আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুইজারল্যান্ড থেকে বলছি - ৩

[সুইজারল্যান্ডে আমার থাকার শেষ মাস চলছে। সামনের মাসে দেশে ফিরে যাব। ফিরে গিয়ে এই সিরিজের নামটা বদলাব। তবে সিরিজটা শেষ করব। সাথে থাকবেন।

] এখানকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশ ভালো। নিজের গাড়ি না থাকলেও কোনো অসুবিধে হয় না। প্রতিটি শহরে বাস, ট্রাম ও মেট্রো আছে। আছে সিটি পাসের ব্যবস্থা। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে অফিস বেশ দুরে।

দুটো মেট্রো বদলে যেতে হয়। তাই যাই। কি আর করা। এরা বেশ পার্টি পাবলিক। শুক্রবার রাত আর শনিবার সারাদিন এরা পাগল হয়ে যায়।

রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিয়ার খাওয়া আর উত্তাল জোরে হর্ন বাজানো এদের আনন্দের একটা ধরন। এ দেশে তিন দিকে তিনটে ভাষা চলে। আমি যে দিকে থাকি সে জায়গায় ফ্রেন্চ চলে। বিয়েল থেকে জুরিখের দিকটায় জার্মান। আর ইটালি বর্ডারে কাছে ইটালিয়ান।

অদ্ভুত লাগে ট্রেনে জুরিখ যাওয়ার সময়। আধ রাস্তা থেকে ঘোষনার ভাষা বদলে যায়। সারা সপ্তাহ কাজ কাজ করে শনি রবি ফাঁকা পেলাম। এদের ব্যবসাও আলাদা ভাবে চলে। মিগ্রোস, কুপ ও ডেনার বলে তিনটে চেইন শপ আছে।

কিন্তু সেগুলোও অফিসের মতন চলে। মানে ৯ টায় খোলে, সাড়ে ৬ টায় বন্ধ। শনিবার হাফ ডে আর রবিবার পুরো ছুটি। আপনাকে এক মধ্যেই সময় ম্যানেজ করে সপ্তাহের কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। শনি আর রবিবার সকালে সাবওয়ে গুলো দিয়ে হাঁটা যায় না বমি আর আরো বাজে কিছুর গন্ধে।

তার মধ্যেই ক্যামেরা নিয়ে বেরোই। লেক লেমানের ছবি তুলি। জায়গাটা খুব সুন্দর। খোলা মেলা লেক। প্রচুর হাঁস আর পেলিক্যান।

কত লোক আসে। রোলার স্কেটিং করে। লেকের উল্টো দিকেই ফ্রান্স। এভিয়ান বলে একটা শহর। এভিয়ানের গল্প অন্যদিন হবে।

তবে লেকের এপাড় থেকে ফ্রান্স দেখতে বেশ ভালো লাগে। সন্ধ্যে যখন হয়ে আসে, ওপাড়ের আলোগুলো একে একে জ্বলে উঠতে থাকে। জল থেকে ওঠা বাষ্পে আলোরা টল টল করতে থাকে। লেকের ধারে পাথরের ওপর বসে বিয়ারে চুমুক মারি আমি। মনে হয় সারা দিনটা এখানে কাটাতে পারলে বেশ ভালো হত।

কিন্তু সে কপাল কই! বাড়ি ফিরে রান্না করতে হয়। দেশে ফোন, স্কাইপ। মাঝে মাঝে সিনেমা। সময় পেরিয়ে যায়। অপেক্ষা করি কবে বৌ আসবে।

একা একা ছোট্ট ঘরটাও কখোনো কখোনো গিলে খেতে আসে। আমার ১.৫ ফ্ল্যাট। ২৮ স্কোয়ার মিটার। তার মধ্যে ইলেকট্রিক ওভেন, মাইক্রো ওভেন, মডিউলার কিচেন, ডাইনিং টেবিল, একটা সোফা, একটা ডবল বেড, দেওয়ালে টাংগানো এল.সি.ডি, একটা সেন্টার টেবিল, আর ওয়ার্ডরোব শ কিছু খুচ খাচ ফার্নিচার। এদের আর্টের সেন্স খুব একটা আছে বলে মনে হয় না।

তাও কে যেনো মাথার দিব্যি দিয়েছে ঘরে কিছু না কিছু রাখতেই হবে। তাই আমার বিছানার ওপরে দেওয়ালে একটা জেব্রার ছবি। বহুদিন দেখে দেখে ভেবেছি একটা জেব্রার তিনটে চোখ হয় কি করে! বৌ এসে উদ্ধার করে ওটা একটা বিশাল রোম্যান্টিক ছবি। দুটো জেব্রা আছে ঐতে। একটা আরেকটার গালে হামি খাচ্ছে।

তাই পিছনের জেব্রাটার এক চোখ গেছে ঢেকে। কি বিপদ। আর আছে বিছানা পাশে দাঁড় করানো একটা ম্যানেকুইন জাতীয় পুতুল। আর মাথা নেই, হাত নেই, সারা গায়ে কুচি কুচি কাঁচ লাগানো। আমার এমনিতেই ভুতের ভয়।

আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে হয়। রাতের বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে কিচেনের হাল্কা আলোয় ঐ কিম্ভুত মূর্তি দেখে বেশ কয়েক বার আঁৎকে উঠতে হয়েছে। অফিস, লেকের পাড়, বাজার হাট করে দিন চলে। বৌ এর আসার সময় ঘনিয়ে আসে। এমন সময় আসে রেলওয়ের এক অফার।

মাউন্ট টিটলিস ট্রেনে যাতায়াত ও টিটলিসে সব কেবলকারে (এখানে বলে ফুনিকুলার) চাপার টিকিট বেশ সস্তায়। মাঝে লুসার্নে ব্রেক করতে হবে। সেই সুযোগে দেখে নেব লুসার্ন। একঘেঁয়ে জীবন থেকে একটু ভিন্ন ধরনের সেই শনিবারটা চলেই এলো... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.