আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবুল হাসান-একটি ইতিহাসের নাম। ব্রাভো আবুল হাসান। ব্রাভো বাংলাদেশ।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... আবুল হাসান একজন মিডিয়াম ফাস্ট বোলার। দশ নাম্বারে ব্যাট করতে নামলেন। বাংলাদেশের রান তখন ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৩। অপর প্রান্তে তখন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক মোহাম্মদউল্লাহ রিয়াদ ১ রানে অপরাজিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিডেল এইচ এডোয়ার্ডের বলে এলবিডাব্লুউ হয়ে প‌্যাভিলয়নের পথে সোহাগ গাজী।

মোহাম্মদউল্লাহ আবুল হাসানকে কিছু একটা বললেন! তুমি শুধু ঠেকিয়ে যাও। যতোক্ষণ ব্যাট চালানো যায়, আমি চালাই!! নাকী মোহাম্মদউল্লাহ বললেন, আজ টেস্টের মাত্র প্রথম দিন। তোমার টেস্ট ক্যারিয়ারেরও আজ শুরু। মাথা ঠাণ্ডা করে নিজের মতো খেলো। আজ তোমার কিছু করার আছে।

খুলনাবাসী গ্যালারিতে আজ তোমার কারণেই এসেছে। আমি এপ্রান্ত আগলে রাখবো। তুমি তোমার মতো ব্যাট চালাও। টাইগার্স ডু টাইগার্সলি। পারলে ফিডেলকে একটা উচিত জবাব দাও।

ভাইস ক্যাপ্তেনের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে শুরু করলেন আবুল হাসান। মাত্র ২০ বছর ১০৮ দিন বয়স। দলে জায়গা হয়েছে বোলার হিসেবে। আর ছিল প্রধান নির্বাচক আকরাম খান, অপর দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আর হাবিবুল বাসার সুমনের প্রেরণা। দলের সবচেয়ে ক্ষুদে সদস্য হওয়ায় ঢাকা থেকে খুলনা যাবার সময় সবাই একটু বেশি বেশি এয়ারকি করলো আবুল হাসানকে নিয়ে।

খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেরও ডেবু। আমাদের আবুলেরও ডেবু!! খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম দেশের ৭ম টেস্ট ভেন্যু। আর সারা বিশ্বে এটি ১০৭তম টেস্ট ভেন্যু। আর বাংলাদেশের আবুল হাসান দেশের ৬৫তম টেস্ট খেলোয়ার। আবুল হাসান একজন মিডিয়াম ফাস্ট বোলার।

বল করেন ডান হাতে। কিন্তু ব্যাট করেন বাম হাতে। জন্ম ১৯৯২ সালের ৫ আগস্ট সিলেটের কুলাউড়ায়। এই সেই জুনিয়র টাইগার আবুল হাসান। অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। আর বাংলাদেশের জিম্বাবুয়ে সফরে আবুল হাসান ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ১৪টি উইকেট পান তিনি জিম্বাবুয়ে সফরে। ২০০৮-৯ সালে সিলেট বিভাগের ক্রিকেটার হিসেবে ফাস্টক্লাস ক্রিকেটে ডেব্যু। তারপর বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্য হয়ে নিউজিল্যান্ড সফর।

অস্ট্রলিয়ার ব্রেট লি আবুল হাসানের আইডল। স্বপ্ন দেখেন ব্রেট লি'র মতো বোলার হবার। আজ টেস্ট ক্রিকেটের ২০৬০তম ম্যাচ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর খুলনার নব নির্মিত শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের আজ প্রথম ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢাকা টেস্ট জিতে ইতোমধ্যে দুই টেস্টে ১-০ লিড নিয়েছে।

আজ বাংলাদেশের কিছু করার দিন। সকাল নয়টায় মুশফিক আর স্যামি স্বর্নমুদ্রায় টস করতে নামলেন। নতুন মাঠের আজ ডেব্যু। তাই টস হয় স্বর্নমুদ্রায়। মুশফিক টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন।

দলের রান ৫, নাজিমুদ্দিন ব্যক্তিগত ৪ রানে ফিডেলের বলে আউট। ফিডেল এইচ এডোয়ার্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের রবি রামপাল আহত হওয়ায় তার জায়গায় দলে নামেন। এই ফিডেল মাত্র ১২ ওভার বল করে আউট করেন বাংলাদেশের ৪ বাঘা ব্যাটসম্যান নাজিমুদ্দিন, সাকিব-আল-হাসান, নাইম ইসলাম, মুশফিকুর রহিম ও নবাগত বোলার সোহাগ গাজীকে। সোহাগ গাজী'র টেস্ট অভিষেক হয় ঠিক আগের ম্যাচে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। যে খেলায় বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৯ রানের লিড নিয়েও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটসম্যানদের অদূরদর্শীতায় শেষ পর্যন্ত হেরে যায়।

আজও বাংলাদেশ দলের ৮ জন ব্যাটসম্যান খুলনা টেস্টের প্রথম দিনেই অনভিজ্ঞের মতো আউট। একমাত্র তামিম আর নাফিস একটা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ। তারপর দায়িত্ব কাঁধে নেন সাকিব আর নাইম। কিন্তু তারা ব্যর্থ হলেন।

তারপর মুশফিক আর নাসিরের ৮৭ রানের পার্টনারশিপ। তারপর তারা আউট হলে স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ব চলে যায় ভাইস ক্যাপ্তেন মোহাম্মদউল্লাহ'র ঘাড়ে। কিন্তু ব্যাটসম্যান কোথায়? কাকে নিয়ে মোহাম্মদউল্লাহ এই টেস্টে দুঃসাহস দেখাবেন? ঠিক তখন খুব প্রয়োজনীয় সময়ে আবির্ভুত হলেন একজন তরুণ আবুল হাসান। যিনি কিন্তু বোলার। দলে জায়গা হয়েছে বোলার হিসেবে।

কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে আবুল হাসান এখন একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। টেস্টে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আবুল হাসান করলেন ইতিহাস। ১৩৫ বছরের ইতিহাসে ১০ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করার ইতিগাস এটি দ্বিতীয়। ১১০ বছর আগে প্রথম কাজটি করেছিলেন অস্ট্রলিয়ার মিডিয়াম ফাস্ট বোলার রেজিল্রান্ড আলেক্সজান্ডার ডুফ ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওটা ছিল ডুফের ডেব্যু টেস্টে ১০ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে করা প্রথম সেঞ্চুরি।

ঠিক ১১০ বছর পর বাংলাদেশের আবুল হাসান করলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি। ১০ নাম্বারে ব্যাট হাতে এ এক অমর কীর্তি। আর এটি ঘটল বাংলাদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আবুল হাসান যখন সেঞ্চুরি করলেন তখন বাংলাদেশের রান সেই ৮ উইকেটে ৩৬৫ রান। দিনের খেলাও তখন শেষ হয়।

প্রথম দিনের শেষে ৮৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৩৬৫। ক্রিজে আছেন মোহাম্মদউল্লাহ অপরাজিত ৭২ রানে আর ডেব্যুট্যান্ট সেঞ্চুরিয়ান আবুল হাসান অপরাজিত ১০০ রানে। এই দুই ব্যাটসম্যান ইতোমধ্যে তুলেছেন ১৭২ রান। যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে নয় নাম্বার উইকেট জুটিতে একটি রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেটের নবম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাউচার এবং সিমকক্স।

১৯৯৮ সালে জোহানেসবার্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা নবম উইকেটে তুলেছিলেন ১৯৫ রান। এটি ভাঙ্গার স্বপ্ন এখন মোহাম্মদউল্লাহ-আবুল হাসানের সামনে। বাংলাদেশের এই জুটির সামনে আছে আর মাত্র দুই জোড়া ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের আফিস ইকবাল আর ইন্তখাব আলম জুটি নবম উইকেটে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৬৭ সালে করেছিলেন ১৯০ রান। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ডুমিনি আর স্টেইন নবম উইকেটে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করছিলেন ১৮০ রান ২০০৮ সালে।

এই দুইটি রেকর্ড ভাঙ্গার স্বপ্ন এখন মোহাম্মদউল্লাহ আর আবুল হাসানের সামনে। তার আগে বাংলাদেশকে অবশ্য করতে হবে লড়াই করার মতো একটি বড় স্কোর। প্রথম টেস্টে ৫০০-এর উপরে রান করেও হারার ক্ষত যে এখনো শুকায় নি। গো বাংলাদেশ গো। ব্রাভো আবুল হাসান।

ব্রাভো বাংলাদেশ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.