আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওহাবী মতবাদ কুফরী

বর্তমানে সৌদি মসনদে অধিষ্ঠিত সাউদ আল ফয়সালের বংশ এবং তার উত্তরসূরীগণ কট্টর ওহাবী পন্থী বিধায় জাজিরাতুল আরবে প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত অবিদ্যমান। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত শুরুতেই। বনু উমাইয়া এবং বনু হাশেমীয় দ্বন্দ্বের জের হল- বদর, ওহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক অধ্যায় এতই সুবিদিত যে ক্ষুদ্র পরিসরে তা’ আলোচনা করা অনাবশ্যক। হযরত উসমান রাঃ কে হত্যার পর চতুর্থ খলিফা হিসেবে হযরত আলী রাঃ মদিনার মসনদে আরোহন করেন।

শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। বনু উমাইয়াদের সমর্থনে হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ এর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ভ্রাতৃঘাতি ভয়াবহ যুদ্ধ-‘দ্যা ওয়ার অব ক্যামেল’ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ। যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ছিল তেইশ হাজারেরও বেশী। বেদুইন বনু জোরহাম গোত্রের উত্তরসূরী ফাহর বিন আব্দুল মালিক তথা কোরাইশ গোত্রীয় বনু উমাইয়া চক্র চির প্রতিদ্বন্দ্বী একই গোত্রের বনু হাশিমের বিরম্নদ্ধে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একত্রিত হয়ে আবু সুফিয়ানের পুত্র মাবিয়ার নেতৃত্বে হযরত আলী রাঃ এর খিলাফতিকে অস্বীকার করে সিফফিন নামক স্থানে হযরত আলী রাঃ এর সংগে ভয়াল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে জয় পরাজয়ের চেয়ে বড় বিষয় ছিল- মুসলিম উম্মাহর সুস্পষ্ট দ্বিধা বিভক্তি।

উমাইয়াদের কর্তৃক নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের কারনে আহলে বাইয়াতের অনুসারী উত্তরসূরী আহসাবে সুফফাগণ মক্কা-মদিনা হতে বিতাড়িত হয়ে দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়েন। স্বয়ং হযরত আলী রাঃ কুফায় রাজধানী স্থানামত্মর করেও শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হন এবং উমাইয়াদের প্ররোচনায় খারিজি আততায়ীর হাতে শাহদাৎ বরণ করেন। ষড়যন্ত্রের আপাতঃ পরিসমাপ্তি ঘটে কারবালার নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে। কারবালায় হযরত আলী রাঃএর এগার জন পুত্রকে সপরিবারে হত্যা করে সভ্যতার ইতিহাসকে আরেকবার কলংকের কালিমায় লেপন করে মাবিয়া পুত্র কুখ্যাত লম্পট মদ্যপ ইয়াজিদ জাজিরাতুল আরবে উমাইয়া ডাইন্যাস্টির গোড়াপত্তন করে। উমাইয়া ডাইন্যাস্টি প্রায় শতবর্ষব্যাপী (৬৬১ খ্রিঃ হতে ৭৪৯ খ্রিঃ পর্যমত্ম) তাদের রাজত্ব কায়েম রেখে ইসলামের ইতিহাসকে বিকৃত করতে থাকে।

রাসুল সাঃ এর চরিত্রকে হনন করার মানসে তাঁকে তারা হতদরিদ্র, শতছিন্ন বস্ত্র পরিধানকারী, কায়িকশ্রম বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী, ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে পেটে পাথর বেধে রাখা ইত্যাদি অশস্নীল মিথ্যাচার প্রচার করে সত্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়। বাদশাহী ইসলাম শাহী আলেমগণ কর্তৃক ফতোয়া সমৃদ্ধ হয়ে এক জুলুমের রাজত্বে নীরব ত্রাস চালাতে থাকে। সর্বশেষ জুলুমশাহী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার সামরিক শাসন ও নৈরাজ্যকর স্বৈরাচারী অত্যাচার দ্বারা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম হতে বিচ্যূত করার প্রয়াস চালালে ইমামে আজম আবু হানিফা রঃ প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করে সমূহ অনিষ্টের হাত হতে ইসলামকে রক্ষা করেন। প্রচন্ড জনরোষের মুখে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পতন ও মৃত্যু ঘটে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পতন ও মৃত্যুর পর ৭৫০ খ্রিঃ দ্বিতীয় মারোয়ানকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে শুরম্ন হয় আববাসিয় ডাইন্যাস্টি।

শাহী শানশওকতে তারা প্রায় পাঁচ শত বর্ষব্যাপী (৭৫০ খ্রিঃ হতে ১২২৮ খ্রিঃ পর্যমত্ম) রাজত্ব করেন। এ’ সময়ে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার ও প্রসারিত হয়। আব্বাসিয় শাসকদের আনুকূল্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সমর্থকদের মাধ্যমে দূর প্রাচ্যে ইসলামী আলো প্রসারিত হতে থাকে। ভারতবর্ষে অসংখ্য অলী আওলিয়ার খানকার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারকর্ম বিসত্মৃত হতে থাকে। ইসলামের আবির্ভাবের পর দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এটি একটি ক্রমবিস্তৃতিশীল একেশ্বরবাদী শান্তির ধর্ম হিসেবে মানবতার মুক্তি সনদ আল কোরানের জীবন বিধান প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।

আরব উপদ্বীপ হতে ক্রমান্বয়ে ইসলামের মহান বাণী, রাসূল সাঃ এর শরীয়া ও সুন্নাহ এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সুষ্ঠু জীবনবোধের প্রবাহ সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃতিলাভ করে। এরই মধ্যে শুরম্ন হয় ইউরোপীয় শিল্প বিপস্ন¬ব। দুরভিসন্ধি, চাতুর্য, উন্নত রণকৌশল ও অনৈতিক প্রলোভনের তাড়নায় ইউরোপীয় যুদ্ধবাজ রাজন্যবর্গ আমেরিকাসহ আফ্রিকা ও এশিয়ায় দীর্ঘ মেয়াদী উপনিবেশ স্থাপন করে শোষণ চালাতে থাকে। এ’সময় শাহী ইসলামী ভাবধারা জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার চেয়ে ভোগবিলাসীতায় বেশী নিমগ্ন থাকায় এক সময়ের রণপটু মুসলিম উম্মাহ ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের নিকট ক্রম পরাজয়ে নিস্তেজ ম্রিয়মান দন্ত নখর বিহীন শার্দুলের ন্যায় নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসন শোষণ গভীরে প্রোথিত হয়ে মুসলিম রাজন্যবর্গকে উৎখাত করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা মাফিক মুসলমানদের শক্তিহীন করতে থাকে।

পশ্চিম ইউরোপীয় বেনিয়া জাতিসমুহের সমুদ্রের উপর আধিপত্য থাকায় তারাই বানিজ্যের ছদ্মাবরণে সমগ্র বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনে ব্রতী ও সক্ষম হয়। অবশ্য অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে উত্তর আমেরিকা বিদ্রোহ করে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বৃটিশ উপনিবেশের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। বৃটিশ বেনিয়াগণ সমগ্র বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠির ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ছিল চরম আক্রোশপূর্ণ। বিশাল বৃটিশ সাম্রাজ্যের জন্য মুসলমানগণই ছিল একটি ভীতিপ্রদ জাতি। যেকোন বিনিময়ে তারা মুসলমানদের নিসেত্মজ ও বহুধা বিভক্ত করে পদদলনের ষড়যন্ত্রে এখনো লিপ্ত রয়েছে।

ক্রুসেডের প্রতিশোধ স্পৃহা খ্রিস্টান যাজক ও শাসকদের অবিরাম তাড়িত করে। বৃটিশ কুটনৈতিক চাল মধ্যপ্রাচ্যে নিয়োজিত বৃটিশ গোয়েন্দা মি. হ্যাম্ফার (Hempher) কর্তৃক বাস্তবায়নের ফসল আজকের ওহাবীবাদ। তৎকালীন বৃটিশ কলোনিয়াল মিনিস্ট্রি কর্তৃক প্রণীত শতবর্ষী দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার বাস্তবরূপ আজকের ওহাবী মতবাদ এবং শতধা বিভক্ত মুসলিম উম্মাহ। রাসুল সাঃএর ওফাতের সাড়ে বার শত বৎসর পর আরব জাহানে মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ইসলাম ধর্ম সংস্কারের নামে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তার মতবাদকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার জঙ্গী প্রয়াস চালান। মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর প্রোফাইল পূর্ণ নামঃ মোহাম্মদ বিন আবদ আল ওহাব নজদী।

জন্মঃ ১৭০৩। মৃত্যুঃ ১৭৯২। শিক্ষাঃ মক্কা, মদীনা, বসরা ও ইস্পাহান বৈবাহিক অবস্থাঃ খৃস্টান, ইহুদী, মুসলিম প্রভৃতি। পিতার নামঃ আবদ আল ওহাব নজদী, একজন সুন্নী ধার্মিক মুসলমান। ভাইঃ সোলায়মান বিন আবদ আল ওহাব একজন খাঁটি সুন্নী মুসলমান, তার ভাইকে ইসলাম বিরোধী কাজে বাধা প্রদান করেও ব্যর্থ হন।

প্রকৃতিঃ নিষ্ঠুর, মেধাবী, উচ্চাভিলাষী, বেয়াদব, স্কলার, বদরাগী ইত্যাদি। গোয়েন্দা হেম্ফারের সংগে পরিচয়ঃ ১৭৩০ খ্রিঃ। ইসলামের বিরম্নদ্ধে বিদ্রোহঃ ১৭৩৪ খ্রিঃ। ইবনে সউদের সংগে স্বীয় কন্যার বিবাহঃ ১৭৪৪ খ্রিঃ। রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যত বাণীর জের হিসেবে আরবের নজদ প্রদেশে অষ্টাদশ শতকে মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর আবির্ভাব ঘটে।

রাসুল সাঃ ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন যে, নজদ প্রদেশে আমার উম্মতদের মধ্যে একজনের মাথায় শয়তানের শিং গজাবে এবং সে আমার উম্মতদের অপরিসীম ক্ষতি সাধন করবে। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.