আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামু ও উখিয়ায় সীমাহীন শঙ্কা

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। এখন কী হবে? প্রশ্নটা রাখলেন সুপ্তী বড়–য়া। চোখের সামনে তার সীমাহীন শঙ্কা। ২৯ সেপ্টেম্বর রামু এবং ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়াতে বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে যে হামলা হয়েছে, তাতে সামনের দিনগুলো ঘিরে রাজ্যের আতঙ্ক।

হাজার বছরের ইতিহাসে মুসলিমদের হাতে কখনোই বৌদ্ধরা আক্রান্ত হননি। এখন কেন হলো? এমন কেন হলো? অনেকটা বিলাপের সুরেই বললেন সুপ্তী বড়–য়া। তার প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। গত মাসের শেষ দুই দিনে যে কাণ্ড ঘটেছে তা নিয়ে চলছে সরব আলাপ-আলোচনা। রাজনৈতিক দলগুলো পুরনো কায়দায় এটাকে মোকাবেলা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে গতকাল বিরোধীদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। বিরোধী দল বিএনপি অবশ্য ঢাকায় সরকারি দলকে দায়ী করলেও রামু ও উখিয়া ঘুরে তাদের তদন্তদল প্রশাসন ও পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। যেটি স্থানীয়ভাবে বৌদ্ধরাও মনে করছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক বছরের পুরনো সীমা বিহারের পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারি ও আওয়ামী লীগ নেতা তরুণ বড়–য়া নয়া দিগন্তকে বলেন, ঘটনার আগে যদি পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয় হতো তাহলে এমনটা হতো না। আমরা নিজেরা তাদের সক্রিয় হতে বলেছি।

ওসি নজিবুল আমাকে বলেছেন, কিছুই হবে না। আপনারা বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিএনপির তদন্ত প্রতিবেদনে তারা বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরবে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে রামুতে বলেছিলেন, আমরা এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছি না। উত্তম বড়–য়া নামে এক বৌদ্ধ তরুণ ফেসবুক ব্যবহারকারী ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন শরিফকে অবমাননা করা কয়েকটি ছবি তার অ্যাকাউন্টে ট্যাগ করার পর তা নিয়ে রামু কাণ্ড ঘটে।

পরের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর রামু পরিদর্শন শেষ করে ঢাকায় ফেরার আগেই উখিয়ার বৌদ্ধবিহারগুলো আক্রান্ত হয়। সেখানে উখিয়া শহরের জাদিমুড়া বিহারে প্রথম আক্রমণ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলাও হয়েছে। তবে সরকারি দলের প্রশ্রয়ের কারণে তাদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কয়েক দিন ধরে রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি ও বিহার পরিদর্শন করে মিলেছে এসব তথ্য।

রামুর ফতেখাঁর কুল ইউনিয়নের সীমাবিহার এলাকার সুপ্তী বড়–য়া নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আমাদের মতো অসহায় মনে হয় জগতে আর কেউ নেই। পুলিশ আমাদের সাহায্য করলে এমনটা হতো না। তিনি বলেন, এখন এটা নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। যারা এটা নিয়ে এসব করছেন, তারা সবাই সে দিন কী করেছিলেন, এটাই তার জিজ্ঞাসা। বড় গলায় প্রশ্নটা করতে পারি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব কিছু রাজনীতির আগলে বন্দী।

নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত সুপ্তী বলেন, আমরা সবার সাথে মিলেমিশে চলতে চাই। কিন্তু কখন ও কতটা সময় পরে এটি সম্ভব হবে জানি না। রামুর শ্রীকুলের রাখাইন বৌদ্ধবিহারের ভান্তে উথেসিন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা শান্তি চাই। অশান্তি করার কোনো ইচ্ছে বা অভিলাষ আমাদের নেই। আমরা আগে যেভাবে এখানে বাস করেছি, আগামীতেও একইভাবে বসবাস করতে চাই।

তিনি বলেন, যা শেষ হওয়ার তা শেষ হয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও আমরা তা ফেরত পাবো না। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা জোড়া লাগাতে হবে। আমরা হিংসার বদলে সম্প্রীতি চাই। আমরা অহিংসা পরম ধর্ম বলেই জ্ঞান করি।

একই রকম কথা বলেছেন, উখিয়ার পশ্চিম মরিচ্যার দীপাংকু বৌদ্ধবিহারের পরিচালনা কমিটির অমিয় বড়ুয়া। পেশায় স্কুল শিক্ষক। বললেন, আমরা সবাইকে পড়াই। এক দৃষ্টিতে সবাইকে দেখি। হঠাৎ করে কী এমন হলো যে, আমাদের ওপর হামলা করা হলো।

আমরা এর বিচার চাই। তবে বিচারের নামে কারো হয়রানি প্রত্যাশা করি না। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের সম্পর্কে আমাদের সাথে আলাপ করা হয়নি। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল চৌধুরীর প্রসঙ্গটি উল্লেখ্য।

তিনি এ হামলার সাথে জড়িত নন। অথচ তাকে এ ক্ষেত্রে আসামি করা হয়েছে। আমরা বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে মামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারি দলের অভিযোগ ও এমপির জবাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রামু চৌমুহনীর পাশের হাইস্কুল মাঠে বক্তৃতায় বলেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কী এমন বক্তব্য দিয়েছেন যে যার জন্য সবাই উত্তেজিত হলো।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ খবরটি দেয়া হয়নি যে প্রথমে মিছিলটি বের হয়েছিল ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের নেতৃত্বে। তারপর সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তৃতা করেছেন। এমনকি স্থানীয় থানার ওসিও। স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা মামুন এ বিষয়টি উল্লেখ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, আসল তথ্য না জেনেই কাউকে দায়ী করা উচিত নয়। তাহলে তদন্ত প্রভাবিত হবে।

অবশ্য তিনি মনে করেন, ইতোমধ্যে তদন্ত প্রভাবিত হয়েছে। সরকারের চাহিদামাফিক একটা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। যেখানে বিরোধী দলকে জড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সংসদ সদস্য লুৎফর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি সে দিন বক্তব্য দিয়েছি ঠিকই, তবে সেটি খালি গলায়। তাতে আমি কাউকে উসকে দেইনি।

রামুতে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে জানার পর আমাকে কল করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ। তার কল পেয়ে আমি, আমার গাড়ির চালক ও পিএস সেখানে যাই। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছি এ হামলা ঠেকানোর জন্য। কিন্তু সফল হইনি। সে দিন কী বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এমপি মূলত শান্ত থেকে সবাইকে এক সাথে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দারা এর পেছনে! কক্সবাজারের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, এর সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারতের হাত থাকতে পারে। তাহলে সেটি কেন? জানতে চাইলে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারত কখনোই মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হোক তা চায় না। সে জন্য তারা অব্যাহতভাবে সীমান্তে মিয়ানমারবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে থাকে। অন্য একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, এ ঘটনা থেকে ফায়দা পাচ্ছে কারা বা পাবে কারা? আঞ্চলিকভাবে চিন্তা করলে এটি পাবে ভারত। আর দলীয়ভাবে চিন্তা করলে সরকারি দল।

এখানে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি ও মিয়ানমারে জাতিগতভাবে তাদের ওপর ধর্ষণ, হত্যা ও হামলার বিষয়টি জায়েজ করার একটা সুযোগ হিসেবে বৌদ্ধদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তারেক মোরতাজা কক্সবাজার থেকে ফিরে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.