আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একেই বলে সাপোর্ট

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। একেই বলে সাপোর্ট মোহাম্মদ ইসহাক খান টস হয়ে গেল। টসে আমার দল হেরেছে।

পিচ রিপোর্টে অবশ্য বলেছিল যে ময়েশ্চার না কী একটা কারণে আজকের টস খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমে ব্যাট করতে চাইবে না কেউ। যাক গে, আমি এসব কোথায় বিশ্বাস করি না। টস আবার কী? কয়েন ঘোরানো মাত্র। আমার দলের ছেলেরা আজ এমন ধোলাই দেবে, ময়েশ্চার ফ্যাক্টর কোন পাত্তা পাবে না, দেখো। এখন বিপক্ষ দল আমাদেরকে ব্যাট করতে পাঠাচ্ছে।

আমার বুক দুরুদুরু। উত্তেজিত মন। এবার ওদের মুখে ঝামা ঘষে দেয়ার পালা। ওমা। প্রথম ওভারেই দুটো উইকেট পড়ে গেল? তাতে কী, আটটা তো এখনো বাকি, দেখোই না কী হয়।

আজকে ওদের ওপর ভূতে ভর করেছে, যে ক্যাচ নিশ্চিত মিস হয়, সেটা কী করে ধরে ফেললো আমার মাথায় এলো না। কপাল খারাপ আজ? আরে নাহ! ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে। চতুর্থ উইকেটে শতরানের জুটি না হয়েই যায় না। আমি দুই বছর আগের পরিসংখ্যান মনে করার চেষ্টা করি। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট? আহা, মানুষ তো ভুল করেই, এতে এত চিন্তিত হবার কিছু নেই।

এমন অনেক দিন গেছে, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে টেল এন্ডাররাই হাল ধরে পার করে দিয়েছে। আজও বোধহয় এমন হবে। কিন্তু তা-ও হল না। সোজা বল ব্যাটে লাগাতে পারছে না ওরা, যেগুলো আমাকে নামিয়ে দিলেও লাগাতে পারতাম। যেগুলো ব্যাট স্পর্শ করছে, সেগুলো ঘাসে গড়িয়ে গড়িয়ে থেমে যাচ্ছে, বাউন্ডারি পার হবার আগেই।

প্রথম চার এসেছে ষোলতম ওভারে, ছক্কার আশা না হয় ছেড়েই দিলাম। একটাও ভাল জুটি গড়ে ওঠে নি। এগিয়ে গিয়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হয়ে গেছে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, আরেকজন অমনোযোগী শট খেলে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছে। টেল এন্ডারদের ওপর ভরসা ছিল, কিন্তু শেষ চারটি উইকেট পড়ে গেল বিশ রানে। শেষ ব্যাটসম্যান (যে আসলে বোলার) যখন বোল্ড হল, তখন তিনটি স্ট্যাম্পই পড়ে গেল।

হায় কপাল। কি লজ্জা, কি লজ্জা। বিরোধী গ্যালারি ফেটে পড়ছে উল্লাসে, আমার মুখ গম্ভীর। বে-ইজ্জতি হতেই কি আজ এসেছিলাম? কিন্তু না, একশো দশ রান ফাইটিং স্কোর না হলেও, ভাগ্যের একটু ছোঁয়া থাকলে, ওদের ব্যাটসম্যানরা একটু ভুলভাল খেললে, আর আমরা সামান্য ভাল ফিল্ডিং করলে জিতেও যেতে পারি। এমন কত ঘটনাই তো আছে।

কিন্তু প্রথম পাঁচ ওভারেই যখন দুটো ক্যাচ মিস হল আর সহজ রান আউট করতে পারলো না আমাদের ছেলেরা, এবং বিপক্ষ দলের সংগ্রহ দাঁড়ালো সত্তর, তখন বুকের ভেতর জমাট বাঁধা আশায় একটু ফাটল ধরল বৈকি। তাই বলে কি চলে যাবো? শত হলেও সাপোর্ট করি। আমার দল, আমার আপন জিনিসের মতোই যত্ন করে সাপোর্ট করি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে উৎসাহ দেয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। উৎসাহ আর কী দেবো, খেলা দেখে আমার কান্না চলে আসছে।

পাশের বন্ধুটি খোঁচা মেরে বলছে, এই তোর দল? তাড়াতাড়ি খেলা শেষ হলে মুখ লুকিয়ে বাঁচি। এই চাওয়াটা অবশ্য পূরণ হল, পর পর দুটো ছক্কা মেরে খেলা শেষ করে দিলো বিপক্ষ দল। "শোচনীয় পরাজয়" - খবরের কাগজের ভাষায় যাকে বলে। আমি বাড়িতে ফিরে আসছি। আজ হেরেছি তাতে কী হয়েছে? কাল জিতবো।

সময় তো আর চলে যায় নি। এমন দিন আসবে, সব দল আমাদেরকে দেখে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলে পালাতে চাইবে। আমার দলে না আছে কোন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান, না আছে কোন বিধ্বংসী বোলার, না আছে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরার মতো ফিল্ডার, না আছে সবাইকে উৎসাহ দেয়ার মতো ক্যাপ্টেন। উইকেটকিপার যে আছে, সে তো উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে শিং মাছ ধরার অঙ্গভঙ্গি করে। দশটার মধ্যে নটা বলই তার পিচ্ছিল হাতকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।

এক কথায়, আমরা রান করতে পারি না, উইকেট নিতে পারি না, ফিল্ডিং করতে পারি না। এছাড়া আমাদের আর কোন সমস্যা নেই! যত যা-ই হোক, দলের সব খেলা দেখতে আসি। আসবো। হারুক আর জিতুক, দিনের পর দিন বে-ইজ্জতি হোক, যতদিন বেঁচে আছি, এই দলকেই সমর্থন করবো। সমর্থনের পেছনে কোন যুক্তি থাকে না।

(১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।