আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রোহিঙ্গা বিরোধী দাঙ্গা মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে’

বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে তা সেদেশের সর্বত্র মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এশিয়া টাইমস। ব্যাংককভিত্তিক বিশ্বখ্যাত দৈনিকটির আজকের (রোববার) সংখ্যায় বিশিষ্ট কলামিস্ট ব্রেইন ম্যাককারট্যান (Brian McCartan) লিখেছেন, সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, মিয়ানমারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং কঠোর আইন করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের সামরিক শাসনের সময় এ প্রয়োজনটি হয় উপেক্ষা করা হয়েছে অথবা এ বিষয়টির অপব্যবহার করা হয়েছে। রেডিও তেহরানের সম্মানিত পাঠকদের জন্য ম্যাককারট্যানের বিশ্লেষণটির উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো : "রাখাইন প্রদেশের মিনবিয়া ও মারাউক-ইউ অঞ্চলে গত ২১ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস দাঙ্গা নতুন মাত্রা পায়।

এ দাঙ্গা পরবর্তীতে মেইবোন, রথেডং, পাউকতাউ, কাইউকতাউ, কাইউকপিউ ও রামরি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রথম মিয়ানমারের ইতিহাসে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান এতটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়ায়। তবে এক সপ্তাহ'র মুসলিম নিধনযজ্ঞের পর নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে। মিয়ানমার সরকার ঘোষণা করে, মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় ৮৪ জন নিহত ও ১২৯ জন আহত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আরো কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠী জানায়, রাখাইন প্রদেশে 'মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘর্ষে' হতাহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা সরকার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

গত জুন মাসে একজন রাখাইন নারী কয়েকজন মুসলিম যুবকের হাতে ধর্ষিত ও নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর মিয়ানমারে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। তবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা ওই গুজব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে রাখাইনরাই তাদের একজন নারীকে হত্যা করে তার লাশ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। পরবর্তীতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার ভয়াবহ রূপ এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের উদ্ধত বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের দাবির সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। জুন মাসের দাঙ্গা জুলাই মাস পর্যন্ত চলে এবং তাতে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয় এবং তাদের কয়েক হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ওই দাঙ্গা সাময়িকভাবে থামানো সম্ভব হলেও অন্তত ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা সর্বস্ব হারিয়ে সিত্তু (আকিয়াব) ও কাইউকতাউ'র শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

মিয়ানমারের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ এবং শতকরা হিসেবে মুসলমানদের সংখ্যা চার শতাংশ। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়কারী দফতর গত ২৮ অক্টোবর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় অন্তত ২৮ হাজার মুসলিম সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক দাঙ্গায় ৪,৬০০ মুসলিম ঘর-বাড়ি ও তাদের ১৪টি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি প্রকাশ করে বলেছে, শুধুমাত্র কিয়াউকপিউ এলাকার ৮১১টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়েছে এবং সেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে সহিংসতা বন্ধ হয়ে এলেও সারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও মুসলিম বিরোধী মনোভাব বেড়ে গেছে।

যদিও এতবড় নিধনযজ্ঞের পর মুসলমানদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি তৈরি হওয়া উচিত ছিল। সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠন ঘোষণা করেছে, মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে। অহিংস ধর্ম হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধধর্মের ভিক্ষুদের এ আহবানে গোটা রাখাইন প্রদেশে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উদারমনা যেসব রাখাইন মুসলমানদের আশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তারাও এখন ভয়ে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। মিয়ানমারের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা এখন একটি ভয়াবহ রকম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টমাস অ্যাকুইনতানা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের সেদেশ থেকে বের করে দেয়ার কাজে যেন এ সহিংসতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। টমাস এবং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু বিষয়ক স্বাধীন বিশ্লেষকরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, "একটি জনগোষ্ঠীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে মিয়ানমার থেকে বের করে দেয়ার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকে যেন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। " বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টসহ আরো কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদেরকে সেদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করার যে চেষ্টা চলছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। টমাস অ্যাকুইনতানা বলেছেন, মিয়ানমার সরকার যদি নিজেকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তবে তাকে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দাঙ্গাপীড়িত এলাকায় উত্তেজনা প্রশমিত করার কাজে মিয়ানমার সরকার অত্যন্ত ঢিলেমির পরিচয় দিয়েছে। তার ভাষায়, "রাজনৈতিক সংস্কার আনার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাসহ এ ধরনের আরো কিছু মৌলিক সমস্যা সমাধানে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। " মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করার আহবান জানিয়ে টমাস বলেন, "সরকারকে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে প্রতিহিংসার কারণ উদঘাটন করে তা নির্মূলের চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিষয়ক জাতিসংঘের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ রিতা ইজাক বলেছেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করতে হবে।

মিয়ানমার সরকারকে আইন অনুযায়ী দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মিয়ানমারের বর্তমান আধা সামরিক সরকার রাজনৈতিক সংস্কার এনে বিশ্বব্যাপী যে সুনামটুকু কুড়িয়েছিল, রোহিঙ্গা মুসলমানদের দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তা ভেস্তে যেতে বসেছে। " জানতে হলে : পড়তে হবে এখানে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.