আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিল্প সৌন্দর্যের প্রতিবাদ

এম, এ, মান্নান পৃথিবীতে যা কিছু মহান চিরকল্যাণ কর অর্ধেক তাঁর গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তাঁর নর এখানে কবি নারীর কথা আগে উল্লেখ করেছেন সম্ভবত এই জন্যে যে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে উর্বরতার ও উৎকর্ষতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারী। আর তাঁর শুরু হয়েছে ভেনাস অব উইলেন্ড্রফ (খ্রিঃপুঃ২৪০০০-খ্রিঃপুঃ২২০০০) এর মধ্যে দিয়ে। এই মাতৃকা মূর্তিটি গর্ভবতী আর তাঁর দেহের যে কোমল নারীরূপ তা আজকের ধারণা দিয়ে উপলব্ধি সম্ভব নয়। স্বর্ণগর্ভা এই ধরণী থেকে প্রাপ্ত জলে, ফলে, ফসলে আর স্নিগ্ধতায় সিক্ত মানুষের সভ্যতা, দর্শন, শিল্প শুরু তাইমাতৃপূজা দিয়ে। আমি কোন সাহিত্য বিশারদ নই যে সাহিত্যের ব্যবচ্ছেদ শুরু করবো, নই কোন শিল্পবোদ্ধা যে শিল্পের মাপজোক করবো ।

আবার “শিল্পের ছাত্র” এটাও কিভাবে দাবি করি যেখানে শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথের মাতো শিল্পবোদ্ধা নিজেকে শিল্পের ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেখানে আমি আবার কোন ছার! তবে এটুকু মনে হয় সদ্য চিত্রবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাঠমুক্ত তরুন শিল্পী রাকিব হাসানের যার পুরো শিক্ষাজীবনের চিত্রচর্চার বিষয় ছিল নারী আর শিক্ষা জীবন শেষে করলেন “চিত্রকলায় নারী ও আমার চিত্রকর্ম” শীর্ষক গবেষণা। এই গবেষণায় আর চিত্রে নারী বৈষম্য দূরীকরণের জোরালো প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে। ছবিগুলোতে রঙ্গের অপরূপ কম্পোজিশন,লালিত রেখা, আর মন মাতানো অলংকরণ দর্শকের মন কাড়ে। ভ্রমণ পিয়াসু তরুণ শিল্পী রাকিব হাসানের চিত্রে এর প্রভাব পরেছে, নারীকে তিনি স্বভাব সুলভ স্বাধীন ভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে যে ফিগার ব্যবহার করেছেন তার সাথে ভারতের রাজস্থান প্রদেশের নারীদের সাথে মিল পাওয়া যায়। এছাড়া হাতের বালা, গলার মালা, পাগড়ি, কাপড়ের ভাঁজও বিভিন্ন স্থানের সাথে সম্পর্কিত।

চিত্রকলায় রাকিব হাসান ফিগারকে প্রাধান্য দিয়েছনে। তাই ক্যানভাসে ফিগারকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে, রংয়ের ব্যবহারের মাধ্যমে স্পেস তৈরী করে কম্পোজিশন করেছন। এছাড়া রং ও ফিগার ব্যবহারের সাথে টেক্সচার দিয়ে আলাদা এ্যাফেক্টে কম্পোজিশন রচনা করেছেন। চিত্রপটে কখনো ফুলফিগার বা ফিগারের অর্ধাংশকে বসা, দাঁড়ানো, ঘুমন্ত বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ক্যানভাসের বিভিন্ন অংশে কম্পোজিশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। কোথাও মোটা চিকন রেখার ব্যবহার করেছেন পুরো কম্পোজিশনের চাহিদা অনুযায়ী।

একই সাথে তেলরং ও এক্রেলিকে করা যাপিত জীবন-১ নামক ছবিটিতে তিনি বর্তমান সময়ের যাপিত জীবনের অনুভূতিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় জন্মের পর থেকেই নারীর ত্রাণকর্তা হয়ে থাকে পুরুষ। কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী এবং বৃদ্ধা মাতাকে রক্ষা করেন পুত্র। এমনই এক টানাপোড়নের গল্প ‘যাপিত জীবন-১’। চিত্রে প্রায় মুখোমুখি বসা দু’টি ফিগার।

পুরুষ ফিগারটি উপরের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে-মুখে রাগের অভিব্যক্তি। পাশেই রাখা মদের বোতল। পক্ষান্তরে মেয়ে ফিগারটি অবাক ও করুণ চোখে দেখছে তার পুরুষটিকে। তার পাশে একটি বিড়াল যে তার কষ্টের জীবনের নিশ্চুপ সঙ্গী- তাকিয়ে আছে সোজা দর্শকের দিকে। রেখার ব্যবহারে নর-নারীর মুখায়বে রূক্ষতা ও একটা প্রতিবাদী ভাব ফুটে উঠেছে।

ছোট-বড় বৃত্তগুলি তাদের মানসিক কষ্টের দীর্ঘ নিশ্বাস হয়ে বুদবুদ আকারে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। ক্যানভাসের পুরো সারফেস জুড়ে হলুদ ও সবুজের মধ্যে টকটকে লাল রং ছবিটির কম্পোজিশনে একটা ভিন্নমাত্রা নিয়ে এসেছে। যদিও রাকিব হাসানের বেশির ভাগ ছবিতে নারীর আবেদনময়ী ভাব ফুটে উঠেছে কিন্তু আমি মনে করি এটি নারী বৈষম্যের প্রতিবাদ- যেমন কোথাও মাঝে মাঝে রাস্তাতায় ধান গাছ লাগিয়ে রাস্তার দুর্বস্থার প্রতিবাদ জানানো হয়, তেমনি রাকিব হাসান তার চিত্রে নারীর কামনীয় ভাব প্রকাশের মাধ্যমে নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি, শুধুমাত্র ভোগের সঙ্গী ও বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছবির মাঝে মাঝে সাদা আয়তকার স্থান রেখে নারীর স্বধীনতায় বিভিন্ন বাধা বুঝিয়েছেন । এত কিছুর মাঝেও শিল্পী নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি, ছবিতে রেখেছেন নির্মল বাঙ্গালীয়ানার নিদর্শন আলপনা।

এর আগে চিত্রকলায় আলপনার আধুনিক ব্যবহার আমরা দেখেছি ডঃ শেখ মনিরের ইউরোপে প্রদর্শিত চিত্রকর্মে ২য় বার দেখলাম তরুণ শিল্পী রাকিব হাসানের চিত্রকলায়। আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যে চিত্রে আলপনার আধুনিক ব্যবহার দেশে ব্যপ্তি লাভ করবে। ৩০ টি চিত্রকর্ম নিয়ে জয়নুল গ্যালারিতে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি ২৬শে সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ, শিল্পী হামিদুজ্জামান খান সহ আরো অনেকে। এই প্রদর্শনীটি চলবে ১০শে অক্টোবর পর্যন্ত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন............... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।