আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একেই বলে দেশ প্রেমিক মাসরাফি!!! সবাই পড়েন লেখাটা !! ( don`t miss)!

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ দেশ প্রেমিক মাসরাফি !! তার লেখা টা আমাকে মুগ্ধ করেছে তাই শেয়ার না করে পারলাম না্‌্‌্‌্‌ আমার চোখ দিয়ে পানি না এসে পারল না খুব হার্ট টাচিং লেখা টা সবাই পড়েন আশা করি ভাল লাগবে প্রথম আলোতে মাশরাফির মর্তুজার এত চমৎকার একটা লেখা পড়ে সত্যি অবাক হলাম , অসাধারণ মাশরাফি একটা সময় ক্রিকেট মানেই এই দেশে ছিল ভারত আর পাকিস্তান। ক্রিকেট হলে বাংলাদেশ দুই ভাগ—কেউ ভারতের সমর্থক, কেউ পাকিস্তানের। কারও ঘরে ইমরান খানের পোস্ট ার তো কারও দেয়ালে কপিল দেব। অবস্থা বদলাতে শুরু করল বাংলাদেশ দল ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার পর। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের উন্মাদনার শুরু তখনই।

ভারত-পাকিস্তান বা বিদে শি ক্রিকেটের সুবাদে এ দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেটের একটা প্রেক্ষাপট আগে থেকে তৈরি হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে নিজেদের ভাবতে শুরু করে তখন থেকে। আইসিসি ট্রফি জেতার পর বড় একটা ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেখানো চমক, পরের বছর টেস্ট মর্যাদা পাওয়া—বাংলাদেশের ক্রিকেট খুব দ্রুত অনেকটা পথ এগিয়ে যায়। দিনে দিনে এখন সেটা আরও এগিয়ে। এ দেশের মানুষ এখন আর বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারত-পাকিস্তানকে সমর্থন করে না।

ক্রিকেটে তাদের চিন্তাভাবনা বাংলাদেশকে ঘিরে। অন্য দলের খেলোয়াড়দের চেয়ে সাকিব, তামিমের ভক্তই এখন বেশি বাংলাদেশে। শক্তি-সামর্থ্য যতটুকুই থাকুক, ক্রিকেট হলে এখন পুরো জাতি আমাদের দলের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আমরা কী করছি, কী করব তা নিয়েই ভাবে। ক্রিকেটাররা খারাপ কাজ করলে সেটাকে তারা ভালোভাবে দেখে না, ভালো কাজ করলে প্রশংসা করে।

যেন এটাই আমাদের করা উচিত। ক্রিকেটের অবস্থান অনেক ওপরে উঠে গেছে এই দেশে। আমরা ক্রিকেটাররাও চেষ্টা করি মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে। দেশ আর জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের প্রকাশ ঘটাতে চাই সাফল্যের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে। বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়ে যখন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়তে দেখি, গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।

আমাদের প্রিয় পতাকা অন্য দেশে ওড়ার সুযোগ খুব কমই পায়। হয়তো প্রধানমন্ত্রী কোথাও গেলে ওড়ে, কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সম্মেলনে। আর ওড়ে খেলার মাঠে, স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শকের সামনে। বিশ্বকাপে খেলার সময় সারা বিশ্বের মানুষ দেখে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। নিজে ক্রিকেটার বলে বলছি না, সারা বিশ্বে দেশকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা একমাত্র ক্রিকেটই পারে।

আমি, সাকিব, মুশফিক বা তামিম তো আলাদা কেউ না। আমাদের দেশটাই যায় খেলতে। ভালো-খারাপ পরের বিষয়। আমাদের দেশকে সবাই চিনছে, দেশের পতাকা উড়ছে—এটা আলাদা একটা গর্ব। দেশের পতাকা বয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক বড় পাওয়া।

খেলার মাঠে যখন জাতীয় সংগীত বাজে, অনেক সময় কান্না চলে আসে। লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে, লাউড স্পিকারে বাজছে ‘আমার সোনার বাংলা’...ওই জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে থাকি! না বললে কেউ বুঝবে না বুকের ভেতর কেমন উথালপাতাল ঢেউ ওঠে তখন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এবার শ্রীলঙ্কায় গেলাম। এক জায়গায় খেতে গিয়ে হল্যান্ডের দুই তরুণীর সঙ্গে কথা হলো। তাদের একজন আমার কাছে জানতে চাইল, ‘কোন দেশ থেকে এসেছ।

’ আমি বাংলাদেশ বলার পর বলল, ‘তোমরা অনেক গরিব তাই না...। ’ বললাম, কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। তার পরও সে বলতে থাকে, ‘আমরা তো জানি, তোমাদের দেশে খালি বন্যা হয়। মানুষ খেতে পায় না। ’ আসলে অনেকেই আমাদের দেশকে চেনে এভাবে।

এই দেশে অপরাধ বেশি, দূষণ বেশি—এখানে যারা কাজ করতে আসে, তারাও এসব অভিজ্ঞতাই নিয়ে যায়। তার পরও সান্ত্বনা, ক্রিকেটের কারণে বাংলাদেশকে তারা ইতিবাচকভাবে চিনছে। সাফ গেমস বা অলিম্পিকই বলুন বা আমাদের ফুটবল-হকি দল, তারাও দেশের পতাকা নিয়ে বাইরে যায় এবং আমি তাদের জন্যও গর্ববোধ করি। কিন্তু ক্রিকেটের খোঁজখবর অনেক বেশি মানুষ রাখে। আমরা ভালো খেললে বহির্বিশ্বের মানুষ নেতিবাচক দিকগুলো ভুলে গিয়ে ভাবতে পারে, বাংলাদেশে ভালো কিছুও আছে।

এই দেশের ছেলেরা অন্তত ক্রিকেট ভালো খেলে। হ্যাঁ, খেলা তো আর শুধু আবেগ দিয়ে হয় না। হয়তো আমরা সব সময় ভালো খেলতে পারি না। তবে খেলা দিয়ে আমরাও পারি ভিনদেশি মানুষের আবেগকে নাড়া দিতে। ক্রিকেটে জয়-পরাজয় সবকিছুই দেশকেন্দ্রিক।

আমরা খেলি পতাকার জন্য, ‘আমার সোনার বাংলা’র জন্য। সাকিব আল হাসানের কথাই ধরুন। বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। ও যে আজ একটা জায়গায় চলে গেছে, সেটা কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে খেলেই গেছে। সাকিব একা একা ওই জায়গায় যায়নি।

আমরাও যেখানেই এসেছি, বাংলাদেশের হয়ে খেলে এসেছি। সাকিব যখন আইপিএলে খেলে, তার নামের পাশে বাংলাদেশ থাকে। দেশের জন্য খেলে হারলে খারাপ লাগে। আবার জিতলে অনেক বেশি বুঝতে পারি দেশ আমাদের জন্য কী। একটা জয় কত মানুষকে এক করে দেয়! খেলোয়াড় হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই।

আমাদের জন্য পুরো দেশ আনন্দে ভাসছে, বিদেশে বসে এই কথাটা শোনার চেয়ে ভালো লাগা আর কিসে আছে? আমরা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এর চেয়ে বড় কিছু নেই। এটা ঠিক যে খেলা আমাদের পেশা। এ দিয়ে আমরা পরিবার চালাই। কিন্তু দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই মাঠে নামি। পুরো দেশের ভার আমার ওপর।

এরপর যখন তা থেকে ভালো কিছু আসে, সে আনন্দ রাখার জায়গা থাকে না। শুধু খেলোয়াড় নয়, একজন মানুষ হিসেবেই এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কিছুই নেই। বাংলাদেশ দলের একটা জয় ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় দল-মতের ভেদাভেদ। তখন মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বুঝি এই একটা জায়গাই আছে। আর সবখানে যখন শুধুই হতাশা, তখন ক্রিকেট মাঠে এসে ধর্ম, বর্ণ, দল, মতনির্বিশেষে আশায় বুক বাঁধতে পারে মানুষ।

এই একটা জায়গাই আছে, যেখানে সবার একই প্রত্যাশা। আমরা ব্যর্থ হলে মানুষ কষ্ট পায়, গাল দেয়। তাদের দুঃখ আমরা বুঝি। আসলে দিনশেষে সবই তো দেশের জন্য। দেশের মানুষের চাওয়া আমার, সাকিব বা মুশফিকের কাছে নয়, চাওয়াটা দেশের জন্য।

আমরাও দেশের জন্যই খেলি। সবার চাওয়া এক থাকলে, ঠিক থাকলে দেশ আমাদের আরও ওপরেই যাবে। অন্তত ক্রিকেটে তো বটেই। খেলোয়াড় হিসেবে একটাই আশা, আমার পতাকাকে সবাই আরও বেশি সম্মান করবে। ক্রিকেট মাঠে পতাকা শুধু ওড়ার জন্য উড়বে না, জাতীয় সংগীত শুধু বাজার জন্য বাজবে না; লাল-সবুজ পতাকা দেখে যেন এর আগুনটা টের পায় প্রতিপক্ষ।

বাতাসে পতাকার আন্দোলন যেন ভয়ের কাঁপন ধরায় তাদের মনে। ‘আমার সোনার বাংলা’র সুর আমাদের দেশপ্রেমটা তাদের কানে পৌঁছে দিক। এখন অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ খেলা হলে সবাই ভাবে নিজেদের দিন হলে বাংলাদেশ হয়তো কিছু করবে। নইলে ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া জিতবে। কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই যেন সেটা আর না হয়।

বাংলাদেশকে তারা চিনুক সত্যিকারের বাঘ হিসেবে। নিজেকে দিয়েই বুঝি, দলে আসা নতুন একটা ছেলের মনে এসব হয়তো সেভাবে কাজ করে না। আমি জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পাই ২০০১ সালে। কিন্তু বাংলাদেশ কী, বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা কী, সেসব বুঝি আরও পরে। ২০০৩ বিশ্বকাপে যখন আমি বলটা প্রথম ধরি, বল করতে পারছিলাম না।

কাঁদছিলাম। সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। বিশ্বকাপ হচ্ছে। বিশ্বকাপে আমি দেশের হয়ে বল করছি। অবিশ্বাস্য লাগছিল নিজের কাছেই।

অথচ তার আগে দুই বছর জাতীয় দলে খেলেছি। আমি কিসের ভেতর আছি, সেই অনুভূতি এল দুই বছর পর! দক্ষিণ আফ্রিকায় দাঁড়িয়েও বুঝতে পারছিলাম বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে। সেই রোমাঞ্চ ভোলার নয়। উত্তেজনায় প্রথম বলটা ওয়াইডই করে বসেছিলাম বোধ হয়। সেদিন প্রথম বুঝি, দেশ আছে বলেই আমি আছি।

প্রথম আলোয় প্রতিদিন সবার আগে পড়ি শেষ পৃষ্ঠার ‘তোমাদের এই ঋণ শোধ হবে না’। একটা লেখা পড়লেও ওটাই পড়ি। টেলিভিশনে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারির যেসব অনুষ্ঠান দেখায়, আমি সব দেখি। এগুলো তো অনেক পরে তৈরি করা জিনিস, তার পরও ওই সময়ের কথা মনে হলে আমার খারাপ লাগে। তাঁরা দেশের জন্য কী করে গেছেন আর আমরা কী করছি? তাঁদের জন্যই তো আমরা আজ অন্যের জুতা পরিষ্কার করছি না।

ম্যাচ জিতলে সবাই বলে আমরা নাকি বীর। আসল বীর তো তাঁরা! বারবার ইনজুরি থেকে ফিরে আসার প্রেরণাও পাই সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকেই। এমনও ম্যাচ গেছে আমি হয়তো চোটের কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। দুই-তিনটা বল করেই বুঝতে পারছিলাম সমস্যা হচ্ছে। তখন তাঁদের স্মরণ করেছি।

নিজেকে বলেছি, ‘হাত-পায়ে গুলি লাগার পরও তাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন কীভাবে? তোর তো একটা মাত্র লিগামেন্ট নেই! দৌড়া...। ’ দেশের পতাকা হাতে দেশের জন্য দৌড়ানোর গর্ব আর কিছুতেই নেই। পায়ে আরও হাজারটা অস্ত্রোপচার হোক, এই দৌড় থামাতে চাই না আমি। মাশরাফি বিন মুর্তজা: বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার (পেস বোলার) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।