আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাসর

মেয়েটা একটু অন্যরকম । আর দশটা মেয়ের মত না । পাশাপাশি বাসায় থাকে অথচ ওর চেহারাটা ভালভাবে দেখতে পায়নি রুমি । ওর নাম সাথী । লোকমান সাহেবের তিন মেয়ের মধ্যে ও বড় ।

বাকী দুটো ছোট । মাঝে মাঝে রুমিদের বাসায় আসা যাওয়া করে । মায়ের সাথে বা একা একাও । প্রায় পাঁচ বছর যাবত লোকমান সাহেব আর রুমিদের পরিবার পাশা পাশি বাসায় বাস করে । টিনশেড বিল্ডিং ।

প্রতিটিতে দুটি করে মোট ছটি বাসা । সরকারী কোয়ার্টার । বাসাগুলোর সামনে পেছনে বেশ খালি জায়গা । তাতে নানা রকম গাছ গাছালি- আম , কাঁঠাল , নারিকেল , কামরাংগা । শহরতলীতে চমৎকার গ্রামীন পরিবেশ ।

পেছনে আবার একটা পুকুর আছে । এতে পাকা ঘাট আছে । ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকলে রুমির রুমমেটরা হলে থাকলেও ও চলে আসত মফস্বল শহরের এই বাসায় । ওর এ বাসায় তেমন থাকাই হয়নি । বাবা যখন বদলী হয়ে এলেন এ শহরে তার আগে থেকেই রুমি ঘর ছাড়া ।

সে ইন্টার করেছে নটরডেম থেকে । কজন মিলে ঢাকার আরামবাগে মেসে থেকেছে । ইন্টারের পর কোচিং । তাও ঢাকায় । শেষে বুয়েট ।

মাস ছয় আগে পাশ করে বেরিয়েছে । এর মাঝে একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় চাকরি হয়েছে । চাকরীর বয়স দুমাস । লোকমান সাহেবের বড় মেয়েটি বেশ কিছুদিন ধরে ওকে ভাবাতে শুরু করেছে । উনার তিন কন্যার কাউকেই সে কোনদিন ভালভাবে লক্ষ্য করেনি ।

মনে হয় দু আড়াই বছর আগেও সবাই বেশ পিচ্চি ছিল । সাথী মনে হচ্ছে হঠাৎই বড় হয়ে উঠেছে । থার্ড ইয়ার ফাইনালের পর বাসায় এসে বিষয়টা রুমির নজরে পড়ে । মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনে ফিরছিল । পাশের বাসার দিকে তাকাতেই দেখল দীর্ঘ কাল চুল ছড়িয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ।

এমন ভাবে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে নুইয়ে করে রাখা মুখের একপাশের সামান্য দেখা যায় । রুমি চিনতে পারল না মেয়েটিকে । কে ও ? লোকমান সাহেবের বড় মেয়েটা ? সাথী ? অবশ্য মেয়েটি যখন ছোট ছিল ওদের বাসায় আসতো । রুমির ছোট বোন দীবার সাথে গল্প টল্প করতো । তখনো গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য করা হয়নি ।

রুমির ছোট বোন দীবা শহরের ইউনিভার্সিটি কলেজে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের ছাত্রী । বাসায় ঢুকে দীবাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা , ‘ লোকমান কাকার বাসায় কি কেউ বেড়াতে এসেছে ?’ এমন অদ্ভূত প্রশ্ন শুনে দীবা অবাক হল । বলল, ‘ কেন বলতো ?’ ‘ দেখলাম বারান্দায় বড় একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । ’ ‘ উনাদের মেহমান এসেছে বলেতো জানিনা । সাথী নয়তো ?’ ‘আমি কেমন করে জানব ?’ ‘ বাহ , তুমি সাথীকে চিন না ?’ ‘ মুশকিল ।

এত বছর পাশাপাশি আছি চিনি না বলি কিভাবে ? তবে সত্যি কথা হল আসলেই দেখে চিনতে পারবনা । ’ দীবা অবাক হয়ে চেয়ে রইল রুমির দিকে । বলল, ‘ কি অবিশ্বাস্য কথা বলছ তুমি । এত বছর পাশাপাশি বাসায় থাকছি । সামনে দিয়ে ছোট থেকে বড় হল ।

ওকে তুমি চিনতে পারবেনা একথা আমাকে মেনে নিতে বল ? নাকি সাধু সাজতে চাইছ ?’ ‘ কি বলছিস তুই । সাধু সাজতে চাইছি মানে ?’ দীবা ওর পাঁচ বছরের ছোট । তবে ইদানিং খোঁচা দেয়ার কিংবা রসিকতার অভ্যাস ভালই রপ্ত করেছে । দীবা বলল, ‘ না মানে এইযে মেয়েদের দিকে তোমার কোন আগ্রহ নেই , ওদের মুখের দিকে চেয়েই দেখ না তুমি । ’ ‘ শোন ফাজলামী করিস না ।

যা সত্যি তাই বলছি । ‘ ‘আচ্ছা ঠক আছে । আমি খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাব ওই মেয়েটি কি মেহমান না সাথী ? আর সাথীকে এনে তোমার সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেব । ’ ‘ দেখ দীবা উলটাপালটা কাজ করবিনা । ভুলে যাবিনা আমি তোর বড় ভাই ।

’ ‘ ঠিক আছে । ফাজলামী বাদ । তোমাকে শুধু খবরটাই এনে দেব । ’ রুমি তাকাল দীবার দিকে । ওর চোখে মুখে প্রচ্ছন্ন কৌতুক ।

সন্ধায় দীবা এসে হাসতে হাসতে জানাল কোন মেহমান নয় মেয়েটি স্বয়ং সাথী । দুষ্টুমীর হাসি ওর মুখে । রুমিকে জিজ্ঞেস করল, ‘ মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দর আর লক্ষী । পছন্দ হয় তোমার ?’ ‘ কিসব বলছিস , ওকে তো ভাল করে দেখিইনি । পছন্দ অপছন্দের কি আছে ?’ ‘ সেজন্যই বলছি ওকে এনে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।

’ ‘ কি আবোল তাবোল কথা বলিস ?’ ‘ আবোল তাবোল কথা না ভাইয়া । ভেবে দেখ । মেয়েটা কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর আর ভাল । সাথীর মা বাবা কত ভাল দেখ না ?’ কথা ঠিক । লোকমান সাহেব খুবই ভাল ও নিরিবিলি ধরনের মানুষ ।

অল্প কথা বলেন । বলেনও খুব নীচু স্বরে । দোকান টোকান বা ক্লাবে আড্ডা ফাড্ডায় যান না । ব্যবহার অতি মধুর । খালাম্মাও খুবই ভাল মহিলা ।

উনার সাথে দেখা হলে রুমির কিঞ্চিৎ কথা বার্তা হয় । যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মহিলা । পরিবার হিসেবে এরা সত্যিই ভাল । রুমির ভেতর কেমন নরম ভাব জমতে শুরু করেছে । কিন্তু সাথী কি কিছুটা অহংকারী ? দুতিন দিন পরের ঘটনা ।

বিকেলের দিকে রুমি বাসা থেকে বেরিয়েছে । বাসায় এলে এসময়টায় ও পার্কে ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে । বেরিয়েই দেখতে পেল রাস্তার পারের ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে সাথী বাসার দিকে আসছে । ওর দৃষ্টি অবনত । কাছাকাছি আসতেই সে মাথা আরো নুইয়ে দিল ।

প্রায় নব্বই ডিগ্রীর কাছাকাছি । চেষ্টা করেও রুমি চেহারা ভাল করে দেখতে পেল না । মেয়েটি ফর্সা তবে একেবারে উজ্জ্বল ফর্সা নয় । বেশ লম্বা । এদেশের গড় মেয়েদের চেয়ে বেশি ।

পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চির কম হবেনা । ওর চুলগুলো খবই সুন্দর । বেনী করেছে । পিঠের নীচ পর্যন্ত ঝুলে আছে । চমৎকার মোটা পেঁচান বেনী ।

মাথার উপর দিয়ে উড়না জড়ান । ক্রস করার পর রুমি আড়ে ঘাড়ের উপর দিয়ে চেয়ে দেখল সাথীর নোয়ান মাথা বেশ খানিকটা উপরে উঠল । এটা কি হল ? শুধু রুমির জন্যই চেহারাকে এভাবে আড়াল করল ? সৌন্দর্যের অহংকার ? নাকি রুমির প্রতি অবজ্ঞা ? ওর খানিকটা রাগ আর অভিমান হল । সাথী ওর মস্তিষ্কে স্থান দখল করতে থাকল । ফোর্থ ইয়ারে যে কবার বাসায় এল প্রতিবারই ওকে দু একবার যা দেখেছে সে ওই বারান্দায় গ্রীলে ঠেস দেয়া রাস্তার দিকে পেছন ফিরা অবস্থায় ।

শুধু ফোর্থ ইয়ার ফাইনালের প্রিপারেটরী লীভে একদিনের জন্য বাসায় এসে ছোট্ট ধাক্কা খেল রুমি । মোড়ের দোকানে দাঁড়য়ে সবে সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করেছে । দেখা গেল সাথী আসছে । একদম কাছে । অতিক্রমের সময় মুখ তুলে তাকাল ।

মুখোমুখি একেবারে চোখে চোখে। একপলকের জন্য । ওই একপলকই যথেষ্ট ছিল । রুমির হৃদয়ের গভীরে কবিতার পংতি জেগে উঠল । সুখের তারে মধুর সংগীতের ঝংকার ধনিত হল ।

রুমি ভাবল , এত সুন্দর গভীর চোখ মেয়েটির ! ওতো অহংকারী হতেই পারে ! রুমি অবাক হল ! অবহেলার কলি এমন ফুল হয়ে ফুটল কবে ? ছেলেবেলা সামনে দিয়ে কত ঘুরেছে । তেমন খেয়ালই করা হয়নি । ভেতরে অচেনা আন্দোলন শুরু হল । ফাইনাল পরীক্ষার চিন্তা মাথায় হাল্কা হয়ে এল । ফাইনালের ফলাফল হয়ে যাওয়ার পর রুমি তল্পি তল্পা সহ বাসায় চলে এল ।

সাথীকে বারান্দায় দেখা যাচ্ছে না । রাস্তা ঘাটেতো নয়ই । বিষয়কি ? দীবাকে জিজ্ঞেস করা যায় । কিন্তু এতে ঝুঁকি আছে । ও খেপানোর মওকা পেয়ে যাবে ।

না না করেও শেষে দীবাকেই জিজ্ঞেস করল । বলল, ‘ কিরে সাথী কিসে পড়ে ?’ দীবা মুখ বাঁকা করে জবাব দিল, ‘ সত্যি জাননা ? আরে ওযে এবার ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছে । পরীক্ষা চলছেতো । ’ রুমি এবার বুঝতে পারল কেন ওকে বারান্দায় দেখা যায়না । ‘ কি মনে ধরেছে ওকে ?’ কেমন যেন চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করল দীবা ।

ওর দিকে কপাল কুঁচকে চাইল রুমি । জবাব দিল না । ‘ দেখ ভাইয়া , হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারিও না । ’ ‘ খুব পেকে গেছিস , না । কথা কম বলতে পারিস না ?’ ‘ ঠিক আছে এখন থেকে কম কথা বলব ।

’ বেনী দুলিয়ে বিদায় নিল দীবা । এর মাঝেই একটা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় রুমির চাকরি হয়ে গেল । ময়মনসিংএ পোষ্টিং পেল । দ্বিতীয় মাসের বেতন পেয়ে বাসায় এসেছে । শুক্রবারের সাথে দুদিন সিএল এনেছে ।

লোকমান সাহেবের একজন জুনিয়র কলিগ আলতাফ সাহেব । উনি এলেন । রুমিকে বললেন , ‘ তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে, এসো । ‘ বলে রুমিকে নিয়ে উনি পার্কের দিকে চলে গেলেন । নিরিবিলি একটা বেঞ্চি দেখে বসলেন ।

রুমি খানিকটা অবাক হল । ব্যাপার কি ? কি এমন কথা যার জন্য ওকে একেবারে দূরে পার্কে নিয়ে এলেন আলতাফ কাকা । ‘ লোকমান সাহেবের মেয়ে সাথীকে কেমন লাগে তোমার ?’ একেবারে সরাসরি প্রশ্ন করলেন উনি । রুমি অবাক হয়ে বলল, ‘ কি ব্যাপার কাকা , এভাবে জিজ্ঞেস করলেন ?’ ‘ বল, মেয়েটিকে তোমার কেমন লাগে ?’ ‘ খারাপ লাগার কি আছে ?’ ‘ তার মানে ভাল লাগে ?’ একটু ভাবল রুমি । বলল, ‘ জ্বি ভালই লাগে ?’ ‘ ওকে বিয়ে করবে ?’ সাথে সাথেই কোন উত্তর দিলনা রুমি ।

আলতাফ কাকার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল । বলল, ‘ কাকা আমার মনে হয় আপনি নির্দিষ্ট কিছু বলতে চান । তার পুরোটা একবারে বলুন । ’ আলতাফ সাহেব কিছু সময় ভাবলেন । রুমির আরো কাছে এগিয়ে বসলেন ।

বললেন, ‘ তুমি মনে হয় বুঝতে পারছ । তোমার বাবা মা সাথীকে তোমার বউ করে আনতে চান । সাথীর মা বাবাও রাজী । বরং ওদেরই আগ্রহ বেশি । এখন তুমি মত দিলেই হতে পারে ?’ ‘ সবার মতামত জানলাম ।

কিন্তু সাথীর কি ইচ্ছে ?’ আলতাফ চাচা অবাক হয়ে বললেন , ‘ সাথীর কি ইচ্ছে মানে , আরে ও তো এক পায়ে খাড়া । নিজেকে কি ভাব তুমি ? তোমার মত সোনার ছেলে আর একটা দেখাওতো এই এলাকায় ! বলে সাথী রাজী কিনা ?’ রুমির বেশ ভাল লাগল কথাগুলো শুনতে । মনে হল ওই সুন্দর চোখ আর চুলের লম্বা মেয়েটা ওর হতে যাচ্ছে । ‘ সবই ঠিক আছে কাকা । ধরুন আমারো পছন্দ হয়েছে ।

কিন্তু আমার তো কাকা বিয়ে করতে দেরী আছে । ‘ ‘কেন বাবা , দেরী কেন । ’ ‘ দেখেন কাকা মাত্র চাকরিতে ঢুকেছি । দু তিন বছর যাক । কিছু টাকা পয়সা জমাই ।

খরচ আছেনা ?’ ‘ কিচ্ছু খরচ নেই । কোন অনুষ্ঠান হবেনা । ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে ব্যস । এতে তোমার আপত্তি আছে ?’ ‘ কোন আপত্তি নেই । আমি বরং এটাই পছন্দ করি ।

কিন্তু তারপরো সময় দরকার । ’ ‘ কেন সময় দরকার বলতো ? ওদের কোন চাহিদা নেই । তোমার বাবারও কোন চাহিদা নেই । ওরা মেয়েকে সাজিয়ে দেবে । ছেলের বউএর জন্য তোমার মাও সাত ভরির অলংকার গড়িয়ে রেখেছেন ।

তাহলে ?’ ‘ কিন্তু আমার হাত একেবারেই খালি । এমাসের বেতনের চব্বিশশ টাকা আছে । ’ ‘ আরে পাগল । তোমার কিছুই লাগবেনা । মেয়ের কাপড় শাড়ি সাজার জিনিস পাতি সব তোমার মা বাবাই কিনবে ।

তোমাকেও নিজের পছন্দ মাফিক কিছু কেনার জন্য তিন হাজার টাকা দেবে তোমার বাবা । এবার বল ঠিক আছে ?’ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল রুমি । মাথার ভেতর ভাবনা জট পাকিয়ে যাচ্ছে । কি হচ্ছে এসব ? এত হুট হাট করে বিয়েতে মজা আছে ? তবে মেয়েটার চোখ দুটো ওকে টানছিল ভীষন । ‘ কিন্তু কাকা , বাবা মাতো আমাকে কিছু বললেননা ?’ ‘ তুমিকি বোকা ? এসব কথা কি মা বাবা বলে ? আমাকে পাঠিয়েছে কে ? ’ ‘ কে, বাবা ? ’ ‘ হ্যাঁ তোমার বাবা মাই পাঠিয়েছে ।

শুধু তারাই না । আমাকে আজ রাতেই লোকমান সাহেবকেও তোমার মত জানাতে হবে । এখন বল তুমি রাজী আছ ? বল আলহামদুলিল্লাহ ?’ আলতাফ কাকার অবস্থা দেখে রুমি অল্প হাসল । মনে হচ্ছে ও রাজী না হলে উনি নিজেই হার্টফেল করবেন । ‘ ঠিক আছে কাকা আমি রাজী ।

’ আলতাফ সাহেবের দিকে চেয়ে বলল রুমি । কেউ যেন এতক্ষণ আলতাফ সাহেবের হার্ট খামচি দিয়ে ধরে রেখেছিল । এইমাত্র ছাড়ল । হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি । ভাবটা এমন যেন এভারেস্ট জয় করেছেন ।

পরের মাসে বসের কাছে বলে শুক্রবারের সাথে আরো চারদিন সিএল নিয়ে বাসায় এল রুমি । বিয়ের জন্য আসা । ওর বেশ লজ্জা লাগছিল । ও বলেছিল বটে ওর হাত খালি । আসলে ওর হাত একেবারে খালি না ।

টিউশনির জমানো তিন হাজার দুইশ টাকা আছে ওর কাছে । বাবার কাছ থেকে পেয়েছে তিন হাজার । ও ভাবল নিজের জন্য দু একটা ভাল জামা কাপড় দরকার । সেদিন সকাল এগারটার দিকে গেল শহরের সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকানে । বিশাল দোকান ।

সার্ট প্যান্ট ছোট ও বড়দের , শাড়ি , সার্ট প্যান্ট স্যুটের কাপড় সবই পাওয়া যায় । সবসময়ই ভিড় লেগে থাকে । ও সার্ট প্যান্ট সেকশনের দিকে গেল । গিয়ে দেখল বেলী । সাথীর ছোট বোন ।

ক্লাশ সেভেনে পড়ে । বিগত পাঁচ ছয় মাসে এর সাথে ভালই খাতির হয়েছে । ওকে দেখতে পেয়েই বেলী বলল, ‘ কেমন আছেন ভাইয়া ভাল ?’ দু পাশে সাবধানে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নিল রুমি আর কেউ আছে কিনা , সাথী বা লোকমান সাহেব আছে কিনা । মনে হল কেউ নেই । তাহলে বেলী কি একা এসেছে ? বলল ও, ‘ আমি ভাল আছি ।

তুমি ভাল আছ ?’ ‘ ভাইয়া আপনি আসাতে ভাল হয়েছে । আমাদের একটু সাহায্য করুন । সার্ট পছন্দ করে দিন । ’ ‘ তোমার আব্বুর জন্যতো ?’ ‘ না না আব্বুর জন্যনা । ’ বলে ও পাশে তাকাল ।

রুমি দেখল বেলীর পাশেই সাথী দাঁড়িয়ে আছে । ধক করে উঠল ওর বুকের ভেতরটা । এ এতক্ষণ কোথায় ছিল ? কোথা থেকে এল ? রুমি দেখতে পেল না কেন ? ‘ বেলী বল উনার মতই একজনের জন্য । লম্বা চওড়ায় একই রকম ?’ এ আবার কোন স্টাইলে কথা শুরু করল । সাংঘাতিকতো ।

রুমিইবা কম যায় কেন । বলল, ‘ বেলী জিজ্ঞেস কর গায়ের রঙ কেমন ?’ ‘ বেলী বল উনার মতই । ’ ওদের এমন কথা বার্তায় বেশ মজা পাচ্ছে বেলী । রুমি সার্ট পছন্দ করে দিল । সাথী বলল, ‘ বেলী বল আরেকটা পছন্দ করে দিতে ।

’ রুমি বলল, ‘ একটাই যথেষ্ট । অপচয় করা ভাল না । ’ ‘ বেলী বল দুটাতে অপচয় হয়না , এর বেশি হলে হয় ?’ ‘ বেলী , বল এমন আজব থিওরীতো শুনিনি , এটা তো ছেলে হোক মেয়ে হোক দু সন্তানই যথেষ্ট সেই কথার মত মনে হচ্ছে । ’ ‘ যেটার মতই মনে হোক বল আরেকটা সার্ট পছন্দ করতে । ’ রুমি ভাবল মেয়ে দেখি হেভী সেয়ানা ।

আরেকটা সার্ট পছন্দ করে দিল ও । এরপর পছন্দ করে দিতে হল স্যুটের কাপড় । টাই পছন্দ করতে গিয়ে বলল , ‘ এটা কিন্তু একটার বেশি কোনই প্রয়োজন নেই । ফাঁসির জন্য মজবুত রশি একটাই যথেষ্ট । ’ ‘ বেলী বল ফাঁস একা নেয়া যাবেনা দুজনে নিতে হবে ।

মজবুত রশি তাই দুটোই লাগবে । ’ রুমি যেন ভিরমি খেল । ওরেব্বাপ, এতো ভয়ানক ট্যাটনা । আজ রুমি সাথীর বাসর রাত । সাথীদের মাঝের ঘরে ।

বারটার সময় রুমিকে ভেতরে ঢোকাল । খাট পুরনো তবে বিছানা বালিশ ঝকঝকে নতুন । তাজা ফুলে সাজিয়েছে মেয়েরা । আশে পাশের সব বাগানের ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এসেছে মনে হয় । সাথীকে আগেই বসিয়ে রেখে গেছে ।

চমৎকার লাল শাড়ি পরে আছে । রুমি এসে সাথীর সামনে মুখোমুখি বসল । অবগুন্ঠনের ভেতরে অবনত মুখ । ফ্লোরসেন্ট বাতির আলো পড়েছে নক্সা আঁকা মসৃন মুখটিতে । কি সুন্দর ত্বক , ঠোঁট , নিমিলিত চোখ ।

রুমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বলল, ‘ বাহ , কি অপরূপ রূপ তোমার ? তোমার অহংকার আমার মনে অভিমানের কষ্ট জন্ম দিয়েছিল , আজ তা ভুলে গেলাম । ’ সাথীর নিমীলিত চোখের পাঁপড়িগুলো সামান্য কাঁপল । ঠোঁট জোড়া অল্প নড়ল । তারপরো কিছু বলে উঠতে পারল না । রুমি বলল, ‘ তুমি কেমন আছ সাথী ? ’ কিছু বলল না মেয়েটি ।

তবে খাট থেকে নীচে নেমে এল । উবু হয়ে রুমির পায়ে হাত ঠেকিয়ে সালাম করল । রুমি বোধহয় এর জন্য তৈরী ছিল না । কি করবে ভেবে উঠতে পারল না । হঠাৎ সাথীকে দুহাতে বুকে টেনে নিল ।

জীবনের প্রথম নারী স্পর্শ ওর ভেতরে হাহাকার তৈরী করল । সুখ নায়েগ্রা প্রপাতের শব্দ আর গতি নিয়ে হৃদয়ে আলোড়ন তুলল । ‘ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।