আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৌরাণিক গ্রীক দেব-দেবী পরিচিতি : দ্বিতীয় পর্ব - অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ন দেব-দেবী, পরী ও অদ্ভুত কিছু চরিত্র

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। গত পোষ্টে আদি টাইটান দেবতাগণ ও শ্রেষ্ঠ বারোজন অলিম্পিয়ান দেব-দেবী নিয়ে লিখেছিলাম। স্বর্গ, মর্ত ও পাতালে আরো কিছু দেব-দেবী ছিলেন, তবে তারা ঐ বারোজনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ন। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দেব-দেবীঃ এরসঃ সুদর্শন ও দায়িত্বশীল কামদেবতা, ল্যাটিন ভাষায় যাকে “কিউপিড” ডাকা হয়। তিনি প্রায়ই মানুষকে উপহার সামগ্রী দিতেন।

কামদেবতা এরস বাস করেন মানুষের হৃদয়ে, সবার হৃদয়ে না – যাদের হৃদয়ে রুক্ষতা আছে তাদের থেকে তিনি দূরে থাকেন। এরস ছিলেন দেবী আফ্রোদিতি’র পুত্র। যাকে দুষ্ট বালকও বলা হতো। এরস’র প্রতিমূর্তি আমরা প্রায়ই দেখি, কাপড়ে চোখ মোড়ানো অবস্থায় ধনুক হাতে এক শিশুপুত্র রুপে। চোখ মোড়ানোর কারণ হলো ভালোবাসা অন্ধ।

হিবিঃ জিউস ও হেরা’র কন্যা হিবি ছিলেন যৌবনের দেবী। তাকে কখনো দ্যাখা যায় দেবতাদের পানীয়-বাহী রুপে, গ্যানিমিডের স্থলাভিষিক্ত হিশেবে যিনি জিউসের ঈগল কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। হিবি’র বিবাহ হয়েছিলো হারকিউলিসের সাথে। গ্রেস দেবীগণঃ গ্রেস দেবী ছিলেন তিনজন – আফ্রোদিতি বা অ্যাগলিয়া (সুষমা-দেবী), ইউফ্রোসিনি (আনন্দ-উচ্ছলতার দেবী) ও থ্যালিয়া (উৎসাহের দেবী)। আফ্রোদিতি সম্পর্কে আগে পড়েছি।

এরা তিনজনই ছিলেন জিউসের কন্যা। আফ্রোদিতি ছাড়া বাকি দুইজনের মাতা ছিলেন টাইটান দেবতা ওস্যানের কন্যা ইউরোনমি। আইরিসঃ রংধনুর দেবী, দেবতাদের বার্তাবাহক। হার্মিস ও আইরিস ছাড়া দেবতাদের অন্য কোন বার্তাবাহক/বাহিকা ছিলো না। আইরিসের দুই দল বোন ছিলো, মিউজ ও গ্রেসবৃন্দ (সুখ ও সমৃদ্ধি-প্রদায়ী)।

মিউজগণঃ মিউজেরা সংখ্যায় ছিলেন নয়জন। তারা ছিলেন দেবতা জিউস ও স্মরণশক্তির দেবী নিমোসিনির কন্যা। এদের নয়জনঃ ক্লিওঃ ইতিহাসের মিউজ, ইউরেনিয়াঃ জ্যোতির্বিদ্যার, মেলপোমিনঃ ট্র্যাজেডির, থ্যালিয়াঃ কমেডির, টার্পসিকোরিঃ নৃত্যের, ক্যালিওপিঃ মহাকাব্যের, ইরাটোঃ প্রেমের কবিতার, পলহিমনিয়াঃ দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা ও স্তোত্রমালার, ইউটারপিঃ গীতি কবিতার। মিউজগণ ছিলেন সত্যের দেবতা অ্যাপোলো’র সহচরী। পরীগণঃ নেরেইডঃ সমুদ্র-দেবতা নেরেউস ও তার স্ত্রী ডোরিসের ছিলো পঞ্চাশটি সুন্দরী কন্যা, যারা ছিলো সমুদ্র-পরী।

পিতার নামানুসারে তাদেরকে “নেরেইড” বলা হয়। একিলিসের মাতা থেটিস ও পোসেইডনের স্ত্রী অ্যাম্ফিত্রিতি ছিলেন নেরেইড। নায়াডঃ তারা ছিলো জল-পরী। তারা বাস করতো ছোট নদী, ঝর্না বা প্রস্রবনে। ওরিয়াডঃ পর্বত-পরী, অসাধারণ রূপবতী ছিলেন তারা।

ডায়াড বা হামাড্রায়াডঃ বৃক্ষ-পরী, তারাও ওরিয়াডদের মতো রূপবতী ছিলেন। তাদের জীবন বাঁধা থাকতো বৃক্ষের সাথে – যে বৃক্ষের পরী হতেন তারা। পাতালের দেব-চরিত্রঃ হেডিসের ভাগে পরেছিলো পাতালপুরী। আমরা তার সম্পর্কে আগে জেনেছি। পাতালের প্রবেশমুখে ছিলো এক তিন মাথা-অলা ও ড্রাগনের লেজ-যুক্ত কুকুর “সারবেরাস”।

সকল আত্মাকে পাতালে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতো, কিন্তু বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হত না। পাতালের উপ-দেবতা ছিলেন তিনজন – টিসিফোন, মিজিরা ও অ্যালেক্টো। সমুদ্রের দেব-চরিত্রঃ পন্টাসঃ গভীর-সমুদ্রের দেবতা, সমুদ্র-দেবতা নেরেউসের পিতা, নেরেউসঃ সমুদ্রের মার্জিত ও ভদ্র দেবতা, তার স্ত্রী ছিলেন ওস্যানের কন্যা ডোরিস। নেরেউস ও ডোরিসের ছিলো পঞ্চাশটি সুন্দরী কন্যা, যারা ছিলো সমুদ্র-পরী। পিতার নামানুসারে তাদেরকে “নেরেইড” বলা হয়।

নেরেইডদের অন্যতম ছিলেন “থেটিস” – একিলিসের মাতা। আরেকজন নেরেইড “অ্যাম্ফিত্রিতি” ছিলেন পোসেইডনের স্ত্রী। ট্রাইটনঃ সমুদ্রের ট্রম্পেট-বাদক। পোসেইডন ও অ্যাম্ফিত্রিতি’র পুত্র। প্রোটিউসঃ কখনো বলা হয় পোসেইডনের পুত্র, কখনো তার সহচর।

তার ছিলো ভবিষৎবাণী ও ইচ্ছা মত নিজের আকৃতি পরিবির্তন করার ক্ষমতা। লিউকোথিয়া, তার পুত্র প্যালিমন এবং গ্লুকাসঃ যারা একদা মরণশীল ছিলেন, পরবর্তীরে পরিণত হয়েছিলেন সমুদ্রের দেব-চরত্রে। তারা অগুরুত্বপূর্ন ছিলেন। মর্তের দেব-চরিত্রঃ ধরিত্রীকে বলা হতো সর্বজন মাতা, কিন্তু তিনি কোন দেবী ছিলেন না। মর্তের দেব-চরিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঃ দিমিতিরঃ ক্রোনাস ও রিয়ার কন্যা, শস্য-দেবী।

প্যানঃ হার্মিসের পুত্র, কোলাহলপ্রিয় ও ফুর্তিবাজ দেবতা। তার ছিলো ছাগলের শিং ও পায়ের পাতার বদলে ছিলো ছাগলের শিং। আমরা অনেক মুভিতে প্যান’র প্রতিমূর্তি দেখতে পাই। প্যান একেরপর এক পরীদের প্রেমে পরতেন কিন্তু দৈহিত কদর্যতার কারণে বারবার প্রত্যাখ্যাত হতেন। সিলিনাসঃ প্যানের পুত্র, তিনি ছিলেন আমুদে ও স্থূল শরীরের এক বৃদ্ধ, যিনি গাধার পিঠে করে চড়ে বেড়াতেন।

কারণ অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তিনি হাটার শক্তি পেতেন না। ক্যাস্টর ও পোলাক্সঃ জনপ্রিয় দুই জন্মজ ভাই। তারা জীবনের অর্ধেক সময় পার করেছেন অলিম্পাসে, বাকি সময় মর্তে। তারা ছিলেন লিডা’র পুত্র। সিলিনিয়াঃ তিনি ছিলেন অর্ধেক ঘোড়া ও অর্ধেক মানুষ।

তার কান ছিলো ঘোড়ার মতো, আর কোমর থেকে নিচের অংশ ঘোড়ার চার পায়ের উপর। স্যাটারগণঃ প্যানের মতো অর্ধেক মানব অর্ধেক ছাগরূপী বনদেবতা, তারা দূর্গম বনাঞ্চলে বাস করতেন। ঈওলাসঃ বায়ু রাজ। তিনি ছিলেন চার বায়ু-দেবতাদের প্রধান। ফেইটগণঃ তারা জন্মের পর মানুষকে ভালো ও মন্দ দান করতেন।

তারা সংখ্যায় ছিলেন তিনজন – ক্লদো, ল্যাকেসিস ও অ্যাট্রোপস। অ্যামন কিছু চরিত্রের কথা শোনা যায় যারা মানুষও ছিলেন না, পরিপূর্ন কোন পশুও ছিলেন না। দেব-চরিত্রও ছিলেন না। এদের কয়েকজনঃ সেন্টরগণঃ অর্ধেক মানব ও অর্ধেক ঘোড়া, এরা ছিলো খুবই হিংস্র। গর্গনগণঃ তারা ছিলো সংখ্যায় তিনজন, দুইজন অমর।

তাদের ছিলো ড্রাগনের মতো ডানা, চোখের দৃষ্টি দিয়ে মানুষকে পাথরে পরিণত করতে পারতেন। গ্রেইয়াগণঃ তারা ছিলো গর্গনদের বোন। তাদের প্রত্যেকের একটি করে ধূসর রঙের চোখ ছিলো। তারা বাস করো টাইটান দেবতা ওস্যান’র নদীর থেকে কিছুটা দূরে। সাইরেনগণঃ তারা ছিলো সমুদ্রের মধ্যে এক দ্বীপে।

তারা ছিলো মনোমোহিনী কণ্ঠস্বরের অধিকারী, তাদের গান শুনে নাবিকেরা তাদের দ্বীপে ভিড়তো। সেই দ্বীপে একবার যারা যেত তারা আর ফিরে আসতো না। এই কারণে তারা দেখতে ক্যামন ছিলো তা কেউ জানে না। আমরা যাকে “মারমেইড” বা জলকন্যা বলি সম্ভবত তারাই ছিলো সাইরেন। সূত্রঃ মিথলজি বাই এডিথ হ্যামিল্টন ও উইকিপিডিয়া।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।