আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে

যে বিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট শিশু হেসে ওঠে তাকে পরে ছুড়ে দেয়া হলে, তেমনি বিশ্বাস আমি করি তোমাকে। আমি জানি তুমি দুঃখ কখনও দেবেনা আমাকে। লন্ডন প্রবাসীরা জানেন ২৫ নম্বর বাসে বসার সীট পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ পাওয়া। প্রায়শঃই এই বাসে বিনা টিকিটে ভ্রমন করা যায় বলে, নাকি বাঙ্গালী পাড়া দিয়ে বাসটা চলে বলে, জানিনা, কিন্তু, এই বাসে সীট পাওয়া খুবই দুরুহ ব্যপার। যাহোক, একদা আমি ব্রুমলী বাই বো থেকে ২৫ নম্বরে যাত্রা করেছি।

সৌভাগ্য সেদিন এত বেশি ছিল, উঠতেই দেখি ড্রাইভারের উলটা দিকের সিঙ্গেল সীটটা খালি। আরাম করে বসে পরলাম। কানে হেড ফোন। আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছি। হঠাৎ কে যেন সজোরে আমার হাত ধরে টান দিতে সম্বিত ফিরল।

তাকিয়ে দেখি এক বাঙ্গালী ভদ্র মহিলা আমাকে ডাকছে। কি যেন বলছেন তিনি। কান থেকে হেডফোন খুলে তার কথা শুনলাম। তিনি ড্রাইভারের পেছনের সীটে বসেছেন। আমাকে অনুরোধ করছেন তার পাশে বসার জন্য।

সচরাচর সেই সীটটা খালি পেলেও আমি বসি না। কারন এটা আমার গুহা গুহা মনে হয়। সামনে ড্রাইভারের সীটটা দেয়াল দিয়ে বন্দী বলে পেছন থেকে সামনের কিছুই দেখা যায়না। সেদিন তার অনুরোধে বসলাম সেই গহবরে। তিনি আমাকে কোনায় বসতে দিয়ে তিনি পাশে বসলেন।

উনার সম্মানার্থে আমি গান শোনা বন্ধ রাখলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন জামাই কি করে। আমি হেসে বললাম এখনও জানিনা কি করে। বেকার বোধ হয় এখনও, তাই সামনে আসার সাহস করেনি। তিনি আকাশ থেকে পড়লেন।

এত বড় মেয়ে, এখনও বিয়ে করিনি! যাহোক, বললাম, আমি ছাত্রী, পড়া-শুনার জন্য লন্ডন গিয়েছি। তিনি মহা বিরক্ত। একা মেয়ের এভাবে ভিন দেশে থাকাটা তিনি মোটেই ভালো চোখে দেখেন না। যাহোক, আমাদের কথা চলছিল। উনার পরিবার সম্পর্কে কি কি যেন বলছিলেন।

বিভিন্ন স্টেশন থেকে লোক নিতে নিতে বাসের সব সীট ভরে গেছে এর মধ্যে। একটা স্টেশনে একজন বয়স্ক ব্রিটিশ ভদ্র লোক উঠলেন বাসে। বয়স ৭৫ এর কাছাকাছি হবে। তিনি লাঠি হাতে উঠেছেন, তাই বুঝতেই পারছিলাম দাঁড়িয়ে যেতে তার কষ্ট হবে। এদিকে বসার জায়গা নেই।

আমি উঠে উনাকে বসতে দিতে যাওয়ার সাথে সাথে মহিলা আমার হাত ধরে টানাটানি। তিনি হঠাৎ চেচামেচি শুরু করলেন, তিনি কিছুতেই অন্য লোকের পাশে বসবেন না। এই কারনেই তিনি আমাকে তার পাশে বসিয়েছে। আমি যতই বুঝাই আমি পাশেই দাড়িয়ে থাকব, তিনি নাছোড় বান্দা। তিনি মরে গেলেও পর-পুরুষের পাশে বসবেন না।

সাদা চামড়ার পাশে বসার তো প্রশ্নই উঠে না। ভাষা না বুঝলেও ব্রিটিশ সেই ভদ্র লোক আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন হয়ত। হেসে বলছিলেন, “don’t bother young lady... I will manage another seat.” কিন্তু আমার মেজাজ ভীষন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পাশে বসা মহিলার বয়স ৬০ এর নিচে হবে না। তার উচিত ছিল আর একজন বয়স্ক মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো।

তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কত বছর আছেন লন্ডনে। তিনি জানালেন ৪০ বছরের উপরে হবে। কিন্তু তার মানসিকতা বদলায়নি একদমই। সেটা দেখে মনে হল, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে। মানসিকতা পরিবর্তন করা কোন বিশেষ পরিবেশের দ্বারা সম্ভব নয়, এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যপার।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.