আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুষ্ট বুড়ি, মহানবী( স : )এর মহানুভবতা এবং আমাদের ইসলাম রক্ষার হামলা

প্রথমেই বলে নেই আমি ধর্মীয় বিষয়ে গভীর জ্ঞানচর্চা করিনা। তবে মুসলমান হিসাবে পারিবারিক ভাবে যেসব ধর্মীয় বই বা প্রতিষ্ঠানিক ইসলাম শিক্ষা বইয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে কোথাও দেখিনি কোন হিংসা্ত্মক কর্মকান্ডের উপদেশ বা উদাহারন। বরং মহানবী( স : )এর শিশুকাল থেকে নব্যুয়াত প্রাপ্তি, ইসলাম প্রচার, মদিনায় হিজরত, মদিনা সনদ কিংবা বিদায় হজ্বের ভাষন পর্যন্ত সব জায়গায় অসিম ধ্যর্য, ক্ষমা, উদারতা, সহমর্মিতার শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। জোর জবরদস্তি করে কাউকে ধর্মান্তারিত করা, কিংবা অন্য কোন ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেয়ার কনো নজির সেখানে নেই। অথচ আজকে আমাদের ধর্মিয় অনুভুতি জাগ্রত হয় শুধুমাত্র অন্য ধর্মের কেউ কিছু বললে বা করলে।

অথচ আমরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত ইসলাম ধর্মকে খাটো করছি, অবমাননা করছি, অবজ্ঞা করছি, নিজেদের প্রতিদিনের জীবনে। আমি একটু অবাক হচ্ছিলাম , যখন দেখলাম মহানবী( স : )কে অবমাননা করে বানানো চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে সহিংস বিক্ষোভ চলছিল তখনও এদেশে ইসলামের সোল এজেন্টরা কিছু করতে পারছিলনা। শেষমেষ একদিনের নামকাওস্তে 'পবিত্র' (ওলামারা যা কিছু করেন সেটা অবশ্যই পবিত্রই হওয়ার কথা) হরতাল ডেকেও যখন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটল না,তাখনই তারা পেয়ে গেলেন মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেলেন রামুতে , ঝাপিয়ে পরলেন তাদের ঈমান আকিদার জোর দেখাতে। তারা হয়তো উত্তীর্ন হয়েছেন তাদের সেই ঈমানী পরিক্ষায়, এখন তাদের আরব ভাইদেরকে মুখ দেখানোর একটা সমাধান হয়তো হল। কিন্তূ ইসলাম অবমাননা প্রতিরাধের নামে আমরা যে মানবতার অবমাননা করলাম, মহানবী( স : )শেখানো মহানুভবতার অবমাননা করলাম সেটা কি ইসলামের অবমাননা নয়? আমাদের প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরার কথা, অথছ কয়জন আমরা সেই কাজটি ঠিকমত করছি? যারা রামুতে হামলা করেছেন তাদের কয়জন ওইদিন রাতে এশার নামাজ পরেছেন? কয়জন এমন ঈমানী(!?) দায়িত্ব পালন করার পর ফজরের নামাজ পরেছেন?যদি না পরে থাকেন তাহলে তারা কি রাসুল( স : )এর তরিকা, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেন নি? এই অমান্যতা , এই অবজ্ঞা কি আবমাননা নয়? তাহলে এই অবমাননার শাস্তি কি তারা পাবে না? আমাদের ইসলামের বিধান রয়েছে জাকাত দেয়ার।

এখানে পরিমাপ হিসাবে একতি নিদিস্ট পরিমান স্বর্ন বা রুপা এক বছর ঘরে মজুদ থাকলে জাকাত ফরজের কথা বলে হয়েছে এবং অনুপাতের কথা বলে দেয়া আছে। আমাদের মধে্য কয়জন মুসলমান আছেন যে এই জাকাতের বিধান সঠিকভাবে পালন করি?বরং ঈদের আগে নামকাস্তে কতগুলি শাড়ি লুংগি কিনে সমাজে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার উপায় হিসাবে সবচেয়ে কমদরের কাপড় বিলানোর মেকি আয়োজন করি, মিডিয়া কভারজের জন্য হট্টগোল সৃষ্তি করে মানুস মারা ফন্দিও থাকে সেখানে। অথচ ইসলামের নিয়ম অনুসারে প্রতিটি মধ্যবিত্ত/নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার জাকাত দেয়ার যোগ্য এবং সেটা ঠিক মত দিলে এই দেশে দাড়িদ্র বলে কিছু থাকার কথা না। আমরা জাকাত দেয়ার কথা উঠলে নানা অযুহাতে, ব্যাখায় সেটা এড়িয়ে যাই, অথবা দায়সারাভাবে লোক দেখানো কিছু করি, যা ইসলামের বিধানের অবজ্ঞা, এই অমান্যতা , এই অবজ্ঞা কি আবমাননা নয়? রোজার সময় সংযমের কথা বলা আছে, অথছ আমরা ইফতারিতে টেবিল ভর্তি খাবার সজিয়ে, পেটে গ্যাস্ট্রিক বাধিয়ে গলা পর্যন্ত খাবার খাওয়ার সময়ও পাশের বস্তিতে কিংবা রান্না ঘরের বুয়ার প্লেটে বাসি খাবার ছারা কিছু দিতে চাইনা। ঈদে হাজার/ লাখ টাকার শপিং করে হয়রান হয়ে যাই।

তবুও বাসার কাজের লোকের ঈদের বাজেট হাজার ছুতে পারেনা কখনো। অথছ আমরা সবাই সেই এতিম বালকের গল্প জানি যাকে মহানবী( স : )ঈদের কাপড় দিয়ে তারপর ঈদের নামাজ পরতে গিয়েছিলেন। আজ এই যে সংযমের শিক্ষা, মানুষের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির যে শিক্ষা ইসলাম আমাদের দিয়েছে, সেতা পালনের এই যে অনীহা, এই যে অবজ্ঞা, এই যে অমান্যতা, সেটা কি আবমাননা নয়? কুরবানী ঈদ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। এই কুরবাননীর মাংস ভাগে ইসলামের বিধান হল, সমান তিন ভাগ করে একভাগ গরীব মানুষকে বিলিয়ে দেয়া, একভাগ নিজের আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে, অবশিষ্ট ভাগ নিজেরা খাওয়া। অথছ কুরবানির সময় আমরা সবচেয়ে লোভনীয় মাংস নিজেদের জন্য রেখে প্রায় বাতিল, অখাদ্য, হাড্ডিসার মাংশ একটুকরা করে বিলিয়ে কুরবানীর মাংসের হাজারটা আইটেম বানিয়ে পেটের বারোটা বাজাই।

সর্বষেশ চামড়ার টাকার ভাগ নিয়ে কুরবানীর মাংসের হিসাব মিলাই বাজারদরে কত পরলো। কিন্তু কখনোই ভাবিনা আসল উদ্দেশ্য, আসল বিধান সঠিকভাবে পালন হল কিনা। এই যে অবজ্ঞা, এই যে অমান্যতা, সেটা কি আবমাননা নয়? হজ্ব হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম। ধনী মুসলমানদের উপর ফরজ, হজ্ব পালনের আগে পরে অনেক বিধিবিধান আছে, যার অধিকাংশই মানুষের আত্মিক এবং বাহ্যিক শুধ্বতার শিক্ষা দেয়, যেমন- সমস্ত অণ্যায় থেকে দুরে থাকে, নিজের পরিবারের সব দ্বায়িত্ব পু্র্নকরা ইত্যাদি। অথচ আমরা হ্বজ পালন করি, আলহ্বাজ টাইটেল ব্যবহার করি,কিন্তু অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারি না, নিজের পরিবারের ব্যপারে উদাসীন থাকি?এই উদাসিনতা, এই অপারগতা কি ইসলাম আবমাননা নয়? একই ভাবে ইসলামে নারীদের পর্দা করার বিধান, নারীদেরকে সম্মানের দৃস্টিতে দেখার কথা আছে, কিন্তু আমরা নিজেদের মেয়ে, বোনকে ইহুদি,হিন্দুদের ডিজাইন করা অর্ধনগ্ন পোশাক কিনে দেই।

আবার বাইরে গিয়ে আন্য মেয়েদের দিকে কামনার দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকি, যতক্ষন দেখা যায়, তাতে আমাদের ওযু নস্ট হলো কিনা সেটা চি্ন্তা ভাবার সময় পাই না। ইসলামের বিধানের এই যে অবজ্ঞা, এই যে অমান্যতা, সেটা কি আবমাননা নয়? তাহলে এই অবমাননার শাস্তি কি হওয়া উচিত। এই অবমাননার জন্য আমাদের কি কি জ্বালি্য়ে দেয়া উচিত?এই অবমাননার জন্য আমাদেরকে কে জ্বালাবে?কেউ কেউ ওয়াজ করবেন , ইহার জন্য আমাদের কঠিন আজাব ভোগ করিতে হইবে। আমরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবো। মহান আল্লাহতালা আখিরাতে আমাদের কঠিন বিচার করবেন এই সব অবমাননার জন্য।

তাহলে আমি বলবো আমাদের শাস্তির জন্য যদি আখিরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তবে অন্যদেরকে শাস্তি দেয়ার অধীকার আমাদের কে দিয়েছে? আমরা যদি সত্যিকারের মুসলমান হই, যদি সবই মুহাম্মাদ ( স : ) এর উম্মত হই, তবে কিভাবে একজন অন্যজনকে কাফির/মুনাফেক বলি? কিভাবে রাজরবাগ আর দেওয়ানবাগ সৃস্টি হয়? কিভাবে চরমোনাই আর আটরশিরর মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়? কিভাবে আমরা কাবা শরিফ ব্যতীত , পীর ,মাজারে সেজদা দেই? ইসলামের কোন কিতাবে শিক্ষা দেয়া হয়েছে এগুলো? আর যদি কোন হাদিস শরীফে না থাকে , কোরাআন শরীফে না থাকে তাহলে এসব কর্মকান্ড কি ইসলাম অবমাননা নয়? গল্পটি অনেকেই জানেন,তারপরও সেটা দিয়েই শেষ করছি। আমদের রাসুল( স : )যেপথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়ত করতেন, সেপথে কাটা বিছিয়ে রাখতো এক বিধর্মী বুড়ি, কারন মহানবী( স : )ইসলাম প্রচার করছেন, তাই তাকে অপছন্দ করতো বুড়ি এবং কাটা পায়ে ফুটে যাতে তিনি কষ্ট পান সেটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। যাই হোক প্রতিদিন এভাবে কাটা বিছিয়ে রাখতো সেই বুড়ি এবং মহানবী( স : )এর পায়ে ফুটলে তিনি ব্যাথা পেতেন, বুড়ি সেতা দেখে মজা পেত এবং দুর থেকে দেখে হাসতো। মহানবী( স : )তার পায়ের কাটা খুলে, পথ থেকে দুরে ফেলে দিতেন যাতে তা অণ্যের পায়ে না বিধে। এভাবে বেশ কিছুদিন পর হঠাত মহানবী( স : )খেয়াল করলেন তার চলার পথে আর কাটা নেই, তিনি একতু অবাক হলেন তারপর খোজ নিয়ে জানতে পারলেন যে সেই বুড়ি অসুস্থ।

তখন তিনি তাকে দেখতে গেলেন এবং তার সেবা শশ্রুষা করলেন। মহানবএই মহানুভবতা দেখে বুড়ি অবাক হলেন এবং নিজের কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলেন। সত্যি ভাবতে খুব অবাক লাগে আমরা এহেন মহানুভব নবীর উম্মত, যিনি মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন, ক্ষমা আর উদারতার দৃস্টান্ত স্থাপন করেছেন। অথছ সেই নবীর উম্মত হয়ে আজকে আমরা যেটা করছি সেটাকি আসলেই আমাদের মহানবী( স : )এর শিক্ষা?সামান্য বিষয় নিয়ে আমরা আমদের ঈমানী পরিক্ষা দিতে গিয়ে অন্য ধর্মের মানুষকে পুড়িয়ে মারছি, ঘরবাড়ি জালিয়ে দিচ্ছি এটা কোন ধরনের মুসলমানের পরিচয়? পরিশেষে বলবো, যেকোন ধর্মকে অবমাননা করাই অন্যায় এবং একজন মুসলমান হিসাবে ইসলামের অবমানানা, কুরআন শরীফের অবমাননা কিংবা রাসুল( স : )অবমাননা কোনটাই সমর্থনযোগ্য নয় বরং ঘৃন্য কাজ। কিন্তু সেই অজুহাতে দুর্বল,সংখালঘু, নিরিহ মানুষের উপর নির্যাতনের কোন শিক্ষা ইসলাম যেহেতু দেয় না, তাই সেটা করা অবশ্যই ইসলামের বিধান তথা ইসলামের অবমাননা, এবং সেই অবমাননার দায় আমাদের নিজেদেরই।

তাই এখন একটু ভাবেন আমরা যদি একই দোষে দোষি হই তাহলে আমাদেরও কি একই শাস্তি প্রাপ্য নয়?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.