আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাকে শিকল পড়িয়ে দে, আমি স্বাধীনতার সাদ পেয়ে গেছি

নিজকে আজও আবিষ্কার করতে পারিনি। আজ ফেইসবুকে একটি ভিডিও চিত্র দেখে চরম ভাবে ব্যথিত হলাম । আমরা নিজামী সাহেব, সাঈদি সাহেব, মুজাহিদ সাহেব এবং কামরূজ্জামান সাহেব কে সবাই কম বেশি চিনি। তাদেরকে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার মত কিছু নেই। আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি ।

আমরা পেয়েছি পূর্বপুরুষের রক্তের দাম স্বাধীনতা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি টিভি পর্দায়, বিভিন্ন প্রামাণ ্য চিত্রে, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে, ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে, মা-বাবার মুখে কিংবা দাদুর গল্পে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখা বা শুনার প্রতিটি মাধ্যমেই আমরা একটি চরিত্রের ভয়াবহতা অনেক বেশি শুনেছি বা দেখেছি। সেই চরিত্রটি হল রাজাকার বা দেশদ্রোহী। আর উপরে উল্লেখিত চারজনই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

যদিও তারা দাবি করে তারা নির্দোষ এবং এইসবই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, মানুষের বানানো মনগড়া গল্প, অথবা তাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক চাল । আমার কথা হল মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, আর এই ৭ কোটি বিধ্বস্ত মানুষ থেকে কেন বেছে বেছে শুধু তাদের ৪ জনের উপর(আরও কিছু থাকতে পারে তবে ৪ জনই প্রধান) এই যুদ্ধ অপরাধী বা রাজাকারের সিল দেয়া হল । তাহলে কি আমি বলব তখন বিধ্বস্ত দেশে তারাই একমাত্র সবল ছিলেন বলে জনগণ তাদের উপর হিংসা করে এই দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল। যদি তাই হয় তবে তারা কিভাবে তখন এতটা সবল ছিল আমার বোধগম্য হয় না। “যা রটে তা কিছুটা হলেও ঘটে”।

আর এখানে পুরোটাই ঘটেছিল। আর এ বিশ্বাসের পিছনে আমাদের প্রজন্মের একটাই কারণ। আমি জানি বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনশীল, আমি জানি প্রামাণ্য চিত্রে কিংবা চলচ্চিত্রে ও দলীয় ভীতি থাকে, কিন্তু যার মুখ থেকে আমি মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি সেই বাবা মাকে ত আমি বলতে পারিনা তুমরা মিথ্যাবাদী, কারণ আমি জানি তারা মিথ্যা কথা বললেন না । অন্তত আমার সাথে । যে গল্প বলতে আমার দাদুর চোখ বারবার ভিজে যেত, সেই গল্প আমি অবিশ্বাস করতে পারি না।

যাইহোক ভিডিও চিত্রটা ছিল লন্ডনের ট্্রাফেলগার স্কয়ারে কিছু সংখ্যক বাঙালির, উপরে উল্লেখিত ৪ ব্যক্তির মুক্তির দাবি চেয়ে মিছিল বা সমাবেশের উপর। যদি তারা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের মুক্তির দাবি করত আমার কিছু বলার ছিল না। যদি তারা মুসলিম বিবেচনায় মুক্তি দাবি করত তাহলে হয়ত আমি এটা লিখতাম না। (যদিও দেশদ্রোহিতা ইসলামের চোখে চরম অপরাধ)। কারণ আমার কাছে মানবতা সব কিছুর ওপরে, আর ইসলাম তার চেয়েও অনেক বেশি ওপরে।

কিন্তু তারা তা করেন নি । তারা যা করেছেন যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির বিনিময়ে স্বাধীনতাকে বিক্রি করে দিয়েছেন, তারা আমার মা বাবাকে মিথ্যেবাদী সাজিয়ে দিয়েছেন, আমার দাদুর চোখের জলে ভেজা গল্পটা কে রূপকথা বানিয়ে দিলেন। এইমাত্র এক সাগর রক্তের ঋণ শোধ হয়ে গেল, আজ বীরাঙ্গনারা সম্ভ্রম ফিরে পেল । তারা একটি গানের মাধ্যমে মিছিল করছিলেন যেখানে স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি কামনা করা হয়। আমার স্বাধীনতা এই প্রথম দেশের বাইরেও বলাৎকার হল তাও আবার কতিপয় বাঙ্গালির কাছে ।

আমি জানি একাত্তরের রাজাকারের চেয়েও বর দেশদ্রোহী এখনও বাংলার বুকে আছে। এখনও তারা আমার মানচিত্রকে চিল শকুনের মত খাবলে খাবলে ছিরে ছিরে খায়। এখনও তাদের জন্য সীমান্তে আমার ভাইয়ের রক্তে আমার পতাকার সবুজ অংশ লাল হয়। যাদের জন্য এখনও আমার বোন সম্ভ্রম হারায়, আমার মায়ের চোখের কোনে জল লেগেই থাকে। এখনও যাদের জন্য আমার খোঁদা ডাস্টবিনে খাবার খোজে,আমার নিরীহ ভাই রাজপথে প্রাণ দেয়, আমার বন্ধু কলম ছোঁরে ফেলে পিস্তল তুলে নেয়, যারা গণতন্ত্রের নামে লুটতরাজ, হত্যা, ধর্ষণ, স্বৈরাচারী করে, আর যারা এখনও আমার দেশের মানুষকে স্বপ্নে বাঁচিয়ে রেখে আশার উদরে ছুরি মারে তারা সব কুত্তার বাচ্চা।

আর তাই বলেই আমি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে রাজাকারের মুক্তি দাবি করতে পারি না। আমার এইসব বিষয় নিয়ে লিখতে মোটেও পছন্দ না তারপরও আজ আর থেমে থাকতে পারলাম না। এই আমার দেশ এই আমার বাঙালি এই আমার স্বাধীনতা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.