আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ তার নিজের ধর্মকে ভালোবাসে । এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । আল্লাহ মানুষকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে, সে তার ধর্মকে ভালোবাসবে ।
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যে, আমি প্রত্যেকের নিকট তার ধর্মকে সুশোভিত বা আকর্ষণীয় করে দিয়েছি । এই কথার অর্থ কি ? এটার অর্থ হলো মানুষ মাত্রই তার ধর্মকে আপন মনে করে এবং অন্যের ধর্মকে পর মনে করে । কিন্তু খুব কম মানুষই এই আকর্ষণকে ঠেকিয়ে রেখে চিন্তা করে যে, আমি কি ঠিক ধর্মে আছি ? যারা চিন্তা করে তারা অন্ধের মতো অনুসরণ না করে জানতে চেষ্টা করে ।
এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ ধর্ম পায় বাপ দাদার কাছ থেকে । তারা সেটা নিয়েই খুশী থাকে ।
কারণ তারা একটা সমাজ এবং সংস্কৃতির অর্ন্তভূক্ত হয়ে যায় ।
কিন্তু মানুষের জীবনের অন্য দিক চিন্তা করলে দেখা যায় অনেকে আবার বাপ দাদার পেশাগ্রহণ করেনা - সেখানে যুক্তি তর্ক খাটায় । বাপ দাদা হালচাষ করছে কিন্তু তারা শহুরে চাকুরীজীবি হতে চায় । কারণ যে কোন কারণে হোক সে এই পেশাকে নিজের পেশা হিসেবে মেনে নিতে চায় না । কিন্তু ধর্মের বেলায় মানুষ এরকম যুক্তি তর্ক খুব কমই খাটায় ।
মহানবী (সাঃ) যখন কাফের মুশরেকদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন তারা উত্তর দিয়েছিলো - আমরা বাপ -দাদার ধর্ম ত্যাগ করব ?
এর উত্তরে আল্লাহপাক-পবিত্র কুরআনে বলেছেন- মানুষ বলে আমরা কি বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করব ? এখন বাপদাদা ভূল পথে থাকলেও কি তারা তা অনুসরণ করবে ?
প্রত্যেকের-ই উচিত তার নিজের ধর্মকে ভালোভাবে জানা এবং যদি সম্ভব হয অন্য ধর্ম সম্পর্কেও । ধর্ম একটা লাইফ ষ্টাইল নয় বরং এটা একটা পরিচিতি এবং বিশ্বাস । আপনি যদি মুসলমান হন তাহলে ঈদ পালন করা আপনার লাইফ স্টাইল নয় বরং এটা আপনার ধর্মীয় উৎসব উদযাপন । যে রোজা রাখেনা কিন্তু রোজার ঈদ পালন করে লাইফ স্টাইল হিসেবে সে ধর্মকে সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে ফেলেছে । ইসলাম ধর্ম অনুসারে যারা রোজ রাখে তাদেরই একমাত্র ঈদ ।
আপনি যদি ভূল বিশ্বাসে থাকেন , ভূল পথে জীবন পরিচালিত করেন তবে আপনার পুরো জীবনটাই ভূলের উপর গেল । যেমনঃ আপনি রওনা দিয়েছেন নিউইয়র্ক আর যদি সিডনীর প্লেনে উঠেন আপনি আপনার গন্তব্যে পৈাছতে পারবেন না । এমন অনেক বিষয় আছে যে, জীবনের একটি ভূলের কারণে সারা জীবন পস্তাতে হয় । শত চেষ্টা করেও তার ক্ষতিপূরণ হয় না । মৃত্যু সবাইকেই গ্রাস করবে , যা কঠিন সত্য ।
এখন যে ভূল ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যু বরণ করল তার ক্ষতি মৃত্যুর পরে আর পুষিয়ে নেওয়া যাবেনা । সারা জীবন নেচে গেয়ে কাটিয়ে দিলাম অথবা অর্থের পিছনে কাটিয়ে দিলাম আর মৃত্যুর কথা মনে হলেই এই বলে মনকে শান্ত্বনা দিতাম যে সবার যা হবে আমারও তাই হবে - সেটা কি আপনি অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও করেন ? ছাত্র বয়সে পড়ালেখা না করে যদি বলেন সবার যা হবে আমারও তাই হবে - তা কি আপনার জীবনটাকে ধ্বংস হওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারবে ?
মানুষকে আল্লাহ তার নিজের ধর্মের প্রতি আকর্ষিত করে দেয়ার মানে আবার এই না যে আল্লাহ চান যে মানুষ যে যে ধর্মে আছে সেই ধর্ম পালন করুক । তাহলে আর যুগে যুগে এত নবী রাসূল উনি পাঠাতেন না । দুনিয়াতে দুইটা শক্তির খেলা চলছে - একটা সত্যের আরেকটা মিথ্যার । সত্যটার পিছনে স্রষ্টার হাত থাকে আর মিথ্যার পিছনে থাকে শয়তানের ।
শয়তান সব সময় বিভিন্ন ভাবে সত্যটাকে চাপা দিতে বা বিকৃত করতে সচেষ্ট । স্রষ্টা সেই বিকৃতটাকে বা চাপা দেওয়া সত্যটাকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে আসেন । শয়তানের শক্তি নেই স্রষ্টার সাথে পারে কিন্তু স্রষ্টা তাকে সুযোগ দিয়ে রেখেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য । শয়তানের কাজ কারবার খুবই লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় । তা উপেক্ষা করতে সতর্কতার প্রয়োজন - স্রষ্টার সাহায্য প্রয়োজন ।
যেমনঃ খারাপ দিকে যাওয়া খুবই সহজ । কিন্তু খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাধনা এবং প্রার্থনার প্রয়োজন । আপনি না চাইতেই যদি স্রষ্টা আপনাকে রক্ষা করেন তবে আপনি ভালোর মূল্য বুঝবেন না । সত্য পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয় আর মিথ্যা আপনি পায়ে এসে পড়ে থাকে । সত্য উপর থেকে দেখতে কদর্য মনে হতে পারে কিন্তু ভিতরে মধুর মত মিস্টি ।
আর মিথ্যা উপরে চাকচিক্যময় কিন্তু ভিতরে তিতা । এজন্য দেখা যায় যারা সত্য ধর্মে থাকে - সত্যের দেখা পায় তাদেরকে সত্য থেকে কোন ভাবেই বিচ্যুত করা যায় না । আর মিথ্যার তো কোন নীতি-ই নেই । সে যে কোন ভাবে টিকে থাকতে চায় । টিকে থাকাই তার লক্ষ্য, নীতি রক্ষা তার লক্ষ্য নয় ।
কিন্তু সত্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা বিপরীত । নীতি রক্ষার ক্ষেত্রে তার কোন আপস নেই । এজন্য যে কোন মূল্য দিতে সে প্রস্তুত ।
এগুলো সবই হলো সত্য মিথ্যা নির্ণয়ের কিছু নমুনা । যারা অন্তর খোলা রেখে জীবনে চলে তারা সত্যের সন্ধান পায় আর যারা অন্তরকে অন্যের দাসে পরিণত করে ফেলে তারা অন্ধের মত অন্যকে অনুসরণ করে ।
শেষ বিচারের দিনে শয়তান আদম সন্তানকে বলবে - আমি তো তোমাদের কোন কিছু করতে বাধ্য করিনি । আমি তো কেবল তোমাদের আহ্বান করেছি- ডেকেছি । আর তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে । এখন আমাকে কেন দোষ দাও । এরকমই হবে মানুষের পরিণতি।
মানুষ তার বিচার বুদ্ধিকে কাজে না লাগিয়ে যখন নিজের পরিপার্শ্বকে অন্ধের মত অনুসরণ করে জীবন পরিচালিত করে তখন তাকে এ কথাই তো শুনতে হবে । টাকা পয়সা বাড়ী-গাড়ী করতে তুমি কত হিসাব কর কিন্তু স্রষ্টার অনুসরণে কেন তখন অত সতর্ক হওনা ? তোমার সৃষ্টি কর্তার মূল্য কি তোমার কাছে এসব থেকে কম হয়ে গেল ? তাই যদি হয়, তবে শেষ বিচারের দিনে সৃস্টিকর্তাকে দোষ দিতে পারবেনা । তিনি জানেন মানুষের অজুহাত এবং তিনি ন্যায় বিচারক । যারা সত্য পথে থাকবে আর সঠিক কাজ করবে তাদের কর্মকে তিনি বৃথা করবেন না আর যারা উনার স্মরণকে অবহেলা করেছে, মিথ্যা নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে তারা তাদের প্রতিদান পাবে । এই ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।