আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যঃ স্থান সংকুলান কৌশল

আমাদের দেশটা আকারে ছোট । মানুষ কিন্তু প্রচুর । এই মানুষের আবাসন, ব্যবসা এবং নানাবিধ কাজে প্রচুর জায়গা প্রয়োজন । প্রচুর জায়গাতো আর আমাদের নেই । তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকাতো যায় না ।

আমাদের জনগন অবশ্যই যথেষ্ট তৎপর । জায়গার বহুবিধ ব্যবহারে আমাদের বুদ্ধি ও প্রচেষ্টা বেশ অগ্রসর । কিছু লোকের বুদ্ধি , উদ্যম ও উদ্যোগ দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না । ছোট একটা দেশ ছেয়ে আছে কত কত নদী আর জলাশয়ে । কি আর কাজে লাগে এগুলো দেশের ? বেকার পড়ে থাকে ।

সাধারন জনগনের আইকিউ কম হতে পারে , কিছু বুদ্ধিমান লোক কিন্তু এটি ঠিকই খেয়াল করছে । তাইতো ফাঁকা নদীবক্ষে কষ্টে সৃষ্টে স্থাপনা তৈরী করে , বালু-পাথর বা অন্য কোন ব্যবসায় কাজে লাগানোর মহত্তোম কাজটিতে তারা হাত দেয় । এতেতো সমাজেরই উপকার হয় । কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে- গতিশীলতা আসছে অর্থনীতিতে । আফসোছ, সাধারন মানুষও এটা বোঝেনা, বোঝেনা প্রশাসনও ।

ওরা একে বলে নদী দখল ! পেপার পত্রিকার লোকজন আদাজল খেয়ে লাগে এর পিছে । এর কোন মানে হয় ! তারপর দেখুন, ছোট্ট ঢাকা মহানগরীতে মানুষ গিজ গিজ করছে । এদের হাঁটা চলার জন্য ফুটপাত যেমন দরকার, হাতের নাগালে তেমনি সেবা পাওয়াও দরকার । হাঁটার পথে সিগারেট-পানের নেশা চাপতে পারে । চা পানের জন্য আইঢাই করতে পারে মনটা ।

ক্ষুধাতো যখন তখনই লাগতে পারে- তাই যেখানে সেখানেই কলা-বিস্কুক-কেক থাকা চাই । পথচারীরা গাড়ি কিনতে পারেনা তাই ফুটপাতে হাঁটে , বুঝলাম হয়তো তারা গরীব- সেজন্য তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার অধিকারতো ক্ষুন্ন করা যায় না । ক্ষুধায় স্বাস্থ্য নষ্ট হতে পারে , তাই হাতের নাগালে খাদ্যের মজুদ প্রয়োজন । সাধারন জনগন আর প্রশাসন এটা না বুঝলেও কিছু লোক ভালই বোঝে । তাইতো প্রশস্ত ফুটপাতে চা বিস্কুট, পান বিড়ির টং বসাতে তারা মোটেই কসুর করেনা ।

মানুষকি তা বোঝে ? সবাই বলে ফুটপাত দখল ফুটপাত দখল । আরে এতে দখলের কি আছে ! এগুলো কি আর পাকা ঘরবাড়ি ? এসবতো নিতান্তই অস্থায়ী দোকান পাট । বললেইতো সরিয়ে ফেলা যায় । আর মাঝে সাজে সরাতেতো হয়ই । ওইযে পুলিশ দাবড়ানি দেয় , মোবাইল কোর্ট জেল জরিমানা করে ! তবুও মাটি কামড়ে পড়ে থাকে ওরা ।

জনসেবায় ওদের এ আত্মত্যাগের মূল্যায়ন কোনদিন কি হবে এদেশে ? কিন্তু দেখুন , হোটেল সোনারগাঁয়ের কাছে খালের প্রবাহের আড়াআড়ি বিজিএমইএর বিশাল ভবন তৈরী হয়েছে , কই তাদেরতো কেউ দাবাড় দেয় না, বরং তাদের এই উন্নয়ন্মূলক কাজের প্রশংসা করে থাকে । ট্রাফিক জ্যামের নগর ঢাকা । রাজপথে যখন তখন যেখানে সেখানে লেগে যায় যানজট । থেমে থাকা যানের সারি দীর্ঘ হতে থাকে । পাশের ফুটপাতেতো গাড়ি নেই ।

এসময় একে কাজে লাগানো কি দোষের ? মোটর সাইকেল গুলো গোঁ গোঁ করে উঠে যাচ্ছে ফুটপাতে । কি চমৎকার সমাধান দেখেছেন ! দেখতেও কত সুন্দর আর স্মার্ট লাগেনা বলুন ? একটার পেছনে আরেকটা । কি সুন্দর সারি বেঁধে ছুটে চলে । পথচারীরাও বেশ সতর্ক । সাবধানে পাশের দেয়াল ঘেঁসে দাঁড়ায় বা ধীরে ধীরে হেঁটে চলে জায়গা ছেড়ে দেয় ।

অবশ্য দুএকজন অসাবধান পথচারীর ঘাড়ের উপর মোটর সাইকেল উপনীত হয়ে যায়, এতে দোষ কার বলুন ? দোষতো কুল্যে ওই পথচারীর । তুমি ব্যাটা দেখে চলবেনা ? কয়েকবছর আগে আগারগাওয়ের কাছে লাইনিং করা খালের উপর মহল্লাবাসী মসজিদ নির্মান করেছিল । মহল্লাবাসীর কথা , খাল উপচেতো পানি আসবেনা । পানি প্রবাহের জন্য নিচে খালিই আছে । অকাট্য যুক্তি ।

তবুও সাধারন মানুষ সেটা বুঝল না, বুঝলনা প্রশাসন । ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ নিয়ে এসে ভেংগে গুঁড়িয়ে দিল । দেখুন না পান্থপথের পশ্চিম দিকে স্কয়ার হাসপাতালের চমৎকার কৌশল । রাস্তার দুপাশে দু উইং এর মাঝে রাস্তার পৃষ্ঠদেশের বেশ উপর দিয়ে ব্রীজ তৈরী করেছে । নিচেও বেশ ফাঁকা ।

দোতলা বাস মায় দু টনি ট্রাক পনের টন মাল বোঝাই করেও স্বচ্ছন্দেই যেতে পারবে । ওদিকে দেখুন হসপিটালটির দু উইঙ্গের মাঝে কত অনায়াস যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়ে গেল । নিচে গিয়ে রাস্তা পেরোতে গেলে কত ঝক্কি । কষ্ট আর যান চলাচলে বিঘ্ণই সৃষ্টি হবে শুধু । এসব থেকে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষনীয় আছে ।

এর কাছেই দেখুন না কনকর্ডের বিশালাকার বিল্ডিং । এর পেটের ভেতর দিয়ে কলাবাগানের একটি বাইলেন পান্থপথে এসে মিশেছে । কি চমৎকার কি চমৎকার ! কি অভিনব স্পেস ম্যানেজমেন্ট ভাবাই যায় না । মনে হচ্ছে, প্রাচীণ পুরাকীর্তি , সমুদ্র , সুন্দরবন আর পাহাড়ী অঞ্চল পর্যটক আকর্ষনে সফল না হলেও আমাদের স্থান সংকুলান ব্যবস্থাপনা একদিন বহু পর্যটককে এদেশে টেনে আনবে, হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয় । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।