আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার একটি রাত এবং উচ্চাঙ্গ সংগীত।

জাহাঙ্গীরনগরের এক বড় ভাই কল করে বলল, আর্মি স্টেডিয়াম এ আসতেছি তুই আসতে পারবি নাকি? আসতে পারলে টিকিট ম্যানেজ করি। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, এবিসি রেডিও এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের বিরামহীন প্রচারণার পরও যে অনুষ্ঠান আমার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি। বড় ভাই এর একটা কথাতেই সেখানে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলাম। বিশাল লাইন দেখে খুশিই লাগলো। কষ্ট করে আসাটা সম্ভবত কাজেই লাগছে।

বিরাট নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। বাইরের কোন খাবার ভেতরে নেওয়া যাবেনা। সিগারেটতো নেওয়া যাবেই না। ১০০% ধূমপানমুক্ত এলাকা। সবার পকেট চেক করে সিগারেট, ম্যাচ ও অন্যান্য খাবার দাবার রেখে দেওয়া হলো।

ভেতরে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ। বিরাট আয়োজন। তার উপরে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো সময়মত। উপস্থাপনা করতেছে জয়া আহসান। "আরে! আমাদের জয়া"!!! বলে লাফ দিয়ে উঠলো এক বড়ভাই।

সবাইতো মহাখুশি। সুযোগ পেয়ে অন্য এক বড়ভাই বলল "বাইরের কান্ট্রিতে এই ধরনের অনুষ্ঠানের টিকিটের দাম হয় ১০০০ টাকার উপরে। " সামনের দিকে সিটও পেয়ে গেলাম। খুবই মজা! পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনি আসছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার, মুস্তফা মনোয়ার, ইমদাদুল হক মিলন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আসছে। রাত ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের পারফর্ম দেখলাম আর না দেখলাম মজা করতে করতেই সময় কেটে গেলো।

এরপর সবাই বের হলো সিগারেটের খোঁজে। প্রচুর স্মোকিং চলতেছে ভিতরেই। এতো সিগারেট কোথা থেকে আসলো প্রথমে বুঝতে পারলাম না। অবশ্য বুঝতে দেরিও হলোনা। এরা সবাই ভিআইপি।

স্মোকিং করতেছে এমন মেয়ের সংখ্যাও কম না। শালা ভিআইপি না হয়ে বিরাট অন্যায় করে ফেলছি। মজা করার জন্যই বলল এক বড়ভাই। অন্য একজন কোথা থেকে যেন আসলো মুখে হিমালয় পর্বত জয় করার মত আনন্দ নিয়ে। সে সিগারেট ম্যানেজ করে ফেলছে।

গ্যালারির দিকে এগিয়ে যেতেই খেলাম আরও একটা ধাক্কা। গাঁজার গন্ধ পাওয়া গেলো! এক বড়ভাই মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো। হারামজাদারা এইখানে গাঁজা খায় আর গেটে আমাদের সিগারেট রেখে দেয়। ক্যাম্পাসের আশেপাশে হলে ডট ডট ডট ডট ডট। দুইজন ছুটল গাঁজার সন্ধানে।

আর কয়েকজন সিগারেটে টান দিতে লাগলো। কয়েক টান দেওয়ার পর একজন এগিয়ে দিলো আমার দিকে। যদিও সবাই জানে আমি স্মোকিং করিনা। সম্ভবত ভুল করে দিয়েছে। আমিও চাঞ্চে মাইরা দিলাম ২ টান।

কাইয়ুম ভাই চিল্লায় উঠলো "হায় হায়! কি করিস কি করিস!!!" আমি বললাম "কি করি?" -তুই স্মোকিং করিস নাকি? -নাতো! হায় হায়! কি করলাম কি করলাম!" ১টা নাগাদ বিরক্তি চরম আকার ধারণ করলো। উচ্চাঙ্গ সংগীত শোনা আর জেলখানায় রাত কাটানো সম্ভবত একই (আমার কাছে)। ওদিকে পেট চো চো করতেছে ক্ষুধায় আর প্রকৃতির ডাকে। সহ্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে উঠে গেলাম। এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম "ভাই, ওয়াশ রুমটা কোনদিকে?" -বাইরে যান।

-ভাই, ভিতরে কোন ব্যাবস্থা নাই? -আছে। তবে ওইটা ভিআইপি দের জন্য। শালা কবে যে ভিআইপি হব!!! বাধ্য হয়ে বাইরে গিয়েই প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে হল। এখন মুটামুটি ২/৩ ঘন্টা নিশ্চিন্ত। ভিতরে এসে লেগে পরলাম খাবারের সন্ধানে।

সৌরভ ভাই সাথে আছে। কম দামের মধ্যে হাফ তেহারি ৫০ টাকা। পকেটের অবস্থা চিন্তা করে তেহারি খাওয়াটাই বেটার মনে হল। -মামা, হাফ তেহারি দিয়েন তো। -তেহারি শেষ।

-তাইলে ফ্রাইড রাইচ দ্যান। -ফ্রাইড রাইচ একটু দেরি হবে। নরমাল রাইচ আছে। সৌরভ ভাইকে বললাম, ভাই! ১টা চিকেন চাপ (৮০ টাকা) আর ৩/৪ টা পরাটা (৫০/৬০ টাকা) নেই। -ধুর! এখন পরাটা খাবো? তারচেয়ে একটু অপেক্ষা করি।

রাইচ টা হোক। অপেক্ষা করতে থাকলাম। আড়াইটার দিকে রাইচ হইল। দৌড় দিয়ে গেলাম। -মামা, ২টা ফ্রাইড রাইচ দ্যান।

-শুধু রাইচ দেওয়া যাবেনা। সাথে অন্য কিছু নিতে হবে। -তাইলে সাথে ভেজিটেবল দ্যান। -ভেজিটেবল শেষ। মাথা নষ্ট।

বুঝতে পারলাম মামারা কমপক্ষে ৩০০/৪০০ টাকা খসানোর প্ল্যান করতেছে। এই সময় সৌরভ ভাই বীরদর্পে এগিয়ে এলো। -ফাইজলামো করো? ক্যাম্পাসের আশেপাশে হইলে রাইচ তোমার (ডট ডট ডট) ঢুকায় দিতাম। ঝারিতে কাজ হল। সাড়ে ৩ টার দিকে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে সিটে এসে বসলাম।

চোখে রাজ্যের ঘুম। চেয়ারেই ঘুমিয়ে পরলাম। সাড়ে চারটার দিকে সৌরভ ভাই এর ডাকে ঘুম ভাঙল। স্পীকারে তখন বাজতেছে- রাআআআআতত ভঅঅঅঅররর.। বাইরে বের হয়ে আসলাম।

শীতে জবুথুবু অবস্থা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বাস এর ব্যবস্থা করছে। এক বড়ভাই বলল "বলতো প্রোগ্রামটা আর্মি স্টেডিয়ামে কেন করছে?" -কেন করছে? -কারন, রাত ১১ টার পর এখান থেকে কোন বাস টাস পাওয়া যায় না। তুমি চাইলেও রাত ১১ টার পর বাসায় যেতে পারবা না। সারারাত তোমাকে সংগীত শুনতে হবে।

সবাই উঠলো মিরপুরের বাসে। আর আমি একা উঠলাম উত্তরার বাসে। ভাগ্যিস! বাস টা উত্তরা পর্যন্তই ছিল। তা না হলে কথায় চলে যেতাম আল্লাহ মালুম!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.