আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থাভাবে ১৯ বছরের ছেলের সাথে ছয় বছরের মেয়ের বিয়ে, ঘটনাস্থল আফগানিস্তান।



ফুলের মতো নিষ্পাপ তুলতুলে মুখের এই মেয়েটির নাম নাগমা। সে কখনও স্কুলে যায়নি, কোন সিনেমা দেখেনি, এমনকি টেলিভিশনও না। তার বাবার নাম তাজ মুহাম্মদ। স্ত্রী ও নয় ছেলেমেয়েসহ সে বাস করত আপগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশ হেলমন্দে।

নাগমার গল্প এ পর্যন্ত অতি সাধারণ ঘটনা বলে মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক।

কিন্তু এরপর নাগমার জীবনে যা ঘটে তা মেনে নেয়া যে কোন বিবেকবান মানুষের জন্য কষ্টকর। যুদ্ধের সময় সে তার পরিবারের সদস্যসহ আশ্রয় নেয় একটি রিফিউজি ক্যাম্পে। কিন্তু সেখানে গিয়েও চরম দুরবস্থায় পতিত হয় তাজ মুহাম্মদ ও তার পরিবার। তার তিন বছরের এক ছেলে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। এরপর যখন তাজ মুহাম্মদের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সে বাধ্য হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

কিন্তু হাসপাতালের বিল পরিশোধ করবে এমন সামর্থ তাজ মুহাম্মদের নেই। তাই সে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও পরিবারের অন্যান্য খরচ মিটানোর জন্য প্রায় ২৫০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ টাকা ধার করে।


নাগমার বাবা তাজ মুহাম্মদ


আপাতত মুক্তি পায় তাজ মুহাম্মদ। কিন্তু এর পরেই ঘটে আসল ঘটনা। ঋণদাতা তার পাওনা পরিশোধের জন্য তাজ মুহাম্মদকে চাপ দিতে থাকে।

অথচ তাজ মুহাম্মদ তখন কপর্দকশূণ্য। তাই সে ঋণদাতার বিকল্প প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। ছয় বছরের ফুলের মতো এই মেয়ে নাগমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় ঋণদাতার ১৯ বছরের ছেলের সাথে।

আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই খবরটি জানতে পেরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দায়িত্ব দেয় কিম্বারলি মল্টে নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক আইনজীবীকে। কিম্বারলি সানন্দে রাজী হয়ে যান।

একাজে তিনি সাহায্য নেন আফগানিস্তানে তার পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির এবং তিনি সফল হন নাগমাকে এই অনাকাংখিত বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত করে এনে তারা বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে। কয়েকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসে তাজ মুহাম্মদের ঋণ পরিশোধ করেন। তাজ মুহাম্মদ বলেন, আমিও চাই আমার সন্তানেরা সঠিকভাবে জীবন যাপন করুক। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তখন আমার মনে হয়েছিল জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিতে। কিন্তু তা না করে আমি এক সন্তানের জীবনকে বাজি রেখে বাকীদের জীবনের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলাম।



তাজ মুহাম্মদের পরিবারের এই চিত্র আমাদেরকে মেয়ে শিশুদের প্রতি মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যে অর্থ লগ্নিকারী ব্যক্তি তাজ মুহাম্মদকে বাধ্য করেছিল তার ১৯ বছরের ছেলের সাথে নাগমার বিয়ে দিতে আফগানিস্তানের আইন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসেনি। আধুনিক যুগের এই ব্যর্থতাকে কি কোনভাবে ক্ষমা করা যায় ?
 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।