত্বের ইস্যুকে একেবারেই বাতিল করে দেওয়া হয়নি। যোশি বলেন, তাদের এ নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে এক লাখ লোকের মতামতের ভিত্তিতে।

বিজেপি হিন্দুত্ববাদের পথ ধরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে কি না, জানতে চাইলে ইশতেহার কমিটির চেয়ারম্যান মুরলি মনোহর যোশি বলেন, হিন্দুত্ব কখনোই বিজেপির নির্বাচনী বিষয়ের মধ্যে ছিল না।

এবারের দলীয় ইশতেহার পুরোপুরি উন্নয়ন ও শাসন পরিচালন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ইশতেহারে পাঁচটি 'টি'র ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ট্যালেন্ট, ট্যুরিজম, ট্রেড, ট্রাডিশন ও টেকনোলজি। যোশি বলেন, 'গত ১০ বছরে আমাদের দেশ পিছিয়ে গেছে। ইশতেহারে সেই সব বিষয়ের ওপরই নজর দেওয়া হয়েছে যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

' শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারীর স্বাধিকার ও পরিকাঠামোর মতো বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'এই ইশতেহার শুধু কাগজের নথি নয়, এটি আমাদের লক্ষ্য, আমাদের দিশা। আমরা তা পূরণ করব। '

ইশতেহারে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ছাড়া বিজেপির ইশতেহারে গ্রামীণ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বুলেট ট্রেন চালাতে রেলে চতুর্ভুজ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এ ছাড়া দলটি ক্ষমতায় গেলে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরত আনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তার প্রতিটি রাজ্যে এইমস তৈরি ও কর ব্যবস্থা সহজ করবে। খুচরা ব্যবসা ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

ইশতেহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ক্ষেত্রেও সুর নরম করা হয়েছে।

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ সরাসরি বাতিল নয়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদকে বাঁচিয়ে রেখে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদার আওতায় আনার পাশাপাশি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে তাদের বাসভূমিতে কীভাবে ফেরত পাঠানো যায় এ বিষয়ে আলোচনার কথা ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

নির্বাচনী ইশতেহারে আট দফা উন্নয়নের মডেল রাখা হয়েছে। ৫২ পৃষ্ঠার ইশতেহারের মূল স্লোগান- এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত। একই সঙ্গে রাখা হয়েছে সর্বাত্দক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।

খুচরা ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিনিয়োগ টানতে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কর-কাঠামো সংস্কারের।

ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকারকে কটাক্ষ করে ইশতেহারে দেওয়া হয়েছে নীতিপঙ্গুত্ব ও দুর্নীতি দূরীকরণ এবং শাসনব্যবস্থায় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি। বিচার বিভাগীয় ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও রাখা হয়েছে ইশতেহারে।

গত সপ্তাহে দলটির ইশতেহার প্রকাশের কথা থাকলেও দলত্যাগী বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংয়ের তৈরি করা খসড়া পছন্দ না হওয়ায় বেঁকে বসেন নরেন্দ্র মোদি।

শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন আনতে গিয়েই নির্ধারিত দিনে প্রকাশ করা হয়নি ইশতেহার। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরুর দিন ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। এতে দেশটির নির্বাচন কমিশন প্রথমে আপত্তি জানালেও প্রথম ভোটের দিনই ইশতেহার প্রকাশের অনুমতি দেয়। তবে শর্ত বেঁধে দেয় যে যেসব অঞ্চলে এদিন ভোট হবে (আসাম ও ত্রিপুরা), সেখানে বিজেপির ইশতেহার প্রচার করা যাবে না।

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।