আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা হাসান কামরুল কয়লানীতি বিশেষঙ্ঘ কমিটি ও বাস্তবতা শীর্ষক নিবন্ধটি ৮ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখে দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে এশিয়া এনার্জির পক্ষে বিপক্ষে নানান কথা উঠেছে। সম্প্রতি সরকার কয়লানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কে প্রধান করে একটি বিশেষঙ্ঘ কমিটি গঠন করে। যেখানে জিএসবি‘র প্রতিনিধি, ওয়াটার মডেলিং ইনস্টিউটের প্রতিনিধি, পেট্রোবাংলা থেকে পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান, বিএমডি থেকে বিএমডির পরিচালক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের একজন অধ্যাপক, সিভিল সোসাইটি থেকে একজন ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের একজন প্রতিনিধি যিনি যুগ্মসচিব পদমর্যাদার সদস্য সচিব হিসেবে কয়লানীতি প্রণয়নে বিশেষঙ্ঘ কমিটিতে কাজ করেছেন। এ কমিটি সম্প্রতি কয়লানীতি চুড়ান্তকরণের সুপারিশসহ ফাইনাল রির্পোটটি মন্ত্রনালয়ে দাখিল করেছে। যা নিয়ে আদ্যোপান্তে বিভিন্নভাবে আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।

জ্বালানী বিশেষঙ্ঘ ড: শামসুল আলম “ এশিয়া এনার্জির প্রতি অনুরাগ কেন“ শীর্ষক বিশ্লেষনধর্মী একটি প্রবন্ধ লিখেছেন কালের কন্ঠে ১২ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখে। তিনি তার নিবন্ধে এশিয়া এনার্জি কেন কাজ পাওয়ার যোগ্য নয় তা নিয়ে যুক্তি তর্ক তথ্য উপাত্ত উপ¯হাপন করেছেন । তার লেখায় স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের নামে গড়ে উঠে দেশিয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ যুগান্তরে তার এক নিবন্ধে এশিয়া এনার্জি নিয়ে তথ্যমুলক রচনা লিখেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন সম্প্রতি বিশেষঙ্ঘ কমিটি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তার পিছনেও এশিয়া এনার্জির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভা মদদ রয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো বিশেষঙ্ঘ কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়ার পর পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে এশিয়া এনার্জির টিমকে ¯হানীয়ভাবে তথ্য সরবরাহে সহযোগীতা করার জন্য ফুলবাড়ির ¯হানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এশিয়া এনার্জি কাজ পাবে কি পাবেনা তা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার উপর। তবে বহুজাতিক এ কোম্পানী বিভিন্নভাবে সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছে যে ফুলবাড়ি কয়লাক্ষেত্রে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন দেশের জন্য লাভ হবে। তবে সরকারগুলো রাজনৈতিক সরকার হওয়ায় সরাসরি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ বহুজাতিক কোম্পানীকে নাও করতে পারছেনা আবার দেশের অভ্যন্তরে সিভিল সোসাইটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এশিয়া এনার্জির প্রত্যক্ষ বিরোধীতা করায় সরকার তাদের কাজও দিতে পারছেনা। অর্থাৎ এশিয়া এনার্জি নিয়ে সরকার আছে উভয় সংকটে।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতিয় কমিটির সহিত পুলিশের সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানির কারণে এশিয়া এনার্জি নিয়ে একটা ধূ¤্রজাল তৈরি হয়েছে। যা পুরো কয়লাক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করেছে। জাতিয় কমিটির সহিত তৎকালীন বিএনপি সরকারের করা ফুলিবাড়ি চুক্তিটি এখনও অনেকাংশে মানা হয়নি বলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেছেন। ঐ চুক্তিতে বলা হয়েছিল এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিস্কার করা হবে। ফুলবাড়িতে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হবেনা ইত্যাদি।

কিন্তু প্রচলিত খনি ও খনিজ বিধির আলোকে বাংলাদেশ সরকার কি এশিয়া এনার্জিকে বহিস্কার করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে? তাছাড়া এশিয়া এনার্জি যে ফুলবাড়ি প্রকল্পে ফিরতে চায় বা ফুলবাড়ি কয়লাক্ষেত্র তাদের বলে দাবি করে তার যুক্তিকতা কতোটুকু? কারণ খনি ও খনিজ বিধির আলোকে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যক্তি বা কোম্পানী (দেশি বা বিদেশি) কে অনুসন্ধান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। অনুসন্ধান লাইসেন্স মঞ্জুরির পর লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানী তাদের লাইসেন্স এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম গ্রহণ করে । এবং অনুসন্ধান লাইসেন্সটি প্রতিবছর রিনিউ বা নবায়ন করতে হয়। এভাবে পরপর তিন বছর নবায়ন করার বিধান রয়েছে। তিন বছর পর প্রচলিত খনিজ বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান এলাকায় লাইসেন্স গ্রহীতার কোন এখতিয়ার থাকেনা।

কারণ লাইসেন্সটি তখন ইনভেলিড বা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। যদি লাইসেন্স এলাকায় গ্রহীতা মাইনিং লাইসেন্স পায় তাহলে সেখানে খনন ও খনি উন্নয়নের যাবতীয় কাজ লাইসেন্স গ্রহীতার হাতে থাকে। কিন্তু এশিয়া এনার্জির বেলায় দেখা যাচ্ছে এশিয়া এনার্জির অুনকুলে মঞ্জুরিকৃত অনুসন্ধান লাইসেন্সটি ৬ বছর অতিক্রম করছে বা লাইসেন্সের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে । তারমানে প্রচলিত খনিজ বিধির আলোকে এশিয়া এনার্জির এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্সের বৈধ সময় পার হয়ে গেছে। যেহেতু সম্পদের উপযোগীতার ভিত্তিতে একই কোম্পানী একই এলাকায় খনি ¯হাপনে আগ্রহী এবং সরকার সেটা বিবেচনায় রেখেছে সেজন্য এশিয়া এনার্জি অপেক্ষা করতে পারে।

তাই বলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কীত জরিপ বা জনগণকে প্ররোচিত করার কোন কর্মকান্ড গ্রহণ অনৈতিক কারণ এশিয়া এনার্জিকে সরকার বলেনি যে তাদেরকে মাইনিং লাইসেন্স দিচ্ছে বা দিবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে কোন কোম্পানীর অনুকুলে অনুসন্ধান লাইসেন্স মঞ্জুর করলে সেই কোম্পানীকে মাইনিং লাইসেন্স প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে এমন কথা খনি ও খনিজ বিধিতে নেই। তার মানে কোম্পানীগুলো জেনেশুনেই সম্পদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে, যেখানে খনি ¯হাপনের কোন গ্যারান্টি খনিজ বিধির আলোকে সরকার দিতে পারেনা। অর্থাৎ এশিয়া এনার্জির প্রতি সরকারের আইনগত কোন দায়বদ্ধতা নেই। এশিয়া এনার্জির কারণে কয়লানীতি প্রণয়ন থেকে সরকার যদি পিছিয়ে যায় তাহলে তা হঠকারি সিদ্ধান্ত হবে ।

এশিয়া এনার্জি কাজ করবে কি করবেনা তা রাষ্ট্রের রুলস অব বিজনেসের হিসেব। বাংলাদেশি অনেক গ্রুপ অব কোম্পানী রয়েছে যারা কয়লা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু এ খাতে পলিসি না থাকায় দেশিয় শিল্পপতিরা পিছিয়ে আছে। এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ি কোল প্রজেক্টে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের যে প্রস্তাব দিয়েছে টাকার অংকে তা খুব বড় কিছু না। কারণ বাংলাদেশি অনেক বড়মাপের শিল্পপতি ব্যক্তিগতভাবে দু‘চারজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

তাদের ঐ একই কথা সরকার কোল পলিসি করুক দুই চার বিলিয়ন ডলার খরচ করে এ সেক্টরে বিনিয়োগে দেশিয় প্রতিষ্ঠানের অভাব হবেনা। কিন্তু সবার আগে দরকার কয়লানীতি। সরকারের টার্গেট ২০২১ সাল নাগাদ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। দেড় হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটির কয়েকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ইতিমধ্যে সরকার হাতে নিয়েছে। সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুকছে।

ফুয়েল বেইজড পাওয়ার প্লান্টের কারণে দেশিয় অর্থনীতিতে ধস নেমে গেছে এটা দেরিতে হলেও সরকার বুঝতে পারছে। যদি ভিশন ২০২১ পুরণ করতে হয় তাহলে দেশিয় কয়লা উত্তোলনের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিবছর ৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এতো কয়লা আমদানি করে পোষাবেনা। বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্ষেত্র থেকে বছরে ১.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা উৎপন্ন হয়।

যা দিয়ে খনিমুখে ২৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোনরকমে উৎপাদনে টিকে রয়েছে। ভবিষ্যত বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে আগামি কয়েক বছরে অত্যন্ত দুই বা তিনটি নতুন কয়লাক্ষেত্রের উৎপাদন শুরু করতে হবে। আর সেজন্য কয়লানীতি প্রণয়ন জরুরি। সরকারকে এ ক্ষেত্রে দুরদর্শি ও সাহসি ভূমিকা নিতে হবে। খুব দ্রুত কয়লানীতির অনুমোদন দেওয়ার সাহসি ভূমিকা আওয়ামীলীগ নিতে হবে।

আর যেহেতু এটা একটা পলিসিমাত্র তাই এর অ্যামানমেন্ট বা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে যেটা পরে হয়তো সংশোধন করে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু কয়লানীতি চুড়ান্ত করা নিয়ে যে জট রয়েছে তা আগে মিটাতে হবে। আজ সরকার যদি কয়লানীতি অনুমোদন করে কাল বিএমডিতে দেশিয় কমপক্ষে ৫টি প্রতিষ্ঠানের দরখাস্ত জমা পড়বে। যারা সম্পুর্ণ দেশিয় বিনিয়োগে কয়লা উত্তোলণ করতে চায়। এক এশিয়া এনার্জির জন্যতো কয়লাখাত ¯হবির হয়ে পড়তে পারেনা।

এশিয়া এনার্জি কোম্পানী মাত্র আর কোল পলিসিতো রাষ্ট্রিয় ব্যাপার। রাষ্ট্র নিশ্চয়ই কোম্পানীর জন্য বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ করতে পারেনা। এশিয়া এনার্জি কাজ করবে কি করবেনা তা রাষ্ট্রের ব্যাপার যদি ভালো না লাগে এশিয়া এনার্জিকে না দিয়ে দেশিয় কোন প্রতিষ্ঠানের সহিত সরকার জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ মালিকানা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। সবিশেষে কয়লানীতি প্রণয়নে ও অনুমোদনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

আশা করি দীর্ঘদিনের বন্ধ্যাত্ব শেষে এদেশের কয়লাখাত পুণরুজ্জীবিত হবে। হাজার হাজার লোকের কর্মসং¯হান হবে। হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামলেখক। যশমবড়ষড়মরংঃ(ধ)মসধরষ.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.