আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীতকালীন বিড়ম্বনা

কোন ধরনের দলাদলির মধ্যে নাই। একলা পথ চলতে পছন্দ করি। ঘটনা ০১: এমনিতে মানুষটা আমি যথেষ্টই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বভাবের। খালি শীতকাল আসলেই আমার গোসল করাটা দৈনিক ক্রিয়া থেকে সাপ্তাহিক ক্রিয়ায় নেমে যায়। যদিও এতে করে তেমন কোন সমস্যা হয় বলে আমার মনে হয় না।

কারণ এক্স বা ডেনিম জাতীয় কোন বডি স্প্রে আমার গায়ের কটু গন্ধটা অনেকটাই ধামাচাপা দিয়ে দেয়। তারপরও প্রায় সময়ই অনেকে অভিযোগ করে যে আমার গায়ের গন্ধ আর বডি স্প্রের গন্ধ মিলে নাকি উলটো এমন একটা হাইব্রিড জাতীয় গন্ধ তৈরি করে যেটা দিয়ে অবলীলায় অ্যানেশথেসিয়ার কাজও করে ফেলা যাবে। যাই হোক, এসব কথা আমি গায়ে মাখি না। গায়ে মাখার অবশ্য উপায়ও নাই। গায়ে ময়লার পুরু আস্তরণ পড়ার কারণেই হোক, অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক, আমার চামড়া এখন অনেকটাই মোটা।

কিন্তু আজকে আমার ভাগ্নিটা আমার গালে একটা চুমু দিতে গেলে তার মা যেভাবে 'রে রে' করে উঠল এবং তৎক্ষণাত তাকে যেভাবে কুলি করে আসতে বলল, সেটা মেনে নেয়া যায় না। ক্ষোভে-দুঃখে-অপমানে আরেকটু হলেই আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গিয়েছিল। ঘটনা ০২: বছর দেড়েক আগে আমি নীল রঙের একটা জুতা কিনেছিলাম। কেনার পর থেকে একবারও ধোয়া কিংবা নূন্যতম পরিষ্কারও না করার কারণে যেটাকে দেখলে এখন বাদামি রঙের মনে হয়। এখানেও সমস্যাটা কোথায় আমি বুঝি না।

এক জোড়া জুতার টাকায় যদি মানুষের কাছে দুই জোড়া জুতার অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে থাকা যায়, তাহলে ক্ষতিটা কই? ঘটনা ০৩: হাত দিয়ে দুনিয়ার সকল অবিবাহিত পুরুষ মাত্রই অনেক কিছু করে। আমিও করি। এবং করে হাত ধোয়ার কোন প্রয়োজনও বোধ করি না। কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? আমার সাথে হাত মেলালেই নিশ্চয়ই কেউ আমার সন্তানের জননী হয়ে যাচ্ছে না? ঘটনা ০৪: শীতকালে মানুষজন শীত থেকে বাঁচার জন্য মাথায় উলের টুপি আর গলায় মাফলার পড়ে। এখন আমি হলাম দরিদ্র মানুষ।

উলের টুপি-মাফলারের জন্য আলাদাভাবে টাকা খরচ করার সামর্থ্য আমার নাই। তো এইজন্য আমি চুল বড় রাখি আর আমার বড় চুল দিয়ে টুপি-মাফলারের কাজ চালাই। এইখানেও দেখি লোকজনের সমস্যা। এখন চুল একটু বড় হলে মাথায় প্রাকৃতিক নিয়মে কিছু প্রাণীর জন্ম হবেই। তার জন্য তো কেউ আমাকে বিছানা থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, বা আমার সাথে ঘুমাতে অস্বীকৃতিও জানাতে পারে না।

তাই না? ঘটনা ০৫: শীতকালে পানি ধরার ভয়ে যে জায়গায় আমি হাত পর্যন্ত ধুই না, সেখানে আমার কাছ থেকে কাপড় ধোয়ার আশা করাটা একেবারেই অবান্তর। হ্যাঁ, আমি শীতকালে কাপড়ও ধুই না এবং নিজের তিন-চারদিন ধরে পড়া মোজা-আন্ডারওয়্যার আমি উলটো করে আরও কয়েকদিন পড়ি। কিন্তু তাতেও হয়েছেটা কি? আমার মোজা তো জুতার ভেতর আর আন্ডারওয়্যার তো প্যান্টের ভেতরই থাকছে। তারপরও নাক সিঁটকানোর কি হল? এতগুলা কথা বলার কারণ হচ্ছে, আমি মানবজাতির উপর বেশ ভাল রকমের হতাশ। এরা শুধু অন্যের গায়ের নোংরাটুকুই দেখে।

তার শুদ্ধ এবং পাকসাফ মনটাকে দেখে না। ঠিকাছে, স্বীকার করছি, এই ব্যাপারগুলা কিঞ্চিৎ নোংরামির পর্যায়ে পড়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে তো লোকজন আমাকে অচ্ছুৎ বানিয়ে দিতে পারে না। আমার দিকটাও তো সবার একটু চিন্তা করে দেখা উচিৎ। শীতকালে গোসল করলে আমার শীত লাগে, বুকে ব্যথা করে, দাঁতে কাঁপন ধরে, মাথা ঝিমঝিম করে।

যে কারণে আমি গোসল তো বটেই, পারতপক্ষে পানি থেকেই দূরে থাকি। এটা আমার একটা দুর্বলতা। এখন আমার একটা দুর্বলতার জন্য আমার সাথে যে অমানবিক আচরণটা করা হচ্ছে, সেটা কি সত্যিই আমি ডিজার্ভ করি? সম্মানিত বন্ধুরা আমার, একটু চিন্তা করে বলবেন কি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।