আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন=>এধরনের ধারনা কুফরী

জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমি (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম) উনাদের প্রতি ওহী মুবারক পাঠাতাম। ’ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, উঠা-বসা, চিন্তা-ভাবনা, স্বপ্ন মুবারক ইত্যাদি সবই পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা পরিচালিত। পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে যারা বলে থাকে যে- “মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযবস্বরূপ গাছের মধ্যে করাতের দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন। ” নাঊযুবিল্লাহ! আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের দৃষ্টিতে তাদের উক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা সম্পূর্ণরূপেই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

অতএব, এরূপ কুফরী আক্বীদা থেকে খালিছভাবে তওবা করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব; অন্যথায় কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হওয়া ব্যতীত কোনো উপায় থাকবে না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো- ‘কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনও ইচ্ছাকৃত তো নয়ই বরং অনিচ্ছাকৃতভাবেও কোনো ভুল করেননি। ’ অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনোই কোন ভুলই করেননি। (‘শরহে আক্বাইদে নসফী শরীফ, ফিক্বহে আকবর শরীফ, তাকমীলুল ঈমান শরীফ, আক্বাইদে হাক্কাহ শরীফ)। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সকলেই হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

উনারা প্রত্যেকেই পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ” পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের) প্রতি পবিত্র ওহী মুবারক পাঠাতাম। ” (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১০৯, পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৩, পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৭)। . অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যাবতীয় কার্যাবলী মুবারকই পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা (মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক) পরিচালিত। পবিত্র আক্বাঈদ শরীফ উনার কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মা’ছূম বা নিষ্পাপ।

” “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এবং সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র। ” সুবহানাল্লাহ! হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভুল সম্পর্কে যারা বলে থাকে; পবিত্র আক্বাঈদ শরীফ উনার সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযব স্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন। ’ নাঊযুবিল্লাহ! মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

সঠিক ও প্রকৃত ঘটনা হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার ক্বওমের মধ্যে দ্বীন প্রচার করতে লাগলেন, তখন উনার ক্বওমের দুষ্ট লোকেরা মনে করলো যে, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যদি এভাবে পবিত্র দ্বীন প্রচার করতে থাকেন তবে তাদের কোন অস্তিত্বই যমীনে থাকবে না। তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাও শেষ হয়ে যাবে। তাই তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করলো। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র ওহী মুবারক করলেন যে, আপনি পবিত্র হিজরত মুবারক করে অন্যত্র চলে যান। মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক মুতাবিক হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি অন্যত্র হিজরত মুবারক করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।

উনার ক্বওম এটা জানতে পেরে উনার পিছনে পিছনে ছুটতে লাগল। এদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি যখন যাচ্ছিলেন তখন পশু-পাখি, গাছ-পালা, সকলেই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার নিকট আরজু করছিল যে, হে হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমাদের নিকট আসুন আমরা আপনার বিশ্রামের ব্যবস্থার মাধ্যমে খিদমত মুবারক করে ধন্য হতে চাই। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার অপেক্ষায় রইলেন। কারণ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, কস্মিনকালেও তিনি মাখলুকাতের কথা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি চলতে লাগলেন হঠাৎ সামনে একটি বিশাল আকৃতির গাছ পড়লো, গাছটি দুই ভাগ হয়ে গেল এবং বললো, ‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমার ভিতরে প্রবেশ করুন।

’ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেও নির্দেশ মুবারক হলো, হে আমার সম্মানিত নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি এ গাছের ভিতরে প্রবেশ করুন, তিনি সেই গাছের ভিতর প্রবেশ করলেন, গাছটি জোড়া লেগে গেল। ইবলিস উনার কোর্তা মুবারক বাহির থেকে কিছু অংশ ধরে রেখেছিল যার ফলে উনার কোর্তা মুবারক উনার সামান্য কিছু অংশ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। উনার ক্বওমের লোকেরা খুঁজতে খুঁজতে যখন সেখানে এসে পৌছল তখন ইবলিস মানুষের ছুরত ধারণ করে এসে বললো তোমরা যাঁকে খুঁজছ তিনি এ গাছের ভিতরেই আছেন। তারা বললো এর কি প্রমাণ রয়েছে? ইবলিস বললো, এই দেখুন উনার কোর্তা মুবারক উনার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। তখন তারা বললো তাহলে এখন কি করা যায়? ইবলিস বললো এক কাজ করো, করাত এনে গাছটিকে উপর থেকে চিড়ে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলো।

নাউযুবিল্লাহ! তাহলেই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়ে যাবেন। নাউযুবিল্লাহ! তখন তারা তাই করলো। করাত দিয়ে গাছের উপর থেকে চিড়তে চিড়তে যখন করাত হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক স্পর্শ করলো, তখন তিনি একটু ‘উহ’ শব্দ করেছিলেন। মূলতঃ তিনি ‘উহ’ শব্দ করেছিলেন এভেবে যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, কারো অসুখ হলে সে যদি ‘উহ’ ‘আহ’ করে তবে তার সেই উহ আহ তাসবীহ তুল্য হবে। অর্থাৎ অসুস্থতার সময় ‘উহ’ ‘আহ’ করা মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ।

এ কারণেই তিনি ‘উহ’ শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন বলেন যে, হে আমার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম! আপনি আমার সম্মানিত নবী; উহ শব্দ করা আপনার শান মুবারক ও মান মুবারক উনার খেলাফ! মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধু এতটুকু বললেন। হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক উনার প্রতি কতটুকু ইস্তিকামত! সুবহানাল্লাহ! করাত দিয়ে মাথা মুবারক থেকে পা মুবারক পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর মুবারক দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হলো অথচ তিনি টু শব্দও করলেন না। সুবহানাল্লাহ! মূলতঃ উক্ত ঘটনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রমাণ করে দিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক ও নির্দেশ মুবারক কতটুকু দৃঢ়তার সাথে পালন করেন। উনারা যে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক ও নির্দেশ মুবার ছাড়া কিছুই বলেন না ও করেন না এ ঘটনাই তার বাস্তব প্রমাণ।

যদি তাই হয়; তাহলে একথা বলা কি করে জায়িয ও ইসলামী শরীয়তসম্মত হতে পারে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযবস্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! বস্তুতঃ এরূপ বলা বা এরূপ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মূলকথা হলো- যারা পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীতই হিজরত করেছেন এবং গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। তাই তিনি গযব স্বরূপ গাছের মধ্যে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়েছেন।

নাঊযুবিল্লাহ! আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের দৃষ্টিতে তাদের এ বক্তব্য ও আক্বীদা সম্পূর্ণরূপেই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারন। এরূপ কুফরী আক্বীদা থেকে খালিছ তওবা করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় ঈমানহারা অর্থাৎ কাফির হয়ে চিরজাহান্নামী হতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.