আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“মানুষ” হিসেবে যেভাবে ভারতীয়দের কাছে আমরা হেরে গেলাম......

........ আপনারা অনেকেই নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একজন ২৩ বছর বয়সী তরুণী নৃশংসভাবে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে । পেশায় প্যারামেডিকেল(ফিজিওথেরাপি)র ছাত্রী এই তরুণী রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ী ফেরার সময় এই নির্মম ঘটনার শিকার হন । তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে সাথে ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুও ধর্ষণকারীদের দ্বারা প্রহৃত হন । তারা দুইজনকেই লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে একপর্যায়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দেয় । এ ঘটনায় পুরো ইন্ডিয়া নড়েচড়ে বসেছে ।

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ক্রিকেটার, চলচ্চিত্র তারকারা অনেকেই এ ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছেন । ইতিমধ্যেই ছয় অভিযুক্তের বেশিভাগকে পুলিশ পাকড়াও করতে সমর্থ হয়েছে । এই ঘটনার ভয়াবহতা এতই প্রকট যে সার্জনরা কয়েকবার অপারেশন করার পর ভিক্টিমকে বাঁচাতে তার অন্ত্রের বেশিরভাগ অংশ ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে । যেন সেই রাতে দিল্লীর সেই বাসে খোদ শয়তানের দূতেরা নেমে এসেছিল । এই ঘটনার পর সারা ইন্ডিয়ায় তোলপাড় ঘটেই চলেছে ।

অভিযুক্ত রাম সিং, মুখেশ সিং, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্তা, রাজু এনং অক্ষয় ঠাকুর সবাইকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ২২শে ডিসেম্বর সাধারণ মানুষ ইন্ডিয়া গেটের সামনে বিক্ষোভ করে । অন্যদিকে অভিযুক্ত মুকেশ সিংকে রাজস্থান থেকে গ্রেফতার করে তিহার জেলে নিয়ে রাখার পর জেলের অন্যান্য কয়েদীরা মুকেশের বিরুদ্ধে অপরাধের কথা জেনে মারধর শুরু করে । তিহার জেলের পক্ষ থেকে সুনীল গুপ্তা অন্যান্য কয়েদী কর্তৃক মুকেশকে নিজের মূত্র পান করানোর ঘটনা অস্বীকার করলেও আক্রমণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন । এরপর মুকেশকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয় ।

অন্যদিকে সাধারণ মানুষের রাগের কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে “শোভা” নামী একজনের কমেন্টে, “......এইসব পার্ভাটদের জন্য আমরা সৌদি আইন কেন চালু করতে পারি না???” ভারতীয়দের কথা তো বললাম, এবার আমরা আসি নিজেদের কথায় । ইন্ডিয়ানরা তো যেভাবে পারে এই নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদ করছে, এখন তাই বলে অনেকে হয়ত ভাবছেন, তাতে তারা আমাদের চেয়ে বেশি মানবিক কিভাবে হয়ে গেল??? কারণ এই ঘটনার প্রতি তো আমরাও নিন্দা জানাচ্ছি । নিন্দা জানাচ্ছেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু কিছুদিন আগের একটি ঘটনায় নিজের, সমাজের প্রতিক্রিয়ার সাথে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে দেখুন তো, আপনি আসলেই সেই ভারতীয়দের চেয়ে “মানুষ” হিসেবে উচ্চে অবস্থান করছেন কিনা??? এই মাসের শুরুর দিকে ঢাকার দক্ষিণখানের ব্র্যাক ক্লিনিকে শ্বাসরোধ হয়ে খুন হন ডাঃ সাজিয়া আফরিন । বৃহস্পতিবার রাতে খুন হবার পর শুক্রবারদিন সকালে ডাঃ ইভার মৃতদেহ পাওয়া যায়, পরবর্তীকালে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ক্লিনিকের নিরাপত্তারক্ষী(!) ফয়সাল ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গলা চেপে একপর্যায়ে খুন করে ফেলে ডাঃ ইভাকে । ২ ডিসেম্বর “আমাদের সময়” পত্রিকায় প্রকাশিত ডাঃ ইভার মামা জসিম উদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, ইভার মামা জসিম উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ক্লিনিকের নার্স খাদিজা জরুরি অপারেশনের কথা বলে ইভাকে ডেকে নেয় ক্লিনিকে।

রাত ১২টার দিকে বিশ্রামকক্ষে অপেক্ষা করছিলেন ইভা। এরপরই নিরাপত্তাকর্মী ফয়সাল তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে তার সঙ্গে যোগ দেয় ক্লিনিকের স্টাফ মামুন ও বাড়িওয়ালার ছেলে বাবু। একপর্যায়ে ইভাকে বেধড়ক মারধর করে মারাত্মক জখমের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। এসময় ইভা চিৎকার দিলে খাদিজা গেট বন্ধ করে দেয় যেন শব্দ বাইরে না যায়।

পুরো ঘটনাই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ইভাকে শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টাকালে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে বলে কিছু প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ওই কক্ষের ভেতরে চেয়ার ভাঙা ছিল। টেবিলের ওপর কাগজপত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এলোমেলো পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ শুক্রবার দুপুর পৌনে ৩টায় ওই বিশ্রাম কক্ষ ডা. ইভার লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায়।

অন্যদিকে কুলাঙ্গার ঘাতক ফয়সালের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রায় ৫ মাস পূর্বে ওই ক্লিনিকে তিনি চাকরি নেন। ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. ইভা প্রায়ই তাকে ডেকে এনে কথা বলতেন। এতে ইভার প্রতি তার ভালো লাগা জš§ নেয় এবং ইভা তাকে পছন্দ করে এই ধারণাটি বদ্ধমূল হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন। অপশেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইভাকে একা পেয়ে যান।

তিনি আরো জানান, সিজার অপারেশনের পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফয়সাল ওয়েটিং রুমের দরজা নক করেন। ডা. ইভা দরজা খুলে দিলে সে ভেতরে ঢুকেই ইভাকে জড়িয়ে ধরে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। ইভা রাজি না হওয়ায় ফয়সাল তাকে বাধ্য করানোর চেষ্টা করে। এসময় সে ইভার শরীরে কামড় দেন। ইভাও তাকে চড় মারেন, ফয়সালের হাত থেকে বাঁচতে সে পালানোর সময় চেয়ারের উপর পড়ে যান।

এতে ইভার কপাল কেটে যায় এবং চেয়ারের পায়া ভেঙে যায়। পরে ফয়সাল তাকে ফ্লোরে ফেলে বুকের উপর বসে গলা টিপে ধরে। এতে ইভা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে সে দরজা ভিড়িয়ে রেখে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের নানা বাড়িতে চলে যান। এখন বলুন আমার এই পোস্টের আগে কয়জনের এই সপ্তাহ তিনেকের ঘটনার কথা মনে ছিল এবং কয়জন এই ঘটনার কথা আগে থেকে জানতেন??? জানি এই সংখ্যাটা তেমন বেশি হবে না, কারণ নামী দামী পেপারগুলোতে এব্যাপারে ফলোআপ করা হয়নি যে! নিভৃতচারী মেধাবী ছাত্রী যে নীরবেই করুণভাবে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হলেন । সাংবাদিকদের কাছে থেকে সাড়া না পেয়ে ডাক্তারেরাই আয়োজন করলেন মানববন্ধনের, সেখানে কি হল একজনের কাছ থেকে শুনুন- আজকের মানব বন্ধনে ইন্ডিপেনডেন্ট ও এটিএন এর সাংবাদিকরা আসে কিন্তু আমরা তাদের বিশেষ করে ইন্ডিপেনডেন্টের স্মার্ট নারী সাংবাদিকের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই।

তিনি বলেন- "আমরা শুনে এসেছি এখানে এক চিকিৎসক আরেক চিকিৎসককে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে, তাই সকলে তার বিচার চায়। " আমরা হতবাক হই তার এই কথা শুনে। পরে ইভা আপুর (ডাঃ সাজিয়া আফরিন) মৃত্যুর বিষয়ে জানাই ও নিউজ করতে বলি। তার উত্তরে সেই সাংবাদিক বলেন "কোন ডাক্তার মরলে নিউজ এজেন্সির কিছু যায় আসেনা, এটা কোন খবর না তবে ডাক্তারের হাতে কেউ মারা গেলে সেটা ইম্পরট্যান্ট। " আমরা তারপরেও তাকে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করলে তিনি আমাদের নাম জানতে চান।

আমরা কয়েকজন পরিস্থিতি খারাপ হবার ভয়ে ইজ্জত নিয়ে সরে পড়ি। একটা সাংবাদিকের আঙ্গুল কাটলে ব্রেকিং নিউজ দেয় কিন্তু নাইট ডিউটি অবস্থায় একজন চিকিৎসক নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে খুন হলে সেটা নাকি ইম্পরট্যান্ট না। এই দেশে থাকার ইচ্ছা নাই; ডাক্তারি দূরের কথা! **ফয়সাল আহমেদ তুষার। } এবার বলুন, এরপরও কি নির্বিচারে ভারতীয়দের সমালোচনা করবেন/ করতে পারবেন??? আমিও সীমান্ত হত্যা, টিভি চ্যানেল, বাঁধ ইস্যু ইত্যাদি বিষয়ে কঠিনভাবে ভারতবিরোধী ছিলাম আছি থাকব, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা পিছিয়ে গেলাম । আমরা আত্মসমালোচনা করতে জানি না, নিজ দেশের মানুষের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানি না ।

কোন অধিকারে আমরা বাংলাদেশীরা নিজেদেরকে ভারতীয়/ পাকিস্তানিদের থেকে উন্নত মানসিকতার অধিকারী বলে দাবি করতে পারি??? এখন আবার কেউ বলে বসবেন না যে, ইন্ডিয়ার ধর্ষণকারীরা ৬জন তো ভারতীয়ই ছিল!রাহেলার কথা মনে নেই আপনাদের??? আমাদের দেশে কি এইসব নৃশংস ঘটনা কি তাহলে হয়না??? সেটাই বলতে চাচ্ছেন?? কারণ, এমন প্রশ্নে সেটাই তো মনে হওয়ার কথা । আমাদের সময় ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.