আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিক্ষোভের ধাক্কায় ধরাশায়ী নন এরদোয়ান

তুরস্কের রাজনৈতিক মঞ্চে এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিচরণ বলতে গেলে অপ্রতিরোধ্য। ইস্তাম্বুলের একটি পার্কে গাছ কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। এটি তাঁর জন্য আকস্মিক একটি বড় ধাক্কা হলেও তা অনেকটা সামলে নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে এমনটি তুলে ধরা হয়।
ইসলামপন্থী একেপির নেতা তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর শাসনামলে অনিয়মের অভিযোগে দেশটির ক্ষমতাবান সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচারে দাঁড় করিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁর সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। সবকিছু যখন ঠিকভাবে চলছিল এবং আগামী নির্বাচনে তাঁর দল আবারও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল, এ সময় পেশাজীবী, শ্রমিক ও তরুণদের বিক্ষোভ ও সহিংস আন্দোলন এরদোয়ানের পথচলার সাবলীল ধারায় ছন্দপতন ঘটিয়েছে।
নগর উন্নয়নের অংশ হিসেবে ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে পার্কের গাছ কেটে নির্মাণকাজ চালানোর অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে তুরস্কের একটি গোষ্ঠী। তবে এই বিক্ষোভ শুধু গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে হয়েছে বলে মনে করছেন না অনেকে। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি এমন বিস্ফোরণে সহায়তা করেছে।


টুইটারে এরদোয়ানের সমর্থকেরা বিভিন্ন বার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসা এরদোয়ানের ভাগ্য দেশটির সাবেক দুই রাজনৈতিক বীরের মতো হতে পারে বলে। তাঁদের একজনকে ১৯৬০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। আরেকজনকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয় বলে প্রচলিত ধারণা।
প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ানের সঙ্গে তাঁর দল একেপির নেতা-কর্মীদের বেশ খানিকটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট।

তাঁরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীকে আরও নমনীয় নীতি গ্রহণ করা উচিত। তবে দলের শৃঙ্খলা ও এরদোয়ানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে কেউ এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ খোলেন না।
সাংবাদিক সেনজিস ক্যান্ডার বলেন, এরদোয়ান যেকোনো কিছু ব্যক্তিগতভাবে নেন। তিনি দলে কর্তৃত্বপরায়ণ নীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ কারণে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল ও উপপ্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত এরিন্সের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।


বোগাজেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কোরায় কালিসকান বলেন, একেপির অনেক সাংসদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়। তাঁদের একজনের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী এক কথা বললে প্রেসিডেন্ট অন্য কথা বলেন। দলে প্রকাশ্যে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলা যায় না। দলে গণতন্ত্র নেই। তিনি আরও যোগ করলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্তের আয় বেড়েছে।

এরদোয়ানের ভাবমূর্তির ইতিবাচক প্রভাব তাদের মধ্যে পড়েছে। তবে এই শ্রেণীও তাঁর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ব্যক্তিত্বকে সন্দেহের চোখে দেখে।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করে একেপির আইনপ্রণেতা মোস্তফা সেনটপ বলেন, কোনো বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে, তবে এটাকে সার্বিকভাবে মতবিরোধ বলাটা সঠিক নয়। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
বিক্ষোভকারীদের দমনে বেশ কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান।

তিনি আন্দোলনকারীদের লুটেরা অ্যাখ্যায়িত করে এই বিক্ষোভকে পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘এটা যদি সামাজিক আন্দোলন হয়, তাহলে তাঁরা কেন ২০ হাজার লোক জড়ো করে? আমি তাহলে দুই লাখ লোক জড়ো করব। তারা এক লাখ লোক জড়ো করলে আমি ১০ লাখ লোক জড়ো করব। ’
দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান অনড়। তাদের কঠোরভাবে দমনে প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ানের ঘোষণা—সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত তুরস্কের অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা সময়ই বলে দেবে।

মুখে স্বীকার না করলেও নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন এবং তা দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.