আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইকো থ্রিলারঃ লেখক (A Tribute To Rudlefuz!) - PART TWO (Last Part)

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! সামু ব্লগে এসে পরিচয়ের পর থেকে প্রতিনিয়ত যে মানুষটির মত লেখার চেষ্টা করছি, তিনি হচ্ছেন আসিফ রেহমান ভাই, ওরফে Rudlefuz . তার মত সাইকো থ্রিলার বাংলাদেশে কেউ লিখতে পারে কি না সন্দেহ আছে। তার লেখা পড়ে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবারই রোম শিহরিত হয়, সেলিব্রেটি ব্লগারদেরও মনে হয়, আহ, এই ছেলেটার মত লিখতে পারলে মন্দ হত না! আজ আমি, এক ক্ষুদ্র ব্লগার, আমার লেখা বহু পুরনো একটা সাইকো থ্রিলার আসিফ ভাইয়ের নামে উৎসর্গ করলাম। ভাই, আমি যে আপনার কত বড় ফ্যান আপনি নিজেও জানেন না। প্রথম পর্বের পর ৭ অসহ্য যন্ত্রণা আসিফের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। পেটের ছিদ্র দিয়ে কিছুটা নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসতে চায়।

প্রার্থনা করেন আসিফ, “খোদা আমায় মৃত্যু দাও”। লোকটি কি ভাবে যেন তার মনের কথা পড়ে ফেলে। “মৃত্যু, এটাই চাচ্ছেন না আপনি? কিন্তু মরা কি এতই সহজ?” “প্লিজ”... ভাঙ্গা গলায় বলেন আসিফ, “আমায় মেরে ফেল। আমি আর সহ্য করতে পারছি না”। “কিন্তু মৃত্যু তো এত সহজ নয় মি. আসিফ।

আপনার ভাষায়ই শুনুন”... একটি ভাঙ্গা হাত, অন্ধ দু চোখ, আর অবশ নিম্নাঙ্গ নিয়েও লোকটা বাঁচার স্বপ্ন দেখত। তার জীবনের কি অর্থ অবশিষ্ট ছিল জানি না, কিন্তু সে বেঁচে ছিল আরও উনিশ বছর। সম্ভবত, সে ততটা দুঃখে দিনাতিপাত করে নি, যতটা আমরা ভাবছি। - “সে তুলনায় তো আপনি সুস্থই আছেন, তাই না?” আসিফ অতি কষ্টে উচ্চারণ করে, “আর কি কি করতে চাও আমায় নিয়ে? আর কত খেলা খেলবে তুমি?” - “আর কি করব? শুনবেন?” লোকটা এগিয়ে আসে। তার হাতে ধরা একটি খাপখোলা ফাউনটেন পেন।

ঘ্যাচ করে জিনিসটা তার শ্বাসনালীতে ঢুকে যায়। চিৎকার করে ওঠেন আসিফ। - “অত চেঁচাচ্ছেন কেন? আপনার “হান্টার” উপন্যাসে তো নায়িকা কোন চিৎকার করে নি!” “ফাক ইওর হান্টার”... বলতে চান আসিফ। কিন্তু গলার সব বাতাস পেনের আঘাতে সৃষ্টি হওয়া ফুটো দিয়েই বেরিয়ে আসতে চায়। কথাটা আর বের হয় না তার গলা দিয়ে।

৮ আসিফ এখনও বুঝতে পারছেন না, তিনি বেঁচে আছেন কিভাবে। তার বাম হাতের প্রতিটি আঙ্গুলের হাড় ভাঙ্গা, ফ্লেক্সর টেন্ডনগুলো ছুরির আঘাতে দ্বিখণ্ডিত। ডান হাতের তালুর চামড়া সুন্দরভাবে তুলে নেয়া হয়েছে। দু পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে, আর বাকি আঙ্গুলগুলোর নখের নিচ দিয়ে সুঁই ফুটিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি চিৎকার করছেন ঠিকই, প্রতিটি চিৎকারের সাথে সাথে পেটের ফুটো দিয়ে কিছুটা নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসছে, কিন্তু শব্দ হচ্ছে না, কারণ ভোকাল কর্ডে যাবার আগেই বাতাস গলার ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

সারা জীবন ধরে যত সাইকো থ্রিলার তিনি লিখেছেন তার মধ্যে বর্ণিত প্রায় সব ধরণের টর্চারই তাকে করা হয়েছে। তবুও তিনি কিভাবে বেঁচে আছেন কে জানে। মরে গেলেই ভালো হত। কিন্তু লোকটা তার আর্টারিগুলো সাবধানে এড়িয়ে গেছে, যেন তিনি এত সহজে না মরেন। জীবনে এই প্রথম সাইকো থ্রিলার লেখার জন্য নিজেকেই নিজের একটা গালি দিতে ইচ্ছা হল আসিফের।

ঐ ফালতু বইগুলির জন্যই আজ তার এই অবস্থা। ফালতু বইগুলি কি তিনি আর খালি খালি লিখেছিলেন? অন্তরার সাথে তিন বছর প্রেম করার পর অন্তরার বাবা যখন কিছুতেই একজন ভবিষ্যৎহীন পত্রিকায় গল্প লেখা ভবঘুরে লোককে মেয়ের জামাই করতে রাজি হচ্ছিলেন না, তখন তাকে পত্রিকার সম্পাদক পরামর্শ দেয়, আপনি একটা অশ্লীল ধাঁচের ভালবাসার বই লিখুন, একটু লাভ আর একটু সেক্স দিয়ে... কিন্তু আসিফের রুচিতে বেঁধেছিল। তাই আসিফ ভালবাসা নয়, বরং ঝুঁকেছিলেন বীভৎসতার প্রতি। Rudlefuz ছদ্মনামে লেখা প্রথম সাইকো থ্রিলার “ইনসম্নিয়াক” তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তারপর কেটে গেছে অনেক বছর।

কখনও সাইকো থ্রিলার লেখার জন্য কোন সমস্যায় পড়তে হয় নি তাকে। বরং ছেলে বুড়ো সবাই প্রশংসাই করেছে। লেখক জীবনে অসংখ্য পুরষ্কার আর সম্মাননা জুটেছে তার। Rudlefuz! Rudlefuz! স্লোগানে সরগরম হয়েছে প্রায় প্রত্যেক বছরের বইমেলা। কিন্তু আজ? আজ যে সবই অর্থহীন হয়ে গেল।

তিনি কি বেঁচে থাকবেন? আর কি দেখতে পাবেন তার প্রিয়তমা অন্তরার মুখ? ছেলেমেয়েদের চেহারা? তার এই অবস্থা থেকে বেঁচে ফিরে যাওয়া সম্ভব হলেও, ভালভাবে বেঁচে থাকা কি সম্ভব হবে? সবাই কি ভালভাবে গ্রহণ করবে তাকে? অপ্রয়োজনীয় বলে মহাকালের ডাস্টবিনে ফেলে দেবে না তো? প্রচণ্ড ভয় পেলেন আসিফ। প্রচণ্ড ভয়। ৯ সম্পূর্ণ নগ্ন করা হয়েছে আসিফকে। তার পরনে সুতোটি পর্যন্ত নেই। আসিফের কথা বলবার কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই।

তিনি ভাগ্যের হাতে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। লোকটির হাতে একটি পকেট নাইফ। সেটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে সে। খুব লোভীর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ওটার দিকে। সে এগিয়ে এল।

দাঁড়াল আসিফের সামনে। ছুরির ফলাটা দিয়ে স্পর্শ করল তার নগ্ন দেহ। - “আপনি তো অনেক গল্প টল্প লিখেছেন, তাই না? এখন আসুন তো, আমার একটা গল্প শোনাবো আপনাকে। একটা বাইশ বছরের ছেলে একটা পনের বছরের মেয়েকে ভালবাসত। মেয়েটাও তাকে ভালবাসত।

ছেলেটার মনভুলানো হাসি আর সহজ সরল কথায় মেয়েটা একেবারে পটে গিয়েছিল। ছেলেটা মাঝে মাঝেই মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেত। যেখানে সেখানে। মেয়েটা কখনও বাঁধা দিত না। ছেলেটার উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল তার।

এভাবে একদিন ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে অনেক দূরের একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে উঠল। মেয়েটার হৃদয় একটা অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলেও সে কিছু বলল না। সন্ধ্যায় ছেলেটা আর মেয়েটা একসাথে ড্রিঙ্ক করে। কয়েক পেগ খাওয়ার পরই মেয়েটা বলে, ‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমাব’। ছেলেটা কোলে করে মেয়েটাকে বেডে নিয়ে শুইয়ে দেয়।

গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় মেয়েটা। যখন মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গে, তখন সে আবিষ্কার করে যে তাকে একটা অন্ধকার ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে। মেয়েটা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয় না। ঘণ্টাখানেক পর ছেলেটা আসে।

মেয়েটা বলে, ‘কি হয়েছে? আমাকে কে বেঁধেছে? এখনই খুলে দাও’। কিন্তু ছেলেটা বাঁধন খোলার কোন চেষ্টাই দেখায় না। বরং পকেট থেকে বের করে একটি ধারাল ছুরি। ‘কি করবে তুমি?’ ...মেয়েটা চিৎকার করে ওঠে, ‘বাঁচাও বাঁচাও’... ছেলেটা বলে, ‘এখানে কেউ নেই। তোমার চিৎকার কেউ শুনতে পাবে না’।

মেয়েটা কেঁদে ফেলে। ‘কেন এরকম করছ? কি চাও তুমি?’ ‘আমি? আমি কিছু চাই না’। ছেলেটা মৃদু হাসে। সেই হাসি দেখে সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে মেয়েটার। ‘আমি শুধু চাই, যেন তুমি চুপ থাক’।

‘মানে?’ ছেলেটা আর কথা বাড়ায় না। এগিয়ে এসে ছুরির এক পোঁচে ছিঁড়ে ফেলে মেয়েটার ঊর্ধ্বাঙ্গের কাপড়। ‘না!!! মেয়েটা চিৎকার দিয়ে ওঠে। প্লিজ’... ছেলেটার চোখে কোন কামনা ছিল না। সে মেয়েটার কাপড় একটানে খুলে ফেলে।

কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে মেয়েটার অর্ধনগ্ন ঊর্ধ্বাঙ্গের দিকে। তারপরই তার ছুরির ফলা মেয়েটার বুক স্পর্শ করে... ছেলেটার হাতে মেয়েটার দুটো সদ্য কর্তিত স্তন...মেয়েটা চিৎকার করতে থাকে...প্রচণ্ড চিৎকার...আর ছেলেটা মেয়েটার কেটে যাওয়া বড় বড় আর্টারি সেলাই করতে শুরু করে সুঁই সুতা দিয়ে। ভয়ানক ব্যথায় জ্ঞান হারায় মেয়েটি। যখন মেয়েটার জ্ঞান ফিরে আসে, তখন দেখে ছেলেটা চলে গেছে, তার বাঁধন খোলা...মেয়েটা অনেক কষ্টে হেঁটে হেঁটে পালানোর পথ খোঁজে...নেই...একমাত্র লোহার দরজা বাইরে থেকে বন্ধ...শুধু একটা টয়লেট আছে এক কোনায়...মেয়েটা হেঁটে হেঁটে সেখানে যায়...গিয়ে দেখে ওখানে একটা পায়খানার প্যান...ভাঙ্গা...ভিতরে দেখা যাচ্ছে শুকনো বড় একটা পাইপ কিছুটা নেমে সামনের দিকে চলে গেছে... মেয়েটা কি করল জানেন? মেয়েটা জীবন বাঁচাতে ঐ ভাঙ্গা কমোড লাথি মেরে পুরোটা ভাঙল। তারপর সে ঐ অন্ধকার পাইপের মধ্যে নেমে গেল।

কিছুদূর গিয়েই মলমূত্রের গন্ধে দম আটকে আসার জোগাড় হল তার। আরও কিছুদূর কোনভাবে যাবার পর সে দেখল, পাইপটা আরেকটা বড় পাইপের সাথে মিশেছে, কিন্তু সেই পাইপে বয়ে যাচ্ছে মলমূত্রের স্রোত। বমি করে ফেলল মেয়েটি। বসে পড়ল ওখানেই। কিন্তু কিছু করার ছিল না।

কিছুক্ষণ পর সে খোদাকে স্মরণ করে ঝাঁপ দিল মলমূত্রের সাগরে। বুক সমান মলমূত্রের মধ্য দিয়ে কোনভাবে হেঁটে চলল সে। দূরে দেখল একটা আলো মত দেখা যাচ্ছে...একটা আশার স্রোত বয়ে যায় মেয়েটির বুকে...মুহূর্তের জন্য সব যন্ত্রণা ভুলে যায় সে... কিন্তু সবার আশা সবসময় পূর্ণ হয় না। মেয়েটার দেহ তিন দিন পর আবিষ্কার করে একজন সুইপার। দেহটা আটকে ছিল একটা খাড়া ম্যানহোলের গোঁড়ায়।

কি, কেমন লাগলো গল্পটা? চমৎকার না?” আসিফের মাথা আর কাজ করছে না। লোকটার একটা কথাও তার মাথায় ঢুকছে না। একটা শব্দও না। - “কি হল লেখক সাহেব? গল্প পছন্দ হয় নি? নিজের গল্প ছাড়া অন্যের গল্প পছন্দ হয় না, না?” আসিফ নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এবার লোকটা ছুরির ফলা দিয়ে আসিফের বুক স্পর্শ করল।

আসিফ কেঁপে উঠলেন। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরুল না। ছুরিটা চাপ দিয়ে একটু গভীরে গেঁথে দিল লোকটা। ঘ্যাঁচ করে ফলাটা নামিয়ে আনল একেবারে নাভি পর্যন্ত। ১০ - “মেয়েটা আমার কে ছিল জানেন? জানেন কে ছিল?” আসিফের দেহে আরেকটা সরলরেখা আঁকে লোকটা।

আসিফ জানেন না। কিছুই জানেন না তিনি। “মেয়েটা ছিল আমার একমাত্র ছোট বোন”... হঠাৎ স্নেহে আর্দ্র হয়ে আসে লোকটার গলা... “আমার একমাত্র ছোট বোন...আমার কলিজার টুকরা!” “কিন্তু”... আবার হিংস্র হয়ে যায় তার গলা... “ঐ শয়তানটা আমার বোনকে বাঁচতে দিল না! কেন দিল না জানিস? জানিস তুই?” ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে পাগলের মত পোঁচ দিতে লাগল সে। “তোর জন্য! সব তোর জন্য! তোর উপন্যাস থেকে ঐ শয়তানটা এইগুলা শিখেছিল! কোন উপন্যাস মনে পড়েছে? ইনসম্নিয়াক। তোর প্রথম উপন্যাস।

যার জন্য তুই কমনওয়েলথ পুরষ্কার পেয়েছিলি! তাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে তখন সে কি বলেছিল জানিস? বলেছিল... ‘আমার কোন দোষ নাই। আসিফ স্যারের বই পড়ে আমার এগুলা করতে ইচ্ছা হয়েছে। আমাকে ফাঁসি দিবেন সমস্যা নাই, কিন্তু ওনাকেও যেন শাস্তি দেয়া হয়। এই খুনের রক্তে ওনার হাতও রাঙ্গা’... সেদিন পুলিশ সেই কথাকে গুরুত্ব দেয় নি। ছেলেটির ফাঁসি হয়েছে, কিন্তু যে তাকে এই ক্রাইম করতে মোটিভেট করল তার কিছুই হল না।

সে দিব্যি আরও বীভৎস গল্প লিখে আরও ক্রাইম করতে উৎসাহ দিতে লাগলো। কি, এখন বুঝলি কেন এসেছি আমি? কেন ধরে নিয়ে এসেছি তোকে? তোকে নিজ হাতে শাস্তি দেবার জন্য। আজ পাঁচটি বছর আমি শুধু তোর উপর গবেষণা করেছি। তোর সব বই বারবার পড়েছি। তুই কি করিস, কি খাস, কখন ঘুমাস, কোন কালারের জাঙ্গিয়া পরিস সব জেনেছি আমি।

এক মাস ধরে সাজিয়েছি কিডন্যাপ প্ল্যান। ভয় নেই, তোকে আমি মারব না। তবে তুই যাতে আর কখনও লিখতে না পারিস সে ব্যবস্থা আমি করেছি। তোর বাম হাতের ফ্লেক্সর কেটে দিয়েছি। তুই তো বা-হাতিই, তাই না? নাহলে বল, ডান হাতটারও একই ব্যবস্থা করি... তুই যাতে এ কাহিনী কাউকে বলতে না পারিস সে ব্যবস্থাও আমি করব।

তোর কানের সামনে জায়গামত কেটে দেব। তাহলে কি হবে জানিস? তোর ফেসিয়াল নার্ভ কেটে যাবে। বাকি জীবন আর মুখ নাড়াতে পারবি না... ঐ দিক তাকিয়ে দেখ, ঐ যে একটা টয়লেট। ওটার কমোড ভাঙা। ভয় নেই, তোর বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, মাত্র একশ মিটার মত আগালেই দেখবি পাইপের উপর ভাঙা, একটা মিস্ত্রি সেখানে কাজ করছে।

যদি বেশি দেরি করিস, তাহলে লিকটা মেরামত হয়ে যাবে, তুই আর বের হতে পারবি না। তোর জন্য একটা অক্সিজেন মাস্ক রাখা আছে, যাতে গন্ধতে বা বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে তুই মারা না যাস। তোকে যদি মারারই ইচ্ছা থাকত আমার তবে তো প্রথমেই মেরে ফেলতাম। এখন থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে লিকটা মেরামত হয়ে যাবে। সুতরাং, তুই যদি বাঁচতেই চাস, তবে এখনই দৌড় দে।

আসিফ তার সর্বশক্তি একত্র করে টয়লেটের দিকে আগানোর চেষ্টা করলেন। পারলেন না। পড়ে গেলেন। লোকটা ঝুঁকে এল তার উপর। - “ও, ভুলে গিয়েছিলাম”, বলে ছুরির ফলা দিয়ে ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলল তার একপাশের ফেসিয়াল নার্ভ।

জান্তব চিৎকার দিয়ে (বা দেবার চেষ্টা করে) আবার জ্ঞান হারালেন আসিফ। ১১ তার দুদিন পরই দৈনিক পত্রিকায় বেরুলো, জনপ্রিয় লেখক আসিফ রেহমান নিখোঁজ। পুলিশ পুরো এক মাস গাধার মত খেটেও কোন পাত্তা লাগাতে পারল না। আসিফ রেহমানকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। সারা দেশে তার নারীভক্তরা শোকে আকুল হল, পুরুষরা নেমে এল রাস্তায়।

আসিফকে অবিলম্বে খুঁজে বের না করলে সরকারকে পদচ্যুত করা হবে, এমন ঘোষণাও দিয়ে বসল কেউ কেউ। কেউ কেউ এক কাপড়ে বাসা ছেড়ে বের হয়ে শুরু করল অনশন। কেউ কেউ আসিফকে খুঁজে পেলে সেই পুলিশকে বা যেই হোক, তাকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত দেবার অঙ্গীকার করলেন। শহরে শহরে মিছিল বেরুল, আসিফ ফিরে এস। তরুণীরা T-Shirt এ লিখলেন, I Love You, Rudlefuz!!! কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না।

আসিফ আর ফিরে এলেন না। কেউ কেউ বললেন, তিনি এ দেশে টিকতে না পেরে গোপনে বিদেশ চলে গেছেন। কেউ কেউ বললেন, তিনি নতুন গল্পের প্লট খুঁজতে একাকি কোথাও স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছেন। কেউ কেউ বললেন, রাজনৈতিক দাবার ঘুটি হিসেবে বিরোধী দল তাকে কিডন্যাপ করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে...ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যে যা-ই বলুক, আসিফ আর ফিরে এলেন না।

১২ দু বছর পর। দেশের একটা অখ্যাত প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হল ‘নিখোঁজ Rudlefuz ওরফে আসিফ রেহমানের অপ্রকাশিত সাইকো থ্রিলার - ‘THE WRITER’ ’ বইটি বাজারে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে, এটা সেই Rudlefuz এর লেখা। আর দ্বিতীয় কিন্তু প্রধান কারণ হচ্ছে, বইটায় যে কথাগুলো লেখা, তা কেমন যেন সত্যি সত্যি মনে হয়, পড়লে কেমন যেন গা হিম হয়ে আসে। কেন যেন মনে হয় লেখক নিজেই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।

কেন যেন মনে হয় উপন্যাসে যে সাইকো থ্রিলার লেখককে একজন বাস্তব সাইকো এসে নির্মমভাবে টর্চার করে খুন করে...সেই লেখক আর কেউ নন, আসিফ নিজেই। আর খুব হাতেগোনা দু একজনের মনে হয়, এই লেখা আসিফ রেহমান লেখেনই নি। পরিশিষ্টঃ বইমেলা। সজল প্রকাশনীর স্টলের এক কোণে দাঁড়িয়ে চুইংগাম চিবুচ্ছে মাথায় ক্যাপ পরা শ্যামলা বৈশিষ্ট্যহীন চেহারার এক লোক। তার হাতে একটা বই।

বই হাতে উল্টেপাল্টে দেখছে সে। এমন সময় হঠাৎ হুড়মুড় করে এক তরুণীর আগমন। ঘামে জবজব করছে তার সারা মুখ। বোঝা যাচ্ছে, Rudlefuz এর বই “The Writer” এর জন্য সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার এই অবস্থা হয়েছে। তরুণী বলল, স্যারের কি কোন খোঁজ পাওয়া গেল? স্টলের অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোকরা বিক্রেতা বলল, নাহ আপু।

স্যারের কোন খোঁজ নাই। কয় কপি দিব? তরুণী বলল, আপাতত পাঁচ কপি দেন। আর স্যারের খোঁজ যদি না-ই পাওয়া যায়, তাহলে এই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি আপনারা পেলেন কোথায়? ছোকরা হাসল। বলল, স্যারের বাসা সার্চ করতে গিয়ে পাওয়া গেছে। ম্যাডাম দিয়েছেন আমাদের হাতে।

তাহলে...তাহলে... তরুণীকে ঠিক সন্তুষ্ট মনে হল না উত্তরটা শুনে। সে আস্তে করে মিশে গেল জনস্রোতে। কেউ দেখল না, ক্যাপ পরা মধ্যবয়স্ক মানুষটির মুখের কোণে একটা হাসির রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। (সমাপ্ত) Rudlefuz বস, প্লিজ পুরাটা পইড়া একটা কমেন্ট দিয়েন। আর মাইন্ড কইরেন না।

আপ্নেরে ভালবাসি তো, তাই আপ্নেরে নিয়া গল্প লিখছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।