আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা মানুষ নয়, শ্রমিক !

মানুষ অল্প শোকে কাতর হয়, আর অধিক শোকে পাথর। পাথর থেকেও হিম জলধারা কান্না হয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু মানুষ তা-ও পারে না। সারা দেশের মানুষ আজ বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ। মানুষের জীবন কতটা সস্তা হলে তা নিয়ে ছেলেখেলা করা যায়- তার উত্তর আজ এ দেশের মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজছে।

এর উত্তর হয়তো মিলবে না; কারণ দেশটি যে বাংলাদেশ। সব সম্ভবের এই দেশে এ ধরণের বিপর্যয়ের পেছনের কারণগুলো খুঁজতে যাওয়া অবান্তর। এ দেশে কিছু বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য কিছু বিশেষ অভিধা রয়েছে। আর নামের মতো তাঁদের জীবনধারাও গণ্ডিবদ্ধ। তাঁরা ‘পোশাক শ্রমিক’ তাঁরা ‘দিনমজুর’।

তাঁদের কাজ হলো নিরন্তর দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা। উপর তলার মানুষগুলোর আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা, রাঘব-বোয়ালদের দশ/বারো পারসেন্ট কমিশন নিশ্চিত করা, কালো বিড়ালদের বস্তা-বস্তা টাকার যোগান দেওয়া। আর এভাবেই- “ধন্য শ্রমিকের প্রাণ” ! এ দেশে শ্রমের যথাযথ মূল্য নির্ধারিত না হলেও মৃত্যুর মূল্য মোটামুটি নির্ধারিতই বলা যায়। ভিন্নতা শুধু নির্ভর করে মৃত্যুর ধরণটা কেমন, তার ওপর। নৌকা বা লঞ্চডুবিতে মৃত্যু হলে পাঁচ হাজার টাকা ও একটি খাসি।

কারখানায় আগুনে পুড়ে মরলে পঞ্চাশ হাজার তবে মালিক সদয় হলে পরিমাণ কিছুটা বাড়তেও পারে! এই বিপর্যয়ের অনুভূতি মাথায় নিয়ে স্যাটায়ার লিখতে গা জ্বালা করছে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছেলেখেলা করে সেইসব নরপিশাচদের একটা একটা চিবাতে ইচ্ছা করছে। খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন এদের কাছে কিছুই না, তাই তাঁদের যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঠেলে দিতে এসব নরপিশাচরা সামান্য কুণ্ঠাবোধ করে না। কার কাছে আজ এই সব কথা বলবো ভেবে পাচ্ছি না। দিনের পর দিন এমন সব মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটেই চলেছে।

এর যেনো কোনো-ই প্রতিকার নেই। কখনও ভবনধস, কখনও পাহাড়ধস, কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এগুলো এখন স্বাভাবিক ঘটনা, যা বছরে কয়েকবার ঘটেই থাকে। ঘটনা ঘটার পরপরই সরকারি ও বিরোধীদল একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। রানা প্লাজার ঘটনার পরপরই আমরা অনুমান করছিলাম এমনটি এক্ষেত্রেও হবে। আমাদের অনুমানকে সত্য প্রমাণিত করে কয়েক ঘন্টা পরই মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি (চিরকালীন হাসির খোরাক) তার অমৃত বাণী পেশ করলেন- “ কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে, ভবন ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে”।

সাবাশ বেটা! এই না হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি! কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেনো অপরাধী পার না পায়- এমনটি আগে নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ শ্রমিকের জীবন নিয়ে যারা খেলা করে সেইসব পাষণ্ডদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এভাবে দিনের পর দিন আমাদের মৃত্যুর মিছিল দেখতে হবে। আমরা আর এসব দেখতে চাই না। আর সহ্য করতে পারছি না বুকফাটা আর্তনাদ...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.