আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৬ ( আইন-ই-আকবরি)

সম্রাট আকবরের হেরেম বা বেগমখানা সম্রাট আকবর বিশাল এক মাঠের ভেতর চারদিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে তার ভেতর একদল বেগমের জন্য মহল নির্মাণ করেন। দুই তিন টি মহলের মধ্যে একটি করে বাগান, পুকুর ও কুয়া নির্মিত থাকতো। এই বিশাল আকারের মহল গুলোকে হারেম বলা হত। বাদশাহ আকবরের প্রায় পাঁচ হাজারের বেশী বেগম ও সেবিকা বা দাসী ছিল। এক এক দলের বেগমের উপর এক এক কাজের ভার দেয়া ছিল।

আবার এক একদল বেগমের কাজ দেখার জন্য স্ত্রী দারোগা নিযুক্ত ছিল। প্রত্যেক বেগমের জন্য মাসিক মাসহারা দেবার ব্যবস্থাও ছিল। বেগমের সর্ব শ্রেষ্ঠ দলের বয়স এবং রূপ ও গুণ অনুসারে এক হাজার ছয়শত দশ টাকা হতে এক হাজার আটশত টাকা পর্যন্ত মাসহারা দেয়া হত। সেবিকাদের পঞ্চাশ হএ এবং যারা ধাত্রী তাদের কে চল্লিশ হতে দুইশ পর্যন্ত মাসহারা দেয়া হত। বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের হারেম থেকে নিয়ে আলাদা বাসস্থান দেয়া হত।

বেগম দের কারো কোন সামগ্রী লাগলে তারা হারেমের কোষাধক্ষ্যের কাছে আবেদন করতো। হারেমে ব্যবহারের জন্য আলাদা রকমের মুদ্রা ছিল যা বাইরে পাওয়া যেতো না। বাদশাহ এর সফরঃ বাদশাহ শিকার কিংবা দেশ ভ্রমনে গেলে যে ব্যবস্থা করা হত এই অংশে তার কথা বলা হবে। বাদশাহ আকবর গুলালবার নামক একটা জায়গা নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করেন। তার চারটি দরজা আছে, এবং চারটি তেই তালা দেয়া থাকতো এবং পাহারাও থাকতো।

এই গুলালবারের ভেতরে একটা গৃহ আছে যাতে ৬৪ টি ঘর ছিল। প্রতিটা ঘর ২৪ গজ লম্বা ও ২৪ গজ চউরা ছিল। মাজখানে চউবিন রউতি নামক একটা জায়গা ছিল। এই চউবিন রউতির চারপাশে অন্য সামিয়ানা গুলো খাড়া থাকতো। এর পাশে কাঠের একটা দোতলা ঘর ছিল যাতে বাদশাহ নামাজ পড়তেন।

এই জায়গায় স্ত্রী লোক যেতে পারতো না। এর পাশে আরও ২৪ টি চউবিন রউতি তৈরি করা হত যাতে বেগম রা থাকতো সফরের সময়। বাদশাহ যখন পদচারনা করতে করতে ক্লান্ত হতেন অখন এই তাবু গুলোতে গিয়ে বিশ্রাম করতেন। তাবুগুলোর চারপাশে মুক্তার ঝালর ঝুলানো থাকতো। এখানে বসে বাদশাহ সন্ধ্যায় সময় কাটাতেন।

গুলালবারের কাছেই আরেকটি সামিয়ানা তৈরি করা হত যার ব্যস ছিল ৩৬০ গজ। এর মাঝখানেও চউবিন রউতি তৈরি থাকতো যার চারপাশে ৪০ টি ছোট তাবু বানানো হত। এঁকে বলা হত অপকেচি খানা। এখানে বাদশার স্নান করার জায়গা ছিল। এর কাছে কার্পেটের একটা বড় তাবু থাকতো।

বাদশাহ এর সফরকালে এই তাবু গুলো সামগ্রী সমেত তার সাথে যেত। এগুলো বহন করার জন্য ১০০ হাতি, ৫০০ উট, ৪০০ গরুর গাড়ি এবং ১০০০ মুটিয়া নিযুক্ত ছিল। এগুলো দেখাশোনা করার জন্য ৫০০ ঘোড়া সউয়ার অষ্ট প্রহর নিযুক্ত থাকতো। এগুলো খাটানোর জন্য ইরান ও তুরান দেশের ১০০০ ফরাস, ৫০০ মজুর,১০০ ভিস্তি, ৫০ জন ছুতার মিস্ত্রী, ৫০ জন তাবু ওলা, ১০০ দর্জি, ৩০ জন চামার,২০ জন কামার, ২০০ মেথর নিযুক্ত ছিল। বাদশাহের সীলমোহরঃ বাদশার নানা ধরনের সীলমোহর ছিল।

তার একদিকে বাদশার নাম লিখা থাকতো, অন্য দিকে “ সাধুতাই ভগবান কে সন্তুষ্ট করিবার মূল উপায়” লিখা থাকতো। এছারা অনেক মহরে আবার চারপাশে “ যে সোজা পথে চলে, সে কখনো পথ হারায় না” লেখা থাকতো। বাদশাহের পানশালাঃ সোরা দিয়ে বাদশাহের পানীয় ঠাণ্ডা করা হত। বালি ও মাটির তৈরি কুঁজোতে পানি ভোরে তার মুখে ভেজা কাপর দিয়ে বেঁধে একটা বড় গামলায় রাখা হত। সেই গামলায় পানি থাকতো।

পানিতে প্রচুর পরিমানে সোরা মেশান হত। তারপর রেশমের দড়ি দিয়ে বেঁধে কুঁজো টাকে ঘুরানো হত। তিনপাক ঘুরালে কুঁজোর পানি খুব ঠাণ্ডা হত। বাদশাহের পাকশালায় সবসময় গঙ্গা ও জমুনার পানি ব্যবহার করা হত। বাদশাহের পাকশালাঃ বাদশাহ আকবরের পাকশালার প্রধান কর্মচারীর নাম ছিল মীর বেকাইওয়েল।

এই করমচারি শুধু খাবার চাখতেন। ইনি চাখার পড়েই সম্রাট খাবার মুখে দিতেন। বাদশাহের খাবারের জন্য সবসময় ই মাংস, ঘি, তেল, শাকসবজি, নানা দেশের ফল, গরম মশলা ও মিষ্টি তৈরি করা হত। বছরে একবার পাকশালার ভাণ্ডার বিতরন করা হত। বহরাঞ্চ নগর থেকে সুখদোষ চাউল, বাজউরি হতে খঞ্জন নামক চাউল, হিসার থেকে ঘি ও তেল, কাশ্মীর থেকে নান ধরনের পাখি, বাবুর্চি ও পাচকেরা ভেরা ও মুরগী মোটা তাজা রাখতো।

শাক সব্জির জন্য বাদশার নিজের বাগান ছিল। বাদশাহ স্বর্ণ, রুপা, মার্বেল ও উৎকৃষ্ট চীনা বাসনে আহার করতেন। বাদশার জন্য যখন পাচকেরা খাবার নিয়ে যেতো তখন তাদের মুখে ও নাকে রুমাল বাঁধা থাকতো। খাবার গুলোকে রেশমের কাপড় দিয়ে সিল করে দেয়া হত। খাবার সময় মীর বেকাইওয়েল সিল খুলে খাবার চাখতেন।

তারপর বাদশাহ খাবার মুখে দিতেন। সুত্রঃ The Ain-I-Akbari by Abul Fazl & Akbarnama by Abul Fazl ছবি- গুগল থেকে। মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৫ ( আইন-ই-আকবরি)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।