আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট ও কিছু সুখ স্মৃতি

এই সেই ............. বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ৯ নভেম্বর ২০০০ সালে সর্বপ্রথম টেস্ট খেলতে মাঠে নামে। আমরা এ মাসেই পেরিয়ে এসেছি টেস্ট খেলার এক যুগ। কিন্তু এই এক যুগে আমার প্রাপ্তির ঝুড়ি খালিই বলতে হবে। এক মাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে ব্যতিত অন্য কোন বড় দলকে আজো হারাতে পারিনি। অনেকেই আমাদের দলকে নিয়ে অনেক কটু কথা বলেছে।

তবুও আমাদের দামাল ছেলেরা ঐসব মুখে কুলুপ এটে দিয়ে প্রমাণ করেছে যোগত্যা দিয়েই তারা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। আমাদের কিছু দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী আছে যা পুরন হলে হয়ত আমাদের ঝুড়ি একটু পুর্ন হতো। নিচে কিছু সুখ স্মৃতি ও দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী শেয়ার করলাম। ১. নভেম্বর ৯-১৩, ২০০০। প্রতিপক্ষঃ ভারত।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অনবদ্য ১৪৫ ও হাবিবুল বাশার সুমনের অর্ধশত (৭১) রানের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে সংগ্রহ করে ৪০০ রান জবাবে ভারত সবকটি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৪২৯ রান এবং সুখের কথা হলো ভারতের ইনিংসে কোন সেন্চুরী ছিল না। নাইমুর রহমান দুর্জয় তুলে নেন ছয়টি উইকেট। ২য় ইনিংসে বাংলাদেশ যখন ব্যাট করতে নামে তখন সবার মনেই আশা জেগেছিল ১ম টেস্ট ম্যাচটিতে জয় না পেলেও যেন ড্র করা যায়। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ভুলে শট নেওয়ার প্রবণতায় ৯১ রানেই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় এবং ভারত ১০ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয়।

২. মে ১-৪, ২০০৩, প্রতিপক্ষঃ সাউথ আফ্রিকা। মোহাম্মদ রফিকের ৬ উইকেট নেওয়ার সুবাদে সাউথ আফ্রিকা ৩৩৩ রানেই অল আউট। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হারতে হয় ইনিংস ও ১৮ রানে। ৩. সেপ্টেম্বর ৩-৬, ২০০৩। প্রতিপক্ষঃ পাকিস্থান।

পাকিস্থান ও বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচটির কথা নিশ্চয় অনেকের মনে আছে যেখানে শেষ ইনিংসে ইজমামুল হক একাই দাড়িয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ভেংগে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ১ম ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২৮১ রান জবাবে পাকিস্থান মোহাম্মদ রফিক ও খালেদ মাসুদ সুজনের বোলিং এর মুখে ১৭৫ রানেই গুটিয়ে যায়। ২য় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৫৪ রান সংগ্রহ করলে লিড দাড়ায় ২৬০ রান। পাকিস্থান ২য় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৯৯ রানেই হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট।

তারপর ইজমামুল হক এর দ্বায়িত্বশীল ব্যাটিং এ শেষ পর্যন্ত ১ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্থান। যদিও ঐ ম্যাচে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্য ছিল চোখে পরার মতো। ৪. অক্টোবর ২১-২৬, ২০০৩ প্রতিপক্ষঃ ইংল্যান্ড। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ড্র করার সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে। ৫. ২৮ মে- ১ জুন ২০০৪।

প্রতিপক্ষঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমে ব্যাট করে হাবিবুল বাশার সুমন(১১৩), মোহাম্মদ রফিক (১১১) এর সেন্চুরী ও আশরাফুল (৮১) এর হাফ সেন্চুরীর সুবাদে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪১৬ রান, জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ৩৫২ রানে। ২য় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৭১ রান করে ইনিংস ঘোষনা করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে নেমে ১১৩ রান করার পর শেষ হয়ে যায় পাচ দিনের খেলা। ফল হয় ড্র যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে বড় কোন দলের বিপক্ষে প্রথম ড্র। এবং এই ম্যাচের পর লারা ঘোষনা দিয়েছিলেন পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ না জিতলে তিনি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবেন।

পরের ম্যাচে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে কারন বাংলার দামাল ছেলেরা চায়নি লারার কলংক হোক। ৬. জানুয়ারী ৬-১০, ২০০৫। প্রতিপক্ষঃ জিম্বাবুয়ে। টপওয়ার্ডারের দৃঢ়তাপুর্ণ ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ তাদের টেস্ট ইতিহাসে ৪৮৮ রানের সর্বোচ্চ স্কোর দাড় করায়। জবাবে মোহাম্মদ রফিক ৫ উইকেট ও মারশাফি ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩১২ রানেই আটকে ফেলেন।

২য় ইনিংসে বাংলাদেশ ২০৪ রান সংগ্রহ করলে লিড দাড়ায় ৩৮০। এনামুল হক জুনিয়র ৫৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের ২য় ইনিংস ১৫৪ রানেই গুড়িয়ে দেন এবং এর সুবাধে বাংলাদেশ পায় ২২৬ রানের প্রথম টেস্ট জয় পায়। ম্যাচ সেরা হন এনামুল হক জুনিয়র। ৭. এপ্রিল ৯-১৩, ২০০৬। প্রতিপক্ষঃ অস্ট্রেলিয়া।

শাহরিয়ার নাফিসের সেন্চুরীর সুবাদে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে সংগ্রহ করে ৪২৭ রান। জবাবে মোহাম্মদ রফিক ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ২৬৯ রানেই ধসিয়ে দেন। যে ম্যাচটি বাংলাদেশের পক্ষে জিতে যাওয়াও অসম্ভব ছিলনা সেই ম্যাচ ২য় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যার্থতায় ৩ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়। ৮. জুলাই ৯-১৩, ২০০৯। জুলাই ১৭-২০, ২০০৯।

প্রতিপক্ষঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই সিরিজেই বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবল ধোলাই করে। ৯. জানুয়ারী ১৭-২১, ২০১০। প্রতিপক্ষঃ ভারত। বাতাসে তখন সেওয়াগ বিতর্ক। বাংলাদেশ নাকি অর্ডিনারী দল।

সেই অর্ডিনারী দলের সাথে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে তুলল মাত্র ২৪৩ রান। যদিও সেই ম্যাচ বাংলাদেশ ১১৩ রানে হারে তাতে কি সেওয়াগকেতো জবাব দেওয়া গেল। ১০. নভেম্বর ১৩-১৭, ২০১২। প্রতিপক্ষঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫২৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ করে তাদের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক রান ৫৫৬।

২য় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১৫ রানে এগিয়ে আশা করছি আগামী কাল নতুন একটি ইতিহাস বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের পাতায় ঠায় নিবে। বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যানঃ মোট টেস্টঃ ৭৪টি জয়ঃ ৩টি ড্রঃ ৭টি হারঃ ৬৪টি  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.