আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্বালানী সংকট: উত্তরণের কৌশল ও বিশ্বপ্রেক্ষাপট (১)

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... জ্বালানী সংকট: উত্তরণের কৌশল ও বিশ্বপ্রেক্ষাপট (১) হাসান কামরুল শিরোনামটি ধার করা। সম্প্রতি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বার্ষিক প্রকাশনা “দ্যা স্টেট অব গর্ভনেন্স ইন বাংলাদেশ“ এ বাংলাদেশের জ্বালানী সংকট, পরিকল্পনা, নীতি ও সংস্কার নিয়ে স্ট্রাটেজিক আলোচনা করেছে। গবেষণাপত্রটিকে মুল উপজীব্য করেই আজকের লেখার অবতারনা । জ্বালানী নির্ভর বিশ্ব কে কতো জ্বালানী ব্যবহার করে তার ওপর ধনীক দেশগুলোর শ্রেণীবিভাজনের মানদন্ড দন্ডায়মান বা নির্ধারিত হয়। জ্বালানীর আবার রকমফের রয়েছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে গোটা দুনিয়াজুড়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দৃশ্যমান । তাই জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে আনার কৌশল নির্ধারনে পৃথিবী মরিয়া হয়ে উঠছে। লক্ষ্য পৃথিবীকে কার্বনশুন্য অবস্হায় নামিয়ে আনা আর ভুক্তভোগি দেশগুলোও বিভিন্নভাবে ধনীক দেশগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোও মানবসৃষ্ট এ দুর্যোগ হতে রেহাই পায় বা বেশি করে সাহায্য সহযোগীতার মাধ্যমে জলবায়ু ভিকটিমদেরকে পুর্ণবাসনের ব্যব¯হা করতে পারে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ নির্ভর প্রচলিত জ্বালানী ব্যব¯হা থেকে পৃথিবী বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।

কার্বন যারা ব্যবহার করে তাদেরকে কার্বন নি:সরন কমিয়ে আনার কৌশল নির্ধারনে বিভিন্নভাবেই প্ররোচিত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার সর্বাধিক শতকরা ৩৪ভাগ জ্বালানীর উৎসমুলে কয়লা। আর কয়লা পুড়ানোর ফলে কার্বন নি:সরন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কয়লা পুড়ানো হয় আমেরিকা, ভারত ও চীনে। এর মধ্যে চীন ও ভারত কিউটো প্রটোকলের বাইরে রয়েছে।

কারণ প্রাকৃতিক কয়লার বৃহত্তম মজুদের দিক দিয়ে চীন ও ভারতের অব¯হান অগ্রগন্য। আনবিক শক্তি নির্ভর জ্বালানীতে পৃথিবীর চাহিদা মেটে থেকে শতকরা ১৪ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে । কিন্তু ধীরে ধীরে গোটা দুনিয়াতেই আনবিক শক্তি ব্যবহারের প্রবণতা কমে আসছে। আশা করা যায় সামনের শতাব্দীতে আনবিক শক্তির ব্যবহার প্রায় শুন্যের কাছাকাছি চলে আসবে। প্রাকৃতিক গ্যাস ও প্রাকৃতিক তেলের রিজার্ভ দিন দিন যেহারে কমছে তাতে আগামি ১০০ বছর পর এ দু‘ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদও নি:শেষ হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে থাকবে।

কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছে ততই পৃথিবীর ঘরে ঘরে জ্বালানী ব্যবহার বাড়ছে। জ্বালানীর যোগান দেয়া নিয়ে পৃথিবীজুড়ে প্রতিযোগীতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে । যা খালি চোখেও দৃশ্যমান। কারণ প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ সমুদ্র অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে ভারত বাংলাদেশ চীন জাপান ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া ফিলিপাইন কাতার কুয়েত ইরান ইরাক সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মতপ্রার্থক্য দিন দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে । জ্বালানীর চাহিদা ও সরবরাহের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী পাইপ লাইনের রাজনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে।

উদাহরণস্বরুপ বাংলাদেশও যুক্ত হচ্ছে আইপিআই বা ইরান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া পাইপলাইনে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মাথা পিছু জ্বালানী চাহিদা ও সরবরাহের চিত্র ইনডেক্সের নিচের দিকে । বাংলাদেশের মানুষ যে জ্বালানী ব্যবহার করে তার আনুপাতিক হিসেবে বিশ্বের লো ইউজার কান্ট্রি বা কম ব্যবহৃত দেশগুলোর মধ্যেও সর্বনি¤œস্তরে। আমরা যদি দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার কথাও বিবেচনা করি তাহলে নেপালের পরে বাংলাদেশের অব¯হান। এ অঞ্চলে নেপাল সবচেয়ে কম জ্বালানী ব্যবহার করে।

আর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় শ্রীলঙ্কায়। একমাত্র শ্রীলঙ্কায়ই জ্বালানীর চিত্রটা আশাপ্রদ। ভারতের বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ১লাখ ২০ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু ভারত সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ ভারতেও প্রতিদিনকার চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের অভাব রয়েছে ৩০ থেকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। আর বাংলাদেশে সর্বমোটে চাহিদা রয়েছে ৭ হাজার মেগাওয়াট।

এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে ৬ হাজার ৫শত মেগাওয়াট। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। যদিও এ হিসেব শতকরা ৫৩ শতাংশ মানুষের হিসেব। এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে বাংলাদেশের বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে তো বিদ্যুতের যোগান পাওয়া সহজতর হবে। কারণ এদেশে এখনো ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত অর্থাৎ এ ৪৭ ভাগ মানুষের অধিকার রাষ্ট্র নিজেই হরন করে রেখেছে ।

তাই বিদ্যুৎ বঞ্চিত মানুষগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে আর তা এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। যদি ১ হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে আসে বা বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয় তাহলে সরকারের লক্ষ্য থাকবে কিভাবে নতুন করে ১শটি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়। তার মানে পুরাতন গ্রাহকদের জন্য খুব একটা সুখবর নেই অত্যন্ত বিদ্যুৎ নিয়ে। বাংলাদেশ কৌশলগত দিক থেকে হোক আর উন্নয়নের ধারার সংযোগেই হোক মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করে রেখেছে। সেক্ষেত্রে মিলিয়ন ডেভেলপম্যান্ট গোল অর্জনে রাজনৈতিকভাবেই সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অর্ধেক জনগোষ্ঠিকে অন্ধকারে রেখে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিগণিত হওয়ার স্বপ্নতো স্বপ্নই থেকে যাবে, বাস্তবায়িত হবেনা । তাই সরকার জ্বালানীর উৎসমুলের অনুসন্ধানে অধিক মনোযোগী হয়ে উঠবে একথাও অনস্বীকার্যভাবে বলা যায়। যে জাতি যতো বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সে জাতি আজ ততো উন্নত। যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বিধায় পৃথিবী এখন যুক্তরাষ্ট্রের মুটোয়। জ্বালানী নির্ভর অর্থনীতির হিসেবটাও তাই পেট্রোডলারে হয়।

ইরান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ক্রমাগত উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ ইরানের হাতে রয়েছে তেল ও গ্যাস সম্পদের বিশাল মজুদ। এমনকি ইরানের হাতে রয়েছে হরমুজ প্রণালি। হরমুজ প্রণালির গুরুত্ব বিশ্বজুড়েই অনস্বীকার্য। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের উৎপাদিত তেলের শতকরা ৮০ভাগ হরমুজ প্রণালি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যায়।

যদি কোন কারণে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ বিকল্প পথে নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তেলের ব্যরেল প্রতি মুল্য বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত ৫০ ডলার। অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীতে হরমুজের কারণে অর্থনীতিতে বিরাট এক ধাক্কা আসবে যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি অ¯িহতিশীল হয়ে উঠবে। ইত্যাদি সব বিবেচনা নিয়েই ইরান কৌশলগতভাবে এগিয়ে আছে। তাছাড়া ইরানের সহিত তেলের ব্যবসা রয়েছে চীনের।

চীন মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রেখেছে ইরানে। তাই ইরানে যুদ্ধ বেধে গেলে চীনের বিনিয়োগও হুমকির মুখে পড়বে। এইজন্যই চীন বরাবরের ন্যায় ইরান সম্পর্কীত যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্তে সরাসরি বিরোধিতা করে আসছে। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। আর এই ভারত অনেকাংশেই ইরানের তেলের উপর নির্ভরশীল।

ইরানের সহিত যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল যুদ্ধে লিপ্ত হলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিপরীতে অব¯হান গ্রহণ করবে। কারণ এখানে ভারত তার নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিবেনা। সারা পৃথিবীতেই জ্বালানী নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্রসমুহ নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছে। আর জ্বালানী নির্ভর বিশ্ব জ¦ালানী নিরাপত্তা বিধান করা নিয়ে বিভিন্ন জাতির একহাট্রা হয়ে আঞ্চলিক ফোরাম অর্থনৈতিক ফোরাম অর্থাৎ দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে যৌথ প্রচেষ্টার ধার উম্মুক্ত করে রেখেছে । উদাহরণস্বরুপ তেল উৎপাদানকারী দেশসমুহ নিয়ে গঠিত হয়েছে ওপেক।

তেমনি বিভিন্ন জাতির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য রিজিওনাল এ্যাসোসিয়েশন ও ট্রিটি । কারণ একটাই বিশ্ব অর্থনীতির উখানপতনে জ্বালানীর উৎপাদন ও সরবরাহ প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে জ্বালানীর ইনডেক্সের হেরফেরে বিশ্ব অর্থনীতির উখানপতন স্পষ্টভাবেই জড়িত। জ্বালানী নির্ভর অর্থনীতির, জ্বালানীর যোগান না পেলে গাড়ির চাকা ঘুরবেনা, কলকারখানায় শ্রমিকের ঘাম জড়বেনা। আর কলকারখানা উৎপাদমুখি না হলে দেশজ প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে। বেকারত্বে জাতি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, সামাজিক অ¯িহরতা প্রকট হবে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি হবে, চুরি ডাকাতি রাহজানির কারণে সাধারন মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠবে।

রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি সবকিছুর অর্থমুলে জ¦ালানীর ব্যবহার নিহিত। তাই জ্বালানী নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা নিরাপদ রাখতে পারলেই বাংলাদেশ গুরুত্বপুর্ণ দেশের মর্যাদা লাভ করবে। বাংলাদেশের জ্বালানী চিত্র, সরকারের কর্ম কৌশল ও বেসরকারি গবেষণার লদ্ধ ঙ্ঘান পরবর্তী নিবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে। । হাসান কামরুল: কলামলেখক।

যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.