আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ইকবাল সমাচার-২য় পর্ব(দুই খণ্ডে সমাপ্ত)-নৌকা ও বাস ভ্রমন সংক্রান্ত একটা মেগা আজাইরা গালগল্প। হাসি অটোমেটিক আসতেই হবে।

যে সকল ছাগু আর ভাদা আসে আশপাশ, জীনের বাদশা তাদের পিছে দেয় মুলি বাঁশ। ১ম পর্ব আমার আগের একটা লেখায় ইকবাল নামক আজব চিড়িয়ার সাথে আপনাদের পরিচয় করে দেয়া হয়েছে। যদি পরিচিত না হয়ে থাকেন তাহলে কষ্ট করে আগের লেখাটা এইখান থেকে পড়ে নিবেন। এই পোস্টটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল, তাই নিতান্ত বাধ্য হয়ে দুই ভাগ করা হলো। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্তু পড়লে যে ব্যাপক বিনোদন পাবেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।

আমার স্কুল লাইফটা প্রচন্ড আনন্দে কেটেছে কারন চারপাশটা এত বিচিত্র সব সহপাঠি দিয়ে পরিবেষ্টিত ছিল,তারচেয়েও বিচিত্র ছিল তাদের রামছাগল সদৃশ কান্ড-কারখানা। এদের ভেতর সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিল ইকবাল। আমার সারা জীবনে এমন সেন্স অব হিউমার সমৃদ্ধ মানুষ আর দ্বিতীয়টি খুজে পাই নাই। স্কুল লাইফের প্রতিটা ক্ষেত্রে ইকবালের সৃষ্ট হাস্য-রস জড়িয়ে আছে। সেই সবের কথা মনে পরলে এখনও হাসি আটকে রাখতে পারিনা।

সে যাই হোক, আর কথা না বাড়িয়ে ফটাফট মূল বিষয়বস্তুতে চলে যাচ্ছি। তখন সম্ভবত ক্লাস সেভেনে কি এইটে পড়ি। আমাদের বঙ্গদেশীয় একাডেমিক সিস্টেমে যারাই পড়াশুনা করেছেন,তারা বেশ ভাল ভালোমতই জানেন যে, আমাদের প্রাইমারি ও হাইস্কুল লেভেলে পরীক্ষা নামক এক কঠিন পুলসেরাত পার হতে হয়। এমন কোন ছেলে-মেয়ে পাওয়া যাবেনা,যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে,যে কিনা পরীক্ষার ভয়ে তটস্ত থাকত না। যদিও পরে আস্তে আস্তে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে উঠে পরীক্ষা ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে যায়।

একমাত্র ব্যতিক্রম আমাদের ইকবাল, প্রাইমারি ও হাইস্কুলের পরীক্ষার খাতায় উনার জ্ঞান প্রকাশের নমুনা দেখে যে কেউ বলতে বাধ্য, আমাদের ইকবাল পরীক্ষা নামক বস্তুকে থোড়াই কেয়ার করে। পরীক্ষার খাতায় তার অতি উর্বর জ্ঞান চর্চা দেখে স্যারেরা তো বটে,আমরা পিচ্চিরাও মাঝে মধ্যে টাসকি খেয়ে যেতাম,ভাবতাম এত চমৎকার জিনিসও হয় নাকি ? আমদের ইকবালের মহামূল্যবান ঘিলু থেকে এই জিনিস বের হয়েছে, খুবই কষ্ট হত বিশ্বাস করতে। একদিনের ঘটনা। আসন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের বাংলা ২য় পত্র ম্যাডাম সাজেশন স্বরপ দুইখানা রচনার কথা বিশেষ করে বললেন,এও পইপই করে বলে দিলেন এই দুইটা রচনা যে পড়ে পরীক্ষা দিতে যাবে, পরীক্ষার সময় তার রচনা সংক্রান্ত আর কোন মুসিবতে পরতে হবে না। মূল কথা হচ্ছে,এই দুইটা থেকে রেন্ডমলি যে কোন একটা কমন পড়বেই।

আমরা যারা এই দেশীও ক্যারিকুলামে পড়াশুনা করেছি, তারা ভালোমতোই জানি যে বাংলা ২য় পত্রে রচনার ভূমিকা ও তাৎপর্য কতখানি। এই বিষয়ে ভাল নম্বর পেতে রচনা একটা ভাইটাল রোল প্লে করে। রচনার মধ্যে এলিট শ্রেনীর রচনা ছিল ভ্রমন সংক্রান্ত। বলা-বাহুল্য আমদের ম্যাডামও বাস-ভ্রমন ও নৌকা-ভ্রমন এই দুইটা রচনা ভাল করে পড়ে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে বলেছিল। আমার সবাই সুবোধ বালকের মত পরীক্ষার আগে আগে রচনা দুইটা ভালভাবে গলধঃকরন করে ফেললাম যাতে পরীক্ষার হলে উগড়ে দিতে পারি।

কিন্ত ঠিক এই জায়গাটায় আমাদের ইকবাল বেকে বসল। কি কারনে জানিনা তার বাস ভ্রমণে ঘোরতর আপত্তি। পরীক্ষার আগে সে মোটামোটি ঘোষনা দিয়ে দিল, সে শুধুমাত্র নৌকা ভ্রমন দিয়ে রচনার যাবতীয় কাজ-কারবার সারাবে। সবাই তাকে নানাভাবে বোঝালাম,নৌকা ভ্রমন আর বাস ভ্রমন দুইটাই পড়ে গেলে ক্ষতিটা কি? যে কোন একটা তো কমন পড়বেই। জবাবে ইকবাল আমাদের মত নাদান বান্দাদের উদ্দেশ্যে বাস ভ্রমনের কুফল আর অপকারিতা সমন্ধে একটা জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা পেশ করল।

যেটা শুনে আমরা নিজেরাই সন্দিহান হয়ে গেলাম বাস ভ্রমণের মত এত কুৎসিত আর বাজে একটা টপিক নিয়ে রচনা লেখার আদৌ কোন মানে আছে কিনা? তারপরও চাচা আপন পরান বাচা। আমরা কেউই ইকবালের মত এতটা আত্ম-বিশ্বাসী ও ভাগ্যে-বিশ্বাসী ছিলাম না। তাই দুইটা রচনাই সবাই পরীক্ষার আগে স্রেফ গিলে ফেললাম ভাল নম্বরের আশায়। দেখতে দেখতে বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার মাহেন্দ্রক্ষন চলে এল। পরীক্ষার হলে বসেই দেখলাম আমাদের ইকবাল মহাশয় সবার দিকে অতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহকারে তাকাচ্ছে আর ভাব-ভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে,আমাদের মত ছাগল সদৃশ সহপাঠিদের বালখিল্যতায় সে মহা ত্যক্ত-বিরক্ত।

আল্লাহ-আল্লাহ করতে করতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পেয়ে গেলাম। সবাই একসাথে কায়মানোবাক্যে প্রার্থনা করছিলাম ইকবালের ভাগ্য যেন সুপ্রশন্ন হয়। নৌকা ভ্রমনটাই যেন আসে। কিন্তু বিধি-বাম। প্রশ্নপত্রে দেখলাম রচনা এসেছে, বাস ভ্রমন।

কি আর করা, সবাই ভদ্র ছেলের মত মাথা নিচু করে লেখা শুরু করলাম,কিন্তু ভেতরে ভেতরে এটম বোমার মত বিস্ফোরিত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে, এইবার আমাদের ইকবালের কলমের ডগা দিয়ে কি বের হবে তা জানার জন্য। পরীক্ষার হলে পলকের জন্য দেখলাম,ইকবাল প্রশ্নপত্র দেখে যার পর নাই হতাশ হয়েছে। বিরক্তি মাখা চেহারা নিয়ে এই দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার মুন্ডুপাত করতে লাগল। আর মাঝে মাঝে প্রবল বেগে মাথা ঝাঁকাচ্ছে আর প্রশ্নকর্তাকে ক্রমাগত অভিশাপ দিচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, একটা গতানুগতিক বহুল চর্বিত-চর্চিত বাস ভ্রমন রচনা কিভাবে লেখা হবে তা আমরা সবাই মোটামোটি জানি।

সূচনাটা হয় অনেকটা এইরকম “ এই শীতে আমাদের স্কুল থেকে একটা বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা সবাই সেই উপলক্ষে একটা বিরাট বাস ভাড়া করলাম। একটা মাইকও ভাড়া করা হয়েছিল। তারপর সব ছাত্রছাত্রী আর স্যারেরা মিলে নিদিষ্ট দিনক্ষনে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। এরপর রচনার মূল বডিতে থাকে বাস ভ্রমনকালীন চারপাশের আজাইরা বর্ননা ও কি কি দেখতে দেখতে সময়টা কাটল তার বিশদ বর্ননা।

এমনি করতে করতে এটা একসময় বাস ভ্রমনের স্ট্রাকচারে রুপ নেয়। উপসংহারে থাকে বনভোজনে কি দেখলাম,কি হাগলাম তার খাজুইরা আলাপ ও রির্টান যাত্রার নিরস ধারা বর্ননা। সবশেষে পরের কোন এক বছর এই বনভোজনের চিরায়ত আশাবাদ। একসময় নীতিদীর্ঘ এই রচনা লেখা শেষ হয়। মোটামোটি সবাই এই ব্যাপার গুলো জানে।

তাই এই নিয়ে আর লেবু কচলাম না। এদিকে পরীক্ষার পর দেখলাম,ইকবালের মুখে ঈদের চাঁদের মত হাসি। রচনা কেমন হয়েছে,এই কথার জবাবে বলল,সময় আসলেই দেখবি এই ক্লাসের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটা কে আর তোরা সব এক্সপোর্ট কোয়ালেটির ছাগুর দল। বাঙ্গালী এখনও মানুষ চিনলনা,এই ধরনের কথা-বার্তা বলে সে চলে গেল। (চলবে) ২য় পর্ব পড়তে এইখানে গুতা দেন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.