মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি ক্লিনিকে (ব্র্যাক) গতরাতে খুন হয়েছেন একজন চিকিৎসক। সিলেট মেডিক্যাল কলেজের ৪১তম ব্যাচের ছাত্রী ডাঃ সাজিয়া আফরিন।
রাত তিনটায় একটি সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনে অ্যাসিস্ট করে ডিউটি রুমে চলে যায় সে।
সকালে সেই রুম থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। গলায়, গালে ছিল আচরের দাগ; মাথায় গুরতর আঘাতের চিহ্ন। আমার স্ত্রীর সরাসরি পরিচিত ছিল সে। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম অত্যন্ত সৌম্য শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল সাজিয়া; কারো সাতে পাঁচে ছিলনা কখনো। এমবিবিএস প্রফেশনাল পরীক্ষায় দুইবার মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল সে।
এফসিপিএস এ প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েই প্রথম পর্ব উত্তীর্ণ হয়েছিল ডাঃ সাজিয়া।
দেশের চিকিৎসক সমাজ এই মুহূর্তে নির্বাচন জ্বরে আক্রান্ত। নেতা নেত্রীরা ব্যাস্ত নির্বাচনে স্থুল এবং সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করা নিয়ে আর ওদিকে এক চিকিৎসকের প্রাণ চলে যায় অপঘাতে। এই ঘটনা কোন সাংবাদিকের সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভাঙ্গার ঘটনা নয়, নয় কোন তারকার সাক্ষাৎকার যেখানে লেখা থাকবে তিনি শুঁটকি ভর্তা বেশি পছন্দ করেন নাকি টাকি ভর্তা তাই হয়তো খবরের কাগজের সমৃদ্ধ পাতায় জায়গা হবেনা এই খবরের।
নব্বই বছরের বৃদ্ধ যিনি ডায়বেটিস, কিডনি ফেইলিওর রোগে ভুগছেন তিনি যদি স্ট্রোক করে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তবে পত্রিকায় ছাপা হবে চিকিৎসকের গাফিলতিতে রোগীর 'অকাল মৃত্যু' আর সে খবর পড়তে পড়তে আমজনতা গালির তুবড়ি ছোটাবে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে।
জনগণের টাকায় পড়ালেখা করে সার্ভিস দেয়না, অপারেশনের টেবিলে রোগীর পেট কেটে খুলে রাখে টাকা না দিলে নাকি সেলাই করবেনা- এমনই আরও শত সহস্র অভিযোগ। হিসেব করতে বসে যাবে হাসপাতালের সুইপারের বেতন দিতে যেয়ে সরকারের কত টাকার স্রাদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, ডাক্তার বানাতে গিয়ে জনগণের কত বিড়ি কেনার টাকা ট্যাক্স হিসেবে দিয়ে দিতে হচ্ছে অথচ এই যে অকালে একজন চিকিৎসকের প্রাণ ছিনতাই হয়ে গেল এই নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করবেনা কেউ। বলবে না যে নিরাপত্তার চরম অনুপস্থিতিতে ঠাসা এই দেশে একটি মেধাবী প্রাণ চলে গেল বেঘোরে; দেশকে যার দেবার ছিল অনেক কিছুই।
যদি একজন চিকিৎসকের এই অপমৃত্যু সামান্য কিছু দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়ও তবু প্রথমত যেহেতু সাজিয়া একজন চিকিৎসক তারোপর একজন নারী সেহেতু তার শবযাত্রায় সামিল হবার মত লোক পাওয়া না গেলেও তার ব্যাক্তিগত জীবনের খেরোখাতা খুলে বসতে চাওয়ার লোকের কোন অভাব হবে না হয়তো। তার চারিত্রিক ক্যানভাসে কিছু কালো রঙ ছিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হবেন হয়তো অনেকে।
দিনের শেষে কেবল একা পড়ে রবে সাজিয়ার শোকার্ত পরিবার আর কিছু নিষ্ফল কান্না।
সাজিয়া...
জানি তুমি চলে গেছ না ফেরার দেশে। মাঝরাতে কীবোর্ডে আমার এই বেদনার্ত আঙ্গুল চালনা তোমার কাছে শুধু শূন্য সমীকরণ; এক বুক হতাশা আর অসহায়ত্ব নিয়ে তবু বলতে চাই তুমি ভাল থেকো। নিশ্চয়ই বিধাতা তোমাকে রাখবেন তাঁর প্রিয় কোন জায়গায়।
** মূল লেখাটি প্রথমে ফেসবুকের একটি পেজ চিকিৎসক সমাচার এ পোস্ট করা হয় গত রাতে।
ব্লগারবৃন্দ এবং সামুর অন্যান্য বিশাল পাঠক গোষ্ঠীর নজরে আনতে এখানে আবারো পোস্ট করলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।