আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষকরা ছাত্রদের ঠিক মতো শেখাচ্ছেন তো- ঘুষ নেওয়া অন্যায় ?

সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু আনলে পুড়িয়া গেল/ অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল। আমরা যারা শিক্ষক তারা ছাত্রদের শিখাই- অন্যের জিনিস না বলে নিও না , সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। ঘুষ নেওয়া অন্যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘুষ যে নেয় সে যতটা অপরাধী, ঘুষ যে নেয় সেও ততটাই অপরাধী। এখন প্রশ্ন হল এই শেখানোর যৌক্তিকতা কোথায় ? যারা শেখাচ্ছেন তাদের কতটা অন্তর থেকে এই শিক্ষা দেওয়া উচিত ? তারা আসলে এই শিক্ষা দিতে সক্ষমতো ? অনেকেই বলবেন এটা শিক্ষকদের একটা নৈতিক দায়িত্ব এবং তাদের ( শিক্ষকদের) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শেখানো উচিত।

ভাই আপনি যেহেতু একথা ভাবছেন চলুন তাহলে আমার ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা আপনার সাথে শেয়ার করি । আমার স্কুলের হেড টিচারের সঙ্গে গেছি বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে (ADI অফিস )। কাজ মেটানোর তাগিদে খুব সকাল সকাল গেছি সেখানে। অফিসের কর্মচারিরা সকলে এসে উপস্থিতও হননি। সিঁড়ির পাশের ক্যান্টিনে বসে আমরা চায়ে একটু গলা ভিজিয়ে নিচ্ছি।

একজন কর্মচারি এসে ঢুকছেন অফিসে । আমাদের হেড টিচার লৌকিকতার খাতিরে তাকে বললেন-অমুক বাবু (নাম গোপন রাখা হল) , একটু চা খেয়ে যান। অমুক বাবু নিমরাজি। -তা খাওয়াতে চাচ্ছেন যখন দোতলায় পাঠিয়ে দিন। তা চা খাওয়াবেন যখন সঙ্গে একটু টাও দিয়েন।

আমি মনে মনে ভাবছি টা মানেটা ঠিক কী –বিস্কুট নাকি ! নাকি বিস্কুট কেনার সরঞ্জাম! আসল মজাটা হল দাম মেটাতে গিয়ে। আমরা ছিলাম তিনজন। দোকানের মালিক জানতে চাইলেন-ওপরের চায়ের দাম নেবেন কিনা। আমাদের হেডটিচার সম্মতি দিলেন। চায়ের ক্যান্টিনের মালিক চায়ের দামের যে হিসেব দিলেন তা আটজনের।

কি ব্যাপার !!! “আমুকবাবুকে ধরলেও তো চারজন হয়। আটজনের চায়ের দাম কেন ? হিসেব মেলাতে পারছি না দেখে ক্যান্টিনের মালিক বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন-অমুকবাবুরা চারজন। অন্যদের বাদ দিয়ে কেবল অমুকবাবুকে চা দিলে অমুকবাবু খুব অসন্তুষ্ট হন। তখন চায়ের ক্যন্টিনের মালিককেই বকাঝকা করবেন। একেই বলে যা করবে দল বেধে কর ।

কোনো ভয় নেই। ( ছোটোবেলায় পড়েছি না - সবে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। ) অগত্যা.... চারটে চায়ের কতই বা দাম হবে। দামটা বড় কথা নয়। বড়কথা এদের নির্লজ্জতা।

চোখের চামড়া টুকুও কবে মুছে গেছে। আপনি হয়তো বলবেন-দোষ আপনাদেরই । আপনারা দেন কেন! বেচারা শিক্ষকরা না দিয়ে কী করবেন বলতে পারেন। ওদের হাতেই ভবিষ্যতের কাগজপত্র। ওই ফাইলের একটা কাগজ হারালে বৃদ্ধ বয়সের পেনশনটুকু মেলাই দুষ্কর হয়ে উঠবে।

নতুন চাকরিতে জয়েন করেছেন কেউ হয়তো স্কুলে। তার অ্যাপ্রুভাল না হলে মাইনে হবে না । দাও টাকা। নিজের জমানো প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা। চাকরির শেষে তুলতে গেলেন।

সারা জীবনের সঞ্চয় তাই একটু ওজনে ভারিও বটে। দাও টাকা। ওজনে ভারি ঘুষ , থুড়ি মাসখানেকের চা টা খাবার আতিথেয়তা যেমন চলে , আবার এইসব ক্লায়েন্টদের হাত থেকে নিতান্ত সত্যিকারের চা খাওয়া গেলেও টিফিনের খরচাটাতো বাঁচলো। যে শিক্ষকরা শেখাবেন ঘুষ নেওয়া অন্যায়। তাদেরকে এই অফিসের সামান্যতম কাজ করাতে গেলেও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না।

করাতে পারেন না। সুতরাং তিনি সত্যিই ছাত্রকে শেখাতে পারবেন তো ঘুষ নেওয়া অন্যায়, যে ঘুষ নেয় সে যেমন অপরাধী যে ঘুষ দেয় সেও তেমন সমান অপরাধী !  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.