আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিবির ভাইয়েরা ভূলে ভরা আমার এ লেখা, ক্ষমা করবেন আমায়।

আমি পূর্ণয় শুরুতেই বলে নিচ্ছি আমি একজন ছোট খাট অবলা মানুষ। আমার কোন কথা কারো খারাপ লাগলে প্লীজ মনে কিছু নিবেন না। আমায় মাফ করে দিবেন কারণ আমার মত ছুচো মেরে কারো হাত নস্ট করার মানেই হয় না। যাইহোক ফেসবুকের বিভিন্ন পোষ্ট ঘেটে এবং দুই একটা পোষ্টে কমেন্ট করার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম মুহাম্মাদ জাফর ইকবালের "তোমরা যারা শিবির কর" লেখাটি নানা মহলে নাড়া দিয়েছে বেশ জোরে সোরেই। তার প্রতিবাদে ফেসবুকে প্রকাশ করা হচ্ছে জাফর ইকবালের মেয়েদের সাথে নৃত্য।

আবার অপর দিকে কিছু গুণী বন্ধুগণ নিজেরা ব্লগে লিখেছেন ও প্রতিবাদ করেছেন নানা ভাবে তবে তাদের সবার লেখা পড়ে মনে হয়েছে তারা কেউ জামাত শিবিরের পক্ষে নন। যদিও এক পোষ্টে আমি শিবিরকে নিয়ে কটু কথায় বলতেই কয়েকজন আমাকে ধরে বসলো এবং একজন পুরো থ্রেট দিল যে, তিনি নাকি আমাকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আমি বললাম," আল্লাহ ক্ষমা করলে আপনি আর কে ভাই?" তিনি উত্তরে আমায় বললেন" আল্লাহ আমায় তোমাকে ক্ষমা না করার এখতিয়ার করেছেন" আমি বললাম "সর্বনাশ ভাই আপনি তো আল্লাহের এই এখতিয়ারের উছিলা দিয়ে পীরের আস্তানা বানাইতে পারেন, ভালো টাকা ইনকাম হইব"। যাইহোক, সেই ভাইদের ভাষ্য মতে তারা আসলে জাফর ইকবালের বিপক্ষে কারণ জাফর ইকবাল নাকি ইসলামের শত্রু। কারণ তিনি শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যদিও ওই ভাইয়েরা শিবির বা জামাতের পক্ষ করে না, তবু শিবিরের বিরুদ্ধে এই কথা মানে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা।

আমারে কউ বলল না যে, তাহলে ইসলামের বন্ধুটা কে ? আমি একজন মুসলিম। আমাকে কেউ কি একটু জানাবেন ইসলামের বন্ধু কে? শিবির কি ইসলামের বন্ধু ? যারা ইসলামের নামে ভার্সিটির হল দখলে ব্যস্ত থাকে , যারা ছোট গরীব অথবা মেধাবী ছাত্র দের ক্ষমতা, অর্থের লোভ দেখিয়ে ইসলামের নাম বেঁচে (যদিও রাস্তার ফকিরকে তারা এক টাকাও দেয় না কারণ ফকির কি শিবিরে জয়েন কইরা দলের নেতৃত্ব দিতে পারবে ? ), যারা কথায় কথায় মানুষকে কাফির বলে ফতোয়া দেয়, যারা তাদের বিরুদ্ধে গেলে মানুষকে নাস্তিক বলে, যারা মারামারি বা পুলিশ পিটানোতে ব্যস্ত তারা ইসলামের বন্ধু ? কিছু কাঠ মোল্লার সাথে আমার কথা হয়েছিল একবার। একজন আমারে কইলো " ইসলামে জাতীয়তাবাদ বলতে কিছু নাই, জাতি একটাই হবে সেটা হল মুসলিম জাতি " আমি কইলাম " ভাই তাহলে যে হাদিসে আছে দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ ? " সে আমারে কইল "সেটা ভুল হাদিস মুসলিম জাতি ছাড়া অন্য কন জাতি বা রাষ্ট্র হবে না, মুসলিম জাতি ছাড়া অন্য রাস্ট্র বা দেশ নিয়ে চিন্তা করা নাকি হারাম " তাহলে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) মদিনায় হিজরত করার যে সময় চোখের পানি ফেলেছিলেন নিজ জন্মভূমিকে ফেলে যাওয়ার কস্টে, সেটা তিনি হারাম কাজ করেছিলেন ? এক মহান ইসলামিক ভাই একদিন লিখেছিলেন " ছেলে মেয়েকে মা বাবা রা নাকি কাফির দেশে পড়াশুনার জন্য উতসাহিত করছেন যা হারাম" তাহলে ১৪০০ বছর আগে কি চীন মুসলিম দেশ ছিল ? মহানবী(সাঃ) তো পরাশুনার জন্য চীনেও যেতে বলেছিলেন। যাইহোক আমার ধর্ম প্রাণ শিবির ভাইয়েরা আসলে ইসলামকে অনেক ভালোবাসেন তাই তারা ইসলামকে নিজের মন মত এডিট কইরা ব্লগ লিখতেছেন নিয়মিত। ছাত্রলীগ যদি আজকে একটা শিবির কর্মী হত্যা করত তাহলে তাহলে রাতের বেলা ব্লগ গুলোতে কয়েক হাজার শিবির এডিটিং হাদিস পড়তে হইত কিন্তু হায় ছাত্রলীগ মারল আজ এক হিন্দু ছেলেকে।

এর জন্য শিবির ভাইয়েরা হিন্দু ছেলের লাশ নিয়ে মিছিলও করতে পারল না। ছাত্রলীগ উন্মাদ পাগল তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের ব্লগের গর্ব শিবির ভাইয়েরা আজ ব্লগ লিখবে না কারণ আজ কোন মুসলিম মরে নাই। আজ মরেছে হিন্দু। মুসলিম মরলেই তারা সোচ্চার।

মানে মুসলিম যত মরবে শিবির ভাইদের হাদিস এডিটিং তত বাড়বে। আর তাদের মতে হিন্দু রা তো মানুষের কাতারেই পড়ে না। যদিও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) সব বিধর্মী দের মাঝে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। বিধর্মীদের যদি মানুষ মনে না করতেন তাহলে এটা সম্ভব হত না। কিছুদিন আগে এক ইসলামিক পন্ডিত ভাই আমাকে বলেছিলেন "কখনও হিন্দুদের বাড়িতে যাবিনা, গেলে কিছু খাবি না" আমি কইলাম "কেন ভাই ?" তারা " রান্নার সময় আল্লাহর নাম নেয় না " আমি কইলাম " ভাই তারা না নেক আল্লাহর নাম, আমি খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে খাইলেই তো হয় " এই হচ্ছে আমাদের অধুনিক ইসলাম এডিটর দের চিন্তা ভাবনা।

বিধর্মীর বাড়ীতে যাওয়া যদি পাপের কাজ হত তাহলে মহানবী (সাঃ) কি অসুস্থ ইহুদী মহিলা নিজের খাবার খাইয়ে তার ঘরে গিয়ে সেবা করে পাপ করেছিলেন ? আমাদের আধুনিক এই মুসলিম ভাইয়েরা ফেসবুক কাপিয়েছেন দুইদিন আগে ফিলিস্তিনি নিয়ে। ফিলিস্তিনির ব্যাপারটা আসলেও কষ্টের। কিন্তু তারা যত টুকু ফিলিস্তিনি নিয়ে কাঁপালেন তার কিছুই কাপান নাই আশুলিয়ার ১১০ জন নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক নিয়ে। একটা কথাও তারা বলেন নাই। কেন ? ফিলিস্তিনির মানুষ মুসলিম ওই ১১০ জন কি মুসলিম না ? ফিলিস্তিনি নিয়ে লিখলে শিবিরে আপনাদের পদ উন্নতি হবে ১১০ জন শ্রমিক নিয়ে লিখলে পদ উন্নতি হবে না ? কোরবানীর সিস্টেম হচ্ছে গোসত তিন ভাগ করে আগে গরীব আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিলাও তারপর বিলাও মুসাফিরদের মাঝে।

মানে ইসলামে আগে আত্মীয় স্বজনের গুরত দেয়া হয়েছে। তাহলে প্রতিবেশি মুসলিম নিয়ে যারা ভাবে না হাজার মাইল মুসলিম নিয়ে যারা ব্লগ লিখে কাপায় তারা আসলে কেমন মুসলিম ? তারা কি আসলে মুসলিমের সার্থে ব্লগ লিখছে ? নাকি কোন মহলকে নিজেদের লেখায় ইমপ্রেস করে নিজের পদকে উন্নীত করার ফায়দা লুটছে। আল্লাহ জানেন সব। যাইহোক। আমার ব্লগ লেখার অভ্যাস নাই তাই গুছিয়ে লিখতে পারিনি।

তার জন্য আমি দুঃখিত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.