আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শান্তির শ্বেত পতাকা নিয়ে আসিনি

আমি একজন অতিসাধারণ মানুষ, স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। স্বপ্ন আছে বলেই এখনও বেঁচে আছি সারা জীবন খুব সহজ- সরল জীবন যাপন করতে চেয়েছি। সকল উত্তেজনা থেকে নিজেকে সু-কৌশলে বাঁচিয়ে চলতে শিখেছি। তাই তো প্রবল বৃষ্টিতে নিজের মাথায় ছাতা থাকার জন্য গর্ব করেছি। এখন প্রবাসে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার মাঝে হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় কৃত্রিম উষ্ণতায় জীবনের নিবিড় আনন্দ খুঁজে পাই।

কেউ প্রশ্ন করলে সময় নিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে বলি- বেশ আছি। ভাব দেখাই দেশে ও দেশের বাইরে সবকিছু আমার জানা। আমি চাইলে অনেক কিছুই পারি। রাজনীতিবিদদের গালাগাল করে দু'চারটা ফেসবুক স্টাটাস আমার নিয়মিত কাজের অংশ। ব্যাস আমার দায়িত্ব শেষ।

বাকিটা বুঝবেন আপনারা, হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি, আপনারা সাধারন পাবলিক আর কিছু অপুষ্টিতে ভোগা প্রগতিশীল!! গত কিছুদিনে দেশের সামগ্রিক অরাজকতার একটা বিন্যাস দেখানো যাক: বিএনপি সমর্থিত জামাত- শিবিরের প্রশিক্ষিত গুন্ডাদের দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিতে বাধা দেয়ার মহান দায়িত্ব ছাত্রলীগের অছাত্ররা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে রাজনীতিবিদ ও দেশকে ভারমুক্ত করেছেন। বিনিময়ে তারা সাধারন জনগণকে কিছু লাশ উপহার দিয়েছেন!! আমি জানি এতক্ষণ যা বললাম শুধু অনেকেই নন অধিকাংশই এর থেকে ভালো জানেন। পরে যা বলবো তাও সবার জানা। এ পর্যন্ত সহাস্রাধিক ব্লগ লেখা হয়েছে, লক্ষাধিক ফেসবুক, টুইটার স্টাটাস, ছবি আপলোড, শেয়ার হয়েছে। আমার কাছে আজ নতুন কিছুই নেই আপনাদের বা আমার নিজের জন্য।

আমরা সবাই একই জিনিস একইভাবে সমপরিমান জেনে সমপরিমান প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে নিস্তেজ হয়ে পরে থাকতে পছন্দ করি। পুরান ঢাকায় বিশ্বজিতের হত্যাকান্ড ও দেশজুড়ে নৈরাজ্যের জন্য আম-জনতা রাজনৈতিক দলগুলোকে দুষছে, আর রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের দিকে বন্দুক তাক করছে। আমরা যারা অনেক সুখে আছি এবং আরো সুখে থাকা নিশ্চিত করতে মরিয়া আমরা কি ভেবে দেখেছি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ কি আমরাই করে দেইনি? রাজনীতি ভদ্রলোকের জন্য নয় এমন ট্যাগ লাগিয়ে আমরাই কি রাজনীতির চুড়ান্ত সর্বনাশ করিনি?আমরা খুব জোর দিয়ে বলি একসময় ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব ছিলো মেধাবিদের হাতে আর আজ থাকে সন্ত্রাসিদের হাতে; কিন্ত আমাদের এ কথা বলতে একবারও লজ্জা করেনা কারন আমরা তো সুখেই আছি। অথচ প্রথাগত ছাত্র-রাজনীতি বা রাজনীতি থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যে শূণ্যতার সৃষ্ট হয়েছে প্রকৃতির নিয়মেই তা জঞ্জাল দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। পরিস্কারের দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে।

আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি ছাত্ররাজনীতির নামে যখনই এমন বিশৃঙ্খলা হয় তখনই দাবি ওঠে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হোক। মাথা ব্যথায় মাথা কাটতে চাওয়ার যুক্তি আমার বোধগম্য হয়না। ১৯৭৪ এর পর এই প্রথম ডিসেম্বর মাসে হরতাল হচ্ছে। দুঃখজনক হলো দেশের প্রধান বিরোধিদল যারা নির্বাচনে হারলেও দেশের শতকরা ৩৫-৪০% মানুষের ভোট পেয়েছে তারা রাস্তায় নেমেছে যুদ্ধাপরাধিদের বাঁচাতে। ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে আমাদের সাঈদী, নিজামি, মুজাহিদ, গো.আযমরা সাধারন বাঙালিদের গলা কেটেছেন তখন কী আর তারা জানতেন যে তাদের কে সেই কৃতকর্মের জন্য ৪০ বছর পর জনতার আদালতে দাঁড়াতে হবে? স্বাধীনতার পর এই জামাত ইসলামিকে কারা রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, কারা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা আমাদের সকলের জানা।

৯১'তে জামায়াত কে সাথে নিয়ে ক্ষমতায় যেয়ে ৯৬ এ হেরে যাওয়া, আবার আওয়ামিলীগ ৯৬'তে একই ভুল করে '০১ এ হেরে যায়, ০১ এ ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলো এবং একই পরিনতি। মজার বিষয় হলো সংসদীয় গনতন্ত্র আসার পর এই প্রথম বারের মত জামায়াত ইসলামি বিরোধিদলে! কত সুবিধাবাদি একটা দল হতে পারে!! খালেদা জিয়া আপনার ক্ষমতায় যাবার লোভ যদি একটা যুদ্ধাপরাধিকেও বাঁচাতে সাহায্য করে ৪০ বছর পরে হলেও আপনার মিত্রদের মতো আপনারও বিচার হবে। এই ক'দিনে প্রতিবার ঘুমাতে যাবার সময় ভেবেছি ঘুম থেকে উঠে হয়তো শুনবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিশ্বজিতের মায়ের কাছে গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং এমন বর্বরোচিত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন! নাহ! এমন কিছুই এখন পর্যন্ত ঘটেনি, ঘটবেওনা- আমি নিশ্চিত। শেখ হাসিনা আপনিতো একজন মা, আপনি সর্বশেষ কবে সজীব, পুতুলের জন্মদিনে তাদের জন্য নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন আপনি বলতে পারেন? আমার আগের একটি লেখায় বলেছিলাম, শেখ হাসিনা আপনি ক্রমশ একজন প্রধামন্ত্রী হয়ে উঠছেন কিন্তু মানবিকতা হারাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামি তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সারাদেশে অরাজকতা ছড়াচ্ছে, যুদ্ধাপরাধিদের রক্ষার চেষ্টা তারা করে যাচ্ছে, তাই তারা সারাদেশে অবরোধ, হরতাল দিচ্ছে, সহিংসতা ছড়াচ্ছে।

জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পুলিশকে না দিয়ে ছাত্রলীগকে দিয়ে আপনি প্রমান করেছেন আপনি এখনও দলীয় নেত্রী হতে শিখলেও প্রধানমন্ত্রী হতে শিখেননি। বিশ্বজিত সহ সকল হত্যার দায় আপনাকেও নিতে হবে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে খারাপ করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান সদৃশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করার জামায়াতি ষড়যন্ত্রে বোকার মত পা বাড়াচ্ছে আওয়ামিলীগ। আজকের আওয়ামিলীগের ব্যর্থতা একদিকে যেমন জলপাই শাসনের সুযোগ তৈরি করছে অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধিদের পূনর্বাসনের পথও বিস্তৃত করে, এ ব্যর্থতার দায় শেখ হাসিনা আপনাকে নিতেই হবে। ইতিহাস এবং সময় কাউকে ক্ষমা করে না, আজ না হোক ২০৫০ কিংবা ২১১২ সালের বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ ২০১২ সালের ৯ ডেসেম্বর পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় বিশ্বজিত নামক এক পথচারিকে ছাত্রলীগের গুন্ডারা হত্যা করায় এবং পরবর্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে বিচারের সন্মুখীন করছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার ও ছাত্রলীগের তো অনেক সাহস, তাদের বলেন আমাকে সহ আরও কয়েকজনকে আগামিকাল সকালের আগেই হত্যা করে বড়িগঙ্গার জলে ফেলে দিতে, কয়েকদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে যাবে, আপনি এবং ছাত্রলীগও শান্তিতে থাকবেন। এখনই সময় হত্যার নির্দেশ দিন। আর তা যদি না পারেন তবে বিচারের জন্য প্রস্তুত হন, আপনারা যতবার আমাদের হত্যা করবেন আমরা ততবার অধিক শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবো। কিন্তু বিচার আপনার হবেই। খালেদা জিয়া, আপনি এবং আপনার শিবির মিত্ররা যতই হরতাল দিন না কেন, যুদ্ধাপরাধিদের ফাঁসি হবেই।

শুনেছি লন্ডনে জামাত- শিবিরের অনেক বড় আস্তানা, তাদের বলেন এখনই সময় তাদের পিতা- পিতামহদের মত করে রাতের আধারে যেন আমাকে হত্যা করে যায়- এখনই সময়। আর তা না পারলে বিচারের জন্য তৈরি থাকবেন। ২০১৮'র নির্বাচনের পর আপনার বিচার হবে যুদ্ধাপরাধিদের আড়াল করার জন্য। বাংলাদেশ কে করা হবে জামাত- শিবির মুক্ত। আর কেউ আমার সাথে থাকুক আর না থাকুক এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।

আগামি ৫ বছরে আমি চেষ্টা করবো দ্রোহের এই শিখা ১০কোটি বাঙালির হৃদয়ে জ্বালিয়ে দিতে। ২০১৮ সালে আমি একা আজকের কথাগুলো বলবো না। তা আপনি শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া বা শিবির যেই হন না কেন। আমি চাই আমার এই লেখাটি ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে, বিদ্রোহের সূচনা হোক, আওয়ামিলীগ - বিএনপি মিলে আমাকে গিলোটিনে দিক, তবু বাংলাদেশে একটি বপ্লব হোক। আর যদি তা না পারো তবে আরও আরও লাশের জন্য তৈরি থেকো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।