আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কি যুবক?

অসাড় বিকলাঙ্গ হাতে অপার সুখের ছোঁয়ায় মগ্ন থাকি সেদিন এক বন্ধু এসে বলল, “ দোস্ত, আমরা কি যুবক?”, আচমকা প্রশ্নটা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম, বলে কি ব্যাটা? স্কুল, কলেজ পার করে এখন ভার্সিটিও প্রায় শেষ, তারপরও ওর সন্দেহ। ব্যাটা আবুলের আবুল। তবুও ওর মিচকি হাসি আমাকে কেন জানি ভাবিয়ে তুলল।

জাতিসংঘ ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু হিসেবে ধরে , বয়স হিসেবে আধবুড়ো খোকা হলেও কচিখোকা তো নই। এই রকম সহজ কথা খুব সহজেই মাথায় ঢুকে যায়। মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করতে শুরু করলাম, বিশ্ববিদ্দালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের গড়ে ২১-২২ বছর থাকে (ভার্সিটিতে উঠলেই শিশু খাতা থেকে নাম কেটে যায়)। “তুমি ভার্সিটিতে পড়,” এইটা যেন আমার বড় হওয়ার টিকিট। আসলেই কি? বাংলাদেশের গড় আয়ু ৫৫ বছর হলে জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ কাটিয়ে একজন মানুষ তার একটি ধাপ অতিক্রম করে, প্রশ্ন উঠতে পারে কিসের ধাপ? একটু ভালভাবে আপনার আচরণ লক্ষ্য করলে ধাপ গুলো ধরতে পারবেন।

মানুষের ভিতরে তিন ধরনের স্নায়ুবিক উত্তেজনা থাকে - স্নেহ, ভালবাসা আর সম্মান এই তিন ধাপের জনক, খেয়াল করলে দেখবেন আপনার বয়স যাই হোক না কেন এই তিন ধাপের বাইরে কাউকে পাবেন না। উধাহরনস্বরূপ বলা যায়, আপনি যখন বুঝতে শিখলেন তখন আপনার খেলার সঙ্গি সমবয়সী বন্ধুটি ছিল কলিজার টুকরা। (এটার মান ছিল )তার সাথেই বালকবেলা চলে যায়। একেবারে ছোট থাকতে খেলনা খেলার সাথি, মাঠে যাওয়ার পর মাঠের বন্ধু, মার্বেল খেলার বন্ধু। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কিছু বন্ধুর দেখা মেলে ।

আপনার ছোট ভাইবোনদেরকে আদর করতেন, বাবা মাকে সম্মান আর ভালবাসা দুইটাই করতেন। যুবক বয়সে বাবা মার ভালবাসায় কিছুবা কমতি না দিয়ে আপনার স্নায়ু অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি করে থাকে। ফলে সমবয়সীটিকে ভালবাসা স্বাভাবিক। আর বৃদ্ধ বয়সে ভালবাসাটি থাকে স্ত্রীর প্রতি । যাই হোক যে কারনে এত জল্পনা কল্পনা সেই প্রশ্নটিতে ফিরে যাই।

আপনি কি যুবক? হ্যা আপনার বয়স যদি ১৮ পার হয় তাহলেই আপনি যুবক। কবি সুকান্তের আঠারো বছর বয়স কবিতাটা মনে পড়ে গেল- আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ স্পর্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি আঠারো বছর বয়সেই অহরহ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি। কবি সুকান্তের কবিতাটা ইন্টারমিডিেয়েট তে পড়ান হয় যাতে সবাই আঠারো বছর নিয়ে সতর্ক (‼!) থাকে। অনেকটা রোগের চাইতে টীকা ভাল টাইপের। যাই হোক, এই আঠারো বছর বয়সে যুবককালের সুচনা।

যুবক অবস্থায় পৃথিবীকে আবার নতুন রুপে চিনতে হয়। যুবক বয়সের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়ে এক সময় বৃদ্ধকালে পরিণত হয়। নিজেকে যুবক বলে সন্দেহ লাগে যখন দেখি নেপোলিয়ন এই বয়সে বিদ্রোহ দমন করতেন, যেখানে আমরা আমাদের বিদ্রোহী মনকে ঘরের মাঝে বেধে রাখতে চাই। বেঁধে রাখতে বাধ্য হই, ভবিষ্যতের চিন্তায়। মনকে গৃহপালিত পশুর মত “খড় দিলেও সই, লাঠির বাড়ি দিলেও সই” রকমের করে ফেলছি।

লাভ কি হচ্ছে ? আগে ক্ষতির কথা বলি, মনকে এই রকম করার ফলে আপনার মনে জন্ম নিচ্ছে ভয়। ভয় খুবই বিষাক্ত, এটা যার সংস্পর্শে যায় তাকেই দুর্বল করে ফেলে। ভয় জিনিসটা আমাদের মধ্যে বীজের মতন পুতে দেয়া হয়, কিন্তু নীরবে। ছোট কালে নজরুলের কবিতা পড়তাম ,আমি হব সকাল বেলার পাখী, সেই থেকে কিছু হবার ইচ্ছা শুরু। এরপরে Aim in life বা “আমার জীবনের লক্ষ্য” রচনায় কখনও ডাক্তার আবার কখনও কৃষিবিদ এইভাবেই চলত।

ইচ্ছার মূল্য দেবার চাইতে ইচ্ছাশক্তি নষ্ট করে দেয়াই ভাল। তাই আমাদের ছোটবেলাতেই ইচ্ছাশক্তি নষ্ট করে দেয়া হয়। যদিও এর দোষ আমি মাতৃস্নেহের বা পিতৃস্নেহের উপর দেব না, কারণ এটা সাধারণ। বরং এর দোষ দেয়া যেতে পারে সমাজ ব্যাবস্থাকে। এটি শিক্ষা নামের একটি আদিম পদ্ধতি চালু করে রেখেছে।

সাধারণ শিক্ষা নামে আট বছর, বিশেষ শিক্ষার সুচনায় (এসএসসি) ২ বছর, একটু বিস্তারে আরও ২ বছর (ইন্টারমিডিেয়ট) তার পর হয়ত শুরু করা হয় বিশেষ শিক্ষা(অনার্স, মাস্টার্স) এবং তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। আমি আজ প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে শুধু পড়া লেখা করেই চলেছি। এর শেষ কোথায় জানি না। আমার প্রশ্ন একজন যদি ডাক্তার হতে চায় তবে তাকে কেন ১৪ বছর বিভিন্ন পড়াশুনা করে তারপর শুরু করতে হবে? হয়ত বলবেন যে প্রাথমিক শিক্ষা না থাকলে কি হয়? না হয়না, আমিও মানি। কিন্তু বিকেএসপির মতন মেডিকাল স্কুল থাকলে কাজটা অনেক বেশি সহজ হত।

আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় বুঝান হয় বেশি, দেখান বা করান হয় কম। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় প্রকৃত মেধাবী ভর্তি হয়না বললেই চলে। সাধারণ শিক্ষা নিতে নিতে আমরাও সাধারণ হতে শিখি তাই আমাদের মধ্যে আর নজরুল নেই আছে ধান্দাবাজ লেখক, শের-এ- বাংলা নেই আছে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রি যাদের কিচ্ছা কাহিনি পত্রিকায় প্রায়ই আসে, আমাদের জয়নুল নেই, আছে ক্যালেন্ডার এর পাতার জন্য ছবি আঁকিয়ে। চলতে চলতে সময় অনেক গড়িয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত জীবনের স্থির লক্ষ্য ঠিক করতে পারিনি .....তবুও ( চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।