আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিউইয়র্কে কয়েকদিন...পর্ব - দুই (ছবি সহ ব্লগ) (বাচ্চারা তফাতে থাকো)

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (দ্বিতীয় পর্ব দিতে বিলম্বের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি) প্রথম পর্ব পড়তে নীচে ক্লিক করুন নিউইয়র্কে কয়েকদিন... (ছবি সহ ব্লগ) পুর্ব কথাঃ সন্ধ্যার দিকে চোখ খুললো। জানালার ফাক দিয়ে বাইরে চোখ ধাধানো আলো র আভাস চোখে পড়লো। গোসল সেরে রুম থেকে বের হলাম। । দেখি কেউকে পাওয়া যায় কি না ! পড়বি তো তো পর একেবারে বাঘিনির সামনে।

- পয়লা দিনেই হারাম খাইছোস। এর পর ধরবি মদ! এর পর জুয়া ! এর পর মেয়ে মানুষ ! কোন দুঃখে যে এইটারে আনছি আমেরিকা। আমার মান ইজ্জত সব শেষ কইরা ফেললো ! খোদ বুবুজানের কণ্ঠে এমন বিলা সাউন্ড আগে শুনিনি। দিব্যি বুঝতপারছি কেউ আমার নামে কান ভারি করেছে। খবর পেয়ে নেই, এর পর বুঝাবো ! আমি একদম ন্যাকা সেজে বললাম - বিশ্বাস করো বুবু, আমি বুইজ্যা খাই নাই।

এই বিদেশ অজানা অচেনা, আর আমি আবুল মানুষ, কোন কিছু ঠাউর করতে পারি, তুমিই কও? আমি ইনুচ সাবের কছম খাইয়া কই আমি নিস্পাপ নিস্কলংক ! আমার কথার শেষ লাইনটাতে কাজ হলো। -হইছে হইছে। এর পর থেইকা কেউরে না জিগায়া কিছু খাবি না, কুনখানে যাবি না, ঠিক আছে? - তুমি যা কও বুবু ! আচ্ছা তুমার বগলের তলে কি ওইটা? - প্রবাসী এক কবি আমারে নিয়া কবিতা লিখা ছাপাইছে। তার কপি দিছে আমারে। - দেখি তো ! প্রথম পাতায় লেখা " তোমার চরণে দিনু ঘৃতকুমারি" - বুবু , এই ব্যাটা দেখি তুমারে চামে পচাইছে।

- পচাইছে? মানে? - মানে ঘৃতকুমারি দিয়া বুঝাইছে তুমার চুলের অবস্থা খারাপ, চেহারার চামড়া ঝুইলা গেছে আর তুমার পেটে গ্যাস ভর্তি। - কি কইলি !!! কথা সত্য কইছোস? - আমার এত বড় সাহস হইবো তুমারে মিছা কথা কওনের বুবু? যারে পাও জিগাও, ঘৃতকুমারি দিয়া মানুষ কি করে। আমার কথা মিছা হইলে আমারে গুম কইরা দিও, কিচ্ছু কমুনা। রাগে বুবুর চেহারা লাল হয়ে গেলো - সারোয়ার, ওই কবি শহিদ কিরণরে যেই খানে পাবি ঘাড় দিবি। কুন কথা নাই।

আরো কি যে বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই করিডোর দিয়ে অং সুচিকে আসতে গিয়ে একেবারে লাফ দিয়ে পড়লেন বুবু। - ওগো তুমি, তুমি বড় ভাগ্যবতি, জ্বলে তোমার ঘরে দিবস এলো আমার ঘরে রাতি। বুবুর গলায় গানটা খুব ভালো লাগলো। কিন্ত সুচি কি বাংলা বুঝবে? আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখি সুচি বলছে - কি যে বলেন না আপা। খামাখা লজ্জা দিচ্ছেন।

বড় সাহেবরা মুখে বলছেন ক্ষমতা আমি পাচ্ছি ! কিন্ত খালি অপেক্ষা আর অপেক্ষা। ভালো লাগে না। - আরে আপা সবুরে মেওয়া ফলে। এদিকে আমাকে কত আশা ভরসা দিয়ে এখন খালি এইটা ওইটা নানান খুত ! এই শালা ইউনুচ্চার জন্য ধনে প্রাণে মরলাম। - কিছু বৌদ্ধ মেরে ফেলেন।

- অ্যা? কি কচ্ছেন আপা? আপনার ধর্মের লোক মারবো? - আহহা ... রাজনীতিতে এই রকম এক আধটুকু হয়েই থাকে। আমার ধর্মের হলেই কি? ওরা তো আপনার দেশি লোক। - লাভটা কি? - শুনেন। হিন্দু মেরে লাভ নাই। ভোট ব্যাংকও যাবে, ইন্ডিয়া ও বিলা খাবে।

আর আমি তো জানি শিং সাহেব অনেক হাতে পায়ে ধরে আপনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। হিন্দু মারলে আম ছালা দুইই যাবে। তারচেয়ে বৌদ্ধ মারেন, আর নাম কার দিতে হবে, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনি তো আরো ভালো বুঝবেন। বুবু কি যেন উত্তর দিতে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন।

- এই ছ্যামড়া, তোরে না কতদিন কইছি কথা গিলবি না। যা বাইরে গিয়া ঘুরাঘুরি কর গিয়া। আমি দেরি না করে প্রস্থান করলাম। যা শুনার শোনা হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় নেমে ইতি উতি তাকালাম।

গাড়িঘোড়া মানুষ জনে সয়লাভ। কোন দিকে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। যা আছে কপালে বলে বাম দিকেই রওয়ানা দিলাম। নানি বলতো, যাত্রায় বায়ে যেতে হয় না। পরে বুঝেছিলাম কেন।

ফুটপাত ধরে হাটছি, বিশাল বিশাল দালানে অজস্র বাতি। বিলবোর্ডে ভরপুর। কি সুন্দর কি মনোহর ! গ্রাম থেকে প্রথমবার ঢাকা আসলে লোকজন যেমন করে চারিদিকে তাকায়, আমার হালও হয়েছে অমন। এমনি হাটতে হাটিতে অপেক্ষাকৃত শান্ত নির্জন আর আলো আধারে ঢাকা একটা যায়গায় চলে এলাম। হঠাৎ নারী কন্ঠের খিল খিল শব্দে সম্বিত ফিরে পেলাম।

ইয়া মাবুদ ! পেত্নির পাল্লায় পড়েছি নাকি? আধার থেকে বেড়িয়ে আসা দির্ঘাঙ্গি স্বর্ণকেশি এক অপরুপ তরুণি বেড়িয়ে এলো। - কি? কেমন চলছে? সঙ্গি দরকার? এমন একটা মেয়ে আমার মত কদাকারকে সঙ্গি হতে বলছে? দেরি করে কোন শশুড়ের ছাওয়াল? কি মিস্টি কন্ঠ ! কি মিস্টি ব্যাবহার। কোথায় উঠেছি, কতদিন থাকবো, এমনকি পকেটে কত টাকা আছে সে খবর পর্যন্ত বের করে ফেললো। আমি তো পুরা মজনু ! ৫ মিনিটের পরিচয়েই বলে কি না "তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। চলো নিরিবিলি বসে আড্ডা দেই, খাওয়া দাওয়া করি।

" যাবো কোথায়? হোটেলে নিয়ে যাবার তো প্রশ্নই উঠে না। এই কিছুক্ষন আগেই না বুবু ঝাড়ি দিলো। এখন মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে আমাকে কেটে বটি কাবাব বানাবে। আমি ইতস্তত করছি দেখে, নিজেই বললো, " এই তো কাছেই আমার বাসা। চলো সেখানেই আড্ডা দেয়া যাবে।

" বাসা? বাসা কই? এইটা তো হোটেল ! অনেকটা আমাদের নবাবপুরের আবাসিক হোটেলগুলির মত। আশে পাশের ঘরগুলি থেকে কি সব শব্দ আসছে। ছি ছি ! কই এলাম? অবশ্য শুনেছি আমেরিকায় এই সব নাকি ডালভাত। আমার মনে বাবা কোন পাপ নাই। মেয়ে দাওয়াত দিয়েছে বলে আসা।

একটু আড্ডা দিলাম, রাতের খাবার খেলাম, তার পর চলে যাবো। ওমা ! এ কি? মেয়ে বলে "কি ব্যাপার? তুমি এখনও পোষাক পড়ে আছো কেন? জলদি খুলো। " অ্যা ! কি আজব দেশ রে বাবা। রাতের খাবার দিগম্বর হয়ে খেতে হয় নাকি? কি জানি হতেও পারে। নতুন আসছি , কিছুই তো জানি না।

পাছে ক্ষ্যাত মনে করে, তাই মেয়ে যা বললো আমি তাই করলাম। মেয়ে আমাকে সোজা বিছানায় বসিয়ে বলে, একটু বসো আমি বাথরুম থেকে আসছি। বাথরুমে কি রান্নাঘরও আছে? নইলে খাবারের নামগন্ধও কোথাও নেই। অজানা আশংকায় বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো। মেয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই, লজ্জায় চোখ বুজবো, নাকি মুগ্ধতায় তাকিয়ে থাকবো বুঝতে পারলাম না।

আসলেও পরম সুন্দরি। এমন সময় দরজায় কড়া আঘাতের শব্দ। বাইরে থেকে নানান খিস্তি খেউর ! মেয়ে তো দেখি ভয়ে শেষ। "এইরে আমার বয়ফ্রেন্ড এসে পড়েছে। " হায় হায় কিসের মধ্যে পড়লাম।

কিছুই করি নাই, মাঝখানে দেখি মহা বাটে পড়লাম। মেয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখি বিশালদেশি কৃষাঙ্গ এক ব্যাটা ! এই লোক এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড? - হালার পুতেরে আইজকা খাইছি। আমার গার্লফ্রেন্ডরে চুলাচালা পাইয়া আকাম অরতে আইছে। এই ব্যাটা হাতে পড়লে কি অবস্থা হবে, দিব্যচোখে দেখতে পেয়ে বাঙালি বুদ্ধি খেলে গেলো। ছোটকালে অনেক দারিয়াবান্ধা খেলেছি, তাই সে যাত্রায় পগার পার।

কিন্তু তাতে কি? পকেটে এক পয়সাও তো নেই। পয়সাও থাকবে কেমনে? শার্ট আর প্যান্টের পকেটগুলি তো ওই মেয়েরে বাসায় থুক্কু হোটেলে ফেলে এসেছি। আবার জিজ্ঞেস করবেন না পড়ণে কি ছিল। সে অনেক লজ্জার ব্যাপার হবে। পয়সা নেই, তাও ঠিক।

কিন্ত দিকবিদিকভ্রান্ত হয়ে পথও তো হারিয়ে ফেলেছি। হায় হায় ! ভদ্রলোকের ছেলে হয়ে, সবচেয়ে বড় কথা বুবুজানের আদরের ভাই হয়ে আমাকে আজ ভিক্ষায় নামতে হবে। নইলে উপায় কি? দাঁড়িয়ে পড়লাম রাস্তার ধারে। কিন্ত কি বলবো? ইংরেজিও যা জানি, এই ক্যাচালে সব ভুলে গেছি। শেষ পর্যন্ত বিখ্যাত ফকিরি গানটাই ধরতে হলো।

"...... একটা হরিণ বান্ধা ছিলো গাছেরই ছায়ায় " একে তো বিদেশি লোক, তায় বিদেশি ভাষা এর উপর আবার পরণেও যৎ সামান্য। কে জানি পুলিশে কল দিলো। ওরে মা, চারিদিকে পুলিশ এসে ভরে গেলো। দুই একজন তো পিস্তলও তাক করেছিল। ভয়ে আমার জান শেষ।

পুলিশ যতই হ্যান্ডস আপ বলছে, আমি দুই কান ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছেন আমি সত্যবাদি যুধিস্টির সেজে সব বলে দিয়েছিলাম? সে গুড়ে বালি ! খালি বলেছিলাম কালো গাট্টাগোট্টা কয়েকটা লোক পিস্তল দেখিয়ে সব নিয়ে গিয়েছে। হাজার প্রশ্নের জবাবে আমার একটা দুইটাই কথা, জানি না চিনি না। উফফ আসলেও পৃথিবীর সব যায়গায়ই দেখি পুলিশ ধরলে আঠারো ঘা। শেষে পুলিশই একটা টাওয়ালে আমার লজ্জা ঢেকে আমাকে হোটেলে পৌছে দিলো।

বুবু বিজি ছিলো বলে, শামিম ভাইয়ের জিম্মায় দিয়ে গেলো। রাতটা ভালোয় ভালোয় কাটলো। পরদিন সকালে শুনলাম, বুবুর কড়া অর্ডার, সব সময় তার একান্ত সফরসঙ্গিদের সাথেই সর্বক্ষণ থাকতে হবে। প্রেসকার্ডও যোগাড় হয়ে গেলো। বুবুর পিছু পিছু জাতিসঙ্ঘের অফিসে।

কি বিশাল আলিশান। চোখ ধাধিয়ে যায়। কত রঙ কত বর্ণের যে মানুষ। এর মধ্যে নারীও আছে। মাগার অই লাইনে আমি নাই।

যতই হাই হ্যালো বলেছে, আমি শুধু হাসি দিয়ে অন্যদিকে গিয়েছি। বুবু ভিতরে। আমি বাইরে ঘুরঘুরি করছি। বোরিং লাগছিলো। দূর থেকে দেখি এক সুট টাই পড়া কালো লোক আসছে।

আমার দিকে বেশ একটা হাসি দিয়ে বললো, "গুড মর্নিং। হাউ আর ইউ । " দেখি এর সাথেই আড্ডা দেই, নইলে সময় তো কাটে না। আমিও সম্ভাষন জানালাম। - ইউ পম গানা? - কি কইলি তুই? ওমা, এই ব্যাটা দেখি চরম বিলা খেয়ে গেলো।

(পড়ে শুনি এই লোক আইভরি কোস্টের, যাদের গোত্রের সাথে ঘানার লোকদের বনে না। ) অনন্ত জলিলের গুষ্টি কিলাই ! কি শিখায়া গেলো। এই বিদেশে এসে ওর ইংরেজি আর ভুগোল জ্ঞানের কারনে মার খেতে খেতে বেচে গেলাম। এর পর কোন ঘটনা ছাড়াই বেশ কিছুটা সময় পার। এর মধ্যে দেখি বুবু, ভাগ্নি, দিফু আফা আর মিজারুল ভাই বের হয়ে আসলেন।

মিজারুল ভাইয়ের চোখ ফোলা ফোলা। - কি ব্যাপার মিজারুল ভাই, আপনার চোখের এই অবস্থা কেন? - কি আর করা, পেছনের সিটে বসে বসে ঘুমাচ্ছিলাম। এছাড়া আমার তো করার কিছুই ছিল না আর ! - তা বুবু কি নিয়ে বক্তৃতা করলেন? - আইনের শাসনের উপর। - বলেন কি? মহা কঠিন সাবজেক্ট। - আরে কিসের কঠিন? উনি যা করেন, ঠিক উলটো বললেই তো হয়ে গেলো।

- বিকালে কোন প্রোগ্রাম নেই? - জাতিসঙ্ঘে নেই। তবে বড়দের সাথে বিকালে অনানুষ্ঠানিক একটা একান্ত আলোচনা আছে। দুপুরে কোন প্রবাসী আওয়ামি লীগ সাপোর্টারের বাসা থেকে প্রায় ৫০-৬০ জনের খাবার আসলো। আহা ! কি নেই তাতে? ভর্তা ভাজি থেকে শুরু করে মোগলাই। খেতে বসে মনেই হচ্ছিল না বিদেশে আছি।

আচ্ছা ওই বাড়িতে কি কোন অবিবাহিত মেয়ে নেই? পেট পুরে তো খেলাম। ওই দিকে দুপুরে ভাত খেলে আমার চরম ঘুম পায়। কিন্তু ওই আলোচনায় কি হচ্ছে না জানতে পারলে তো পেটের খাবার হজম হবে না। দেশের টাকার শ্রাদ্ধ যখন, তখন বিকেল হবার আগ পর্ন্ত চা কফি সফট ড্রিংক্স সব গিলে ঘুম তাড়ালাম। এর পর ফাক বুঝে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।

উদ্দেশ্য খুজে বের করা ঠিক কোন ঘরে বুবুজান আছেন। চলবে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.