আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিউইয়র্কে কয়েকদিন...পর্ব - তিন (ছবি সহ ব্লগ) (বাচ্চারা তফাতে থাকো)

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল প্রথম পর্ব নিউইয়র্কে কয়েকদিন...(ছবি সহ ব্লগ) দ্বিতীয় পর্ব নিউইয়র্কে কয়েকদিন...পর্ব - দুই (ছবি সহ ব্লগ) (বাচ্চারা তফাতে থাকো) পুর্ব কথা দেশের টাকার শ্রাদ্ধ যখন, তখন বিকেল হবার আগ পর্ন্ত চা কফি সফট ড্রিংক্স সব গিলে ঘুম তাড়ালাম। এর পর ফাক বুঝে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য খুজে বের করা ঠিক কোন ঘরে বুবুজান আছেন। এত বিশাল দালানে এত এত লোকের ভেতর কি করে বুবুকে খুজে পাই? অবশ্য খুজাখুজির ব্যাপারে আমার ভাগ্য বরাবরই ভালো। সারোয়ার ভাইকে দেখলাম তখনো কবি শহিদ কিরণ এর কর্ণ মর্দন করছিলো।

বাপ রে, বুবুর রাগ দেখি সাংঘাতিক ! জরুরি কাজ এমন ভাব করে সারোয়ার ভাইকে বললাম - আরে। । বুবুকে দেখছেন নাকি? আমার প্রশ্ন শুনে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন উনি। বুবুর অবস্থান বলবেন কি বলবেন না এমন ভাবছিলেন। এই ফাকে কবি শহিদ কিরণ পগাড় পার হবার চেস্টা করছিল।

কিন্ত না। ক্যাক করে কিরণের ঘাড় ধরে কানে আরো শক্ত করে চাবি দিতে দিতে উনি আমাকে শুধু বললেন ১৭ তালায়। আমি কি আর দাড়াই? না জানি কত কিছু মিস হয়ে গেলো। কিন্ত ১৭ তালায় বললেই তো হলো না। ওখানে অন্তত ৫০টা রুম তো আছেই।

পরে কার না কার ঘরে টোকা দিয়ে কেলেংকারি করি। আর আমি নিশ্চিত যে বুবু অন্তত এই বৈঠকে আমাকে চাচ্ছে না। মানে যা করতে হবে গোপণে। ইয়া মাবুদ ! পেট ভরে পানীয় খাবার ফলাফল । হাল্কা না হলে আরেক কেলেংকারি।

যা করে আল্লায় বলে সামনে যে দরজা ছিল ঠ্যালা দিলাম। একি ! মেঘ না চাইতেই জল। খোলা ঘর ভেতরে কেউ নেউ। দুনিয়া জাহান্নামে যাক, আগে হাল্কা হই তো। উমম ! কাজ শেষ করে মনে হলো কবি ঠিকই বলেছেন।

পৃথিবীর সর্বসুখ ত্যাগেই । হুড়াহুড়ি করে তো ঢুকে পড়েছি। ভালো করে তাকানোও হয়নি। বাতি জ্বালিয়ে চক্ষুস্থির। এযে স্বর্গ ! যৌতুক নেই বা না নেই, এই রকম ঘরে এক রাত থাকার পয়সা শশুড়ের কাছ থেকে উসুল করতেই হবে।

রুমের ওপার থেকে কেমন জানি আলাপের শব্দ। জানেনই তো। কান পাতার খারাপ অভ্যাস। দিলাম কান পেতে। - শুনেন হাসনা বানু, হামাদের অনেক টাকা দিয়াছেন, হাপনার ইন্টারেস্টেই।

হাপনার ছেলে হামাদের খালি টাকাই দেয় নাই, হাত পায়ে ভি ধরেছে। এই জন্য হামরা হাপ্নার জন্য লবিং খরিছি। । খিন্টু হাপনার নিজেরও তো বুড্ডি করে চলতে হোবে? দেশ চালানো তো ইতো সোজা না ! বুবুর নাম না নিলে মনে করতাম লর্ড ক্লাইভ মর্তে এসে কথা বলছে। - এত এত ট্যাকা নিলেন।

দেশে মানুষের পিছার বাড়ি খাইয়াও তেল গ্যাসের কন্টাক আপনে গো দিলাম। আপনেগো নয়া ঘেটুপোলা ইন্ডিয়ার কাছে দেশ উদাম কইরা দিলাম। এর পরেও এই ক্যারফা কির লাইগা? চুল পাকছে, চোক্ষ্যে ভালো দেখি না বইলা কি এমন বুড়ি হইছে যে ২০২১ পর্যন্ত শাসন করতে পারমু না? - হাপ্নাকে যতই বলি মুখ সামলাইতে, হাপনি তো কথা শুনেন না। আর কি দরকার ইয়াওনিস সাহেবের পিছে লাগা? জানেন না উনি হামাদের সেকেন্ড ইন কমান্ডের জিগ্রি দোস্ত ? উনার নিজেরো তো আধা মাথা খারাপ। হাপনাদের দুইজনের কাজ ডেখলে মনে হয় "মাইয়া মানুশ কেন যে আইলো ক্ষমতায়" - শামিম, সাহেবগো ওই সুটকেসটা দে।

শুনেন ! ভাই তো ভালা আমার। আপনে গো যিশুর কসম লাগে, ট্যাকা যা লাগে দিমু, মাগার আমার ব্যাপারটা একটু দেখেন। টাকায় কি না হয়। ওই পাশে সাহেবের গলায় তালা। শুনলাম ইংরেজিতে ফোনেই মনে হয় কাকে কি বলছে।

আরো ভালো করে কান পাতলাম - আ লো মাতারি। তোরে না কইছি আন্দোলনের ডাক দিবি, মাগার কোন একশনে যাবি না। কি কইলি? দেশের মানুষ চায়? দেশের মানুষ কি চায় ওইটা বড় কথা না। আমরা কি চাই এইটা বড় কথা। দেখছোস তো, আমাগো পাওয়ার? আমাগো আশকারা আছিলো তাই বাড়ি হারাইছোস, পোলা আধা পঙ্গু, দলের কয়েক নেতা গুম, সব কয়টার নামে মামলা, পার্টির কোমড় ভাঙ্গা।

এর পর আমাগো কথার বাইরে গিয়া চোখের পাতাও যদি ফালাস তোর খবরই আছে কইলাম। বাহ ! ঝাড়ি দেবার সময় দেখি সাহেবের মুখে দিব্যি ঢাকাই শব্দ বের হচ্ছে। হায় টাকায় দেখি সবকিছুই হয়। নাহ ! আর দেরি করা যাবে না। রুমের মালিক যদি আমাকে দেখে তাহলে নিশ্চই শ্রীঘরে পাঠাবে।

তাছাড়া যা শুনার শুনে তো নিলামই। টেনশন আর ডামাঢোলে খিদা চাগাড় দিলো। আমেরিকার আবহাওয়াই মনে হয় এমন। সুন্দর করে ক্ষিদা লেগে যায়। কিন্ত খাবো কি? এমন সময় দেখি ভাগ্নির সাথে দেখা।

- আরে মামা, কোথায় থাকো? তোমাকে খুজেই পাওয়া যায় না। শোন, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, ডিনারের দাওয়াত। এ যে মেঘ না চাইতেই জল। থাক, পেটটা খালি থাক। দাওয়াতে গিয়ে উসুল করে নেয়া যাবে।

কিন্তু ঘন্টা খানেক সময় কাটাবো কি করে? খানিকটা হাটা যাক। তবে এবার হোটেল থেকে বের হয়ে বায়ে নয় ডাইনে রওয়ানা দিলাম। কোথাও মনে হয় ঝগড়া চলছে, তাও ঢোল বাজনার তালে তালে। বাহ বেশ মজার তো ! একটু দূর থেকে দেখি কৃষ্ণাঙ্গ কয়েকটা ছেলে শরীর মোচড়া মোচড়ি করছে। কারো কারো শরিরে এত লোহালক্কর যে ধোলাইখালে একটা ছোটখাট দোকান দেয়া যাবে।

তবে এদের সবার শরীরে একই সময় তেলাপোকা কি করে প্রবেশ করলো, মাথায় ঢুকলো না। আর ঝগড়া না, পড়ে শুনেছিলাম ওইটা নাকি র‍্যাপ মিউজিক! আর ওই ছেলেদের হাটুর উপরে প্যান্ট পড়ার স্টাইল দেখে দেশের ডিজুসদের কথা মনে পড়লো। হায় ! এই রাস্তার ছেলেগুলির ফ্যাশনকেই আমাদের দেশের রাম গাধাগুলি আধুনিকতা বলে গর্ব করছে? আরেকটু সামনে যেতেই, ছি ছি ছি । এক কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে দেখি অপেক্ষাকৃত অনেক ফর্সা একটা মেয়েকে জড়িয়ে এমন কীর্তি করছে, মনে হয় রাস্তায়ই বাসরঘর করে ফেলবে। ওরা কতক্ষণ ওই রকম ছিল জানি না, তবে আলিঙ্গনমুক্ত হতেই, মেয়েটার চেহারা মনে গেথে রইলো।

বেশ মিস্টি চেহারার মেয়ে। দেশি দেশি মনে হয়, আবার ইন্ডিয়া বা পাকিও হতে পারে। "আই হাভ এ পার্টি এট হোম। সো গটা গো নাউ হান" বলেই মেয়েটা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। " ইয়া মাবুদ ! আমি এতটা স্বার্থপর হলাম কি করে? আরে আজকে তো বুবুর জন্মদিন।

হাতে সময়ও বেশি নেই। হোটেলের গিফট সপ থেকেই কিছু একটা কিনতে হবে। বড় লোকের হোটেল ! গিফট শপও তেমনি। এক একটা জিনিসের দাম দেখি আর ৮৫ দিয়ে গুণ দিয়ে আমার নিজেরই ভিরমি খাওয়ার দশা। সবচেয়ে কম দামি জিনিসও দেখি দেড়শ ডলার।

মানে ৳১২,০০০। কিন্তু বুবু বলে কথা ! যে আওয়ামি সমর্থক ভদ্রলোক হোটেলে খাওয়া দিয়েছিলেন, বুবুর জন্মদিনের পার্টিটাও তারই সৌজন্যে। যে মানুষটা সাধারণ খাওয়াতেই এত কিছু খাওয়াতে পারে, বুবুর জন্মদিনের স্পেশালটা সে রকম না হয়েই যায় না। আসলেও। হায় ! এ যেন ঢাকার নবাবের পার্টি।

তাছাড়া বিশাল কেক হা করে যেন আমাকে ডাকছে ওরে আয় কাছে আয়। - মকবুল সাহেব, কি দরকার ছিল এত কিছু করার? - কি যে বলেন না নেত্রি। এতো কিছুই না। আপনি বললে জানও হাজির। - আরে না না।

শুনেন আপনার দেশের প্লট আর প্রজেক্টের সবকিছু পাশ হয়েই আছে। সাইনও করে দিয়েছি। কেউকে দিয়ে আনিয়ে নিবেন। - আল্লা সবই দিয়েছেন, কিন্ত সুখ নাই। - সুখ নাই কেন? কি হয়েছে? কোন সমস্যা? - আর বলেন কেন নেত্রি? মেয়েটার একটা গতি না করতে পারলে শান্তি পাচ্ছি না।

গতির কথা শুনে আমার হৃদয় আদ্র হয়ে গেলো। একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার এই দুর্দিনে যদি আমি পাশে না দাড়াই তাহলে জাতির বিবেক বলে পরিচয় দেবার কোন অধিকার আমার নেই। - কি যে বলেন। আপনি চাইলে এখানেই তো দেশি ভালো পাত্র পেয়ে যাবেন। - না না নেত্রি আপনি জানেন না।

এখানকার পোলাপানগুলি এক এক টা চরম লোফার। দেশি মানুষগুলিও বদের হাড্ডি। আমার মেয়ের নামে খামাখা বদনাম ছড়িয়ে দিয়েছে। তাই দেশেই কোন ভালো ঘরের ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো ভাবছি। - আহা রে ! আপনার মত ভালো মানুষের প্রতি এই আচরণ।

দেশে থাকলে এইগুলির হাড্ডি আমি ভাঙ্গতাম। দেশে আসেন, পাত্রের লাইন লাগিয়ে দিবো আমি। তা কই? মেয়ে কই? - এই সাহিলা, কই মা, এই দিকে আসো তো দেখি। আমার চোখ তখন সবচেয়ে শক্তিশালি ক্যামেরায় পরিণত। দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

আরে ! এতো সেই মেয়ে। ওই যে রাস্তায় কালো ছেলেটার সাথে কি সব ! কন্যার দায়গ্রস্ত পিতার দায়মুক্তির শখ মুহুর্তেই উধাও ! যত টাকাই বাপের থাকুক, যে ঠোট আরেকটি ঠোটের কাছে নিস্পেশিত হতে নিজের চোখে দেখেছি (বাকিটা বলছি না, অশ্লিলতার দায়ে পড়তে পারি) সেই ঠোটে ভালবাসা আকা আমার পক্ষ্যে সম্ভব না ! মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। এত মিস্টি চেহারার একটা মেয়ে এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো? খাওয়া দাওয়াও জমলো না। হোটেলে ফিরে বুবুর ডাক পড়লো। - পয়লা দিনেই শুয়োর খাইছোস।

এখন দেখি চুরি চামারিও শুরু কইরা দিছোস। - চুরি? কি কও বুবু? - এইটা কি? (গিফট বক্সে রাখা কার্টিয়ার ঘড়ি দেখিয়ে) - এইটা তো ঘড়ি । - এত দামি ঘড়ি কিনার ট্যাকা পাইলি কই? - আ - মি ? আমি তো এইটা কিনি নাই। - তুই কিনোস নাই, তো গিফট বক্সে তোর নাম দেয়া ক্যান? সর্বোনাশ। বাক্স অদল বদল হয়ে গিয়েছে মনে হয়।

আমার জন্য অবশ্য শাপে বর - এই দেখো রিসিট বুবু ! রিসিট দেখে তবেই বুবুর ভুল ভাঙ্গলো। - আচ্ছা বুবু একটা কথা কও তো দেখি। তুমি আমার উপরে বিলা খাইলা ক্যান? প্রথমে স্বীকার না করলেও, পরে হয়তো খারাপ ব্যাবহারে অনুতপ্ততা কাটানোর জন্য স্বীকার করলেন। - তোরে আমি এত ভালোবাসি, স্নেহ করি, আর তুই কিনা রাজার মুসার কাছে খবর পৌছাস? - কি কও বুবু? আমি নুলা মুসারে তো জীবনে চৌক্ষেও দেখি নাই। তাছাড়া হেও তো তুমার বেয়াই।

- আরে ধুর ! ওই মুসা না, সাংবাদিক মুসার কথা কই। - অ্যা? উনিও রাজাকার নাকি? হায় হায় ! এই ব্যাটা এতদিন তাইলে তুমার পার্টির পক্ষ্যে লিখলো কেমন? - ধুরও বলদ, রাজাকার মানে হইলো আমার বা আমার গুস্টি বা পার্টির বিরোধীতা করে যারা, হেরা ! ব্যাটার সাহস কত্ত ! কয় কি আমাগো চোর কইরা গাইল পারতে? বুড়া বইলা এখনও কিছু কই নাই। বুঝলাম স্বাধীনতাবিরোধিদের নতুন সংজ্ঞা আবিস্কৃত হয়েছে। - ধুরও কি যে কও না বুবু ! মুসা ভাই সিনিয়ার সাংবাদিক এই জন্য সালাম আদাব দেই। হের না আছে ট্যাকা না আছে পাওয়ার।

আমারে কি পাগলে পাইছে যে তুমার খবর উনারে দিমু? এই মিছা কথা টা কে কইছে তুমারে বুবু? - হুম ! কেডা আবার ? ঐ কাদিয়ানী ইন্ডিয়ান মাউড়া গহর মিজভি। আমি কিছু বলতে যাবার আগেই শামিম ভাই হন্তদন্ত হয়ে আসলেন - নেত্রি আপনারে এখনই ডাকে। জলদি চলেন। (চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.