আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যা

লাইফবার্গ ধরুন, অল্প শিক্ষিত লোকেদের বেশি বুঝা ভাল না। ঠিক আছে, মেনে নিলাম। কিন্তু, মাঝে মাঝে ঠিক বুঝেও যে ঘোল খেতে হয় টের পেলাম সেদিন। আমার এক পরিচিত জন আমাকে তাঁর ল্যাপটপটা দিলেন দেখেশুনে বিক্রি করে দেবার জন্য। কিন্তু বেচারাকে রাখতে রাখতে, সেদিন অনেক কষ্টে জোগাড় করা কাস্টমারের সামনে দেখি ডিসপ্লে আসে না।

দেখতো দেখি কি জ্বালা। কি করি! কম্পিউটারে টুকটাক কাজ করি আজ অনেক বছর। তাই নিজেই সারাতে বসলাম। মোটামুটি বেরও করলাম সমস্যা কই। কিন্তু ঠিক করার জন্য লাগবে হট গান (দুঃখিত, অন্য কিছু ভাববেন না যেন!) ।

এই গানের কাজ হল, স্পর্শ ছাড়া হিট দিয়ে চিপ খোলা বা লাগানো। যেমনটা খেয়াল করলে দেখবেন মোবাইল মেরামতের দোকানগুলোতে একটা পাইপ লাগানো যন্ত্র দিয়ে শোঁ শোঁ আওয়াজ করে কি যেন করে, ওইটাই হট গান। হার্ড ডিস্ক ভর্তি গান থাকলেও, আমার কাছে ওই হট গান না থাকাতে, পড়লাম বিপদে। কি আর করি, অনেক চিন্তা ভাবনা করে গেলাম আইডিবি-তে। প্রথমেই কাচুমাচু মুখ করে গেলাম এক সারাই করার দোকানে।

বললাম, ভাই, আমার এই ল্যাপটপের জিপিইউ-চিপটা একটু সোল্ডারিং করে দিতে পারবেন? দোকানী তাচ্ছিল্য নিয়ে বললেন, জিপিইউ কি ভাই? আমি আস্তে করে বললাম, গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ করে যেই চিপ, সেটা। উনি তখন বললেন, ও, না ভাই, এইগুলা হবে না। মন খারাপ করে গেলাম আরেক দোকানে, ওই লোক মধ্যবয়স্ক। যতই আমি কম বয়েসী ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করিনা কেন, উনি কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিতে থাকলেন। শেষতক আমার পুরো ঘটনা শুনে আমার দিকে এমন একটা লুক দিলেন, যেন, মাত্র আমি ডাস্টবিন থেকে উঠে এসেছি, উঠেই কম্পিউটার দেখে এখন মাথা আউলা হয়ে গিয়েছে।

তো, উনি বললেন, ভাই, আপনার গ্রাফিক্স কার্ড নষ্ট তো? এই ল্যাপটপ ফেলে দিতে হবে। এগুলা ঠিক হয় না। মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম, কি দরকার ওদেরকে বুঝানোর এতকিছু? আস্তে কেটে পড়লাম সেখান থেকে। গেলাম আরেক দোকানে, নাহ, এইবার আর কোনও ভুল না। আমি গিয়ে বললাম, ভাই এই ল্যাপটপটার ডিসপ্লে আসে না।

কি করা যায়? উনি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলেন। পাশে দাঁড়ানো একজন ক্রেতা বললেন, ও, মনে হয় চিপ-এ প্রবলেম। আমি চুপি বললাম, ভাই, এগুলো কি আর ওদেরকে বলা যায়? বললেই বিপদ, ওদের সামনে যত কম বুঝা যায়, ততই মঙ্গল। আমার কাজ অল্প, কি দাম চায় একটু শুনে যাই। উনি দেখলাম হঠাৎ জায়গা পরিবর্তন করে ক্রেতা থেকে বিক্রেতাতে পরিবর্তিত হয়ে, ভেতরে ঢুকে দোকানের এক টেবিলে বসে আপন মনে কাজ জুড়ে দিলেন।

আমি তো তৎক্ষনাৎ লেজ গুটিয়ে দৌড়। আরেক দোকানের ইঞ্জিনিয়ার, আসলেই সব বুঝলেন এবং আমার সাথে একমতও হলেন। তো, অনেক আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ভাই কত? উনি বললেন তিন হাজার টাকা। মানে ৫০০ টাকার ছয়টা নোট, একুনে, একটা হট গানের দাম।

আর কথা না বাড়িয়ে ফিরলাম বাড়ী। নিলাম স্ক্রু-ড্রাইভার, খুলে ফেললাম সব। হাতে নিলাম মাদারবোর্ড। দৌড়ালাম মোবাইলের দোকানে। সেই হট গান! দোকানী করে দিল সোল্ডারিং।

বাসায় আসলাম, লাগালাম সব। ঠিক হয়ে গেল কম্পিউটার! লাগলো কত জানেন? ১০০ টাকা । আসার সময় মোবাইলের দোকানের মালিকের সাথে হাত মিলিয়ে এসেছিলাম। অপার সন্তুষ্টি থেকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.