আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদকের জালে বন্দী থাই নারীরা

সহজভাবে অর্থ উপার্জনের লোভ, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি বা পারিবারিক চাপে থাইল্যান্ডে হাজার হাজার নারী মাদকসংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযুক্ত হয়ে তাঁদের অনেককেই কারাবরণ করতে হচ্ছে। কেবল মাদকজনিত কারণে থাইল্যান্ড বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নারী কারাভোগী জনগোষ্ঠীর দেশে পরিণত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের অপরাধ সংশোধন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার নারী কারাবন্দী রয়েছেন। দেশটির মোট কারারুদ্ধ মানুষের ১৪ শতাংশ তাঁরা।

এসব নারীর প্রায় অর্ধেকই মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত ছিলেন।
রয়টার্সের এক খবরে মাদকের কারণে ভুক্তভোগী কয়েকজন নারীর করুণ চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই নারীদের একজন ২৭ বছর বয়সী মাই। মাত্র ২০টি ইয়াবা বড়ি পাচারে জড়িত থাকায় তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ডে মেথামফেটামিন জাতের ওই ওষুধ স্থানীয়ভাবে ‘পাগলা ওষুধ’ হিসেবে পরিচিত।

দেশটির ট্যাক্সিচালক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পর্যন্ত হাজার হাজার থাইল্যান্ডের নাগরিক এসব ওষুধ সেবন করেন।
নিজের কারাদণ্ড প্রসঙ্গে মাই বলেন, ‘আমার কাছে একজন ব্যক্তির ব্যবহারের জন্য যতটা থাকা দরকার, তার চেয়ে বেশি ইয়াবা ছিল। তাই আমাকে ইয়াবা বিক্রির জন্য দায়ী করা হয়। ’

২৭ বছর বয়সী মাইয়ের ছেলেবন্ধুও মেথামফেটামিন বিক্রির দায়ে কারাগারে আছেন। মাই থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের উত্তরে আয়ুত্থায়া এলাকার একটি কারাগারে দ্বিতীয়বারের মতো কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

সঙ্গে তাঁর ছেলেশিশুটিও আছে। থাইল্যান্ডের মতো কঠোর মাদকনীতি থাকা একটি দেশে মাইয়ের সহজে ছাড়া পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশটিতে মেথামফেটামিন রাখার দায়ে তিন বছর কারাদণ্ড স্বাভাবিক ব্যাপার। সেখানে উদ্দীপক বড়ি রাখা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (ইউএনওডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ায় মেথামফেটামিন জব্দ করায় চীনের পরই আছে থাইল্যান্ডের অবস্থান।

দেশটিতে ২০১২ সালে নয় কোটি লাখ মেথামফেটামিন বড়ি জব্দ করা হয়, যা ২০০৮ সালের জব্দ ওষুধের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।

ইউএনওডিসি জানায়, থাইল্যান্ডের বেশির ভাগ মাদকজাতীয় ওষুধ প্রস্তুত করা হয় সংঘাতপীড়িত সীমান্ত এলাকাগুলোতে। বিশেষ করে চোরাইপথে মিয়ানমার দিয়ে মাদক আনা-নেওয়া হয়। মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১২ সালে থাইল্যান্ডের এক লাখ ৯৬ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাতিসংঘের ওই দপ্তরটি জানায়, ২০১২ সালে বিদেশে মাদক পাচারের জন্য তিনজন পুরুষের বিপরীতে ৬৯ জন নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

থাইল্যান্ডের আয়ুত্থায়ার কারাগারের শিশুদের কক্ষের দেয়াল বিভিন্ন চিত্রে শোভিত। এই চিত্র কিন্তু সেখানকার জীবনকে কারাভোগীদের জন্য চড়ুইভাতির স্থানে পরিণত করেনি। সেখানে তাদের পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য কাজ করে খেতে হয়।

বিষয়টির উল্লেখ করে মাই বলেন, আয়ুত্থায়ার কারাগারে বন্দীরা টি-শার্টে ব্যবহারের জন্য পুঁতি সেলাই করেন। এতে করে তাঁরা মাসে মাত্র ১০০ বাথ (থাইল্যান্ডের মুদ্রা) পান।

এদিকে থাইল্যান্ডে বন্দীদের এমন করুণ অবস্থা লাঘবে কাজ করছেন স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও লেখকেরা। তাঁদের একজন ওরাসম সুদ্ধিসাকর্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন সমাজ চাই, যেখানে বন্দীদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেকেই ভুল করতে পারে এবং এর ফলে তারা বলির পাঁঠা বনতে পারে। ’

ইতিমধ্যে সুদ্ধিসাকর্ন ফেসকুক নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।

এতে তিনি বন্দীদের দুর্দশা তুলে ধরেছেন। এটি ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।