আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও যুগের আমি

সাব্বির ভাইয়ের জন্য আরো দশ লাখ টাকা দরকার। মানবতার দিকে তাকিয়ে আছি।

সাজিদ ভাই, শিরোনামে 'ভাই' দেখে ভড়কে যাবেননা। বয়সে আপনি আমার বড় হবেন আর স্বল্প পরিচিত কাউকে সরাসরি নাম ধরে ডাকার মত অত আধুনিক আমি নই। ভাবছেন, স্বল্প পরিচিত তবে চিঠি লিখছি কেনো? মানুষতো অপরিচিতকেও চিঠি লিখে।

দেখেননা,হঠাৎ কাউকে দেখে ভালো লেগে গেলে তার ঠিকানা অনেক কষ্টে যোগাড় করে, 'অনামিকা' কিংবা 'অপরিচিতা' শিরোনামে প্রেমিকরা কেমন লিখতে বসে যায়? না, ভাববেননা আমি অমন শিরোনামের ক'খানা চিঠি পেয়েছি আর সেই আবেগের বশে আপনাকে লিখতে বসেছি। কোন ছেলেকে লিখা এ আমার প্রথম চিঠি। এমন একটা অশিষ্ট কাজ আমার দ্বারা কখনো হতে পারে, এমনটি ভাবিনি। গল্পবইয়ে অনেক পড়েছি, নায়িকার আবেগে কখনো বুকে ঢাকের শব্দও শুনেছি হয়ত। কিন্তু, বাস্তবের আমি? মানুষের ভাবনার অগোচরে কত কিছু থেকে যায়, তাইনা? উপযুক্ত পরিবেশে, আবেগের পুষ্টিতে অংকুর থেকে ডালপালা মেলে কেমন শিকড়-গজানো বটগাছটা হয়ে যায়।

ওহ আমার পরিচয়ই তো দেয়া হয়নি। আপনি বোধ করি আমাকে চিনতে পারবেননা। কখনো দু'একবার দেখা হয়েছে বটে, তবে মনে রাখার মত অত শক্ত চিহ্ন আমি চলনে-বলনে ধারণ করি বলে মনে হয়না। আপনার আত্মীয়ার বাড়ির পাশে আমার বসবাস। প্রতিবেশী হিসেবে যতটুকু আন্তরিকতা থাকা উচিৎ, তার চেয়ে ঢের বেশি আমাদের সাথে আপনার ওই আত্মীয়ার।

তার বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত। কখনো তাদের পারিবারিক বইশালা থেকে বই আনতে, কখনো মা এটা ওটা রান্না করলে দিয়ে আসতে। এমনি এক বিকালে বসার ঘরের পর্দার ফাঁকে গৃহকর্তার সাথে আপনাকে আলাপ করতে দেখলাম। কর্ত্রী জানালেন, আপনি উনার ভাই সম্পর্কের। দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

কাজের চাপে পায়েশের বাটিগুলো আমার হাতে গছিয়ে দিয়ে, বসার ঘরে দিয়ে আসতে বললেন। অপরিচিত যুবকের সামনে আমি আড়ষ্ট বোধ করি, আপনার আত্মীয়া সেটা জানেন। এ নিয়ে আমার সাথে হালকা রসিকতাও করলেন। আমার গালে লাল আভাও হয়ত তার নজর এড়ালোনা। গোপনে চুলে হাত দিয়ে আলগা খোঁপাটা পরখ করে নিলাম।

হয়ত আপনার সান্নিধ্যে যেতে পারবো বলেই লজ্জা কাটিয়ে রাজি হয়ে গেলাম। আপনার সামনে বাটিটা রাখতে গিয়ে একবার খানিকের জন্য মুখ তুলে তাকালেন। আপনার মত বিদেশ-ফেরত, বিদ্বান সুপুরুষ আমার মত মফস্বলের এক সাধারণ মানের তরুণীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন, এ আমি আশাও করিনি। কর্তা বসতে বললেন, আপনার নাম-পরিচয় জানিয়ে আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎও করিয়ে দিলেন। আপনি একটু হেসে, 'কেমন আছেন?' বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই যখন আগের আলাপে ফিরে গেলেন, বুঝলাম ওই পরিবেশে আমার থাকার কোন অর্থ নেই।

ত্রস্ত পায়ে রান্নাঘরে ফিরে আসতেই কর্ত্রী আবার ঠাট্টার আমেজে বললেন, কী রে, আমার ভাইকে কেমন দেখলি? কেমন দেখলাম? যা দেখলাম তাই বললাম। 'বিদেশে পড়াশোনা করে এলেই এত দেমাগী হয়ে যায় মানুষ? ওখানের কলেজ-ভার্সিটিতে কি শিষ্টাচার শেখায়না?' কর্ত্রীর কপালে প্রশ্নের রেখা মিলাতে না দিয়েই আমি যে বইটা নিতে এসেছিলাম সেটা নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। সে আমার প্রথম আপনাকে দেখা। তারপর কয়েকবার এসেছেন শুনেছি। ভুলেও যেন সামনে না পড়তে হয়, এজন্য সযত্নে বিকালের সময়টা ও বাড়িতে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছি।

কী একটা কাঁটা বিঁধে ছিলো। অপমানের? অবহেলার? আমি তবে কী আশা করেছিলাম? আপনার বোনটি ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জানলাম, অনেক বই পড়েন। বিশ্বের খুঁটিনাটি নিয়ে অনেক জ্ঞান রাখেন। গান শোনেন, মাঝেসাঝে নিজেও চর্চা করেন।

যন্ত্রসংগীত আপনার বিশেষ পছন্দ। খুবই অমায়িক, বিনয়ী, ভদ্র। উঁহু, আমি মানিনা। ভদ্রতার নমুনা তো প্রথম দিনেই দেখলাম। আপনি একবার আমার নামটা জিজ্ঞেস করে বসতে বললেও তো পারতেন।

আমি কি এতই বৈশিষ্ট্যহীন, এতই সামান্য? আমার শুনে বিশ্বাস হলোনা যেদিন শুনলাম বোনের কাছে আমার কথা জিজ্ঞেস করেছেন। আমার নাম লেখা একটা বই তাকে পড়তে দেখে নাকি অবাক হয়েছেন আমার পাঠাভ্যাস দেখে। আমার সম্পর্কে আপনার বোন নিশ্চয়ই একগাদা ভালো কথা শুনিয়ে দিয়েছেন? এ মানুষটা আমাকে বিশেষ স্নেহ করে। বোন, বন্ধু ভাবে। তার আবেগের আতিশায্যেই হয়ত আমার প্রতি আপনার কিঞ্চিত আগ্রহ হলো।

আমার নাম শুনে নাকি হালকা রসিকতাও করলেন। 'রচনা? এ মেয়ে তো ভালো গদ্য লিখতে পারে মনে হয়। ' ইস, আপনাকে কে অনুমতি দিয়েছে আমার নাম নিয়ে তামাশা করার? শুনুন মশাই, দ্বিতীয় যেদিন দেখা হলো, ভাববেননা আমি ইচ্ছে করে আপনার সামনে পড়েছি। আমি জানতামনা আপনি সেদিন ওবাড়িতে আসবেন। আমি কলেজে যাবার তাড়াহুড়ায় ছিলাম।

মা পিঁয়াজ আনতে পাঠালো। ছুটির দিন হলেও একটা রিহার্সালের কারণে কলেজ যেতে হয়েছিলো। কী একটা গান ভাঁজতে ভাঁজতে আপনার সামনে এভাবে পড়ে যাবো কল্পনায়ও ছিলোনা। প্রথম দিনের স্মৃতি মনে হতে, সৌজন্যের পরোয়া না করেই সোজা রান্নাঘরে ঢুকে আপনার বোনকে চাহিদার কথা জানালাম। তাড়া না থাকলে কোন ছুঁতোয় আরো খানিকটা সময় আপনার আশেপাশে কাটাবার লোভ যে হচ্ছিলোনা, তা নয়।

থাক, সে কথা আজকে নাইবা শুনলেন। এতটুকু পড়ে কী ভেবেছেন? তরুণী হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে? তার বহিঃপ্রকাশের লক্ষ্যই এ পত্র? বড় বিদ্বানের অনুমানশক্তি ভালো নাও হতে পারে। এ বাস্তবতাটুকু মেনে নিন। আত্মীয়ার কাছ থেকে আমার বইটা ধার নিয়ে, তার ভেতরে মনের ভুলে কোন এক 'অপরিচিতা' কে লিখা আপনার পত্রখানা যে ফেলে রেখেছিলেন, আর ভুলবশত আমি যে তা পড়ে ফেলেছি, সে ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করতেই এ চিঠি। ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।

রচনা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।