আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপিএল স্পোর্টস রম্যঃ পর্ব ২

https://www.facebook.com/blogger.sadril বিপিএলে যেখানে ভারতীয় ধারাভাষ্যকারেরা পাকিস্তানি প্লেয়ারদের হিন্দী-উর্দুতে সাক্ষাতকার নিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশী খেলয়াড়দের বাংলায় সাক্ষাতকার নেবার কেউ নেই। পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা যখন ভারতীয় ধারাভাষ্যকারদের নিকট “খেলেঙ্গে,হারেঙ্গে,লুটেঙ্গে,পিটেঙ্গে,মারেঙ্গে” বলে আরামসে মনের ভাব প্রকাশ করছে সেখানে কমেন্টেটরদের কঠিন ইংরেজীতে প্রশ্ন শুনে বাংলাদেশী খেলোয়াড়েরদের মুখখানা দেখেই বোঝা যায় “প্রশ্ন কমন পড়ে নাই”। কমেন্টেটাররাও যেন বাংলাদেশী খেলয়াড়দের পেয়ে কঠিন কঠিন শব্দের ঝাপি খুলে বসছেন। যেমন- বিদেশী কমেন্টেটরঃ how’s the gratification of the exogenous solitude of the pitch? আমাদের দেশি খেলোয়াড়ঃ yes, pith was great,….(দীর্ঘ বিরতি) Ball drops, but low বিদেশী কমেন্টেটরঃ so what you think about the counterinsurgency in the slumbered egotism of your players!!! মাঠে যখন এই অবস্থা তখন কমেন্ট্রি বক্ষে থুক্কু বক্সে আরও বেহাল দশা। সেখানে আবার কমেন্ট্রেইটরদের পাশাপাশি বাংলাদেশী বনোদন তারকারাও থাকেন।

তাদের সাথে আলোচনার শুরুটা অনেক সময় বাংলায় শুরু করে ভারতীয় উপস্থাপীকা শীনা চৌহান ইঙ্গিত দেন তিনি বাংলা জানেন। উত্তরে বাংলাদেশী তারকারা ইংরেজীতে খেলা নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে দেখিয়ে দেন তারাও ইংরেজী জানেন। সিনা সোজা করে শিনা চৌহান পরবর্তীতে ইংরেজী বলার পাশাপাশি একটা দুটো বাংলা বলে তার বাংলাভাষাপ্রীতি প্রকাশ করেন। সেই প্রীতি থেকেই কিনা মাঝে এক ম্যাচ বাদ দিয়ে ঘুরে এসেছেন শহীদ মিনার থেকে। এই সুযোগে ঐদিন কমেন্ট্রি বক্সে খেপ মারলেন বাংলাদেশী মডেল নাবিলা।

বাংলাদেশি তারকাদের পাশাপাশি বিপিএলে দেখা যাচ্ছে বলিউড তারকাদের। ঢাকা গ্লাডিয়েটরস-এর ম্যাচে অনেকদিন পর Blue ফিল্ম-এর নায়ক জায়েদ খানের দেখা পাইলাম। (আমার দেখা জায়েদ খানের সর্বশেষ ফিল্মের নাম ছিলো Blue)। এবার আসি খেলার কথায়। বিপিএল স্পোর্টসরম্য-এর আগের পর্বে প্রথম চার ম্যাচ-এর বিবরন দিয়েছিলাম।

সেমিষ্টার ফাইনলা পরীক্ষা চলায় সব ম্যাচ দেখা হয় না। তারপরও সামুর পাঠকদের জন্য কিছু ম্যাচের ম্যাগনেটিক (চুম্বক) অংশঃ Barisal Burners VS Khulna Royal Bengal Tigers ম্যাচটা ছিলো বসন্তেরর শুরুর দিন পহেলা ফাল্গুনে। অনেক আপুরাই হলুদ শাড়ি পরে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যামেরা ঘুরে যাচ্ছিলো এক জনের দিকেই। তিনিও হলুদ শাড়ির সাথে ম্যাচ করা হলুদ দাতের হাসি দেখিয়ে ক্যামেরাকে স্বাগত জানালেন।

আমি তো ভেবেছিলাম আজ “বল ফাটুক আর না ফাটূক গেইলের বসন্ত’। কিন্তু শূরু থেকেই খুলনার বোলাররা গেইলের খেইল থামাও আন্দোলনে নামলেন। তাদের একের পর এক মাপা লাইনের বোলিং-এ সহিংশ গেইল অহিংশ না হয়ে পারলেন না। অনেকগুলো বলে মারলেন না,যেই একটু আগ্রাসী হবার চেষ্টা তখনই আউট। শাহজাদ আউট ছিলো আগেই,এই দুইজনকে অনুসরন করতে থাকলো বরিশালের বাকী ব্যাটসম্যানরাও।

বরিশাল নদীবহুল এই কথা জেনে এসেই কিনা একের পর এক নদী পরিষ্কার (রিভার সুইপ) শট খেলে কিছুটা আগালেন কাষ্টার্ড-এর মতো দেখতে মাষ্টার্ড। তিনিও আউট হলে বরিশালের লঞ্চ ডুবো ডুবো। মমিনুল-এর ব্যাটে অবশেষে একশ পার। শেষের দিকে ভুল করলেন মমিনুল। বোলিং করার সময় বমি করার মতো আওয়াজ করতে থাকা শাহদাতকে স্কুপ প্যাডেল করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে বসলেন।

আমি শুনেছিলাম, সাজুগুজু করতে ব্যাপক টাকা দাবি করায় বিপিএলের কোন দল শাহদাতকে কেনে নাই। তাহলে কি দাড়ি কামাবেন না এই শর্তে খোচা খোচা দাড়ি নিয়েই খুলনের বিপক্ষে খেললেন শাহদাত???যাই হোক, সহজেই রান তাড়া করে জিতলো খুলনা। Sylhet Royals VS Duronto Rajshahi ব্রাড হগের মাথার উপর ফূলটস বলে ঊড়িয়ে মারলেন মুশফিক। বাউণ্ডারী লাইনে ক্যাচ নিয়ে ফিল্ডার আনন্দে দুইদিকে দিহাত প্রসারিত করলো। কিন্তু আম্পায়ার এক হাত প্রসারিত করে জানালেন এটা নো বল।

মারলোন স্যামুয়েলস বেশ ভালোই মারলো। এরই ফাকে সাক্ষাতকার নেয়া হলো খেলা দেখতে আসা সঙ্গীত তারকা ফাহমিদা নবীর। তিনি একটি গানও গেয়ে শোনালেন “লুকোচুরী লুকোচুরী গল্প,তারপর হাতছানি অল্প,মন চায় উড়তে উড়তে,প্রান চায় উড়তে”। ক্রিকেট খেলায় লুকোচরী,কানামাছি,দাড়িয়াবান্ধা টেনে আনার দরকার কী? এভাবে কি গানটা গাওয়া যেত না “টুয়েন্টি টুয়েন্টি গল্প,গ্যালারীতে দর্শক অল্প,বল চায় উড়তে উড়তে,ক্যাচ চায় পড়তে পড়তে”। আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই কিনা উড়িয়ে মারলো স্যামুয়েলস,ক্যাচ ফেললো নাইম।

আব্দুর রাজ্জাকেরও ক্যাচ পড়লো। এতে রাজশাহীর স্কোর ১৭১। সিলেটের ব্যাটিংয়ের শুরুতে কামরান আকমল ভালোই কামড়ালেন। কাপালী ভালোই কাপালো। কিন্তু কাপালী অনেকটা ‘কপিলা’ চরিত্রের মতো আনপ্রেডিক্টেবল।

বোলিংযে এসে এই ছক্কা খাচ্ছেন,আবার উইকেট পাচ্ছেন; ব্যাটিংয়েও যখন চার-ছক্কা মেরে যাচ্ছিলেন,তখনই হঠাত ফাওয়াদ আলমের ইতিহাস সেরা এক ক্যাচে আউট হলেন। সিলেটকেও ম্যাচ হারতে হলো। প্রথম চুই ম্যাচ হেরে ডুবন্ত রাজশাহী এই ম্যাচে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে হলো ঘুরন্ত রাজশাহী। Dhaka Gladiators VS Barisal Burners ঢাকার ইনিংসে প্রথম দুই ওভারে হয়েছিলো এক রান। কিন্তু পরবর্তিতে আজহার মাহ্মুদ আর ইম্রান নাজিরের তান্ডবে ঢাকার পাণ্ডবেরা ২০০ ছাড়ালো।

বরিশাল গেইল দানবটাকে লেলিয়ে দিয়ে খেলিয়ে গেলো। জয় যখন বরিশালের বন্দরে,তখন গেইলের আউটে গাইল না দিয়ে উপায় ছিলো না। তীরে এসে স্পীড বোট ডুবলো বরিশালের। Sylhet Royals VS Chiattagong Kings দুপুরের ভাত খাইতে খাইতে খেলা দেখছিলাম। একের পর এক ম্যাচ হেরে সিলেট কোথায় ভালো খেলোয়াড় আনবে তা না,তারা নিয়ে এসেছে রিয়া সেনকে।

কাউয়া ফিগারের রিয়া সেন সাক্ষাতকারে জানালন,তিনি বাংলাদেশের খাবার খুবই পছন্দ করেন। এই দেশে এসে ভাত খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন। আমার প্লেটের কয়েকটা ভাত কাউয়াটার দিকে ছিটিয়ে দিতে মন চাইলো। এদিকে সিলেটের ১৫২ রানের জবাব দিলো চিটাগাং-এর দেশী খেলোয়াড়েরা। বাংলাদেশে বিরল প্রজাতি পেস বোলার অলরাউন্ডারদের একজন জিয়া বেশ ভালো খেললেন।

আমাদের দেশের ডায়েট কন্ট্রলে থাকা জিরো ফিগার খেলোয়াড়দের মধ্যে এরকম বিশালদেহী খেলোয়াড় সচারচর দেখা যায় নয়া। ভাইজান গরু মোটা তাজাকরনের ঔষূধ খায় নাই তো??? Barisal Burners VS Chittagong Kings: দ্রুত ৩০ রান করে ইনজুরিতে পড়ে ল্যাংচাইতে ল্যাংচাইতে গেইল প্যাভিলিয়নে গেলো। বরিশালও সারা ম্যাচ ধরে ল্যাংচালো। চিটাগং-এর সহজে ম্যাচ জেতায় প্রমান হলো “গেইল নাই তো বরিশালের বেইল নাই”। Duronto Rajshashi VS Dhaka Gladiators দুরন্তভাবে ম্যাচটা জিতে নিলো রাজশাহী।

ম্যাচশেষে মুশফিক বলেই ফেললেন “ITS time for party”। আশা করি, আদনান সামির গান ছেড়ে রাজশাহীর হ্যাট্রিক হিরো মোহাম্মাদ সামিকে নিয়ে পার্টি করা হয়েছে। Duronto Rajshahi VS Chittagong Kings অল্প কিছু রান করেও ম্যাচ জিতলো উড়ন্ত রাজশাহী। সারা ম্যাচে ছিলো তীব্র ঢিলা ঢিলা উত্তেজনা। আরুন লালকে ধন্যবাদ ম্যান অফ দা ম্যাচ সাকলাইন সজীবের সাক্ষাতকার বাংলায় নেবার জন্য।

যদি হিন্দী উর্দুর ব্যাবহার হতে পারে তাহলে বাংলা ব্যাবহারে দোষ কোথায়। আমরা সবাই চাই, ভাষার মাসে বিপিএল (Bangladesh premier League) যেন বিপিএল (বাংলা পর্যুদস্ত লীগ ) না হয়ে যায়। বিপিএল স্পোর্টস রম্য পর্ব-১ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।