আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যামেচার পোলাপানের বান্দরবন ভ্রমণ - পার্ট ১

ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার সবে শেষ করেছি, প্রচণ্ড পড়াশোনার চাপ, ঢাকার বেশ নামিদামি একটা কলেজের স্টুডেন্ট তখন ------ এতকিছু হলে কি হবে, কাজের বেলায় ঠন-ঠন, বইয়ের পাতা ছেড়ে আমার মন পড়ে থাকে ফেসবুকের হোমপেজে কিংবা পত্রিকার "বেড়ানোর" পাতায়, দেশ বিদেশ ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করে। মনটা শুধু নতুন অভিজ্ঞতা খোঁজে।

জন্মদাতা পিতা অন্ন-বস্ত্রের সাথে আর একটা জিনিস উদারভাবে দিয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা। কি পড়ব, কি করবো সব নিজের ইচ্ছায় হতো। সন্দেহ নেই, বাপজান এই সুন্দর ব্যাপারটা নিতান্তই অপাত্রে দান করেছিলেন, প্রাপ্ত স্বাধীনতার সবটুকুই আমি নিজের ইচ্ছেমত বেহিসেবী খরচ করতাম- কারণে, কিংবা অকারণে।

হাতখরচের টাকা বাচিয়ে আর কাল্পনিক টিউটরের টাকা মেরে দিয়ে কখনো গিলেছি কক্সবাজারের সমুদ্রের লোনা বাতাস কখনো সিলেটের ঝরনার পানি - বাসায় টেরটি পর্যন্ত পায়নি


ইন্টারে যা হয়, কলেজের পর ব্যাচে প্রাইভেট পরতাম এক ভাইয়ার বাসায়। ডিসেম্বর মাস, কোনো এক দৈনিক পত্রিকার ভ্রমন পাতায় চোখ আটকে গেলো,বান্দরবনের "জাদিপাই" ঝর্ণার ছবি আর যাবার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে। হুশ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাতা উল্টালাম। সন্ধায় প্রাইভেটে গিয়ে দেখি সেইখানেও সেই পত্রিকা, ভ্রমণ পাতাটা আমায় ডাকছে। পাশে সৌরভ বসা,(আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, আমার মতই ক্রেজি ), পেপারটা দেখিয়ে ফাজলামি করেই বললাম, দোস্ত, চল যাই

বলেই বুঝলাম, ভুল করেছি।

সাথে সাথে রিএকশান হইলো, "তুই দেখসস?? আমিও সকালে দেখার সময় ভাবতিসিলাম, কবে যাওয়া যায়। চল তাইলে"। রিপ্লাই পাইয়া আমার মুখ কালা, বান্দরবনের খরচ অনেক বেশি এই ব্যাপারটা প্রথম মাথায় আসলো। প্রসঙ্গত বলে রাখি ঐ ব্যাচে আমরা যে কয়জন পরতাম, তারা বেশ ক্লোজ, কিছুদিন আগেই সবাই মিলে সিলেট ঘুরে এসেছি। পড়ার মাঝখানে সৌরভ আমাদের টিচার ভাইয়াকেই বলে বসলো, "ভাইয়া, যাবেন নাকি?"
আমি মনে মনে ভাবলাম, এইবার গেছে!! এমনিতেই প্রিটেস্টের রেজাল্ট সুবিধার হয় নাই, তার মধ্যে এই কাহিনী!!
ভাইয়ার রিপ্লাই শুনে আমার রিতিমত আক্কেল গুরুম, বললেন,"তোমরা দেখসো পেজটা? আমারও অবশ্য বান্দরবন যাওয়া হয়নাই।

যাবা নাকি তোমরা??"


ভাইয়ার কথা শুনে বুঝলাম সিগনাল গ্রিন। আমরা সবাই একে অন্যের দিকে তাকালাম, সবাই কমবেশি আর্টিকেলটা দেখেছে, আর জাদিপাইয়ের ছবি দেখে প্রেমে পরেনি, এরকম মানুষ পাওয়া দুস্কর। ব্যাচের সবথেকে নার্ড ছেলেটাও বলে বসলো, তোমরা গেলে যাবো না কেনো??

এবার ডেট ফিক্সিং। ঐ বছর ১৬ ডিসেম্বরের সাথে শুক্রবার মিলিয়ে ৩/৪ দিনের একটা ছুটি পড়েছিল, সময়টা শীতকাল, বান্দরবন যাবার উপযুক্ত সময়। ঠিক হলো ১৪ তারিখ রাতে রওনা দেবো ১৭ ডিসেম্বর ব্যাক।



এইখানে একটা বড় কমিউনিকেশান গ্যাপ হয়ে গিয়েছিলো, আমরা ভাবসিলাম আমাদের টিউটর ভাইয়া নিশ্চয়ই খোঁজ নিয়ে প্ল্যান ঠিক করে রেখেছে, কোন কোন পয়েন্টে আমরা যাবো, আর টিউটর ভাইয়া ভেবেছেন প্রতিবার যেহেতু আমরা(আমি আর সৌরভ) ঠিক করি, আমাদের নিশ্চয়ই প্ল্যান ঠিক করা আছে,। আর বাকিরা আমাদের উপর পুরো ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিল মূলত আমাদের কারোরই কোনো প্ল্যান ছিলো না। থাকবে কি করে, জানতামই না যে বান্দরবনে কি কি দেখার আছে

যারা আমার মতো ঘুরাঘুরি করেন, বা ভবিষ্যতে করবেন, প্লিজ এই ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল রাখবেন, যেখানে যাবেন, সেটার
সম্পর্কে যতো বেশি পারেন তথ্য সংগ্রহ করবেন, ডেটওয়াইজ ঠিক করে রাখবেন কোন দিন কোথায় যাবেন। এইটা করে রাখলে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি ঘুরতে পারা যায় এবং ফালতু জায়গায় সময় নষ্ট হয় না।

বান্দরবন সম্পর্কে কোন আইডিয়াই নাই, পরিচিত কেউ যায়নাই- মোটামুটি কোনোরকম ইনফো ছাড়াই আমরা বান্দরবন যাবার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম।

সবমিলে লোকসংখা দাঁড়ালো সাত জনে। বাসের টিকেটও কাটা হয়ে গেলো ৩ দিন আগে, এখন শুধু দিনটার অপেক্ষা ...........



ছবিঃ বান্দরবনের কোনো এক পাহাড়ে (আমার তোলা) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।