আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাইভেট চ্যানেলগুলোর কাটতি, টিআরপি ব্লা ব্লা ব্লা...

কৈশোরে দেখতাম দৈনিক গুলোতে তাজা-গরম (পড়ুন রগরগে) খবর ছাপাতো কাটতি বাড়ানোর জন্য। বিশেষ করে কোন স্বামী-স্ত্রীর (সাধারণ বা তারকা) পরকীয়া, দাম্পত্য জটিলতা, খুন, আত্মহত্যা এসব খবরকে মিশ্রিতভাবে প্রচার করত দৈনিক/সাপ্তাহিকগুলো। পাক্ষিকগুলো ছিল আরও ভয়ানক। হঠাৎ আবির্ভূত হল যায়যায়দিন ( যদিও বিদেশী হালকা যৌনতার গল্প অনুবাদ আকারে দিত, বিশেষ সংখ্যাগুলোর কথা নাইবা বললাম!) পাল্লা দিয়ে বের হতে থাকে অপরাধচক্র, অপরাধকন্ঠ এ টাইপ অপরাধ সিরিজের আড়ালে পত্রিকা-ম্যাগাজিনের কাটতি বাড়ানোর নগ্ন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এরপর আসলো দৈনিক মানবজমিন।

প্রথমদিকে উনারা কাটতি বাড়ানোর জন্য অদ্ভুত শিরোনামে খবর দিতে লাগলো। "জাহিদ-মৌ এর সংসারে আগুন" বা "মৌসুমির গর্ভে এ কার সন্তান?" -- এ টাইপ নিউজ দিত, পুরোটা পড়ে দেখা যেতো কোন নাটক বা সিনেমার কাহিনীসংক্ষেপ!!! ইদানিং প্রাইভেট চ্যানেলগুলোও দেখি অনেকটা একই কায়দায় কাটতি বাড়ানো, দর্শক ধরে রাখার অসুস্থ খেলায় মেতেছে। লক্ষ করলেই তা সহজেই সবাই বুঝে যাবেন (ইতোমধ্যে বুঝে গেছেনও, কারণ ব্লগাররা কমবেশী সবাই-ই সচেতন হন)। কে আগে সাগর-রুনীর রক্ত দেখাবে বা কে উনাদের চেহারা দেখাবে এটা নিয়েও প্রতিযোগিতা হয়েছে। কারা মেঘ এর ইন্টারভিউ নিবে বা মেঘের মামার টা নিবে ওটা নিয়েও হয়েছে কয়েক দফা।

প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ শেষবার যখন দেশে এলেন তখন উনার কাছে স্বাভাবিক ভাবেই সব চ্যানেল থেকে ছুটে গেল। যেতেই পারে, কারণ উনার একান্ত চিন্তা ভাবনার সাথে দর্শকদের কাছ থেকে পরিচয় ছিলনা, এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। কিন্তু কি হোল, উনার মৃত্যুর পর শুরু হোল আবার আসল খেলা---- "হুমায়ূন আহমেদ এর অজানা কথা/ এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার/ শেষ কথা/ শেষ দিন গুলি" বিভিন্ন স্বতন্ত্র নামে প্রচার করছিলো চ্যানেলওয়ালারা কিন্তু একটা বিষয় কমন ছিল! তা হোল- শুধুমাত্র অমুক চ্যানেল এ। ভাবখানা এমন যেন উনি ১০টা চ্যানেল এর জন্য আলাদা ভাবে ইন্টারভিউ দিয়েছেন, একই ভাবে নুহাশপল্লীতে হেঁটেছেন এই দুরারোগ্য রোগ নিয়ে!!! উনার মৃত্যুর পর শুরু হোল আরেক খেলা। এবার মরহুমের দুই পরিবার এর টানাপোড়ন নিয়ে চ্যানেলগুলোর শুরু হোল রশি টানাটানি।

দ্যা নিউ গেম ইজ হু উইল টেলিকাস্ট দ্যা লাস্ট উইল অব হুমায়ূন স্যার রিগারডিং হিজ ফিউনারেল? সো শুরু হোল- ম্যাগী কমেডি কমেডি খেলা, ট্যাট্‌ ট্যা ট্যাট্‌। কে বিধবা স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিবে, কে অভাগিনী মা'র টা নিবে আর কে অনাথ-এতিম সন্তানদেরটা নিবে। এর মধ্যে আবার হোল আম্বালীগ- বিএম্পী টাইপ গ্রুপিং। কোন চ্যানেল উনার আগের পরিবারকে হাইলাইট করে তো কোনটা পরেরটাকে, কোনটা ড.জাফরকে তো কোনটা তহুরা আলীকে! আমরাও (আমিসহ) তক্ষকের মত গিলছিলাম আর রিমোটের বাটনের অনবরত শ্লীলতাহানি করে যাচ্ছিলাম......না না জাফর ইকবালই ঠিক, না না শাওন-ই ঠিক, আরে ধুর সবচে ঠিক হোল শীলা। এখানেইতো চ্যানেলওয়ালাদের চার-ছক্কা, এই যে গেলালো আমাদেরকে! যাইহোক দাফন নিয়ে ঝামেলা শেষে উনার স্মৃতিচারণ শেষে কিছুদিন উনি বিশ্রাম পেলেন।

কিছুদিন চল্‌ল আইডিয়াবাজি, ব্যাস্‌- হিমুমেলা ! নতুন ব্যবসা। কয়দিন পর দেখবো শুভ্রমেলা, কুটুমিয়া মেলা, মিসির আলি মেলা, রুপা মেলা, আঙ্গুল কাটা জগলু মেলা ইত্যাদি! এ কয়দিন ধরে বিশেষ করে ঈদ এর অনুষ্ঠানে আবার শুরু হোল নিউ খেলা। অনন্ত জলিল, শাওন এদেরকে এনে অসাংবাদিক-সুলভ প্রশ্ন করে অসংলগ্ন উত্তর বের করে এনে ওটা দিয়ে ব্যবসা করা....ছি! আমি জলিল-শাওন-সুবর্ণা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে না। আমি শুধু আবেগ নিয়ে ব্যবসা করার বিপক্ষে। শাওন এর সাক্ষাতকার আবার একটা চ্যানেল সিডি করে বের করেছে এবং বলেছে এই সাক্ষাতকার উনারা পুনঃপ্রচার করবেন না! কাল দেখলাম ৭১এ প্রভাকে তার স্বামী আর বাবা মা সহ উপস্থিত করা হয়েছে "সাহসী প্রত্যাবর্তন" শিরোনামে।

এটা ছিল নির্যাতিত-লাঞ্ছিত নারীদের সাহস জোগানোর নামে চ্যানেলের কাটতি বাড়ানোর ধান্দা। সচেতন ভাবে এড়িয়ে যাওয়ার পরও সঞ্চালক জনাব আনু তুষার বারবার প্রভাকে ও তার পরিবারকে পুরানো কাসুন্দি দিয়ে প্রশ্ন করছিলো। আমি বিশ্বাস করি যে, সঞ্চালকের উপর ঐ চ্যানেল থেকেই এরকম নির্দেশ ছিল যাতে দর্শক অন্য অনুষ্ঠান ফেলে এটা নিয়ে পরে থাকে। প্রভাকে আইকন হিসেবে দেখাতে চাইলেন অনুষ্ঠান নির্মাতারা। প্রভাও বলে বসলেন যে, উনি নাকি আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দা তাই আল্লাহ উনার পরীক্ষা নিয়েছেন।

কি হত উনাকে এই প্রোগ্রামে না আনলে? ঐ যে আন্ডারলাইন করা লাইনগুলা উনি বলতেন না, ইন্টার্ভিউটা সাইটে সাইটে শেয়ার হতোনা, এই যা! সাংবাদিকরা আমার কথায় মাইন্ড করবেননা। কারণ আমি ঢালাওভাবে কারো দোষ দিচ্ছিনা। কিছুকিছু চ্যানেলের কিছু কিছু সাংবাদিক/নির্মাতা এই অসুস্থ খেলায় মত্ত, টিআরপি'র খেলা। সেদিন জাহিদ হাসান এর একটা ইন্টার্ভিউ দেখলাম উনি বলছিলেন হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুতে দোয়া করার লোকের থেকে ইন্টার্ভিউ দেওয়ার লোক বেড়ে গিয়েছিলো, এমনকি এক এক চ্যানেলে এক এক ড্রেস পড়া একই লোককে দেখা যাচ্ছিলো এবং জাহিদ হাসান অনুরোধ করলেন যেন উনার মৃত্যুতে কেউ যেন চ্যানেলে চ্যানেলে লাইন না দেয় ইন্টার্ভিউ দেয়ার জন্য বরং ঐ সময়টাতে যেন ঐ সকল ইন্টার্ভিউ-ইচ্ছুকরা উনার জন্য দোয়া করেন । আমার অনুরোধ হোল সাধারণ/ তারকা যে কারো মৃত্যু-পারিবারিক টানাপোড়ন- উইল ইত্যাদি নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হওয়া উচিত এবং আমাদের সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতির স্বার্থে শ্রেয় হবে।

আমরা দর্শক-পাঠকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সবাইকে ধন্যবাদ। বানান ভুল হলে, বাক্য গঠন ভুল হলে বা ভুল কিছু বললে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে শুধরে দিবেন। সবাই ভাল থাকুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.