আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিমানী পচন

আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি। যা দিয়েছো তারই অযোগ্য ভাবিয়া কেড়েও তো কিছু নাও নি। ০. উৎসর্গঃ নাদিম ইমতিয়াজ। ভাইয়া, টিনেইজ বয়সটা খুব খারাপ। ১. দারুণ একটা সমস্যায় পড়েছে অভি।

ইদানিং তো সেই সমস্যাটা মান-ইজ্জত পর্যন্ত হাত বাড়িয়েছে। ক্লাসে পাটিগণিতের খাতা জমা দেয়ায় অভি সবসময়ই প্রথম, ওর আগে কেউ খাতা জমা দিতে পারে না। তবে বীজগণিতে অভির মগজ পাটিগণিতের মত এত দ্রুত কাজ করে না। সেটা নিয়েই ইদানিং বেশ চিন্তায় আছে অভি। কারণ সে ক্লাস এইটে পড়ে।

ও ওর স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়া এক বড়ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছে যে ক্লাস নাইন থেকে অংক পাঠ্যবইতে নাকি কোন পাটিগণিত থাকবে না। চিন্তা তো হবারই কথা! অভিদের ক্লাসে যে ছেলেটা ক্যাপ্টেন– তার নাম আবুল হোসেন। আবুল হোসেন ছাত্র হিসেবে ততটা ভাল নয়। সাধারণত ক্লাসের নিয়ম হচ্ছে রোল নম্বর এক অথবা রোল নম্বর দুই হয় ক্লাসের ক্যাপ্টেন, কিন্তু ক্লাস টিচার রশিদ স্যার আবুল হোসেনকে তাঁর মনোনীত ক্যাপ্টেন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ফয়সালের রোল নম্বর এক– তাই ও উঠে এর একটু মৃদু প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল।

স্যার ক্ষেপে সাথে সাথে ফয়সালের গালে চড় বসিয়ে দিলেন। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলেন- “কইত্যা আইসা ক্যাপ্টেন হইবার চাইতাছস? রোল নাম্বার এক হইলেই কি ক্যাপ্টেন হয়ন যায় নি? শইল্যে বল থাকন লাগে না? তর এই বিলাইমার্কা শইল লইয়া পোলাপাইনগো সামলাইতারবি? চুপ কইরা বইয়া থাক!” ফয়সালের থাপ্পড় খাওয়া দেখে অভির বড্ড মায়া হল। খুব ইচ্ছে করছে ওর কাছে গিয়ে একটু স্বান্তনাসূচক কথা বলতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। তাতে রশিদ স্যার আরো ক্ষেপে যেতে পারেন।

তখন বাঁধবে এর চেয়েও বড় ধরণের নতুন আরেকটা সমস্যা। এবার অভির আসল সমস্যার কথা বলা যাক। অভির নামসংক্রান্ত সমস্যা হল ওর আসল সমস্যা। অভি ইংরেজিতে ওর নাম লেখে– OVE, ছোটবেলা থেকে এভাবেই লিখে আসছে সে। ছোটবেলায় কোন সমস্যা ছিল না, বিপত্তিটা বেঁধেছে ইদানিং।

যতগুলো খাতার উপরে ‘OVE’ লেখা ছিল, টিফিন পিরিয়ডের পরে ক্লাসে এসে দেখে কোন এক ফাজিল ছেলে ফাজলামি করে প্রত্যেকটা খাতার নামের আগে ‘L’ বসিয়ে দিয়েছে। এখন ওর প্রতিটা খাতার উপরে বড়বড় অক্ষরে ‘LOVE’ লেখা! ভালো ছেলেদের খাতার উপরে কখনো ‘LOVE’ লেখা থাকে না। এসমস্ত পচাকথা লেখা থাকে পচা ছেলেদের খাতার উপরে। অভিদের ক্লাসে পচা ছেলেদের একটা গ্রুপ আছে। ওরা ক্লাসের একদম পিছনের বেঞ্চে বসে।

সাধারণত ওরা কোন ক্লাসে পড়া পারে না আর টিফিন পিরিয়ডে বসে বসে হলুদ দাঁত বের করে সিগারেট খায়। একবার সিগারেট খেতে খেতে ওদের একজন অভিকে বলেছিল– এই LOVE, বিড়ি খাবি? এর জবাবে অভি বলেছিল– আমি পচা ছেলে না। তারপর যা ঘটেছিল তা আর অভি মনে করতে চায় না। এরপর থেকে ও আর ওদের কারো সাথে কথা বলে না। ২. সন্ধ্যাবেলা।

সবচেয়ে বেশি ক্ষেপেছেন অভির বড় আপু। অভির বড় আপুর নাম তাজিন আপু, বাসার সবচেয়ে রাগী মানুষ। তাজিন আপু প্রতিদিন সন্ধ্যায় অভির ঘরে আসেন এবং পড়া ধরার নাম করে খামাখাই অভিকে বকা দেন। তাজিন আপু এবার মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। অভির ধারণা তাজিন আপুর বিয়ে হচ্ছে না বলে তার মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে আর এর ঝাল ঝাড়েন তিনি অভির উপরে।

এমনিতেই উনি কারণ ছাড়া ধমকান, তারপরে আজ কিভাবে যেন তিনি অভির খাতার উপরের ঐ পচা কথাটা দেখে ফেলেছেন। আর পায় কে! কারণ ছাড়া অকারণে ঝাড়ি দেয়া যার পুরোনো অভ্যাস, আর আজ তো একটা প্রকৃত কারণ পাওয়া গেল। তাও যেন-তেন কারণ নয়, গুরুতর কারণ! অভি নিজেকে রক্ষা করতে আসল ঘটনাটা বলতে গিয়েছিল, কিন্তু আপু ওর কথা বিশ্বাস করেন নি। উপায়ন্তর না দেখে অভি আগ বাড়িয়ে বলেছে– আপু, তুমি খামাখাই আমার কথা অবিশ্বাস করছো। আমি নিজেই তো রাস্তায় যদি ‘পড়াইতে চাই’ নামক পোস্টার দেখি, তার আগে ‘থা’ যোগ করে ‘থাপড়াইতে চাই’ বানিয়ে দেই।

এতে যে লোক ‘পড়াইতে চাই’ লিখেছিল, ‘থাপড়াইতে চাই’ হয়ে যাওয়াতে তার তো কোন দোষ নেই। আমার ক্ষেত্রেও এটা এমন ঘটেছে। আমি ইচ্ছে করে ‘LOVE’ লিখি নি, আমার নামের সামনে অন্যকেউ ‘L’ জুড়ে দিয়েছে। তাজিন আপু অভির কোন কথাই গ্রাহ্য করলেন না তবে অভির ‘থাপড়াইতে চাই’ ব্যাপারটাকে একটা বিশাল ইস্যু বানিয়ে ছাড়লেন। এর ফলাফল অভির জন্য হল ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মত।

তাজিন আপু ক্ষেপে গিয়ে প্রচন্ড চিল্লাপাল্লা শুরু করে বাড়ি মাথায় তুললেন। সাথে বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে গলা ফাটিয়ে জানিয়ে দিলেন যে অভি নাকি বখাটে হয়ে গিয়েছে, ওকে দিয়ে কোন আশা করাটা আর উচিৎ হবে না। তবে একটা স্বান্তনার কথা– আব্বু আম্মু এই নিয়ে অবশ্য একটা কথাও বলেন নি। ৩. আজকে থেকে অভি সত্যিকারের বখাটে ছেলে। কিছুক্ষন আগে সে রুহুলের সাথে সিগারেট খেয়েছে।

প্রথমবার যখন ও সিগারেটে টান দিল, কাশতে কাশতে তো ত্রাহি অবস্থা। তারপরেও সে সিগারেট খেয়েছে, অনেকটা জোর করে টেনেছে। শুধু তাই নয়– ক্লাসের ক্যাপ্টেন আবুল হোসেন ব্ল্যাকবোর্ডে অভির নাম লিখেছিল এই জন্যে অভি উঠে গিয়ে আবুল হোসেনের কলার ধরে হেঁচকা টান দিয়ে দেয়ালের উপর ফেলে দিয়েছে। এতে অবশ্য কাজ হয়েছে। আবুল হোসেন সাথে সাথে অভির নাম মুছে দিয়েছে।

স্কুল ছুটির পর সবাই যখন জিয়াউল স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে, অভি চিন্তা করল ও আজ প্রাইভেট পড়তে যাবে না। আজ সিনেমা দেখতে গেলে কেমন হয়? অভি রুহুলকে পিছন থেকে ডাক দিল– মাম্মা, চলো এক টিকিটে দুই ছবি মাইরা আসি। রুহুল কিছুটা অবাক হল– ঐ অভি, আজ কি হইছে রে তোর? যাবি নাকি ক, তুই না গেলে আমি একাই যামু আইজ। আমি কি কইছি যে যামু না? তাইলে চল, এক্ষুনি! সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অভি আর রুহুল। ওরা যে সিনেমা দেখার জন্য টিকিট কেটেছে, সেই সিনেমার পোস্টারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভি।

এ ধরণের পোস্টারের দিকে চোখ পড়লে অভি আগে সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিত। কিন্তু আজ কেন যেন সে চোখও সরাতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে মাথা চুলকে নিল অভি। মনটা কেমন যেন সায় দিচ্ছে না সিনেমা হলের ভিতরে ঢুকতে। অভির কেবলই মনে হচ্ছে– স্কুল ছুটির পর জিয়াউল স্যারের কাছে পাটিগণিত করতে যাওয়া ফাঁকি দিয়ে সিনেমা হলে ঢুকে যাওয়াটা সম্ভবত ঠিক হচ্ছে না।

অভি এবার সত্যিই মুখ ফিরিয়ে নেয় পোস্টার থেকে। উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে সে। পথিমধ্যে হঠাৎ করে ওর তাজিন আপুর কথা কানে বেজে উঠল– “অভি একদম বখাটে হয়ে গিয়েছে। ওকে দিয়ে আমাদের আর কোন ভবিষ্যৎ আশা নেই। ” থমকে দাঁড়ায় অভি।

কিছুক্ষণ কি যেন চিন্তা করে রুহুলের সাথে সিনেমা হলে ঢুকে পড়ে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।