আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ যুগের নস্ত্রাদামুস: ওয়েব বট

Shams দু’টি লোক। একজন ক্লিফ হাই। আরেকজন জর্জ উরে। ১৯৯০ সালে দু’জনে মিলে শুরু করলেন একটি অদ্ভুত প্রকল্প। ওয়েব বট প্রজেক্ট।

প্রকল্প শুরু করার পর নিজেদের গেরেমভারি নামও জাহির করলেন তাঁরা- দ্য টাইম মঙ্কস্। যদিও প্রকল্পের উদ্দেশ্য কোনও পরমার্থের জন্য নয়। টু পাইস পকেটস্থ করতে নিতান্তই একটি উদ্যোগ। কেমন তা? শেয়ার মার্কেটের উত্থান-পতন যদি আগাম আন্দাজ করা যায়, তবে তা তো ‘বিক্রি’ করা যাবে। নব্বইয়ের দশকে শেষে ওয়েব বট প্রজেক্ট শেয়ারের দর ওঠানামা নিয়ে একসময় বেশ রমরমিয়েই কাজ শুরু করল।

অল্পবিস্তর নামও করে ফেলল হাই-উরে জুটি। আর সেখান থেকেই ওয়েব বট প্রজেক্ট হাত বাড়াতে শুরু করল অন্যত্র। কীভাবে কাজ করত ওয়েব বট গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন যেভাবে বিপুল নেট দুনিয়া হাতড়ে বেড়ায়, ওয়েব বাটও তাই। কেবল পদ্ধতিটার একটা সূ² ফারাক। ক্লিফ হাই এই তথ্যানুসন্ধান আর বিশ্লেষণের একটা নামও দিয়েছিলেন- ‘অ্যাসিমেট্রিক র্যাুঙ্গুয়েজ ট্রেন্ড অ্যানালিসিস।

’ সংক্ষেপে অল্টা। অর্থাৎ ইন্টারনেটের সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন যেখানে কোন শব্দটা সার্চ বার-এ দেওয়া হল, তা দিয়ে সার্চ বা তথ্যানুসন্ধান করে, নেট দুনিয়ায় আল্টার খোঁজ ভিত্তি হল শব্দবন্ধ কীভাবে লেখা হল, এবং উত্তরে কী পাওয়া গেল, তার সবটা নিয়ে। হাই এবং উরের দাবি ছিল, লাগাতার নেটে কী নিয়ে সার্চ করা হচ্ছে, তার উপর নজরদারি চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে, তার একটা আভাস পাওয়া সম্ভব। ওয়েব বট-এর ভবিষ্যদ্বাণী ৯/১১ সম্পর্কে আগেই নাকি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ওয়েব বট। এই মুহূর্তে নেট দুনিয়ায় ওয়েব বট প্রজেক্ট-এর হোস্ট ডোমেন-এর হদিশ মেলে না।

ফলে এই প্রজেক্ট নিয়ে দাবি-পাল্টা দাবির শেষ নেই। কয়েকটি ওয়েব সাইটের দাবি, জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে অনেকটাই নাকি আভাস দিয়েছিল ওয়েব বট। আবার অনেক সাইটের বক্তব্য পুরোটাই গপ্পো। বট প্রজেক্ট যে-সব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তার কিছু কাকতলীয়ভাবে মিলে গেলেও বাকিগুলো অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ছাড়া কিছু নয়। ৯/১১-এর পাশাপাশি ইন্টারনেটে ওয়েব বট সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য মেলে।

যার মধ্যে রয়েছে ২০০৩ সালে আমেরিকার উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভূমিকম্প। হ্যারিকেন ক্যাটরিনার তাণ্ডব। প্রাক্তন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির উপর হামলার ঘটনা। এখন তো দুনিয়াজুড়ে বিপর্যয় সংক্রান্ত একটাই খবর! ২১ ডিসেম্বর কি আদৌ ধ্বংস হতে চলেছে পৃথিবী? এ মহাপ্রলয় কি ঘটবে আমাদের গ্রহে? মানবজাতি কি মুছে যাবে? মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা নাসা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে জাজমেন্ট ডে নিয়ে যাবতীয় জল্পনা।

সুতরাং উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। তবে ওয়েব বট নিয়ে এতগুলো কথা লেখা হল, এ-ও বলে রাখা ভালো, চরম বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে হাই-উরে জুটিও। বট প্রজেক্টের সমালোচনা সাইবার যুগের এই নস্ত্রাদামুস নিয়ে বিস্তার সমালোচনা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। তবে বট প্রজেক্টকে নাকচ করতে যে মোক্ষম যুক্তি দেখিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা, তা হল- ‘গিগো’।

ভেঙে বললে ‘গারবেজ ইন, গারবেজ আউট’। ব্যাখ্যাটা এমনতর, ধরা যাক আপনার হাতে পৃথিবীর সেরা কম্পিউটারটি তুলে দেওয়া হল। বলা হল, কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করে দিতে। সমস্যা হল, কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিতে গুচ্ছের অপ্রাসঙ্গিক তথ্য ফিড করিয়ে, তার থেকে যদি সারাংশ উদ্ধার করতে বলা হয়, তাহলে লাভের লাভ কতটুকু। ফলে, যে আল্টা পদ্ধতিতে হাই এবং উরে জুটি কাজ করে গিয়েছেন বহুদিন, তা কি আদৌ কার্যকর! কিছু আবর্জনা ঘেঁটে, সংক্ষেপে আরেকটু আবর্জনা তৈরি করা নয় কি? এ-নিয়েও চাপানউতোর চলেছে বিস্তর।

কিন্তু আমাদের আর এ-নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কী! কেননা, পৃথিবী ‘ধ্বংস’ হওয়ার আগেই যে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে ওয়েব বট। ফলে নটেগাছটিও মুড়োল!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।